আমরা তিন বন্ধু চঞ্চল, বিটুল এবং আবির। আমরা এ বছর মফস্বল শহরের একটি স্কুল থেকে এস. এস. সি. পাস করে ঢাকাতে একটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছি। মীরপুর একটি পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের চর্তু তলায় পূর্ব পাশের ফ্লাটে ভাড়া উঠেছি। আমরা এই তিন বন্ধু স্কুল জীবনে শখের গোয়েন্দাগিরির কাজ করতাম। আমাদের এই গোয়েন্দা কাজে সহায়তা করত আমার পোষা বানর। তার নাম তিতান।
তিতানকে বাচ্চা বয়স হতে লালন পালন করে বড় করে তুলেছি। সেই সাথে তাকে গোয়েন্দাগিরির নানা কৌশল শিখিয়েছি। সে আমাদের সাথে থেকে গোয়েন্দাগিরি কাজ করতে করতে পাকা গোয়েন্দা হয়ে উঠেছে। আমরা ঢাকায় আসার সময় আমার পোষা বানর তিতানকেও আমার সাথে করে নিয়ে এসেছি। তিতান তো ঢাকায় এসে মহা খুশি ভাড়া করা ফ্লাটে উঠার সঙ্গে সঙ্গেই তিতান আমাদের ফ্লাটের ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে নাচতে লাগল তাধিনতাধিন করে । আমরা কলেজে গেলে সে আমাদের ফ্লাটের বারান্দায় থাকে। আমরা কলেজ থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত সে ঐ ফ্লাটের বারান্দায় থাকে। আমরা কলেজ থেকে ফিরে এসে রুমে থাকলে সে আমাদের রুমে এবং আশে-পাশের ফ্লাটের বারান্দা দিয়ে ঘুরে বেড়ায় । এই বিলডিংয়ের সকল বাসিন্দার সাথে তার খুব ভা হয়ে গেছে। সে সময় অসময় বিলডিংয়ের বিভিন্ন রুম এবং জানালায় ছুটে বেড়ায়। আমরা আমাদের জেলা ছোট শহরে অনেক বন্ধু বান্ধবের সাথে মিলেমিশে হৈ হুল্লা করে খেলাধূলা করে সময় কাটাতাম কিন্তু ঢাকায় এসে আমাদের তিন বন্ধুর কাছে একা একা ও ফূর্তিহীন বলে মনে হচ্ছিল।
তাই ভাবলাম যে, এই বিলডিংয়ের সকল বাসিন্দাদের সাথে মিলেমিশে থাকব। পড়া লেখার ফাঁকে ফাঁকে গল্প গুজব করে, অবসরে খেলাধূলা করে সময় কাটিয়ে দেব। জীবনটা নিরস ও অর্থহীন করে রাখব না। কিন্তু পাঁচতলার কয়েকজন যুবক সাথে, তাদের সাথে কিছুতেই ভাব জমিয়ে তুলতে পারলাম না। এই বিলডিংয়ের পঞ্চম তলার বাসিন্দারা অন্যান্য তলার বাসিন্দাদের সাথে কথাবার্তা বলে না এবং মিশে না। তারা গম্ভীর হয়ে আলাদা হয়ে থাকে । তারা দিনের বেলায় রুমের মধ্যে ঘুমায়। বিকেল হলে তারা সাইড ব্যাগ ঝুলিয়ে রুম হতে বেরিয়ে যায়। আবার কখনো কখনো বিকেলেও রুমে আসে। সারা রাত তাদে রুমে বিভিন্ন লোক ব্যাগ হাতে করে আসে যায়। প্রতি রাতে তাদের রুমে নতুন নতুন লোক আসে । তারা চুপে চুপে আসে আবার চুপে চুপে চলে যায় কারো সাথে কথাবার্তা বলে না । যদি কখনো কোনো কথা বলে তাহলে তারা সংকেতে এবং ইশারায় বলে। সর্বদা তাদের কক্ষ আটকানো থাকে। এই পাঁচতলার বাসিন্দাদের চলা ফেরা দেখে আমাদের তিন বন্ধুর মনে সন্দেহের উদয় হল। আমরা তাদের ফলো করতে লাগলাম । এই পাঁচতলার লোক গুলো কোথায় যায় এবং কোথা হতে ফিরে আসে আমরা তা ভালো করে লক্ষ্য করতে লাগলাম। তাদের সাথে আমরা খাতির জমাতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু তারা আমাদের পাত্তা দেয় না। সর্বদা তারা দূরত্ব বজায় রেখে চলে।
কিন্তু এ সব পদ্ধিতিতে তাদের নিকট হতে নিশ্চিত ক্লু পেলাম না। এর পর তাদের পিছনে আমাদের বানর তিতানকে লাগালাম। তিতানের গলায় ক্ষুদ্র লুকায়িত ক্যামেরা বেঁধে দিলাম । ক্যামেরাটি এত ছোট যে সেটি তিতানের লোমের মধ্যে লুকিয়ে থাকে বাহির হতে দেখা যায় না। গভীর রাতে পরপর তিন দিন পাঁচতলার বিভিনড়ব জানালায় পাঠিয়ে দিলাম তিতানকে। তিতান জানালায় জানালায় সারা রাত ঘুরে বেড়ায়। তিতান জানালায় জানালায় এমনভাবে ঘুরে বেড়ায় যে তার চলাচলে তেমন কোনো শব্দ হয় না। তিনদিন পর একদিন তিতানের গলা হতে ক্ষুদ্র ক্যামেরা খুলে নিয়ে সেটিতে ধারণকৃত ছবিগুলো পরীক্ষা করে দেখতে থাকলাম। ক্যামেরার ছবিতে দেখলাম এই পাঁচতলার একটি কক্ষে কিছু প্যাকেট আছে। আবার অন্য আরেকটি ছবিতে দেখা গেল। ঐ প্যাকেট গুলো হতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেটগুলো সাইড ব্যাগে ভর্তি করে কতিপয় লোক নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জিনিসগুলো যে কী তা পরিস্কার বোঝা যায় না। পরিস্কার বোঝা না গেলেও আমাদের মনে সন্দেহ হল যে, ঐ প্যাকেটগুলোতে এমন কোনো জিনিস আছে, যা হয়তো কোনো অবৈধ মালামাল হবে।
এই সন্দেহের ভিত্তিতে আমরা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করার জন্য মনস্থির করলাম । কিভাবে কোথায় খবর দেওয়া যায় একথা নিয়ে আমি ভাবছি । ঠিক সেই সময় আমার বন্ধু চঞ্চল বলল যে, তার ছোট মামা ঢাকা গোয়েন্দা বিভাগে চাকরী করেন। তখন আমি চঞ্চলকে বললাম তার ছোট মামাকে খবর দিতে । তৎক্ষণাৎ চঞ্চল তার ছোট মামাকে বিষয়টি জানিয়ে দিল । সে দিন ছিল শুক্রবার, বেলা এগারটা । গোয়েন্দা বিভাগ হতে গোয়েন্দা পুলিশ এসে বিল্ডিংয়ের চারপাশে ঘেরাও দিয়ে দাঁড়ালো। আর কিছু পুলিশ পাঁচ তলায় উঠার সিঁড়ির কিছু দূরে দূরে দাঁড়ালো। কযেকজন গোয়েন্দা পুলিশ দ্রুত গতিতে পাঁচ তলায় উঠে গেল। কলিংবেল বাজালে রুমের ভিতর হতে দরজা খুলে দিল । ঝটপট করে কয়েকজন পুলিশ বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করে তল্লাশী করে তারা অনেকগুলো ইয়াবা ট্যাবলেটের প্যাকেট ও ফেনসিডিলের বস্তা পেল। পুলিশ তাদের আটক করে স্থানীয় থানায় নিয়ে গেল। এ দৃশ্য দেখে তিতান হাতে তালি দিয়ে আনন্দে নাচতে লাগল।

Share.

মন্তব্য করুন