হেমিলনের বংশীঅলা, হাতে কালো বাঁশি,
বটবৃক্ষের মতো মানুষ, আকাশছোঁয়া শির
হাসে যখন, ঝরে পড়ে মুক্তা রাশি রাশি
যে চায় তাঁর মুখের দিকে, বলে, বিশাল বীর!

দৃপ্ত পায়ে সেই মানুষটা দাঁড়ায় যখন এসে
এবং কালো বাঁশিতে তাঁর তোলে জাদুর সুর
হিজলতলীর মাঠঘাট যায় সেই সুরেতে ভেসে
উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে নিকট এবং দূর

নাচতে থাকে ছেলেবুড়ো সুরের তালে তালে
চতুর্দিকে কেউ যেন এক ফেলে দেছে জাল
আটকে গেছে মাছের মতো সকলে সেই জালে
দেখতে এসে থমকে দাঁড়ায় চপল মহাকাল

ঘিরে আছে সবাই মিলে আজব মানুষটাকে
বাঁশি ফেলে বংশীঅলা বলে ওঠে কথা:
“কী চাও সবাই?” বলে চাঁদের মতো হাসতে থাকে
ঢেউয়ের মতো বলে তারা, “সোনার স্বাধীনতা!”

স্বাধীনতা ! স্বাধীনতা! গর্জে ওঠে ঢেউ
হেমিলনের বংশীঅলা নেয় তুলে ফের বাঁশি
এমন সুর সে তোলে এবার, শোনেনি যা কেউ
নাচতে থাকে রাখাল জেলে ছাত্র মুটে চাষী

ঘর ফেলে সব ছুটতে থাকে বংশীঅলার সাথে
দৈত্য-দানোর দেশ পেরিয়ে সাত সমুদ্দুর পার
ছোটে তারা দিনের বেলা এবং ছোটে রাতে-
কোথায় আছে স্বাধীনতা গজমোতির হার!

খুঁজতে খুঁজতে মিললো শেষে পাক-ডাইনির কাছে
বজ্রাঘাতে ডাইনিটাকে করলো কুপোকাত
কেউ ফিরলো বাঘের পিঠে, কেউবা বোয়াল মাছে
কেউ বা আবার হারিয়ে গেল যেখানে হিম রাত

হেমিলনের বংশীঅলা ফিরলে হিজলতলী,
গাঁয়ের মানুষ বরণ করে নিলো চোখের জলে;
তারপরে কী ঘটলো হঠাৎ, সেই কাহিনী বলিসবাই
তখন ঘুমে বিভোর, রাত এগিয়ে চলে

পাক-ডাইনির প্রেতাত্মারা লুকিয়ে ছিলো গাঁয়ে
শেষ প্রহরে ঘিরে ফেললো বংশীঅলার ঘর
সকাল বেলা গ্রামবাসীরা আসলো ত্রস্ত পায়ে
দেখতে পেলো বংশীঅলার রক্তাক্ত অন্তর!

Share.

মন্তব্য করুন