স্কুল থেকে ফিরে কারো সাথে কোনো কথা নেই- সোজা বিছানায় শুয়ে পড়ল মাহী। মন ভীষণ খারাপ। ভাবে, তার নাম মাহী না হয়ে ‘হারু’ হলেই ভালো হতো! কারণ সে সবকিছুতেই হেরে যায়। যেমন, ক্লাসে প্রথম হওয়ার জন্য কত চেষ্টাই না করেছে সে; হয়েছে দ্বিতীয়। এ নিয়ে তার দুঃখের শেষ নেই। আর আজও সে হেরে যাওয়ার কষ্টেই কাঁদছে। স্কুলের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় সে কোনো একটিতেও প্রথম হতে পারেনি। তার কাছে সফলতা মানেই যেন ‘প্রথম’ হওয়া!
তবে মাহীর বাবা আবার অন্য মানুষ। ছেলের ব্যর্থতায় কখনোই ভেঙে পড়েন না। অন্য বাবারা যখন ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষায় খারাপ করলে শাসন করেন, মাহীর বাবা তখন হেসেই উড়িয়ে দেন সবকিছু। তিনি প্রায়ই বলেন, পরীক্ষায় প্রথম হওয়াই সফলতা নয়, সফলতা হচ্ছে ‘মানুষ’ হওয়ার মধ্যে। তুমি দ্বিতীয়, তৃতীয়- এমনকি ফেল করেও একদিন সফল হতে পারো। যদি তোমার থাকে প্রবল জ্ঞানপিপাসা, থাকে সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন! মাহী যখন শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছে, তখনই বাবা এসে তাকে ডাক দিলেন। বাবাকে জড়িয়ে সে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। সব শুন বাবা বললেন, চলো আমরা অন্যরকম এক প্রতিযোগিতার সাথে পরিচিত হই। যে প্রতিযোগিতায় তোমাকে জিততেই হবে। জিততে হব আমাকেও। এই বলে তিনি কম্পিউটারে চালু করে দিলেন বাংলা অর্থসহ সুললিত কুরআন তিলাওয়াত। মাহী মনোযোগ দিয়ে শুনছে-
“নিশ্চয়ই সৎকর্মশীল ব্যক্তিরা থাকবে প্রাচুর্যের মধ্যে। তারা সুসজ্জিত আসনে বসে সবকিছু অবলোকন করবে। হে রাসূল (সা)! আপনি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে পাবেন। তাদের ছিপিআঁটা বোতল থেকে বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে- যার মোহর হবে কস্তুরি। আর যারা প্রতিযোগিতা করে, তাদের উচিত এ বিষয়েই প্রতিযোগিতা করা। (সূরা মুতাফফিফিন : ২২-২৬)
বাবা বললেন, পৃথিবীতে যদি আমরা ভালো কাজ করে যেতে পারি, তাহলে জানড়বাতে রয়েছে আমাদের জন্য অতুলনীয় পুরস্কার। আল্লাহ এখানে সে পুরস্কার পাওয়ার জন্যই প্রতিযোগিতা করতে বলেছেন।
সুতরাং পৃথিবীর সব প্রতিযোগিতায় হেরে গেলেও মুমিনের দুঃখ থাকতে পারে না। মাহীর অশ্রুভেজা চোখে আনন্দের আলো জ্বলে উঠল। ভাবল, এ জয়-পরাজয় তো সামান্যই। এবার যেন ফেরদাউস বিজয়ের স্বপ্ন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। যেন এখনই সে নেমে পড়বে কাজে- কল্যাণের প্রতিযোগিতায়!

Share.

মন্তব্য করুন