ওমরের চিঠি
আবু মিনহাল

‘বাংলাদেশ নদীর দেশ। ঢেউ ছলোছল নদীগুলো যেন এ দেশের প্রাণ। নদীর সাথে এ দেশের মানুষেরও রয়েছে গভীর সম্পর্ক। রয়েছে প্রাণের মিতালী। কিন্তু বহুদিনের চেনা এ নদীগুলো কেমন অচেনা হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। মরে যাচ্ছে পানির অভাবে। এই দেখো- আমাদের কপোতাক্ষ! আমাদের পদ্মা! আরও কতশত নদী! যাদের বুক এখন ধূ ধূ বালুচর।’ নদীর তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে এ কথাগুলোই বলছিলেন দাদা ইউসুফ শরীফ। যিনি নিজ চোখে দেখেছেন বহু নদীর ভরা যৌবন। আর এখন সেগুলোর মৃত্যুও দেখছেন। এ জন্যই হয়তো তার কষ্ট এত বেশি! সালমান বলল, দাদা এর কারণ কী? দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে দাদা বললেন, এর কারণ আমরাই। আমাদের নদীগুলোর উৎসমুখ বন্ধ। কিন্তু আমরা এর কোনো প্রতিকার করতে পারছি না। নিজেদের জীবন বাঁচানোর কোনো গরজই যেন নেই আমাদের। এ জন্যই এ বিপর্যয়। নষ্ট হচ্ছে আমাদের পরিবেশ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘ভূ-ভাগে এবং জল-ভাগে যত বিপর্যয় ঘটে, তা মানুষেরই দু’হাতের অর্জন’! (সূরা আর-রূম : ৪১)। হায়! যদি ওমরের মতো নদীগুলোর কাছে চিঠি লিখতে পারতাম!

নদীর কাছে চিঠি! মানে? অবাক কৌতূহলে সালমান জিজ্ঞেস করল। দাদা বললেন, মিসরে তখন প্রচ- খরা। নীলনদে পানি নেই। চারদিকে হাহাকার। মিসরবাসী প্রশাসক আমর ইবনুল আসের নিকট এসে বলল, কোনো সুন্দরী যুবতীকে এ নদীতে নিক্ষেপ করলেই তা পানিতে ভরে উঠবে। তিনি বললেন, না! ইসলামে এর অনুমোদন নেই। কিন্তু তাদের দুর্ভোগও দিনদিন বেড়ে চলল। আমর ইবনুল আস খলিফা ওমরকে চিঠি দিয়ে এসব জানালেন। জবাবে তিনিও চিঠি পাঠালেন নদীর কাছে। আমর ইবনুল আসকে বললেন, তা নীলনদে নিক্ষেপ করতে। চিঠিতে লেখা ছিল-
‘আমীরুল মুমেনীন ওমরের পক্ষ থেকে মিসরের নীলনদের প্রতি। যদি তুমি নিজে নিজেই প্রবাহিত হয়ে থাকো, তবে আর প্রবাহিত হয়ো না। আর যদি একক মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তোমাকে প্রবাহিত করান, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করেন’ (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ)। তারপর কী হল দাদা?
‘হ্যাঁ, পরদিন মিসরবাসী দেখল, নীলনদে উত্তাল স্রোত। আর কখনোই তা শুকিয়ে যায়নি। এখনও সে প্রবলরূপে প্রবহমান।’
‘আচ্ছা! আমাদের নদীগুলো কি আর প্রবাহিত হবে না?’
‘অবশ্যই হবে। যদি আমরা দেশকে ভালোবাসতে পারি। জেগে উঠতে পারি প্রবল সাহসে!’

Share.

মন্তব্য করুন