পৃথিবী বৈচিত্র্যময়। বিচিত্রতার বেশির ভাগ অংশে রয়েছে নানা প্রজাতির প্রাণী। অধিকাংশ প্রাণী সম্পর্কেই হয়ত আমরা জানি না। পৃথিবীতে রয়েছে অনেক সুন্দর প্রাণী। তবে এত সুন্দর প্রাণীর মাঝেও রয়েছে একটি প্রাণী যা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রাণী।
অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র উপকূলের কাছের অগভীর সাগরের তলে ছোট্ট এই প্রাণীটির বসবাস। গায়ের রঙ বিচিত্র। শুধু রঙই নয়, নানা ধরনের ছিটা, দাগ, ডোরা মিলিয়ে দেখতে এতই সুন্দর যে তোমরা অবশ্যই বলবে যে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রাণী।
প্রাণীটির নাম জানতে ইচ্ছা করছে! প্রাণীটির নাম হচ্ছে নিউডিব্রোঙ্ক। নিউডিব্রোঙ্করা ছোট্ট অমেরুদণ্ডী প্রাণী। এরা এদের সৌন্দর্য দিয়ে সহসাই একজন মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিতে পারে। নিউডিব্রোঙ্ক শব্দটি নুডিব্যাঞ্চটি শব্দ থেকে এসেছে। ল্যাটিন ‘নুডুস’ এবং গ্রিক শব্দ ‘ব্রংকিয়া’ শব্দের সংযোগে তৈরি হয়েছ নুডিব্যাঞ্চ। নুডুস অর্থ ‘নগ্ন’ এবং ব্রংকিয়া অর্থ ‘গিলস’। নিউডিব্রোঙ্ক প্রাণীটির এমন নামকরণের কারণ হচ্ছে এদের পিছনে ছোট ফুলের মত অঙ্গটি উন্মুক্ত।
পৃথিবীতে নিউডিব্রোঙ্কদের ৩ হাজারের মতো প্রজাতি আছে। এদেরকে সমুদ্রের ২৫০০ মিটার গভীরে পাওয়া যায়। এরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সমুদ্রগুলোর উপকূলের অগভীর পানিতে বসবাস করে। এ ছাড়া এদেরকে অ্যান্টার্কটিকায়ও দেখতে পাওয়া যায়। এরা খুব ছোট। একটা চা চামচে করে নেয়া যাবে। এরা কত ছোট সেটা ছোট্ট একটি কৌশলের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি। যদি সংখ্যার মাধ্যমে এটি প্রকাশ করি তাহলে বুঝতে অনেক সহজ হবে।
প্রজাতিভেদে একটা নিউডিব্রোঙ্ক এক ইঞ্চির চার ভাগের এক ভাগ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। আর ওদের ওজ সর্বোচ্চ তিন দশমিক তিন পাউন্ড পর্যন্ত হয়।
কিছু নিউডিব্র্যাঞ্চ এর দেহে শক্তি উৎপন্ন হয়। এদের দেহের ভেতরে নানা রকম শেওলা তৈরি হয়। এই শেওলাগুলো আলোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে এদের শক্তি উৎপাদন করে। এই শক্তিকে প্রাণীরা নানারকম কাজে ব্যবহৃত করে।
এই প্রাণীটির মাথায় দু’টি শিং আছে। এটি মূলত রাসায়নিক রিসেপ্টর যা নিউডি ব্র্যাঞ্চকে খাদ্য এবং সঙ্গী খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এদের এক সেট শক্তিশালী দাঁত রয়েছে। তা দিয়ে কোরাল, স্পঞ্জ, মাছের ডিম ইত্যাদি সাগরের মেঝে থেকে নিয়ে খায়। এ ছাড়াও
এদের মাথার কাছে কিছু কর্ষিকা থাকে, যেগুলো দিয়ে নিউডিব্রোঙ্করা খাবার খুঁটে খুঁটে বের করে। নিউডিব্রোঙ্করা যে খাবার খায় তা শুধু তাদের পেট ভরার জন্য নয়। এই খাবার ওদের শরীরকে রাঙাতেও সহায়তা করে। যখন ওরা খাবার খায় তখন খাদ্যের দেহে থাকা রঞ্জক পদার্থকেও ওরা শুষে নেয়। কিছু নিউডিব্রোঙ্ক তো এদের শিকারের দেহ থেকে বিষও শুষে নেয় আর তা ত্বকে নিঃসরণ করে। এই বিষ তাদের মাছ এবং অন্য শিকারিদের খাদ্য হওয়া থেক নিউডিব্রোঙ্ককে রক্ষা করে।
নিউডিব্যাঙ্কের দু’টি প্রজাতি আছে যারা পানির মাঝে বিভিন্ন শব্দ করতে পারে। ১৮৮৪ সালে একজন বিজ্ঞানী এটা আবিষ্কার করেন। এই শব্দগুলোর মাধ্যমে নিউডিব্যাঙ্ক এর বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীকে আকর্ষণ করে। এ জন্য এরা নানারকম শব্দ ব্যবহার করে।
নিউডিব্র্যাঞ্চকে অনেক মানুষ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। চিলি, রাশিয়া এবং আলাস্কাসহ কিছু দ্বীপপুঞ্জ এর অধীবাসীদের দেখা যায় এই প্রাণীগুলোকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে। অনেকেই এই প্রাণীগুলোকে কাঁচা অবস্থায় খেয়ে থাকে।
এই প্রাণীগুলোকে দেখলেই স্পর্শ করতে ইচ্ছা করবে। এদের সৌন্দর্য সত্যিই মুগ্ধতা এনে দেয়। অসাধারণ রঙিন প্রাণী নিউডিব্র্যাঞ্চ যার সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয় সকলের।
Share.