ওরা এসেছে নাফ নদীর ওপার থেকে। পালিয়ে। নিজ দেশ ছেড়ে পরবাসে। ওদের সবকিছুই ছিল। ঘর ছিল। বাড়ি ছিল। পরিবার ছিল। ভালোবাসা ছিল। এখন কিছুই নেই। মৃত্যু তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। প্রতিক্ষণ। ঘুমের মধ্যেও ওরা এখন মৃত্যু দেখে। দেখে, ভাইয়ের টুকরো টুকরো লাশ। বোনের ঝলসানো শরীর। মায়ের নিথর দেহ। বাবার ক্ষত-বিক্ষত শব। পোড়ানো শিশুদের কাবাব!

ওরা এসেছে আমাদের দেশে। বাংলাদেশে। তাদের জন্য ভালবাসায় কেঁদে উঠেছে এ দেশ। পাশে দাঁড়িয়েছে সবাই। সাধ্যমতো। কারণ ওরা অপরাধী নয়। ওদের অপরাধ একটাই। ওরা মুসলিম। বিশ্বাসী। এক আল্লায় বিশ্বাসী। এ জন্যই তারা ভিটেমাটি ছাড়া। অসহায়।

কিশোর আদিল। ওদের নিয়ে সে এভাবেই ভাবছে। তার মনে পড়ল মহানবী সা.-এর কথা। যাকে তার জন্মভূমি ছাড়তে হয়েছিল এভাবেই। সাথীদের নিয়ে। গোপনে। তিনি চলে গিয়েছিলেন মক্কা থেকে মদিনায়। শান্ত পরিবেশে। সুন্দর মনের মানুষদের কাছে। তারা তাকে আগলে নিয়েছিল বুকে। ভালোবেসে। পরম মমতায়। তারও অপরাধ একটাই ছিল। তিনি তাওহিদের কথা বলেছিলেন! সত্যের কথা বলেছিলেন!

যারা এভাবে মক্কা ছেড়েছিলেন তারা ‘মুহাজির’। দেশ ত্যাগকারী। আর মদিনায় যারা তাদের ভালোবেসে ছিলেন, তারা ‘আনসার’। সাহায্যকারী। আল্লাহর কাছে উভয়ের মর্যাদা অসীম। আল্লাহ তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, “অগ্রগামী মুহাজির ও আনসার এবং তাদের অনুসারীদের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট! এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট! তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন এমন জান্নাত, যার তলদেশে ঝরনা প্রবাহিত হয়। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ তো মহাসাফল্য।” (সূরা আত তাওবা : ১০০)

আদিল আবেগে দুলে ওঠে। ভাবে, বাংলাদেশ বড় ভাগ্যবান! ভাগ্যবান এ দেশের কোমল মনের মানুষেরা। তার বিশ্বাস, রোহিঙ্গা মুহাজিরদের আল্লাহ মর্যাদা দেবেন। ক্ষমা করবেন। ক্ষমা করবেন এ দেশের আনসারদেরও। ইনশাআল্লাহ।

আবু মিনহাল

Share.

মন্তব্য করুন