সাজিব ছোট থেকে ঢাকা শহরে বেড়ে উঠেছে। বড় বড় দালান কোঠা, রাস্তার হাজার হাজার গাড়ির জ্যাম ও ধুলাবালি ছাড়া তেমন কিছুই চিনে না, তাই প্রায় সময় অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু প্রশ্ন করে। এই তো কিছুদিন আগে পৌষ মাসে খেজুরের রস নিয়ে গ্রাম থেকে বেড়াতে আসে তার ছোট কাকা। সাজিব তার কাকার কাছে জানতে চায় খেজুরের গাছ কেমন? কেমন করে গাছে রস হয়? কি করে রস সংগ্রহ করে? আরো কত প্রশ্ন। এক এক করে সব প্রশ্নের উত্তর দেয় তার ছোট কাকা। অজানা জিনিসগুলো জানতে সাজিবের অনেক ভালো লাগে, বাবার কাছে প্রায় সময় প্রশ্ন করে আমরা যে চাল খাই তা না কি ধান গাছ থেকে সংগ্রহ করে আমাদের খাদ্যের উপযোগী করে তৈরি করা হয়? সাজিবের বাবা কোন সময় তার কথার উত্তর দেয় আবার কোন সময় তেমন গুরুত্ব দেয় না, অফিসের কাজ নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন। ছেলের অহেতুক প্রশ্নে মাঝে মাঝে তার বাবা বিরক্ত বোধ করেন। তবে ছেলেকে বড্ড ভালোবাসেন যখন যা বায়না ধরে তাই পূরণ করেন, সময় পান না বলে ছেলেটির কাছে থাকতে পারেন না।
সাজিব হোমায়রা খানম কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। পড়াশোনায় খুব মনোযোগ। তবে তার বায়নাটা একটু বেশি। বাবা বায়নার প্রতি সময়ের অভাবে কেমন গুরুত্ব না দিতে পারলেও মা যথার্থভাবে তা পূরণ করেন। এখন কয়েকদিনের জন্য স্কুল বন্ধ অর্থাৎ শীতের ছুটি। সাজিবের বায়না সে কাকাদের বাড়িতে বেড়াতে যাবে। মা-বাবার কোন না করার সুযোগ নেই, কারণ জানেÑ না করলেই ছেলে কান্নাকাটি করবে তাই হাসি মুখে বললেন, আগামীকাল তোমার বাবার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমরা গ্রামের বাড়িতে যাবো। সাজিব মহা খুশি। ভোর হতে না হতেই সে তার জামা কাপড় সব গুছিয়ে রেখেছে। সকাল ৮টায় তারা বাসা থেকে বের হলো তাদের গ্রামের বাড়ি কাপাসিয়ার উদ্দেশে। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পৌঁছে গেল তাদের গন্তব্যস্থলে। ছোট কাকাদের বাড়ির সকলে তাদের দেখে মহা খুশি। সাজিব যেন স্বপ্নের রাজ্যে ঘোরাঘুরি করছে এমন দৃশ্য সে কখনো দেখেনি, চারদিকে সবুজ আর সবুজ। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। গ্রামের বাতাসটাই যেন অন্য রকম, একদম স্বচ্ছ একটা অনুভূতি জাগে।
বিকেলে চাচাতো ভাই ফামানের সাথে গ্রামের পরিবেশটি দেখতে বের হলো সাজিব। অসাধারণ একটি গ্রাম, পাকা সরু রাস্তা, রাস্তার দুই পাশ দিয়ে হাজারো সবুজের ছোঁয়া। বাজারে চলছে পিঠা তৈরির প্রস্তুতি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তৈরি করা হয় বাহারি শীতের পিঠা। ঢাকায়ও অলিতে গলিতে পিঠা বিক্রি হয় তাতে চিতল ও ভাপা থাকলেও রসের পিঠা একেবারেই থাকে না। সাজিব রাত্রে ফামানের সাথে থাকবে বলে বায়না ধরেছে। ঢাকার তুলনায় গ্রামে অতিরিক্ত শীত তাই কম্বল দু’টি, একটির ওপরে আরেকটি দিয়ে ভেতরে পুরো পার্সেল হয়ে শুয়ে আছে তারা দুই ভাই।

সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে সাজিব ও ফামান। দাঁত ব্রাশ করতে করতে বাইরে বের হয় তারা, টুপ টুপ করে টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ছে, সাদা কুয়াশায় চারদিক ছেয়ে আছে। আশপাশের কাউকে দেখা যায় না। ঘরের পাশে খোলা জায়গায় সবাই গোল করে বসে আছে, সবার গোল বৈঠকের মধ্যে আগুন জ্বলছে। ছোট ছোট চাচাতো ভাই- বোনগুলো কাঠের টুকরো কুড়িয়ে আগুনের মধ্যে দিচ্ছে। পাশেই একটি খেজুর গাছ থেকে রস নামাচ্ছে একটি লোক। সাজিবরা বেড়াতে এসেছে বলে রসের পিঠা বানাবে সব রস কিনে রেখে দিয়েছে তার ছোট কাকা। সাজিব এক গ্লাস রস খেতেই পুরো শরীর কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে গেল। আরো বেশি শীত অনুভব করতে লাগল সে। ছোট ছোট বাচ্চারা পুরো প্যাকেট হয়ে হাঁটা হাঁটি করছে। আশপাশের গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ে যাচ্ছে। দুপুর হয়ে এলেও সূর্য মামার দেখা মিলে না। খুব আনন্দ হয়েছিল সাজিবের গ্রামের বাড়িতে। সাজিব রুমে বসে বসে এমনটাই ভাবছে ঘটনাটি গত শীতের। গ্রাম ও শহর দুই জায়গায় শীত অনুভব করা গেলেও গ্রামে তা একটু বেশি করে অনুভব করা যায়। এখন শরৎকাল সামনের শীতে বাবা মার সাথে আবার সে তার গ্রামের বাড়ি যাবে। তোমাদের সাথে তার গত শীতে কাটানো গ্রামের বাড়ির কিছু মুহূর্ত শেয়ার করলাম যাতে করে তোমরা এবার শীতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারো। আর যারা গ্রামে থাকো তারাও প্রস্তুতি নাও শহর থেকে বেড়াতে আসা তোমার ভাইকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে দেখাতে হবে।

Share.

মন্তব্য করুন