সোনালি রোদ খেলা করছে বিকেলের নরম আঁচলে। চারদিক ঝকঝকে। ঝরঝরে। এমন মনোরম সময়ে দাদার হাত ধরে হাঁটতে বেরিয়েছে হামদান। হাঁটতে হাঁটতে দাদা হামদানকে গল্প শোনান। যে গল্প হামদানের মনে সুরভি ছড়ায়। দু’চোখে ছড়ায় আলোর দ্যুতি!
হাঁটতে হাঁটতে দু’জন চলে গেছে বহুদূর। হঠাৎ সামনে পড়ল অন্যরকম একজন মানুষ। জীর্ণ-শীর্ণ। মনে হলো চরম ক্ষুধার্ত। দাদাকে দেখেই সে হাত বাড়িয়ে দিলো। দাদা কিছু টাকা তার হাতে তুলে দিলেন। ভীষণ খুশি হলো লোকটা। হয়তো প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশিই পেয়েছে। হামদান সবসময়ই দেখে আসছে- কোনোদিনই কোনো সাহায্যপ্রার্থীকে দাদা খালি হাতে ফেরাননি। কাউকে কিছু দিতে পারলেই আনন্দে দুলে ওঠেন তিনি। আর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার চোখ দু’টিও!
লোকটি চলে যাওয়ার পর দাদা বললেন- কাউকে দান করতে পারা তো বড়োই গৌরবের ব্যাপার। হজরত আবু বকর (রা)-এর শাসনামলে একবার ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিলো। বৃষ্টি না হওয়ায় কোনো ফসলই ফলতো না। চারদিকে হাহাকার। অভাব আর অভাব। ঠিক সে সময়ই সিরিয়া থেকে একশো বাহনের পিঠে বোঝাই হয়ে খাদ্যদ্রব্য আসে। যেগুলোর মালিক ছিলেন উসমান (রা)। মদীনার সব ব্যবসায়ী এসে ভিড় জমালো হজরত উসমান (রা)-এর কাছে! সেগুলো কিনতে চাইলো তারা। তিনি বললেন, বেশ! তোমরা কেমন লাভ দিবে আমাকে? তারা বললো, প্রতি দশ দিরহাম ক্রয়মূল্যের বিপরীতে বারো দিরহাম। তিনি রাজি হলেন না। তারা বললো, ‘তাহলে পনেরো দিরহাম!’ হজরত উসমান (রা) বললেন, ‘আমাকে তো এর চেয়েও বেশি লাভের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে!’
‘আশ্চর্য! আমাদের আগে তো আপনার কাছে কেউই আসেনি!’
‘তাহলে শোনো, আল্লাহ প্রতি দিরহামেই দশ দিরহাম দিবেন! তোমরা কি এর চেয়ে বেশি দিতে পারবে?’
‘না।’
‘তাহলে আমার সকল খাবারই সাদাকাহ (দান) করে দিলাম, তোমরা নিয়ে যাও।’
দাদা বললেন- ‘হামদান! দশগুণ তো সর্বনিম্ন হার। আল্লাহ এটাকে সাতশো গুণ- এমনকি তারও বেশি বৃদ্ধি করেন।’ তিনি বলেছেন- “যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে। প্রত্যেক শীষে একশোটি শস্যদানা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়। মহাজ্ঞানী।” (সূরা আল বাকারা : ২৬১)
হামদান বললো- ‘তাহলে আমিও দান করবো প্রতিদিন। টিফিন খরচের একটা অংশ! আর এক টাকার জন্য পেয়ে যাবো সাতশো টাকার সওয়াব!’ দাদা বললেন- ‘মাশাআল্লাহ!’

Share.

মন্তব্য করুন