একটু পরেই সূর্যটা ডুবে যাবে। তার চেহারায় যেন পৃথিবীর সব লাল মিশে আছে এখন! অনুপম এ দৃশ্যের ভেতর আনমনেই হারিয়ে গেছে ফাওযান। অথচ সে তো সূর্য দেখতে আসেনি। এসেছে চাঁদ দেখতে। শুধু সেই নয়- তার আশপাশেও রয়েছে অনেক মানুষ। ছোটো বড়ো। সবার ভেতরেই আবেগ উপচে পড়ছে। কখন উঠবে চাঁদ!
সূর্য ডুবলো। একদিকে মাগরিবের আজান হচ্ছে, অন্যদিকে কৌতূহলী চোখগুলো ঝুলে আছে আকাশের গায়ে। কার আগে কে দেখতে পারে- এমনই এক প্রতিযোগিতা চলছে যেন। কেউ একজন বলছে, ওই তো দেখা যাচ্ছে। তার শাহাদাত আঙুলের পথরেখা ধরে সবার দৃষ্টি খুঁজে ফিরছে চাঁদ! না, সেটা চাঁদ নয়! এতোগুলো চোখ তাকে একসাথে খুঁজছে তো খুঁজছেই। অবশেষে কাঁচির মতো একটি বাঁকা চাঁদ ভেসে উঠলো আকাশের ক্যানভাসে। খুশির জোয়ারে ভাসলো সবাই। আর ফাওযান গুনগুন করে গেয়ে উঠলো-
“নীল আকাশের নীলের খামে
চাঁদের ঝিলিমিলি-
হেসে হেসে রোজার চিঠি
করছে যেন বিলি।”
হ্যাঁ, এ যে রমাদানের চাঁদ। এ চাঁদ সাধারণ কোনো চাঁদ নয়। এ চাঁদই জানিয়ে দিলো, আগামিকাল থেকে সিয়াম পালন করতে হবে। চাঁদের এ ভাষা যারা বুঝতে পারে, তারাই সফল। আচ্ছা! চাঁদ না দেখে কি সিয়াম পালন করা যায় না? ফাওযান জানতে চাইলো পাশে থাকা ছোটো চাচ্চুর কাছে। চাচ্চু বললেন- না। কোথাও না কোথাও চাঁদ দেখা যেতে হবে। কারণ, আরবি মাসগুলোর সম্পর্ক চাঁদের সাথেই। এ জন্য রাসূল (সা) বলেছেন, “তোমরা চাঁদ দেখেই সিয়াম পালন করো এবং চাঁদ দেখেই তা ছেড়ে দাও।” (বুখারি)

চাঁদ দেখা শেষে দলে দলে সবাই চললো মসজিদের দিকে। ফাওযান ভাবে, এবার সে একটি রোজাও বাদ দেবে না। একটিও না! সে অনুভব করতে লাগলো- এই তো! এক পশলা রহমতের বৃষ্টি এসে তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় ফেরদাউসের কোমল ছোঁয়া! যে ছোঁয়ায় সতেজ হয়ে উঠছে তার প্রতিটি শিরা উপশিরা!

Share.

মন্তব্য করুন