“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া”,
“ওয়ালাইকুম আস্ সালাম। কেমন আছ, তাহমিদ?”
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো”। হাঁটার সময় রাস্তার মধ্যে এক বড় ভাইয়াকে দেখে কুশল বিনিময় করল তাহমিদ। ছেলেটা স্বভাবতই এমন। তাহমিদকে নিয়ে কিছু কথা বলে নিই প্রথমে। সে অষ্টম শ্রেণীতে প্রতি বিষয়ে জিপিএ ৫ নিয়ে অসাধারণ রেজাল্ট করে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে। কেউই ভাবতে পারেনি এই সেই তাহমিদ যেই ছেলেটি ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে বেশির ভাগ পরীক্ষাতেই অকৃতকার্য হতো সে ছেলেটি কেমনে এতো ভালো রেজাল্ট করে? যেই ছেলেটি একসময় সবার সাথে খারাপ আচরণ করতো শিক্ষক কিংবা গুরুজনদের সম্মান করতো না। সেই ছেলেটিই কেমনে এখন পথে ঘাটে গুরুজনদের শ্রদ্ধা করে। হঠাৎ করে এই ছেলেটির মধ্যে আমূল পরিবর্তন কেন? এই সব প্রশ্নগুলি আমাকে বারবার সুড়সুড়ি দিয়ে আসছিল আর আমি এর উত্তর পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হচ্ছিলাম।
একদিনের কথা বলি …..
স্কুল ছুটির পর তখন তাহমিদ বাড়ি ফিরছিল। আমি পেছন থেকে চিৎকার দিয়ে ডাকলাম।
তাহমিদ : কি রে ? কি হলো?
আমি : কিছু না। তোর সাথে কিছু কথা ছিল।
তাহমিদ : কী কথা?
আমি : কিছু মনে করবি নাতো?
তাহমিদ : আরে নাহ! কিছু মনে করার কী আছে?
আমি : আচ্ছা! তুই হঠাৎ করে এতটা পরিবর্তন হইলি কেমনে?
তাহমিদ : হা হা হা। পরিবর্তন হইছি? তাহলে তো আল্লাহর শোকর আদায় করতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ্।
আমি : তো এত্তটা পরিবর্তন হইলি কেমনে?
তাহমিদ : আচ্ছা, তাহলে শোন, একদিন বিকেলে আমি মাঠে খেলছিলাম। তখন একজন বড় ভাইয়ার সাথে আমার পরিচয় হয়। ওনার নাম রুহুল আমিন। ধীরে ধীরে তার সাথে সখ্য বেড়ে ওঠে। একদিন আমি কি করলাম, ওনার কাছে আমার সব খারাপ অভ্যাস শেয়ার করলাম আর এ থেকে পরিত্রাণের উপায় জানতে চাইলাম। ওনি কিছু না বলে কেবলমাত্র মনকাড়া এক টুকরো মুচকি হাসি দিলেন। কয়েকদিন চলে গেল। আমিও পরিবর্তন হওয়ার কথাটা ভুলে গিয়েছি। একদিন উনি আমাকে একটি অর্থসহ কোরআন হাতে দিলেন আর উপদেশ দিলেন যে, প্রতিদিন যাতে কোরআনের কিছু অংশ অধ্যয়ন করি, আর প্রতি রাতে নিজের সারাদিনের কর্মব্যস্ততা পর্যালোচনা করি। সে থেকে সেই কাজটা করে আসছি। জানি না এখন কী সফল হতে পেরেছি কিনা।
আমি : তুই ১০০ না ১০০০ পার্সেন্ট সফল হয়েছিস। আচ্ছা, ভাইয়াটি কি এখন এখানে থাকে।
তাহমিদ : জানি না। প্রায় সাত মাস আগে তারা সপরিবারে ঢাকা শিফ্ট হয়েছে আর দেখা হয়নি।
আমি : সত্যি! কোরআনের মধ্যে এক মহাশক্তি বিদ্যমান। আমিও আজ থেকে এই মহাগ্রন্থ কোরআন অধ্যয়নে লেগে পড়ব। আর আমিও পরিবর্তন হবো ইন-শা-আল্লাহ।
তাহমিদ : কিছু বলল না শুধুমাত্র টুকরো মুচকি হাসি দিল। আমার মনে হলো এটি সেই রুহুল আমিন ভাইয়া যিনি তাহমিদকে পরিবর্তন হতে সাহায্য করেছে। তাহলে কি তাহমিদ আমার জন্য সেই রুহুল আমিন ভাইয়ার প্রতিরূপ হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে?

 

 

Share.

মন্তব্য করুন