রিফাত পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। পড়ালেখাও খুব ভালো। ক্লাসের ফার্স্ট বয় সে। যেকোনো পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে। স্কুল তার বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে। সে বন্ধুদের সাথে স্কুলে যেত আবার মাঝে মাঝে তার আম্মু তাকে স্কুলে দিয়ে আসত। ক্লাসের বন্ধুদের মধ্যে বেশিরভাগ বন্ধুরাই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসত। তার খুব ইচ্ছে যে, সে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসবে। একদিন স্কুল থেকে ফিরে সে তার আব্বুকে বলল,
আব্বু আমাকে একটা সুন্দর সাইকেল কিনে দেও না। আমি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাবো।
প্রাইভেট পড়তে যাবো। তার আব্বু তাকে বলল, তুমি এখনও ছোট। সাইকেল চালাতে পারবা না। এক্সিডেন্ট করবা। রিফাত বলল, আমি সাইকেল চালানো শিখব। আমার সব বন্ধুর সাইকেল আছে। তারা সাইকেল চালিয়ে স্কুল আসে। শুধু আমার সাইকেল নেই। রিফাত তার আম্মুকে বলল, আম্মু তুমি একটু আব্বুকে বলো না আমাকে যেন একটা সুন্দর সাইকেল কিনে দেয়। তার আম্মু তার আব্বুকে অনুরোধ করল, কিন্তু তার বাবা সাইকেল দিতে রাজি হলো না। তার আব্বু বলল, ঠিক আছে তোমার সমাপনী পরীক্ষা তো আর একমাস আছে। তুমি যদি এ+ পাও তাহলে তোমাকে আমি সুন্দর একটা সাইকেল গিফ্ট করব। রিফাত বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। এক মাস যাওয়ার পর তার পরীক্ষা শেষ হলো। দুই মাস পর তার রেজাল্ট বের হলো। রিফাত ভালো রেজাল্ট করেছে। সে পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেল। খবর পাওয়ার সাথে সাথে তার বাবা তাকে নিয়ে বাজারে সাইকেলের দোকানে গেল। দোকানে অসংখ্য সাইকেল। রিফাতকে তার বাবা জিজ্ঞাসা করল যেটা পছন্দ হয় নাও। অবশেষে রিফাত সুন্দর দেখে একটা সাইকেল নিল। সাইকেল কিনে বাবার সাথে বাড়িতে চলে এলো। বাড়িতে সাইকেলটা নিয়ে আসার পর রিফাত সাইকেল চালাতে শিখতে চাইল। সে তার বাবাকে বলল, তুমি পিছনে ধরো আমি আস্তে আস্তে চালাই। তার বাবা কিছুক্ষণ ধরার পর বলল, আমি আর পারবো না। আমার অনেক কাজ আছে। এই বলে তার বাবা বাহিরে চলে গেল। রিফাত তার এক বন্ধুর কাছে সাইকেলটা নিয়ে গেল। তার কাছে গিয়ে বলল, আমাকে একটু সাইকেল চালাতে সাহায্য করবে? বন্ধু হেসে বলল, কেন নয়। চলো তোমাকে সাইকেল চালানো শিখিয়ে দেই। এই বলে তারা দু’জন সাইকেল নিয়ে একটা বড় মাঠে গেলো। সেখানে গিয়ে রিফাত সাইকেল চালাচ্ছে আর তার বন্ধু পেছন দিক ধরে রেখেছে এবং রিফাতকে সাইকেল চালানোর সময় কী কী করতে হয় তা বলছে। এভাবে রিফাত সাইকেল চালাচ্ছে আর পড়ে যাচ্ছে। এক সময় হঠাৎ পড়ে গিয়ে তার ডান পা মচকে গেল। রিফাত চিৎকার দিয়ে উঠল। তার বন্ধু তাকে ধরে বাড়িতে নিয়ে গেল।
রিফাতের বাবা জিজ্ঞাসা করাতে সব কিছু খুলে বলল। তার বাবা ডাক্তার ডেকে এনে দেখাল। ডাক্তার বলল, বেশি চোট লাগেনি। দু-তিন দিন ঔষধ খেয়ে বিছানায় শুয়ে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে। তার বাবা তো তার জন্য চিন্তামগ্ন হয়ে পড়ল।
রিফাত তার বাবাকে বলল, তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি শিগগিরই সুস্থ হয়ে যাব। সুস্থ হয়ে আবার সাইকেল চালানো শিখব। বাবা বলল, না তোমাকে আর শিখতে হবে না। আরো বড় হয়ে শিখবা। রিফাত তার বাবাকে বলল আব্বু, কষ্ট না করলে কোনো কিছু শেখা যায় না।
তুমি দেখবা আমি ঠিকই পারবো। দুদিন পর সে কিছুটা সুস্থ হয়েই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। বন্ধুকে বলল, আজকে যেভাবেই হোক আমাকে সাইকেল চালানো শিখতে হবে। তুমি আমাকে যেভাবেই হোক আজকে সাইকেল চালানো শিখিয়ে দিও। বন্ধু বলল আচ্ছা। রিফাত আস্তে আস্তে খুব মনোযোগের সাথে সাইকেল চালাচ্ছে। একবার সাইকেলে উঠে কিছুক্ষণ চালানোর পর আবার পড়ে যায়। আবার চালায় আবার পড়ে যায়। তবুও সে নিরাশ হয়নি। সে দুই তিন ঘণ্টা পর পুরোপুরি সাইকেল চালানো শিখে গেল। এখন সে একাই সাইকেল চালিয়ে বাড়িতে চলে এলো। তার বাবা গেটের সামনে বসে বসে পেপার পড়ছে। রিফাত যখন গেটের ভেতর দিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকছে। তার বাবা তার সাইকেল চালানো দেখে খুব খুশি হলো। দৌড়ে গিয়ে রিফাতকে বুকে টেনে নিল। রিফাত তার বাবাকে বলল, দেখছো আব্বু আমি না তোমাকে বলেছিলাম, কষ্ট আর চেষ্টা করলে সবকিছু করা যায়।

 

Share.

মন্তব্য করুন