বেশ ক’দিন ধরেই হাফিজের মন ভালো নেই। মনে হচ্ছে, মাথার ওপর থেকে ছায়া সরে যাচ্ছে তার। শীতল ছায়া। বাবা নামের বটবৃক্ষের ছায়া! বাবা অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরেই। হাফিজ জানে, বাবাহীন পৃথিবীটা ভালোবাসাহীন! আশ্রয়হীন!
আজ কিছুটা হলেও ভালো আছেন বাবা। কোনো ঘুমই হতো না এতদিন তার। আজ ঘুমিয়েছেন। গভীর ঘুম। পরিবারের সবাই খুশি। সবার মুখে একই কথাÑ আলহামদুলিল্লাহ!
গভীর রাত। বাইরে হঠাৎ আওয়াজ! হৈ-হুল্লোড়! চমকে উঠল সবাই। জেগে উঠলেন বাবাও। কাঁপছেন তিনি। কী যেন বলতে চাইছেন। চোখে-মুখে ভয়! আওয়াজ থামছে না। জানালা খুলল হাফিজ। কানে আসল ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। ঘড়ির কাঁটায় চোখ রেখে জারীর বুঝল, এই তো কিছুক্ষণ আগেই নতুন বছর শুরু হয়েছে। সে আনন্দেই চারদিকে আতশবাজি। চিৎকার! রাস্তায়, বাসার ছাদে তরুণ-তরুণীরা সমবেত হয়েছে। নাচছে। গাইছে।
বাবা অসুস্থ বলে মনেই ছিল না, কখন একটি বছর শেষ হয়ে গেল। হাফিজ ভাবল, তার বাবার মতো আরো অনেক বাবারই হয়তো ঘুম ভেঙে গেছে আজ। প্রশান্তির ঘুম। প্রয়োজনের ঘুম। নতুন বছর তো আসবেই। আসবে নতুন সময়। নতুন ভোর। কিন্তু নতুন বছর মানেই তো আনন্দ নয়। নতুন বছর মানেই জীবন থেকে একটি বছর ঝরে যাওয়া! ঝরে যাওয়া কতগুলো দিন। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন, ‘সময়ের শপথ! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তবে তারা নয়, যারা ঈমান আনে। ভালো কাজ করে। একে অপরকে উপদেশ দেয় সত্য ও ধৈর্যের। (সূরা আসর : ১-৩)
হাফিজের চোখে একদিকে বাবার চেহারা, অন্যদিকে নতুন বছর উদযাপনের দৃশ্য। না, আর ভাবতে পারছে না সে। কেবল চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, এসো পুরনো খাতা খুলে দেখি। অশ্রু দিয়ে মুছে ফেলি তার কালো দাগগুলো। আর স্বপ্ন বুনি নতুন আগামীর। সুন্দর আগামীর।
আবু মিনহাল