পৃথিবীর সবকিছুই সুন্দর! শুধু আকাশেরই কত রূপ!
কখনো সুনীল, কখনো মেঘে ঢাকা। কখনো তার বুকে রংধনুর হাট বসে। রংধনু মানেই হলো সাতটি রঙের আলপনা। রংগুলো হচ্ছে- বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল; সংক্ষেপে- বেনীআসহকলা। আবার সবুজ পাহাড়ের দিকে তাকালে মনে হয়, বুনো-ঝরনার পানিতে সে অবিরাম গোসল করছে। সাগর-নদী, খাল-বিল, ফুল-পাখি তো আছেই। সবকিছুই সুন্দর। সবকিছু।

তবে এসবের মধ্যে কে বেশি সুন্দর? এ হিসাব মেলানো কঠিন। হয়তো আকাশ। তার বুকে সূর্য আছে। আছে চাঁদ-তারা। কিন্তু সাগরের সৌন্দর্য কি তারচেয়ে কম? ঢেউয়ের ওপর ঢেউ। নীলের ওপর নীল। যেন কোনো সুদূরের আহ্বান তার বুকে বেজেই চলেছে। এ চলার শেষ নেই। বিরাম নেই। অথবা বিচিত্রসব ফুল? গন্ধে-বর্ণে একেকটি অন্যটির চেয়ে অপরূপা। আসলে এসব ভেবে ভেবে কোনো কূল-কিনারা পাওয়া সম্ভব নয়। এতদিনে এতটুকুই বুঝল জাহিদ। তবে তার মনে একটা প্রশড়ব বারবারই দুলে উঠছে ঢেউয়ের মতো। কারো সৌন্দর্যের উপমায় এ কথা আমরা প্রায়ই শুনি- ‘চাঁদের মতো সুন্দর’ অথবা ‘চাঁদের চেয়েও সুন্দর’। কিন্তু মানুষ কি চাঁদের চেয়ে সুন্দর হতে পারে? অথবা চাঁদের মতো হতে পারে? সে জানে, চাঁদের সাথে আমাদের ভালোবাসার গল্প অনেক পুরনো। পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ হচ্ছে চাঁদ। তার আকর্ষণে সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে, তাই জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। চাঁদ কি আমাদেরও কম আকর্ষণ করে? ‘আয় আয় চাঁদ মামা’- এভাবে আমরা তাকে কতবার ডেকেছি, তার তো হিসেবই নেই। চাঁদ কখনো পূর্ণিমার আলোয় আমাদের মুগ্ধ করে, আবার কখনো নিয়ে আসে ঈদের খবর! তার জোসনাময় শীতল শরীর কী নির্মল! কী মোহন!জাহিদ কথাটা বলেই ফেলল আব্বুকে। আব্বু একটু চিন্তায়ই পড়ে গেলেন। কিসব অদ্ভুত প্রশ্ন করে ছেলেটা!

ভাবতে ভাবতে পেয়ে গেলেন উত্তর। বললেন, আচ্ছা বলো তো, আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কেউ আছে কি? অবশ্যই না, বলল জাহিদ। তাহলে শোনো, আল্লাহ কী বলেছেন। ‘তিনের শপথ। শপথ যাইতুনের। সিনাই পর্বতের শপথ। শপথ এ নিরাপদ নগরীর। আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সবচেয়ে সুন্দর আকৃতিতে।’ (সূরা তিন : ১-৪)  স্রষ্টাই ঘোষণা দিয়েছেন, তার সুন্দরতম সৃষ্টি হচ্ছে মানুষ। কি আকৃতিতে, কি মানসিক দিক থেকে! জাহিদ তো হতবাক! এতদিনের জিজ্ঞাসার উত্তর এত সহজেই পেয়ে গেল সে। তার আনন্দের অন্য কারণ হচ্ছে, সে-ও আল্লাহর সুন্দরতম সৃষ্টির একজন। এমনকি চাঁদের চেয়েও!

Share.

মন্তব্য করুন