স্যাটেলাইট নিঃসন্দেহে একবিংশ শতাব্দীর একটি অবিস্মরণীয়
আবিষ্কার। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অন্য দেশের উপর
নজরদারীর জন্য তৈরি করা হলেও বর্তমানে পুরো বিশ্ব যেন
দাঁড়িয়ে আছে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির উপর। আবহাওয়া, ভূ-তত্ত্ব,
যোগাযোগ আর গবেষণার মূল চালিকা শক্তিই যেন আকাশে
ভাসতে থাকা এই পাল-তোলা নৌকাগুলো। পৃথিবীতে নৌকার
পালে বাতাস লাগলে যেমন নৌকা এগিয়ে চলে, ঠিক তেমনি
কৃত্রিম উপগ্রহের সাথে নৌকার পালের মতো জুড়ে দেয়া থাকে
ক্রিস্টালাইন সিলিকনের সোলার প্যানেল। সেই সোলার প্যানেলে
সূর্যের আলো এসে পড়লে তা ফটো-ভোল্টেইক পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ
শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই শক্তি দিয়ে স্যাটেলাইট গুলো তাদের
যাবতীয় কাজ সেরে ফেলে।
প্রতিটি স্যাটেলাইট একটি অনুমোদিত কক্ষপথে পৃথিবীকে
প্রদক্ষিণ করতে থাকে। অনুমোদিত কক্ষপথ আবার কি? এই
যাবত প্রায় ৬ হাজার ছয়শ’ কৃত্রিম উপগ্রহ ছাড়া হয়েছে পৃথিবী
থেকে। এর মধ্যে বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছে প্রায় সাড়ে
তিন হাজার। এখন এতোগুলো কৃত্রিম উপগ্রহের যদি একটি করে
নির্দিষ্ট কক্ষপথ না থাকে তাহলে যে কোনো মুহূর্তে একটির সাথে
আরেকটির সংঘর্ষ হতে পারে। তথ্য পাঠানোর সময় হতে পারে
ইন্টার্ফিয়ারেন্স বা ব্যতিচার। এজন্য সবার জন্য একটি নির্দিষ্ট
কক্ষপথ ঠিক করে দেয়া হয়। এই কক্ষপথগুলো বিভিন্ন দূরত্বের
হয়। স্যাটেলাইট পৃথিবীর চারপাশে ঘুরপাক খাওয়ার জন্য কোনো
শক্তির প্রয়োজন হয় না। এটি একটি নির্দিষ্ট গতি সহকারেএকবারই পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
যেহেতু মহাকাশে কোনো ঘর্ষণ নেই তাই এই
স্যাটেলাইট এই গতিতেই চলতে থাকে। এর
গতি কোনো কারণে নষ্ট হলে সেই উপগ্রহটি বা
স্যাটেলাইট ধীরে ধীরে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ
শক্তির টানে পৃথিবীর বায়ুম-লে ভূ-পাতিত হয়।
তিন ধরণের কক্ষপথ আছে:
১. (LEO) নিম্নতর ভূ-আবর্তক (Low
Earth Orbiter)। এগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে
কাছের কৃত্রিম উপগ্রহ। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০
কিলোমিটার থেকে ২০০০ কিলোমিটারের
মধ্যেই এগুলো ঘুরতে থাকে। যেহেতু এগুলো
পৃথিবীর খুব কাছে তাই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে
পৃথিবীতে আছড়ে পড়া থেকে বাঁচতে এগুলোর
গতি হতে হয় অনেক বেশি যা প্রতিসেকেন্ডে
৭.৮ কিলোমিটার ও ঘন্টায় ২৮০০০
কিলোমিটার। এগুলো দিনে প্রায় ৮-১৬ বার
পুরো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
নিচের স্যাটেলাইট ১৬ বার আর উপরের
স্যাটেলাইট ৮ বার করে প্রদক্ষিণ করে। এই
স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত টেলিকম
যোগাযোগ, আবহাওয়া বিষয়ক কৃত্রিম উপগ্রহ,
নজরদারীর, পৃথিবীর ছবি ভূ-তাত্ত্বিক গবেষণারউপগ্রহ এই কক্ষপথের সীমায় পৃথিবীকে আবর্তন
করে। রাশিয়ার ছোড়া প্রথম উপগ্রহ স্পুটনিক-১
মাত্র ২১৫ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠেছিলো।
৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় এখন রয়েছে
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)। আর
৩৯০ কিলোমিটার উপরে ছিলো রাশিয়ান
মহাকাশ স্টেশন মির। ৫৯৫ কিলোমিটার উপরে
ভেসে বেড়াচ্ছে হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ। এই
সবগুলোই কৃত্রিম উপগ্রহের কক্ষপথ সীমার
নীচে।
২. (MEO ev GPS) নিম্নতর কক্ষপথের
আরেকটু উপরের দিকের কক্ষপথ হলো মধ্যম
ভূ-আবর্তক (Mid Earth Orbiter)। এর
সীমা অনেক বড়। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার
কিলোমিটার থেকে শুরু করে প্রায় পঁয়ত্রিশ
হাজার কিলোমিটার নিচে পর্যন্ত। এর ঠিক
মাঝখানে অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় বিশ হাজার
কিলোমিটার উচ্চতায় রয়েছে ৩২টি কৃত্রিম
উপগ্রহ। এই সবগুলোই ১২ ঘন্টায় একবার
অর্থাৎ দিনে ২ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষীণ করে। এই
কক্ষপথের পরিধি ১৬৪০০০ কিলোমিটার এবং
এই স্যাটেলাইটগুলো প্রতিসেকেন্ডে ৩.৯
কিলোমিটার গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
এগুলোকে বলা হয় জিপিএস কৃত্রিম উপগ্রহ।
জিপিএস অর্থ হলো গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম।
পৃথিবীর পৃষ্ঠে যে কোনো জিপিএস রিসিভার
ডিভাইসযুক্ত বস্তুর অবস্থান জানার জন্য এই
পদ্ধতি। বর্তমানে আমরা স্মার্টফোনে লোকেশন
জানার জন্য এবং গাড়ি, বিমান,জাহাজ ইত্যাদি
ট্র্যাকিং সিস্টেমের জন্য এই স্তরের জিপিএস
স্যাটেলাইট ব্যবহার করে থাকি। প্রথমে ২৪টি
কৃত্রিম উপগ্রহ ৬টি কক্ষপথে, প্রতিটিতে মোট
৪টি করে উপগ্রহ স্থাপন করা হয়। এখন সেখানে
আছে মোট ৩২টি উপগ্রহ। এগুলো এমনভাবে
পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে যেন পৃথিবীর যে কোন
যায়গা থেকে কমপক্ষে ৪টি জিপিএস উপগ্রহকে
সরলরৈখিকভাবে সংযুক্ত করা যায়। বাস্তবে
নির্ভুলভাবে পৃথিবীর কোনো স্থানের স্থানাংক
জানতে আমাদের কমপক্ষে চারটি কৃত্রিম
উপগ্রহের প্রয়োজন হয়। সরলভাবে আমরা এর
পেছনের গণিতটিকে দেখি নিচের সমীকরণে –
(x – u)2 + (y – v)2 + (z – w)2 = (cs)2
এই সমীকরণে (x, y, z) হলো ভূ-পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে
থাকা কোনো মানুষের স্থানাংক যার হাতে রয়েছে
একটি জিপিএস রিসিভার। আর (u, v, w)
হলো একটি কৃত্রিম উপগ্রহের স্থানাংক যেটি
এখন ঐ ডিভাসটির সাথে সরলরৈখিকভাবে
যোগাযোগ করছে। এদিকে ‘c’ হলো আলোরগতি এবং ‘s’ হলো সরলভাবে ঐ ডিভাইস থেকে উপগ্রহে
তথ্যআদান-প্রদান করতে প্রয়োজনীয় সময়। আমাদের লক্ষ্য হলো
(x, y, z) এর মান নির্ণয় করা। তাহলে এই সমীকরণে অজানা
রাশি চারটি,x, y, z ও s। তাই কমপক্ষে চারটি আলাদা
সমীকরণ থেকে এই মানগুলো নির্ণয় করতে হবে। এই কারণেই
কমপক্ষে চারটি কৃত্রিম উপগ্রহের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে পৃথিবীর
যে কোনো স্থানে দাঁড়ালে কমপক্ষে ছয়টি জিপিএস উপগ্রহের
সাথে সরলরৈখিকভাবে যোগাযোগ করা যায়। এতে আরো নির্ভুল
তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়।
৩.(GEO) ভূস্থির কক্ষপথ বা ভূস্থির ক্রান্তিয় কক্ষপথ বা জিইও
(Geostationary orbit) হল পৃথিবীর ক্রান্তিয় রেখা অঞ্চলের
৩৫,৭৮৬ কিলোমিটার ওপরে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে একটি
ঘুর্ণায়মান গোলাকৃতির কক্ষপথ। এই কক্ষপথে কোন বস্তুর ঘূর্ণন
গতি পৃথিবীর আহ্নিক গতির সমান অর্থাৎ পৃথিবী যে সময়ে
একবার নিজ অক্ষে আবর্তন করে ঠিক একই সময়ে এই স্তরের
স্যাটেলাইট পৃথিবীকে একবার আবর্তন করে। ভূস্থির কক্ষপথে
অবস্থিত কৃত্রিম উপগ্রহগুলিকে পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষন করা হলে
তা একই জায়গায় অবস্থান করে বলে মনে হয়। আবহাওয়া ও
যোগাযোগ উপগ্রহগুলো সাধারণত ভূস্থির কক্ষপথে স্থাপন করা
হয়।
ভূস্থির উপগ্রহগুলো যেহেতু পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট স্থানের উপর
স্থির থাকে তাই এর সংকেত গ্রহণ করার অ্যান্টেনাগুলোকে
সংকেত গ্রহণের জন্য তাদের অবস্থার পরিবর্তন করতে হয় না।
অ্যান্টেনাগুলো আকাশের একটি নির্দিষ্ট দিকে তাক করে স্থায়ীভাবে
বসিয়ে দেয়া যায়। ভূস্থির কক্ষপথ জিওসিংক্রোনাস বা ভূ-যুগপৎ
কক্ষপথের একটি প্রকরণ। আরেকটি উদাহারণ হলোআমরা জানি সব স্যাটেলাইট গতিশীল চলমান তাহলে
টিভি,ইন্টারনেট, আবহাওয়ার ডিশ এন্টেনা কিভাবে কাজ করবে।
ডিশ এন্টেনা সিগনাল আদানপ্রদান করার জন্য স্থিরশীল
স্যাটেলাইট প্রায়োজন হয়। এই স্থিরশীল স্যাটেলাইটের জন্য
উচ্চতর ভূ-আবর্তক কক্ষপথ ব্যবহার করা হয়। জিওস্টেশনারি
স্যাটেলাইট কিন্তু বাস্তবে স্থিরশীল নয় গতিশীল। এই
স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর গতির সাথে মিল রেখে প্রতি সেকেন্ড
৩.০৭ কিলোমিটার গতিতে, ২৪ ঘন্টায় ২৬৫০০০ কিলোমিটার
পরিধি কক্ষপথ অতিক্রম করে একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
তাই এটিকে পৃথিবীর কোনো একটি যায়গা থেকে স্থির বলে মনে
হয়। এই ধরণের স্যাটেলাইটের কাজ হলো কোনো নির্দিষ্ট
এলাকার আবহাওয়া বার্তা দেওয়া বা টিভি, টেলিকমিউনিকেশন
যোগাযোগ রক্ষা করা।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ (বিএস-১) বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির
যোগাযোগ উপগ্রহ (জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট)। এটি বাংলাদেশ
মান সময় গত ১২ মে ভোর ২ টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি
স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়। উপগ্রহটির
ভর ৩ হাজার ৫০০ কেজি। উল্লেখ্য, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে
এর আগে পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলংকা মহাকাশে যোগযোগ
উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে।
২০০৮ সালে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাবিটিআরসি কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ বিষয়ে একটি কমিটি
গঠন করে। এরপর ২০০৯ সালে জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি
নীতিমালায় রাষ্ট্রীয় কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের বিষয়টি
যুক্ত করা হয়। বাংলাদেশের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ
উৎক্ষেপণের জন্য আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন
ইউনিটের (আইটিইউ) কাছে ইলেক্ট্রনিক আবেদন করেবাংলাদেশ। কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবস্থার নকশা তৈরির জন্য
২০১২ সালের মার্চে প্রকল্পের মূল পরামর্শক হিসেবে
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘স্পেস পার্টনারশিপ
ইন্টারন্যাশনাল’ কে নিয়োগ দেয়া হয়। স্যাটেলাইট
সিস্টেম কিনতে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া
স্পেসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি। ২০১৫ সালে
বিটিআরসি রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের
কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনার আনুষ্ঠানিক
চুক্তি করে। ২০১৭ সালে কৃত্রিম উপগ্রহের সার্বিক
ব্যবস্থাপনার জন্য ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট
কোম্পানী লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা গঠন করা হয়।
বিবরণ : বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি ১১৯.১ ডিগ্রী পূর্ব
দ্রাঘিমার ভূস্থির স্লটে স্থাপন করা হয়। ফ্রান্সের থ্যালিস
অ্যালেনিয়া স্পেস এটির নকশা বানায় ও তৈরি করে এবং
এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিমালিকানাধীন মহাকাশযান সংস্থা
স্পেস এক্স থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু
স্যাটেলাইট-১ ১৬০০ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন মোট
৪০টি কু এবং সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার বহন করছে এবং
এটির আয়ু ১৫ বছর। স্যাটেলাইটের বাইরের অংশে
বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর
ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১।
বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে রয়েছে।
কারিগরি বৈশিষ্ট্য : বিএস-১ উপগ্রহটি ২৬টি কে-ইউ
ব্যান্ড এবং ১৪টি সি ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার সজ্জিত হয়েছে ১১৯
দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথের অবস্থান থেকে।
কে-ইউ ব্যান্ডের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ,
বঙ্গোপসাগরে তার জলসীমাসহ ভারত, নেপাল, ভুটান,
শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া অঞ্চল। সিব্যান্ডেরও আওতায় রয়েছে এই সমুদয় অঞ্চল।
উৎক্ষেপণ : স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ উৎক্ষেপণ যানে করে
১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২ টা ১৪ মিনিটে (২০:১৪
ইউটিসি ১১ মে ২০১৮ ) সফলভাবে বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম
উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি ফ্যালকন ৯ রকেটির
নতুন ব্লক ৫ মডেল ব্যবহার করে প্রথম পেলোড
উৎক্ষেপণ ছিল। বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের
জন্য ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করা হয়,
তবে হারিকেন ইরমার কারণে ফ্লোরিডায় ব্যাপক
ক্ষয়ক্ষতি হলে তা পিছিয়ে যায়। ২০১৮ সালেও কয়েক
দফা উৎক্ষেপণের তারিখ পিছিয়ে যায় আবহাওয়ার
কারণে। চূড়ান্ত পর্যায়ে উৎক্ষেপণ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে
৪ মে ২০১৮ তারিখে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে
দুই পর্যায়ের এই রকেটের স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট সম্পন্ন
হয়। কৃত্রিম উপগ্রহটি ১০ মে ২০১৮ তারিখে
উৎক্ষেপণের তারিখ ঠিক করা হয়; কিন্তু ১০ মে
উৎক্ষেপণের সময় টি-৫৮ সেকেন্ডে এসে তা বাতিল করা
হয়। শেষ মিনিটে কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে
উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়। অবশেষে এটি ১১ মে
উৎক্ষেপণ করা হয়।
কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করার পর, বাংলাদেশ ১২ মে
২০১৮ তারিখে এটি থেকে পরীক্ষামূলক সংকেত পেতে
শুরু করে।
ভূ কেন্দ্র : বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার
পর বাংলাদেশের ভূ-কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এই
জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির
বেতবুনিয়ায় ভূকেন্দ্র তৈরি করা হয়। জয়দেবপুরের
ভূ-কেন্দ্রটি হবে মূল স্টেশন। আর বেতবুনিয়ায় স্টেশনটি
দ্বিতীয় মাধ্যম হিসেবে রাখা হয়।
সুবিধা : বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে ৩ ধরনের সুবিধা
পাওয়া যাবে।
টিভি চ্যানেলগুলো তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম সঠিকভাবে
পরিচালনার জন্য স্যাটেলাইট ভাড়া করে। এক্ষেত্রে
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট চ্যানেলের সক্ষমতা বিক্রি করে
বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। আবার দেশের টিভি
চ্যানেলগুলো যদি এই স্যাটেলাইটের সক্ষমতা কেনে তবে
দেশের টাকা দেশেই থাকবে। এর মাধ্যমে ডিটিএইচ বা
ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস চালু সম্ভব। বঙ্গবন্ধু-১
স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মোট ফ্রিকোয়েন্সি
ক্ষমতা হলো ১ হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ। এর
ব্যান্ডউইডথ ও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে
ইন্টারনেটবঞ্চিত অঞ্চল যেমন পার্বত্য ও হাওড় এলাকায়
ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া সম্ভব। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট
ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত
শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে বঙ্গবন্ধু-১
স্যাটেলাইট। বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল
নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে। তখন এর মাধ্যমে দুর্গত
এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে।