১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি শেকল ছিঁড়ে পৃথিবীর ইতিহাসে লেখা হলো একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম- বাংলাদেশ। আর নদীমাতৃক বাংলাদেশের নাতিশীতোষ্ণ বাতাসে পত্পত্ করে উড়তে লাগলো ভেজা সবুজ পতাকা। গাঢ় সবুজের মাঝে গাঢ় লাল বৃত্ত হয়ে উঠলো বাংলাদেশীদের চেনার এক অলঙ্ঘনীয় প্রতীক। চলতি ২৬ মার্চ জাতি পালন করছে স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকী। এতগুলো বছরে স্বাধীনতার কতটুকু স্বাদ আমরা পেলাম। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরাচারী মনোভাব ও বহুমাত্রিক শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সুদীর্ঘকালের সংগ্রাম এবং আপসহীন আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া এই স্বাধীনতার জন্য আমাদের করণীয়ই কী?
মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া বলছে, স্বাধীনতা একটি শর্ত, যেখানে একটি জাতি, দেশ, বা রাষ্ট্র বা জায়গা; যেখানে জনগণ থাকবে, নিজস্ব শাসনব্যবস্থা এবং সাধারণত কোনো অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব থাকবে। স্বাধীনতার বিপরীত হচ্ছে পরাধীনতা. স্বাধীনতা মানে যা খুশি তা করা নয়।
স্বাধীনতা, দীর্ঘ বিপ্লব বা সহিংসতার প্রশ্নে বিতর্ক যেভাবেই হোক, সার্বভৌমত্ব অর্জন। যদিও কিছু বিপ্লবের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন; অন্যদের শুধুমাত্র ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্য, যেখানে মুক্তির উপাদান থাকে, যেমনÑ একটি দেশের মধ্যে গণতন্ত্রায়ন, যেখানে সীমানায় কোন পরিবর্তন হয় না। জাতি-রাষ্ট্র কোন বিপ্লবী কর্মকাণ্ড ছাড়া স্বাধীনতা দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব, জাতীয় স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে হয়নি। (যদিও এর মাধ্যমে রুশ সাম্রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদল হয়েছিল, যদিও এর ফলে পো ল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাতভিয়া এবং ইস্তোনিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।) যাই হোক, আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু থেকেই স্বাধীনতার উদ্দেশ্যই ছিল। একটি দেশের বা রাজ্যের স্বাধীনতা লাভের অনেক উদ্দেশ্য থাকে। স্বাধীনতা লাভের উপায়গুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ যেমন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে, সহিংসতা যেমন গৃহযুদ্ধ হতে পারে।
মার্কিন স্টেট্সম্যান প্যাট্রিক হেনরি (Patrick Henry) বলেছিলেন, ‘অন্যদের কথা জানি না, আমার চাই স্বাধীনতা অথবা মৃত্যু।’ জর্জ বার্নার্ড শ (George Bernard Shaw)ি বলেছেন, ‘স্বাধীনতা মানে দায়িত্ব’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট একটা স্বাধীন দেশের মানুষের জন্য চার ধরনের স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন- এক. বাকস্বাধীনতা; দুই. ধর্ম পালনের স্বাধীনতা; তিন. অভাব থেকে স্বাধীনতা; চার. সবধরনের ভয়ভীতি থেকে স্বাধীনতা। বস্তুত দেশের মানুষের জন্য ওই চার ধরনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই ছিল সেই গুরুদায়িত্ব। কিন্তু সেই স্বাধীনতা এখন কতটা নিশ্চিত করা গেছে?
দেশের অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই, অন্ন নাই, বস্ত্র নাই, শিক্ষা নাই। যেটুকু আছে, সেটুকু নিয়েই চলে তাদের নিরন্তর জীবন-সংগ্রাম। ভোগে অপুষ্টিতে, মরে প্রতিরোধযোগ্য অসুখ-বিসুখে। আর সব ধরনের ভয়-ভীতি থেকে স্বাধীনতা তো বলতে গেলে ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে কারুরই নেই। বেকারত্বের ভয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ভয়, দুর্নীতির ভয়, কায়েমি স্বার্থবাদীদের দ্বারা নানাভাবে শোষিত ও অত্যাচারিত হওয়ার ভয় এবং সর্বোপরি জানমাল ও ইজ্জত খোয়ানোর ভয়। আইরিশ দার্শনিক এডমান্ড বার্ক (Edmund Burke) একটু কঠিন করেই বলেছিলেন, আমাদের দ্বারা দেশকে ভালোবাসাতে হলে, দেশকে ভালোবাসার যোগ্য করে গড়ে তোলা উচিত।

ওরা কেন এমন হয়:
তরুণ সমাজ দেশের ভবিষ্যৎ। আজ যারা তরুণ-যুব-কিশোর আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব তারাই দেবে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে তারাই কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু এই তরুণ সমাজর গন্তব্য আজ কোথায়? কেন খুনোখুনি, মারামারি কিশোরদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে!
কয়দিন আগে চট্টগ্রামে স্কুলছাত্র আদনান ইসফার খুন হয়। তাকে খুনের দায়ে যারা গ্রেফতার হয় তারাও কিশোর। শুধু তাই নয়, গত তিন মাসে বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রামে স্বজন হারিয়েছে ১৫ পরিবার। যারা খুন হয়েছেন তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৬ থেকে ২৫-এর মধ্যে। আবার খুনে জড়িত যারা তারাও একই বয়সী। এর আগে রাজধানীর উত্তরায় কিশোরদের ‘গ্যাং’ বা সন্ত্রাসী গ্রুপের খবর দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাবা-মায়ের অসচেতনতা এবং সময় না দেয়ার কারণেই শিশু-কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। শিশু বয়সেই দামি ফোন কিনে দেয়ার ফলে প্রযুক্তি থেকে ভালো শিক্ষার পরিবর্তে খারাপ শিক্ষা নিচ্ছে। বিভিন্ন পর্নো সাইডে প্রবেশসহ সারা বিশ্ব জানতে গিয়ে নিজের অজান্তেই অন্ধকার জগতে পা বাড়াচ্ছে।
একই ধরনের কথা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। তিনি বলেন, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সবার আগে পরিবার থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাবা-মায়ের সঠিক নির্দেশনা পেলে একটি শিশু ছোট থেকেই ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। আর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সমস্যা থাকলে তার প্রভাব শিশুটির ওপর পড়তে বাধ্য।
আমাদের দেশে আগে পাড়ায় মহল্লায় সংস্কৃতিচর্চার সংগঠন ছিল। পরে সে ক্লাবগুলো পরিণত হয় মাদক আর মাস্তানের আখড়ায়। এখন দরকার আবার সেই পাঠাগার, গান শেখা, ছবি আঁকার স্কুল, নাট্যচর্চার মাস্তানমুক্ত ক্লাব, দেয়াল পত্রিকা। ফেসবুকে বইপ্রেমীদের পেজগুলোকে প্রোমোট করা দরকার। মানবতাবাদী বাঙালি সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ দরকার। দরকার বিশ্বসংস্কৃতির সুস্থ দিকের সঙ্গেও সন্তানদের পরিচয় ঘটানো। আর দরকার পারিবারিক আড্ডার। তাহলে তারা জঙ্গি গ্রুপ বা মাস্তান গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে ‘বড়ভাই’দের পাশার ঘুঁটিতে পরিণত হবে না। আদনানের মতো আর কোনো কিশোরকে অকালে প্রাণ দিতে হবে না, আর কোনো মায়ের বুক খালি হবে না। কিশোরদের কোমল চেহারা হয়ে উঠবে না খুনি দানবের বীভৎস অবয়ব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম বলেন, বর্তমানে শিশু-কিশোররা একটি অস্থির সমাজব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের শৈশব অতিক্রম করছে। শিশু-কিশোররা এখন বাণিজ্যনির্ভর একটি সমাজ কাঠামোয় শিশুসুলভ সব আচরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিশোর-কিশোরীরা মোবাইল-ইন্টারনেট প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে অল্প বয়সেই যৌন আচরণে প্রলুব্ধ হচ্ছে; ফলে তারা সুস্থ বিনোদন থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে।

চাই মাদকমুক্ত সমাজ :
মাদকদ্রব্য সমাজের একটি মারাত্মক ব্যাধি। যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এ ব্যাধির ছোবলে পড়ে। আজকের তরুণরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, দেশ ও জাতির কর্ণধার। এসব তরুণকে সত্য, সঠিক ও সুন্দরভাবে গড়ে তোলার মধ্যে দেশের কল্যাণ নিহিত। আর এ যুব বা তরুণ সমাজের বিপথগামিতার অর্থ দেশের অনিবার্য বিপদ। আমাদের সমাজ নানাভাবে ব্যাধিগ্রস্ত। যুবসমাজ এ রোগের শিকার। যে তরুণের ঐতিহ্য রয়েছে সংগ্রামের, প্রতিবাদে, যুদ্ধজয়ের সেই যুবশক্তিকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র।
মাদকাসক্তির কুফল অতি মারাত্মক। যে কোন ধরনের নেশাজাতীয় পদার্থ বা মাদকদ্রব্য স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যদি মাদকাসক্তির কারণে মানসিক ও শারীরিক শক্তি লোপ পায়, তাহলে ব্যক্তির আচরণে অসঙ্গতি দেখা দেয়, মানুষের কর্মশক্তি লোপ পায়। আয়ু কমে যায় তখন এর প্রভাব ব্যক্তিগত পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে প্রতিফলিত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে।
মাদকাসক্তির প্রভাবে যুবশ্রেণির নৈতিক অধঃপতন ঘটেছে। নেশাগ্রস্তদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা স্বাভাবিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য জীবনকে বিসর্জন দিচ্ছে। অনেকে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। মাদকাসক্তি ব্যক্তি নেশার খরচ জোগানোর জন্যই নানা রকম সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। মাদকদ্রব্য মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে, তার ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয় স্বাভাবিক জীবন যাপনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ফলে এদের দ্বারা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যারা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ, সেই তরুণ সমাজ যদি এমনভাবে মাদকদ্রব্যের নেশায় আক্রান্ত হয়ে নিজের জীবন নষ্ট করে, তাহলে জাতির জন্য তা হবে এক ভয়াবহ অভিশাপ।

চাই বেকারত্ব মুক্ত সমাজ:
যুবসমাজের বিপথগামিতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে বেকারত্ব। দেশে কর্মক্ষেত্রের অভাব হেতু লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণী লেখাপড়া শেষ করে বেকার জীবন যাপন করছে। এরা বাবা মায়ের ওপরও নির্ভর করতে পারে না। চাকরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তারা অসৎ পন্থায় উপার্জনে নামে। তখন তারা চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, অপহরণ ইত্যাদি জঘন্য অপরাধ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এভাবে বেকার তরুণ-তরুণীরা জীবন সম্পর্কে হতাশাগ্রস্ত নানা অপরাধে লিপ্ত হয়।
দেশের যুবসমাজের ৯ দশমিক ১ শতাংশই বেকার। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ হারে বেকার আছে। বিশ্বব্যাংক যুবসমাজের বেকারত্ব নিয়ে যে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে সেখানে বাংলাদেশের এ চিত্র উঠে এসেছে। কর্মসংস্থান, বেকারত্ব ও শ্রমশক্তি নিয়ে জরিপ করে থাকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য দিয়ে বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রায় ২৬ লাখ বেকার রয়েছে। তাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ যুবক-যুবতী। বিবিএসের হিসাব মতে, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের যুব শ্রমশক্তি ধরা হয়। এ বয়সী ১৯ লাখ ৩৯ হাজার তরুণ-তরুণী কোনো কাজ করে না।
দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিবিএস সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশে কর্মক্ষম ২৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেকার। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ লাখ এবং নারী ১২ লাখ ৩০ হাজার। যা মোট শ্রম শক্তির সাড়ে ৪ শতাংশ। তিন বছর আগে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এক দশক আগে ছিল ২০ লাখ। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্য মতে, বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার।
তবে বেকারত্বের হার নিয়ে সরকারি তথ্যের চাইতে বাস্তবে আরো বেশি। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে প্রায় চার কোটি লোক বেকার। এ হিসাবে শিক্ষিত বেকারের পাশাপাশি অশিক্ষিত বেকারও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কর্মসংস্থানের হারও কমেছে। একই সঙ্গে বেকার হচ্ছে কর্মজীবীরাও।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যুব বেকারত্বের হার অনেকটা বেশিই। কেননা, বাকি যারা কাজ করেন, তাদের অনেকেই ছদ্ম বেকার। অনেকেই টিউশনি করেন, কিন্তু বেকার হিসাবে ধরা হয় না। এতে যুবশক্তির উৎপাদনশীলতার পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। শ্রমবাজারে যে ধরনের দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী প্রয়োজন, সে অনুযায়ী কর্মীর চাহিদা পূরণ করতে পারছে না শিক্ষাব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কাজের বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বিশেষায়িত দক্ষতার ঘাটতির কারণে উচ্চ শিক্ষার পরও ভালো কাজ পাচ্ছে না।
বাংলাদেশকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে বেসরকারি খাতে অধিক হারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো সমস্যা দূর করতে হবে।

যা করতে হবে:
– দেশকে ভালোবাসতে হবে। নিজেকে গড়ে হবে।
– সব সময় সত্য কথা বলতে হবে। মিথ্যা অভিনয় করে সত্য লুকাতে গিয়ে নিজেকে মিথ্যাবাদী বানানোর প্রয়োজন কী?
– মিথ্যাকে সত্যের ওপর জায়গা দেবেন না। মিথ্যে মানেই ভুল আর একটা ভুলেই এক নিমিষে সব কিছু শেষ হয়ে যেতে পারে।
– নিজে সৎ না হয়ে অন্যের ভুল ধরতে যাবেন না। তাতে অপমানিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
– অবাস্তব বা মিথ্যা স্বপ্নে বিভোর থেকে বাস্তবতাকে পেছনে ফেলবেন না।
– অপরের কাঁধে দোষ না চাপিয়ে পারলে কিছু সহায়তা করুন। দেখবেন, আপনার দুর্দিনেও সাহায্যকারীর অভাব হবে না।
– আপনার ক্ষমতা আছে করার? তো নিজে থেকে করে ফেলুন। আরেক জনের জন্য বসে থেকে নিজেকে অপদার্থ বানাবেন না।
ভাবতে হবে, সামনে এগিয়ে যেতে হবে:
যে উদ্দেশ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। ভাবতে হবে পাকিস্তান থেকে কেন মুক্তি লাভ করেছি। কেন অন্য দেশের সাথে মিশে যাইনি। ভাবতে হবে কী কী উপাদান নিয়ে আমরা একটি আলাদা জাতিতে পরিণত হয়েছি। সেই উপাদান নির্ধারণে ভুল হলে আমাদের আলাদা অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা থাকবে না। বস্তুত দেশপ্রেম ও জাতিপ্রেমের কোনো বিকল্প নেই। দেশের প্রচলিত আইন-কানুন মেনে চলা, দেশীয় পণ্যকে প্রাধান্য দেয়া, জাতীয় সম্পদের সুরক্ষা, অপচয় রোধ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ইত্যাদি বিষয়সমূহ হলো- দেশপ্রেমের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এসব বিষয়ের প্রতি নাগরিকদের যেমন সজাগ থাকা অপরিহার্য, তেমনি শাসকদেরও এর প্রতি যতœশীল হওয়া অপরিহার্য। সে হিসেবে বলা যায়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ, আত্তীকরণ, লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার, আইনের অপপ্রয়োগ, জবরদখল, সুদ-ঘুষ, ঋণখেলাপি ইত্যাদি বিষয়সমূহ অপশাসন। এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রত্যেক নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব।

Share.

মন্তব্য করুন