তিনার মা লোকের বাড়িতে কাজ করে। তিনার ছোট এক ভাই আছে। তিনার বাবা অনেক টাকা ধার করে বিদেশ গিয়েছে। বিদেশ যাওয়ার পর তিনাদের কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। এর জন্য ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও তিনার মাকে বড় লোকের বাসায় কাজ করতে হয়। সংসার চালাতে হবে আবার দেনা পরিশোধ করতে হবে। তিনার মা প্রতিদিন সন্ধ্যার পর কাজ থেকে আসে। তিনার সমবয়সী সকলে স্কুলে যায়, তিনা স্কুলে যেতে পারে না, কারণ ওর মা স্কুলে যেতে দেয় না। তিনার মা তিনাকে রবির দেখাশুনা করতে বলছে (রবি তিনার ছোট ভাই)।
তিনা যদি স্কুলে যায় তাহলে রবিকে সারাদিন দেখে রাখবে কে। এ দিকে তিনার বয়স আট বছর। এই বয়সে ওর ক্লাস থ্রিতে থাকার কথা। আর ও এখন পর্যন্ত স্কুলে পা রাখতে পারে নাই। তিনা এ নিয়ে খুব মন খারাপ করে থাকে। তিনার পড়াশোনার খুব ইচ্ছে। তিনা একদিন মাঠে খেলা করছিল। তখন তিনাদের গ্রামের স্কুল শিক্ষিকা তিনাকে দেখে ডাক দিলো।
– এই মেয়ে শোন?
হাপনি মোরে ডাকতাছেন?
হ্যাঁ! তোমাকেই ডাকছি, তুমি থাক কোথায়?
মুই এই গ্রামেই থাহি। ইশকুলের দুইডা বাড়ির পেছনেই মোগো বাড়ি।
তুমি এমন ভাষায় কথা বলছ কেন? কোথায় পড়াশোনা কর?
মুই লেহাপড়া করি না।
বল কি? এত বড় হয়েছ এখনো পড়াশোনা শুরু করো নাই?
মোর মায় পড়তে দেয় না, ছোডো অ্যাকটা ভাই আছে রবি; অরে মোর পুরাদিন দেইখ্যা রাকতে হয়। মোর মায় মাইনষের বাড়ি কাম করে তো তাই।
ওহ! তোমার ভাই কতটুকু? ওর বয়স কত?
মায় কইছে অর পাঁচ বছর চলতাছে।
বলো কি? তাহলে তো তোমার ভাইয়েরও স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আচ্ছা তুমি কি পড়াশোনা করতে চাও?
হয়, মোর তো পড়তে ইচ্ছাই করে, কিন্তু বই খাতা কেনতে টাহা পামু কই? আর রবিরে দেইখা রাখবে কেডা?
– শোন এখন বইখাতা কিনকে হয় না। সরকার বিনামূল্যে বই দেয়। আর তোমার ছোট ভাইয়েরও পড়াশোনা শুরু করার বয়স হয়েছে। রবিকে তুমি প্রতিদিন স্কুলে তোমার সাথে নিয়ে আসবে। কি কন স্যার! অর ইশকুলে যাওয়ার বয়স অইছে নাকি?
মহিলা শিক্ষিকাদের ম্যাডাম/ম্যাম বলতে হয়, স্যার নয়। পড়াশোনা করলে অনেক কিছু শিখতে পারবে। অবশ্যই স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক বলে ক্লাস আছে যেখানে পাঁচ-ছয় বছরের শিশুরা পড়তে পারে। আর তুমি রবিকে নিয়ে কোনো চিন্তা করবে না, ওখানে অনেক ধরনের খেলাধুলার জিনিসপত্র আছে যা শিশুদেরকে খেলতে দেয়া হয়, আবার মাঝে মাঝে খাবারও দেয়া হয়। তোমার সাথে রবিকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে আসবে আবার ছুটি শেষে নিয়ে যাবে।
তাইলে মুই কোন কেলাসে পরমু?
– তুমি ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হবে। আর এর জন্য তোমার ইচ্ছে থাকতে হবে। তোমার মা যেহেতু স্কুলে যেতে দিতে চায় না তাই তোমার মাকে বুঝিয়ে তোমার ইচ্ছের কথা জানাবে, তার মাধ্যমেই পড়াশোনা শুরু করতে হবে। পড়াশোনা করে তুমি শিক্ষিত হবে, ভালো চাকরি করতে পারবে তোমার মাকে তখন আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হবে না।
হয় ম্যাম! মুই তাইলে কাইল থিকাই ইশকুলে আইমু, লগে রবিরে ও নিয়া আইমু।
এভাবেই তিনার ইচ্ছের কারণে শুরু হলো তার স্কুলজীবন।

Share.

মন্তব্য করুন