চারদিকে বিদঘুটে অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে থমকে দাঁড়াল ফারহান। সে বাবার হাত ধরে হাঁটছিল। গ্রামের বাড়ি থেকে একটু বিকেল করে রওয়ানা দিয়েছিল ফারহান ও তার বাবা। ঢাকা শহরের জ্যাম পাড়ি দিয়ে এখন মধ্যরাত। বাসায় ঢোকার গলিতে আসতেই বিদ্যুৎ চলে গেল। হোঁচট একটু জোরেই খেয়েছে প্রচণ্ড ব্যথা করছে। অন্ধকারে বাবাকে জড়িয়ে ধরে আছে ফারহান। সামনে ধপাস করে একটা শব্দ হলো, সেই সাথে একটা চিৎকার। ফারহান ভয়ে আরো কুঁকড়ে গেল। গলির মাথায় মসজিদ থেকে একটা টর্চ লাইটের আলো এসে রাস্তায় পড়ল। সেই আলোতে ফারহান দেখলো একজন মধ্য বয়সের লোক খোলা ম্যানহোল থেকে তার পা টেনে বের করছেন। হাঁটুর উপড়ে কেটে গিয়ে রক্ত ঝরছে। লাইটের আলোয় তারা সবাই মসজিদে আসলো। মসজিদের ইমাম সাহেব টর্চ লাইটের আলো ফেলছিলেন। কাছে আসতেই সালাম বিনিময় হলো। তিনি বিদ্যুৎ আসা পর্যন্ত সবাইকে মসজিদে অপেক্ষা করতে বললেন, কেননা সামনের রাস্তাটা আরো খারাপ; হাঁটতে সমস্যা হবে। আহত লোকটার ক্ষত স্থানে কাপড় বেঁধে দিলেন এতে করে রক্ত পড়া বন্ধ হল। লোকটা বিরক্ত হয়ে বললো, এই অন্ধকারে কি কিছইু দেখা যায় না? ইমাম সাহেব বললেন, ‘অন্ধকারে যেমন সঠিকভাবে রাস্তায় হাঁটা যায় না, হাঁটতে গেলে ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এমনকি জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হতে পারে; তেমনি আমাদের জীবন চলার পথেও প্রয়োজন আলো। আলো না থাকলে আমাদের জীবনও অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। আলো যেমন অন্ধকারের মাঝে আমাদের সঠিক রাস্তা দেখায় ঠিক তেমনি জীবন চলার পথে যদি আমরা সঠিক পথ খুঁজে না পাই তবে দুনিয়াতে লাঞ্চনা আর আখেরাতে জাহান্নাম হবে ঠিকানা।’
ইমাম সাহেবের কথায় ফারহানের মনে একটা প্রশ্ন উদয় হল। প্রশ্ন করার আগেই ইমাম সাহেব সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, এই রাস্তার অন্ধকার দূর করতে বিদ্যুৎ বা টর্চ লাইটের আলো প্রযোজন, কিন্তু জীবন চলার পথে এই আলো নয় বরং প্রয়োজন মহাসত্যের আলো, আল-কুরআনের আলো। এ আলোতে আলোকিত করতে হবে জীবন। যারা এই আলোকে সঙ্গী করবে তারা কোনো খারাপ ও মন্দকে জীবনে ঠাঁই দেবে না। ভাল ও সৎ কাজের মাধ্যমে দুনিয়ার মানুষের কাছে স্মরণীয় এবং আখেরাতে লাভ করবে চির সুখের জান্নাত। তিনি বললেন, এই কথাগুলো কিন্তু আমার নয়! এই কথাগুলো বিস্তারিত বলা আছে পবিত্র আল-কুরআনের সুরা ইব্রাহীমের ১নং আয়াতে। এমন সময় বিদ্যুৎ চলে আসল। সবাই বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে ফারহান সিদ্ধান্ত নিল, ফজরের পর সুরা ইব্রাহীম পড়বে, অর্থ ও ব্যাখ্যা জানবে সে। জীবনকে আলোকিত করতে হবে, তবেই না আখেরাতের সফলতা আসবে!

Share.

মন্তব্য করুন