সুন্দরবন! পৃথিবীর বৃহত্তম গরান বনভূমি। এ যেন এক সবুজ স্বপ্নের দ্বীপ! যেন তার নামের চেয়েও সুন্দর! মামার মুখে এমন কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে উঠল সাইফ। বইয়ে সুন্দরবনের অনেক গল্প পড়েছে সে। দেখেছে ছবিও। আজ আরও জানতে চায় সে। মামা বললেন- সবই বলব। তার আগে এই নাও তোমার উপহার। খাঁটি মধু! তোমার জন্য এনেছি সরাসরি সুন্দরবন থেকে!
সাইফ অবাক! আচ্ছা মামা! কিভাবে মধু সংগ্রহ করা হয়- তুমি কি দেখেছো? অবশ্যই! তাহলে বলছি, শোনো। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের প্রম দিন থেকেই শুরু হয় মধু সংগ্রহের কাজ। এ কাজ যারা করেন, তাদের বলা হয় ‘মৌয়াল’। বনে যাওয়ার আগে মৌয়ালরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। গামছা দিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে তারা বনের গহিনে মৌচাক খুঁজে বেড়ান। পেলেই একসাথে বলে ওঠেন, ‘আল্লাহ আল্লাহ বল রে!’ এরপর কেউ মৌচাকে আগুনের ধোঁয়া দেন। কেউ দা দিয়ে চাক কাটেন। নিচে বেতের তৈরি পাত্র ধরে রাখেন কেউ। এভাবেই বনে বনে মধু সংগ্রহ করেন মৌয়ালরা। তাদের একেকটি দলে সদস্য থাকেন সাত থেকে তেরোজন।
মামা বললেন, সুন্দরবনের সবচেয়ে ভালো মধু হচ্ছে ‘পদ্মমধু’। খোলসি ফুলের। এরপরই রয়েছে গরান ও গর্জন ফুলের ‘বালিহার’ মধু। কেওড়া ও গেওয়া ফুলের মধু আসে মওসুমের একেবারে শেষে। তবে সেগুলো একটু কম সুস্বাদু। আর হ্যাঁ! মধু কিন্তু আল্লাহর অপূর্ব এক দান। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে আদেশ করেছেন- ‘গৃহ নির্মাণ করো পাহাড়ে। বৃক্ষে। মানুষ যে গৃহ তৈরি করে, সেখানে। তারপর প্রত্যেক ফল থেকে কিছু কিছু খাও। আর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ করো।’ তার উদর থেকে বের হয় নানা রঙের পানীয়। যাতে আরোগ্য আছে মানুষের জন্য।” (সূরা নাহল : ৬৮-৬৯)
সাইফ বলে উঠল, সুবহানাল্লাহ! ভাবল, সুযোগ হলে সে-ও সুন্দরবন দেখতে যাবে। দেখবে মধু সংগ্রহের রোমাঞ্চকর দৃশ্যও!

Share.

মন্তব্য করুন