সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নিরবচ্ছিন্ন করতে সেতুর
বিকল্প নেই। এক স্থানের সাথে অন্য স্থানের সংযোগ
স্থাপনেই তৈরি হয় সেতু। যেটি একসাথে সময় এবং
দূরত্ব দুটোই কমিয়ে আনে। অনেক ক্ষেত্রে এটি হয়
পর্যটনের উপলক্ষও।
সেতু সাধারণত নদীর ওপরে স্থাপিত হয়। এছাড়াও
সমুদ্রের বুকে, এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে, এক
পর্বত থেকে আরেক পর্বতেও সেতু স্থাপন করা হয়।
আমাদের দেশে সেতু নদীর ওপর নির্মাণ করা হলেও
বিশ্বের অনেক দেশে সেতু পাহাড়-পর্বতের মাঝে নির্মাণ
করা হয়। বিশ্বের অধিকাংশ সেতু নিরাপদ তবে
বিশ্বজুড়ে বেশ কিছু সেতু আছে যেগুলো খুবই
বিপজ্জনক।
বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন কিছু সেতু রয়েছে যেগুলো
রীতিমতো ভয়ঙ্কর। উচ্চতা, আয়তন এবং আকৃতির
কারণে এসব সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলের কথা
ভাবলেও শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়। আর চলাচলও
চরম বিপদসঙ্কুল।

বিশ্বের-ভয়ঙ্কর-কিছু-সেতু-1

হুসেনি সেতু

হুসেনি সেতু
তেমন একটি সেতু হুসেনি। স্রেফ কতগুলো তারের মধ্যে কাঠের কিছু ছোট ছোট টুকরো আর ডাল বেঁধে রাখা। কোনো মতে সেসব টুকরোতে পা দিয়ে পার হওয়া যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। এটা কোনো ছোটখাটো সেতু নয়, ৬৩৫ ফুট লম্বা সেতু। আর এটা দিয়েই দুই গ্রামের লোককে যাওয়া-আসা করতে হয়। ভয়ঙ্কর এই সেতুটির অবস্থান পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের গিলজিট-বালতিস্তানের হাঞ্জা অঞ্চলে। ঝুলছে বোরিত লেকের ওপর। নাম হুসেনি ঝুলন্ত সেতু বা হুসেনি সেতু। পাকিস্তানের ওই অঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের কোনো যোগাযোগ ছিল না ১৯৭৮ সাল পর্যন্তও। আসা-যাওয়ার মাধ্যম ছিল কেবল হেলিকপ্টার। খুব বড়লোক না হলে তাই যাওয়া-আসা করতে হতো হেঁটেই। রাওয়ালপিন্ডি থেকে আক্ষরিক অর্থেই পাহাড়-পর্বত হেঁটে পেরোতে হতো। ১৯৭৮ সালে কারাকোরাম হাইওয়ে চালু হলে, এই এলাকার সঙ্গে পাকিস্তানের সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কিন্তু সে তো কেবল রাজপথ। ওখানকার আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে আগের মতোই। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই রাস্তা নেই। যেতে হয় পাহাড়-পর্বতের গা বেয়ে, হেঁটে। নদী আর লেক পাড়ি দেওয়ার জন্য কোনো রকমে তার দিয়ে তক্তার টুকরো বেঁধে এক রকম সেতুর মতো বানানো আছে। ওই দিয়েই সবাই পথ চলে। পাকিস্তানের উত্তরের ওই অঞ্চলে এ রকম ভয়ঙ্কর সেতু আছে বেশ কয়েকটা। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এই হুসেনি সেতু। এই খ্যাতির একটা কারণ দৈর্ঘ্য তো বটেই, কিন্তু এটিই একমাত্র কারণ নয়। সেতুটি যেমন লম্বা, তেমনই দুর্বল। দেখাশোনার কেউ নেই। অনেক জায়গাতেই কাঠের টুকরোটি নেই। ২০১১ সালের মৌসুমি ঝড়ে সেতুটির অনেকটাই ভেসেও গিয়েছিল। পরে আবার কোনোমতে সারিয়ে নেয়া হয়। আর সেতুটি বোরিত লেকের ওপর যেখানে ঝুলছে, সেখানে লেকের পানিও যেমন গর্জন করে ছুটে চলেছে, তেমনি শোঁ শোঁ শব্দ তুলে ছুটে চলে বাতাসও। সেই বাতাসে সেতুটি প্রায় সারাক্ষণই দোল খেতে থাকে। সব মিলিয়ে সেতুটি পার হওয়া এক লোমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চারই বটে। অবশ্য স্থানীয়দের মধ্যে সেতুটি নিয়ে তেমন কোনো ভয় নেই। আর সেতুটা এভাবে তারা পেরিয়ে যায় যেন বা কাঠের কোনো সাধারণ সেতু পেরোচ্ছে।

রয়েল জর্জ ব্রিজ

রয়েল জর্জ ব্রিজ

রয়েল জর্জ ব্রিজ
বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক এই সেতুটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঝুলন্ত সেতু। এই সেতুটি খুবই উঁচুতে অবস্থিত। উচ্চতার কারণে এই সেতুতে আরোহণ করলে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হয়। সেতুটির উচ্চতা ৯৬৯ ফুট এবং লম্বায় ১২৬০ ফুট। এই সেতুটি দুটি বৃহৎ পর্বতকে একত্রিত করেছে। যার নিচ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হয়েছে। এই সেতুটির ওপর দিয়ে চলমান যানবাহনসমূহকে দূর থেকে পিঁপড়ার মতো মনে হয়। সেতুটি দুটি বৃহৎ পর্বতের মাঝে এমনভাবে ঝুলে আছে যা দেখলে বা তাতে আরোহণ করতে গেলে ভয়ে শিউরে উঠবে।

আগুইলা ডি মুদি ব্রিজ

আগুইলা ডি মুদি ব্রিজ

আগুইলা ডি মুদি ব্রিজ
বিশ্বের অন্যতম একটি বিপজ্জনক সেতু হচ্ছে আগুইলা ডি মুদি ব্রিজ। এই সেতুটি ফ্রান্সে অবস্থিত। সেতুটির উচ্চতা এতই বেশি যে, এর নিচের দিকে তাকানো যায় না। এই সেতুটিও দু’টি পর্বতের মাঝে অবস্থিত। তবে সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, সেতুটি আয়তনে ছোট। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে সেতুটি ১২৬০৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এই সেতুর এক প্রান্তের পর্বতে বিভিনড়ব ভবন তৈরি করা হয়েছে এবং অপর প্রান্তে একটি গুহার মতো স্থানে প্রবেশ করতে হয়। সেতুটির নিচেও পর্বত অবস্থিত।

বিশ্বের-ভয়ঙ্কর-কিছু-সেতু-5

ট্রিফ সাসপেনশন ব্রিজ

ট্রিফ সাসপেনশন ব্রিজ
ট্রিফ সাসপেনশন সেতুটি বিশ্বের অন্যতম একটি বিপজ্জনক সেতু। এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ সুউচ্চ পায়ে হাঁটার ঝুলন্ত সেতু। ২০০৪ সালে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সুইজারল্যান্ডের গ্রাডমেন শহরের পর্বতমালায় এই সেতুটি অবস্থিত। সেতুটির উচ্চতা ৩২৮ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৫৫৮ ফুট। সেতুটি দু’টি পর্বতের মাঝে অবস্থিত এবং ধারে সাগর অবস্থিত।

বিশ্বের-ভয়ঙ্কর-কিছু-সেতু-

ক্রিক এ রেডি রোপ ব্রিজ

 

ক্রিক এ রেডি রোপ ব্রিজ
এই সেতুটি নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের অনট্রিম কাউন্ট্রির ব্যালিনটয়ের কাছে অবস্থিত। বহু পর্যটক খুব সহজে এই সেতুটির ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে পার হয়েছেন। যদিও সেতুটি ভয়ঙ্কর তবু মাছশিকারিরা সেতুটি বেশি ব্যবহার করেন। সেতুটি রশি দিয়ে তৈরি বলে পর্যটকদের বেশি আকৃষ্ট করে। এই সেতুটি ৬৫ ফুট লম্বা এবং ১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সেতুটি সাগরবেষ্টিত দু’টি পাহাড়কে একত্রিত করেছে।

 

বিশ্বের-ভয়ঙ্কর-কিছু-সেতু-3

কেপিলান সাসপেনশন ব্রিজ

কেপিলান সাসপেনশন ব্রিজ
এই সেতুটি খুবই বিপজ্জনক। সেতুটির ওপর দিয়ে হেঁটে পার হতে গেলে ভয়ে মানুষ আঁতকে ওঠে। সেতুটির অবস্থান সবুজে ঘেরা বনের মাঝে। সেতুটির উচ্চতা, সরুত্ব এবং এর নড়াচড়া ভয়ের সৃষ্টি করে। ১৮৮৯ সালে সেতুটি প্রম নির্মাণ করা হয়। ৪৫০ ফুট লম্বা ২৩০ ফুট উচ্চ সেতুটি ব্রিটিশ কলম্বিয়ার নর্থ ভ্যানকুভারের কাপিলান নদীর ওপর সেতুটির অবস্থান। দূর থেকে দেখলে মনে হয় বনের ওপর দিয়ে বড় ধরনের কোন দোলনা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

বিশ্বের-ভয়ঙ্কর-কিছু-সেতু-2

সিদু রিভার ব্রিজ

সিদু রিভার ব্রিজ
এই সেতুটি অবস্থিত চীনে। ২০০৯ সালে যখন এই সেতুটি উদ্বোধন করা হয় তখন এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সেতু। চীনের হুবি প্রদেশের জর্জ নদীতে এই সেতুর অবস্থান। সেতুটির উচ্চতা ১৫৫০ ফুট। চারিদিকে পর্বতে ঘেরা সেতুটি দেখলে ভয়ের উদ্রেক হয়। সেতুটি দুটি পর্বতকে একত্রিত করেছে। যার নিচ দিয়ে চীনের বিখ্যাত জর্জ নদী প্রবাহিত হয়েছে। সেতুটি দর্শনীয় হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক সেতুটি দেখতে আসেন।

Share.

মন্তব্য করুন