সকাল সকাল তাড়াহুড়া করে গোসল সেরে নতুন পাঞ্জাবি পরে মসজিদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে জাইদ। প্রতিদিন মসজিদে না গেলেও সপ্তাহে শুক্রবার বলার আগেই প্রস্তুত হয়ে থাকে। তার বাবার আগে গোসল সেরে মায়ের কাছে এসে বায়না ধরে নতুন জামা কাপড় পরিয়ে দেয়ার জন্য। মা ছেলের বায়নায় সাড়া দিয়ে রান্নার মাঝখানে একটু সময় করে ছেলেকে সুন্দরভাবে নামাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে দেন। বাবা গোসল সেরে রুমে আসতেই দেখে জাইদ মসজিদে যাওয়ার জন্য পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত হয়ে আছে।
ছেলেকে এমন রূপে দেখে বাবার খুব আনন্দ হয়। সে আনন্দ আরো পূর্ণতা লাভ করে যখন সে বাবার হাতের আঙুল ধরে জুমার নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যায়। জাইদ কাপাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বাবা-মা ও বড় বোন ইশিতার খুব আদরে বেড়ে ওঠা তার। বাড়ি থেকে খানিক দূরেই তার স্কুল। নিয়মিত স্কুলে যায়। বাড়ির মতো স্কুলের সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। পড়া শোনায় খুব ভালো বলে বায়না ধরার আগেই বাবা-মা তা পূরণ করার চেষ্টা করেন। জাইদের জানার আগ্রহ দেখে তার পরিবারে সকলেই খুব বিরক্ত। কারণ সকল জিনিস নিয়েই সে জানতে চায়; কখন যে কাকে কী প্রশ্ন করে বসবে তা সে নিজেও ঠিক মতো জানে না। প্রতি মুহূর্তে তার এমন প্রশ্নের জন্য তার বোন ইশিতা বেশ বিরক্ত বোধ করে। তবে বাবা-মা খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে তার প্রশ্নের সমাধান দিয়ে থাকে। এইতো গত শুক্রবার মসজিদ থেকে ফিরে রুমের ভিতরে বসে বাবাকে প্রশ্ন করছে, আচ্ছা বাবা মসজিদে অনেকে পড়ে এসেও কেন ধাক্কা ধাক্কি করে সামনে বসতে চায়? তার প্রশ্ন শুনে তার মা অবাক হয়ে তাকে শাসনের সুরে চুপ করতে বলেছে। কিন্তু বাবা তার মায়ের কথায় সাড়া না দিয়ে তার প্রশ্নের সমাধান দেয়ার চেষ্টা করছে। কথার মাঝখানে ইশিতা পাশের রুম থেকে এসে জাইদকে উদ্দেশ করে বলছে, তুই তো মসজিদে মিষ্টি খেতে যাস, তো এতো কিছু দেখস কেন? ইশিতার কথা শুনে জাইদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে তাকে ধরার জন্য দৌড়াচ্ছে। প্রতি শুক্রবার তাদের মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া সমাপ্ত করে মিষ্টি দেয়। তাই বলে একেবারে যে সে মিষ্টি খেতে মসজিদে যায় তা নয়, নামাজ পড়াও তার উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি। তবে এটা সত্যি মিষ্টির প্রতি জাইদের সামান্য লোভ আছে।
মসজিদে বাড়ি থেকে তার বাবার সাথে গেলেও নামাজ শুরু হওয়ার আগেই পাড়ার অনেক ছেলের সাথে তার দেখা মিলে। যাদের সাথে সে প্রতিদিন বিকেলে তাদের খেলার মাঠে নানান ধরনের খেলার মেতে ওঠে। তার বাবা মনে মনে ভাববে, ছেলেটা মাঝে মাঝে কেমন যেন বোকার মতো প্রশ্ন করে বসে। যদিও তার অনেক প্রশ্নে সে নিজেও অবাক হয়েছে।
কয়েকদিন আগে জাইদ গভীর লক্ষ করে জিজ্ঞেস করেছিল, বাবা তুমি বলেছিলে মানুষ মসজিদে দান করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য; কিন্তু মানুষ এমনভাবে দান করে কেন?
তার বাবা অবাক হয়ে জানতে চায় কেমন করে বাবা? জাইদ আবার বলতে শুরু করল, এই যে ৫০ টাকা দিয়ে বলে মাইক্রোফোন দিয়ে নাম বলতে। তা ছাড়া ছোট কোন নোট হলে হাতের মুঠোয় করে দান করে আর বড় নোট হলে সকলকে দেখিয়ে দান করে। ছেলের এমন অদ্ভূত প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ হলেন তার বাবা। বাধ্য হয়ে বললেন, বাবা আজকে নয় তোমার প্রশ্নের উত্তর অন্য একদিন ঠিক বলব। বাবার কথা বাধ্যছেলের মতো একবাক্যে মেনে নিলো সে।
জাইদ খুব পটু একটি ছেলে। কিন্তু মসজিদ থেকে নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় তাকে দেখলে যে কেউ ভাবে এর চাইতে বোকা ছেলে হতেই পারে না। কারণ মসজিদ থেকে দেয়া মিষ্টি সে বাড়িতে যাওয়ার আগেই খেয়ে শেষ করবে। মিষ্টি খাওয়ার সময় পুরো হাত জুড়ে রস গড়িয়ে পড়বে। মিষ্টির রস মাখা হাত জিব্বা দিয়ে খেয়ে পরিষ্কার করে ফেলবে সে। নিজের নেয়া মিষ্টি খেয়ে বাবার মিষ্টির প্রতি লোভ জাগে তার। তার বাবা হয়তো তার মনের কথা বুঝতে পারে বলেই নিজের মিষ্টিটাও ছেলের হাতে তুলে দেন। পূর্বের মতো একইভাবে বাবার মিষ্টিটিও খেয়ে শেষ করতে তার খুব বেশি সময় লাগে না। ছেলের এমন কা- দেখে মনে মনে তার বাবা হাসেন কিন্তু ছেলেকে মোটেও বুঝতে দেন না। রাস্তায় সকল মিষ্টি খাওয়া শেষে বাড়িতে শূন্য হাতে যাওয়ার পর জাইদের মা তার হাত দেখে ঠিক বুঝতে পারেন রাস্তায় সে কী করেছে। তবু কিছু না বলে আদর্শ মায়ের মতো ছেলের হাত দু’টি সুন্দর করে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেন। তার মাও জানেন ছেলেটির মিষ্টির প্রতি লোভ একটু বেশিই।

Share.

মন্তব্য করুন