গ্রামের সবুজ মায়ায় বেড়ে ওঠা এক মাটির ছেলে আদীব। ছায়া সুনিবিড় গ্রাম ছেড়ে বহুদিন হলো শহরে এসেছে সে। শহর বলতে একেবারে রাজধানী ঢাকায়।
ইট-পাথরের এ জনপদে মন বসে না তার। শেকড়ের মায়া তাকে বারবার টেনে নিয়ে যায় শাপলাভাসা ঝিলে। সন্ধ্যারাতে জোনাকজ্বলা কোনো বাঁশবাগানে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে পদ্মপুকুরে হাঁসের মতো ভেসে থাকতে। পা দুটো কখনো কখনো কাদামাটির পরশ পেতে চায়। তবুও সে জীবনজয়ের স্বপ্নে এ শহরকেই আপন করে নিয়েছে! আদীব যে ছাত্রাবাসে থাকে, সেখানে বাংলায় কথা বলা যায় না। ভুল হোক, শুদ্ধ হোক- ইংরেজিই বলতে হবে। আদীব এ বিষয়টিকে ভালোভাবেই নিয়েছে এবং অনেক কিছু শিখছেও। কিন্তু মাঝে মাঝে সে অস্থির হয়ে ওঠে। আহা!
কত দিন হলো মায়ের ভাষায় কথা বলা হয় না। তার হৃদয়ে যেন মায়ের শেখানো শব্দগুলো পরম মমতায় ঘুমিয়ে আছে। যা উচ্চারণ করতে পারছে না সে। ভাবে, তাহলে কি সে প্রকৃতির মায়া হারিয়ে এবার মায়ের ভাষাও হারাতে বসেছে?
আদীব তার বন্ধুদের প্রস্তাব দিলো- চল্! একদিন প্রাণ খুলে মায়ের ভাষায় কথা বলি। পড়ন্ত এক বিকেলে সত্যি সত্যি তারা জমায়েত হলো। শুরু হলো আড্ডা- মায়ের ভাষায়, প্রাণের ভাষায়। এ শুধু আড্ডা নয়, যেন একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে একটি পর্ব ছিল আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার। সবাই সবার গাঁয়ের ভাষায় গান, গল্প আর স্মৃতিচারণে মুখর হয়ে উঠল।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেখানে যে কারো কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল, সে কোন অঞ্চলের লোক। বিচিত্র কণ্ঠে বিচিত্র উচ্চারণ শুনে আদীবের মনে পড়ল কুরআনের একটি আয়াত- “আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। অবশ্যই এর মধ্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য।” (সূরা রূম : ৩২)
আদীব ভাবল, আহা! মায়ের ভাষা কতই না মধুর। মনে হলো, বহুদিন পর হৃদয়ের কথাগুলো ঝরনার মতো প্রবাহিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে তার প্রতিটি শিরা-উপশিরায়।

Share.

মন্তব্য করুন