তথ্য আদান-প্রদান বা সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানব ইতিহাসের শুরু থেকে তথ্য সংরক্ষণের প্রয়োজন মানুষ বিভিন্ন পদ্ধতি তৈরি করেছে। আর আধুনিক এই প্রযুক্তিনির্ভর যুগে তথ্যের প্রয়োজন কত বেশি সেটা বোধ করি নতুন করে বলার দরকার নেই। পাথর থেকে শুরু হয়ে কাগজ, পাঞ্চ কার্ড, ম্যাগনেটিক টেপ এর যুগ অতিক্রম করে এখন চলছে হার্ডডিস্ক বা সিডি-ডিভিডি কিংবা ইউএসবি ড্রাইভের মতো অত্যাধুনিক সব ডাটা স্টোরেজ প্রযুক্তি। কিন্তু একবার ভাবো তো, যদি কখনো মানব ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ঘটনাটি ঘটে, আর সব কাগজ ধ্বংস হয়ে যায়, সব প্রযুক্তি নষ্ট হয়ে যায়, তখন কি আর কোনোভাবেই তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে না? তার উত্তর লুকিয়ে আছে তোমার দেহের ভেতরে ডিএনএর মধ্যে। পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত যে হারে তথ্যের পরিমাণ বেড়ে চলেছে তাতে একসময় ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেলেও এই সমস্যা থেকে রক্ষা করবে এই তথ্য বাহক বা বায়োডাটা স্টোরেজ। বিজ্ঞানীদের মতে, ভবিষ্যতের ডাটা স্টোরেজ হতে চলেছে ডিএনএ, যা দিয়ে সংরক্ষণ করা যাবে বর্তমানে প্রচলিত ডিভাইসগুলোর তুলনায় আরও অনেক গুণ বেশি ডাটা। শুধু তা-ই নয়, পুরো পৃথিবীর সব ডাটা ধারণ করা যাবে মাত্র কয়েক গ্রাম ডিএনএ-তে। ডিএনএর মধ্যে তথ্য সংরক্ষণ করে পরে তা পুনরুদ্ধার করা যাবে। পরীক্ষাগারে ডিএনএ ডাটা স্টোরেজ তৈরিতে সফলতা পাওয়ার পর তা বাজারে আনার কথা ভাবছেন গবেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেদের সঙ্গে যৌথভাবে ডিএনএ ডাটা স্টোরেজ তৈরিতে কাজ করছে বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। একে বলাত হচ্ছে প্রথম পরিপূর্ণ স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেটেড ডিএনএ ডাটা স্টোরেজ।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকেরা এমন এক ডিভাইস তৈরি করেছেন, যা ডিজিটাল ডাটা বা তথ্যকে ডিএনএ-তে রাখতে পারে, আবার তা ডিএনএ থেকে উদ্ধার করতেও পারে। অর্থাৎ, এখন ছবি, ভিডিও বা বার্তা ডিজিটাল তথ্য হিসেবে ডিএনএতে রাখা যাবে। এখন এ প্রযুক্তি বাণিজ্যিক ডাটা সেন্টারে প্রয়োগের চিন্তা করছে মাইক্রোসফট। মাইক্রোসফটের গবেষক কারিন স্ট্রস বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করা, যাতে ব্যবহারকারীরা সাধারণ ক্লাউড স্টোরেজ সেবার মতোই তথ্য রাখতে পারেন। এতে ডাটা সেন্টারে বিটস পাঠানো হবে, যা সংরক্ষিত থাকবে ডিএনএতে। গ্রাহক চাইলে আবার সে তথ্য উদ্ধার করতে পারবে। এ পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত ডিএনএতে এক গিগাবাইট তথ্য সংরক্ষণ করা যায়, যার মধ্যে বিড়ালের ছবি, সাহিত্যকর্ম, পপভিডিও ও বিভিন্ন আর্কাইভাল রেকর্ডিং রয়েছে। পরে ডিএনএ থেকে কোনো সমস্যা ছাড়াই তা উদ্ধার করা গেছে। তবে এটা সাধারণের ব্যবহার উপযোগী হতে এখনও বেশ সময় লাগবে। তো সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

Share.

মন্তব্য করুন