পৃথিবীতে অনেক স্থাপনা বিলুপ্ত হয়ে থেকে। সচরাচর প্রাকৃতিক কারণে বিলুপ্ত হলেও মানবসৃষ্ট কারণেও স্থাপনার বিলুপ্তি ঘটেছে এমনটা জানা যায়। পানির নিচে চাপা পড়ে বিলুপ্ত হয়েছে অনেক সভ্যতার নিদর্শন। গোটা শহর পানির নিচে হারিয়ে গেছে। ইতিহাস ঘেঁটে এমন তথ্য প্রত্নতাত্ত্বিকরা হাতে পেয়েছেন। আধুনিক সময়ে এসে সেই শহরগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
শহর স্বভাবতই মাটির ওপরে থাকবে সেটাই তো স্বাভাবিক। হোক সেটা সমতল ভূমির ওপর কিংবা বিশাল উঁচু পাহাড়ের চূড়ায়। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন, পানির নিচে শহর রয়েছে? হ্যাঁ, চীনের চেচিয়াংয়ে এমন একটি শহর আছে, যেটি পানির গভীরে অবস্থিত।
পানির নিচে সুন্দর সাদা স্থাপনা। পাশে সারিসারি দালান। সামনে পেছনে বাঁধানো রাস্তা।বর্তমানের অনেক শহরের মতোই এটি। পার্থক্য শুধু এক জায়গায়। অন্য সব শহর পৃথিবীর স্থলভাগে তথা ডাঙাতে হলেও এ শহরটি রয়েছে পানির নিচে। শহরের নাম সিটি অব লায়ন।
এই শহরটি রয়েছে চীনে। এই শহরের পেছনে ছিল ‘উ শি মাউন্টেন’ বা ফাইভ লায়ন মাউন্টেন নামের পর্বত। আজ থেকে অর্ধ শতক বছর আগে চীনে এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কারণে বিলুপ্ত হয়েছে ‘শি চেং’ বা ‘লায়ন সিটি’ নামে একটি শহর।
লায়ন সিটিসম্প্রতি ‘লায়ন সিটি’কে ভিন্নভাবে উদ্ধার করল স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ। ওই অঞ্চলের পর্যটক কিউ ফেং অনেকটা কৌতূহলের কারণে পানির নিচের শহরটি দেখতে যান। তারপর ভাগ্য বদলে যায় লায়ন সিটির।
লায়ন সিটিকে অ্যাটলান্টিস নামেই চেনে স্থানীয়রা। আশ্চর্য হলেও সত্যি এই শহরটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১৩০ ফুট নিচে। এক সময় এটি চীনের চেচিয়াংয়ের পূর্বাঞ্চলের রাজধানী ও অর্থনীতি কেন্দ্রের প্রধান শহর ছিল এটি। ১৯৫৯ সালে চীন সরকার এই শহরটিকে জল বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিণত করার জন্য পানির মাধ্যমে বন্যা তৈরি করে। এক পর্যায়ে সেটি কৃত্রিম হ্রদে রূপান্তরিত হয়! পরবর্তীতে এই হ্রদে পানির পরিমাণ এতই বাড়তে থাকে যে আস্তে আস্তে তলিয়ে যায় নগরের সব দালানকোঠা, বাড়িঘর, শিল্পকর্ম, মূর্তিসহ অনেক কিছুই। এমনকি লায়ন শহরের একমাত্র জাদুঘরটিও স্থান পেয়েছে পানির তলায়!
শহরটির বয়স প্রায় ১৩০০ বছর। প্রায় ৫৩ বছর আগে কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টির জন্য একটি বাঁধ তৈরি করার সময় প্রাচীন ও পরিত্যক্ত শহরটি পানির নিচে তলিয়ে যায়। শহরটি প্রায় ৬২টি ফুটবল মাঠের সমান।
২০০১ সালে প্রথম পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া এই শহর নিয়ে গবেষণা শুরু করেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। তারপর থেকে শহরটি নিয়ে মানুষের কৌতূহল বাড়তে থাকে। একে একে আবিষ্কার হতে থাকে এই শহরের নানা নিদর্শন। চীনের এই শহরের মানুষের ব্যবহৃত জিনিসপত্রসহ সে সময়কা সভ্যতার বিভিন্ন চিহ্ন বহন করছে বলে পানির নিচে লায়ন সিটি অন্য ১০টি পানির তলের শহর থেকে ভিন্ন। লায়ন সিটি বর্তমানে পানির নিচে প্রায় ৮৩-১৩১ ফুট নিচে অবস্থান করছে। পানির নিচে এত বছর থাকার পরও শহরটি এর স্বকীয়তা বজায় রেখে চলেছে। লায়ন সিটি নিয়ে নানা কল্পকথা প্রচলিত আছে।
ঠিক কিভাবে শহরটি পানির নিচে হারিয়ে যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। তবে শহরটির সৌন্দর্য পানির নিচে আজও এতটুকু কমেনি। পানির নিচে এত বছর থাকার পরও শহরটি এর স্বকীয়তা বজায় রেখে চলেছে।
অনেকটা স্বপেড়বর মত ছিল শহরটি, পানির নিচে থাকা শহরটির ধ্বংসাবশেষ থেকে যার প্রমাণ মিলে। কিন্তু মানুষের প্রগতিকে পথ ছেড়ে দিতে সরে যেতে হল শহরটিকে। পত্তনের মাত্র ৭০ বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যায় লায়ন সিটি।
পর্যটন বিভাগের উদ্যোগে ওই হ্রদে পর্যটকদের ডাইভিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি ‘ডাইভার্স প্যারাডাইস’-এ পরিণত হয় এই হ্রদটি। অনেকেই ভিড় জমাতে থাকেন পানির নিচের গুপ্তধনের আশায়। আবার অনেকে নেহাত রহস্য আর সৌন্দর্যের টানেই ডুব দেন হ্রদের গভীরে।

Share.

মন্তব্য করুন