মাঝরাস্তায় গাড়ি নষ্ট হলে কার না মেজাজ খারাপ হয়! এর মতো বিপদ আর নেই। যেখানে সেখানে তো আর মেকার পাওয়া যায় না। তবে সুখবর হলো- মাঝরাস্তায় নষ্ট গাড়ি মেরামত করতে মোবাইল অ্যাপনির্ভর উদ্যোগ ‘যান্ত্রিক’ চালু হয়েছে। উদ্যোগটির আদ্যোপান্ত উপস্থাপন করছি এখানে। যান্ত্রিক মূলত মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকার ভেতরে কিংবা হাইওয়েগুলোতে গাড়ি ও মোটরসাইকেল মেরামতের সেবা দেয়ার একটা প্লাটফর্ম। মনে করো ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছো, হঠাৎ টাঙ্গাইলে গিয়ে গাড়ি খারাপ হয়ে গেলো। তখন অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজে সাহায্য পাঠানোর জন্য রিকুয়েস্ট পাঠানো যাবে এবং সেখানেই দ্রুততম সময়ে গাড়ি সারানোর টেকনিশিয়ান পৌঁছে দেবে যান্ত্রিক। ঢাকার ভেতরে যেকোনো রাস্তাতেও একই সেবা পাওয়া যাবে গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেলের জন্য। এমনকি খুব শিগগিরই চট্টগ্রাম ও সিলেটেও সেবাটি পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে জেলা শহরে বিস্তৃত করা হবে। এটাকে রোডসাইড হেল্প সার্ভিস বলছে যান্ত্রিক। তবে রোডসাইড হেল্প ছাড়া আরো কিছু হোম সার্ভিস দিচ্ছে যান্ত্রিক।
যান্ত্রিক অ্যাপের মাধ্যমে মূলত একাধিক সেবা পাওয়া যাবে। যার অন্যতম রোডসাইড হেল্প বা রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হলে টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে ঠিক করার ব্যবস্থা করা। এ ছাড়াও অ্যাপটির মাধ্যমে কার ওয়াশ/পালিশ, গাড়ির সার্ভিসিংসহ আনুষঙ্গিক ছোটোখাট কাজ ও সমস্যার সমাধান করা, ঘরের ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি মেরামত করা, প্লাম্বিংসহ হোম অ্যাপ্লায়েন্স সার্ভিসিং ও মেরামতের কাজে হোম সার্ভিস পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য এই সেবাগুলো আপাতত ঢাকার ভেতরে সীমাবদ্ধ।
অ্যাপটি মোবাইলে ইনস্টল করার পর তা ওপেন করলে কোন ধরনের কাজ বা সমস্যা তা নির্বাচন করার কথা বলবে। এরপর সেখানে ক্লিক করে সাবমিট করলে একটি সার্ভিস অর্ডার তৈরি হয়ে যাবে এবং যান্ত্রিকের কন্ট্রোল সেন্টারে নোটিফিকেশন চলে যাবে। আর তখন কাস্টমার সাপোর্ট টিম থেকে একটি ফোন কল যাবে গ্রাহকের মোবাইলে। এরপর অর্ডারটি কনফার্ম করা হবে এবং কাছাকাছি অবস্থানরত দক্ষ একজন টেকনিশিয়ানকে সার্ভিসটি দেয়ার জন্য নিয়োগ করা হবে। রোডসাইড হেল্প সার্ভিসের ক্ষেত্রে কন্ট্রোল সেন্টার থেকে গ্রাহকের অবস্থান নিখুঁতভাবে ম্যাপে দেখা যাবে এবং নিকটবর্তী টেকনিশিয়ানদের অবস্থানও ম্যাপে দেখা যাবে। টেকনিশিয়ান নিয়োগ হওয়ার পর গ্রাহক অ্যাপের ভেতরেই টেকনিশিয়ানের প্রোফাইল ও রিভিউ দেখতে পাবেন। এরপর টেকনিশিয়ান তার কাজ শুরু করবেন। সর্বশেষ ধাপে গ্রাহক অ্যাপের মাধ্যমে নির্বাচন করবেন তার বিল কোন পদ্ধতিতে পরিশোধ করতে চান। সে ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ কিংবা ক্যাশের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা যাবে অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট থেকে। এগুলো অ্যাপ ছাড়াও ওয়েবসাইট থেকেওকরা সম্ভব। এই প্রক্রিয়া শুধু রোডসাইড হেল্প নয়, বরং বাসাবাড়ির হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ইলেক্ট্রিক ও প্লাম্বিং সার্ভিসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
রোডসাইড হেল্প পেতে হলে মেম্বার হতে হবে। এ জন্য আগ্রহীদের মেম্বারশিপ নিতে হবে। অ্যাপ থেকে কিংবা ওয়েবসাইট থেকেই মেম্বারশিপ এর জন্য অর্ডার দেয়া যাবে। ক্রেডিট কার্ড এ অনলাইনে পেমেন্ট করার পর মেম্বারশিপ অটোমেটিক্যালি একটিভ হয়ে যাবে। মেম্বারশিপ গাড়ির জন্য বছরে দুই হাজার ৯৯৫ টাকা এবং মোটরসাইকেলের জন্য বছরে এক হাজার ৪৯৫ টাকা। রোডসাইড হেল্প নিতে হলে গ্রাহকের সার্ভিস চার্জ ৪৯৫ টাকা থেকে শুরু হবে, কিন্তু সমস্যার ধরন অনুযায়ী সার্ভিস চার্জ বেশি হতে পারে। সার্ভিস চার্জ কোন কারণে কাস্টমার অন দ্য স্পট পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে শর্তসাপেক্ষে যান্ত্রিক সেটি পরিশোধ করবে, যেটি পরবর্তী সময়ে গ্রাহকের কাছ থেকে নেবে যান্ত্রিক।
ঢাকা ছাড়াও যান্ত্রিক তাদের সেবা দিচ্ছে দেশের হাইওয়েগুলোতে। এ জন্য ইতোমধ্যে সাত শতাধিক মোটর ওয়ার্কশপের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে যান্ত্রিক। যাতে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ওয়ার্কশপ। এসব ওয়ার্কশপে কয়েক হাজার টেকনিশিয়ান রয়েছে যারা তাৎক্ষণিক এই সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছে বলে যান্ত্রিকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আল ফারুক শুভ জানান। যান্ত্রিকের সেবা সবার দ্বারে পৌঁছে দিতে ব্যাক এন্ডে কাজ করে চলেছেন শুভর নেতৃত্বে দশ জনের একটি দল। যারা সফটওয়্যার, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এবং কাস্টমার সাপোর্টের দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান শুভ। গ্রাহকদের সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে যান্ত্রিকের লোগো, ওয়েবসাইট, অ্যাপ, সবকিছু সাজানো হয়েছে বাংলায়। শুভ বলেন, মাতৃভাষাতেই গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বোঝাপড়াটা সবচেয়ে ভালো হয়, কাজেই আমরা ভেবে চিন্তে নিজেদের ভাষাটাই ব্যবহার করেছি। এতে করে গ্রাহকরাও স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন।zantrik.com এই ওয়েবসাইটটিতে সেবাগুলো নেয়া যাবে। এ ছাড়াও গুগল প্লে স্টোর কিংবা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে Zantrik নামে পাওয়া যাবে অ্যাপটি।

Share.

মন্তব্য করুন