নিউজিল্যান্ডের অটাগোনামক স্থানে কয়েকোহি বিচের ময়েরাকিতে এই এই আশ্চর্য ও রহস্যময় নিদর্শন অবস্থিত যার নাম ময়েরাকি বোল্ডার্স । ময়েরাকি হলো নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় ভাষা শব্দ। এটা একটি মাওরি শব্দ। নিউজিল্যান্ডের আদি অধিবাসী হলো এর মাওরিরা। এই বুল্ডার বা নুড়ির সাথে মাওরি মিথ বা মাওরি পুরাণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের বিশ্বাস এটা সাগর থেকে এসেছে বা এমনি কিছু একটা। আর বিজ্ঞান বলে আজ থেকে প্রায় ৬০ মিলিয়ন বছর আগে পাললিক শিলা দ্বারা এই বুল্ডার গঠিত। কিন্তু এই গোলাকার সেপ কিভাবে পেলো তা নিয়ে বিতর্ক বিদ্যমান। হয়ত বাতাসের জন্য এমনটি হয়েছে। আমরা জানি বাতাসের জন্য মাউন্ট এভারেস্ট পর্যন্ত প্রতি বছর ক্ষয়ে যায়। এই পাথরগুলো সমুদ্রসৈকতের কাছেই অবস্থিত। এই বুল্ডার বিখ্যাত শুধু এর আকৃতি আর সৌন্দর্যের জন্য। আপনি যদি এটা দেখেন তবে ভাবতে বাধ্য হবেন যে এটা নিশ্চয় ডাইনোসরের ডিম এবং আপনি এটা ভাবলে আপনাকে মোটেও দোষ দেয়া যাবে না। কেউ যদি কোন সাগরপাড়ে ৩ ডায়ামিটারের এবং কয়েক টনের ডিম্বাকার পাথর দেখে তবে সে অবশ্যই দৈত্যাকার কোন প্রাণীর ডিম ভেবে বসবে। এই বিশালাকার ডিমের মধ্যে আবার একটি ডিম কিছুটা ফাটা। অনেকেই আবার এই ফাটলের মধ্যে প্রবেশ করে ছবি তুলে যাতে মনে হয়, এইমাত্র ডিম ফুটে বেড় হচ্ছে।
নিউজিল্যান্ড সরকার তাদের গাইড বুকে বা নির্দেশিকাতে উল্লেখ করে, এটা সকালে দেখতে খুব সুন্দর লাগে এবং সন্ধ্যায় এটা সব থেকে বেশি সুন্দর লাগে কারণ সন্ধ্যায় নীল সাগরে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে এই বুল্ডারের ওপর পড়ে এবং বালিতে ছায়া পড়ে যা দেখে মনে হবে আপনি জুরাসিক পার্কে চলে এসেছেন। নিউজিল্যান্ড সরকার এটাকে সায়েন্টিফিক পিজারভেশনে সংরক্ষণ করেছে যা আমাদের দেশে বিরল। কলোনিয়াল পিরিয়ডে এই সকল প্রাকৃতিক নিদর্শন মানুষের নজরে আসে এবং সাম্প্রতিককালে এটা পর্যটন খাতে যুক্ত হয়। বোল্ডারের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে এই বোল্ডারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দশমিক ১ থেকে ১ ডায়ামিটারের। যা বিশাল এক আকৃতি। শুনে মনে হচ্ছে এটি খুব একটা বড় না। কিন্তু সামনা সামনি দেখলে সেই ধারণা পালটে যেতে বাধ্য। আর বাকি পাথরগুলো ১.৫ থেকে ২.২ ডায়ামিটারের। এগুলো আরো বিশালাকার। আর এই পাথরগুলো ধূসর, যা একে ডিমের আকারই দিয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এগুলো সদ্য পাড়া ডিম।
নিউজিল্যান্ড সরকার এই পর্যটন খাতকে আরো আকর্ষণীয় করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। মূল শহর থেকে এই সাইটে আসার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রেখেছে এবং আরো আছে হোটেল সুবিধা এবং ট্রান্সপোর্ট সুবিধা। বিশেষ করে নিরাপত্তাসুবিধা অনেক উন্নত। এভাবে নিউজিল্যান্ড সরকার তাদের জাতীয় সম্পদ সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের দ্বারা বিশ্ববাসীর সামনে তা তুলে ধরেছে।