হাসিবরা শহরে থাকে। হাসিবের বাবা হলেন সরকারি চাকরিজীবী। আর হাসিবের মা হলেন গৃহিণী। হাসিবের আরেকজন বড় ভাই রয়েছে। হাসিবের বড় ভাই এবার বিজ্ঞান শাখায় কলেজে ২য় বর্ষে পড়ে। আর হাসিব এবার ৮ম শ্রেণীতে পড়ে। হাসিব ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানকে খুব ভালোবাসে। ওর বাসায় একটা ইলেকট্রনিক খেলনাও ভালো না। আর ভালো থাকবেইবা কি করে ওর কা- দেখলে মন মরা মানুষও হেসে দেয়। হাসিবের বাসায় যত খেলনা আছে সবগুলো যদি সার্চ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে কোনোটার মোটর নেই, আবার কোনোটার ছোট ছোট লাইট, চুম্বক কিছুই নেই। হাসিব এগুলো খুলে খুলে নিজ আপন মনে ব্যাটারির (+,-) এর সাথে যুক্ত করে ওর নিজ ইচ্ছা মতো বিভিন্ন রকমের পাখা, লাইটিং সিস্টেম ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। এসবের কারণে বাসার সকলেই ওকে প্রচুর বকে, কিন্তু হাসিব কারো কথা শোনে না। হাসিব ওর ভাইয়ের বড় ক্লাসের বিজ্ঞান বিভাগের বই নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে বলে ওর ভাইতো ওর সাথে এই কারণে বিড়াল ইঁদুরের মতো করে পেছনে লেগেই থাকে। হাসিব স্কুলের পরীক্ষায় অন্যান্য সাবজেক্টে নম্বর কম পেলেও সব সময়ই বিজ্ঞান সাবজেক্টে ৯০ এর ওপরেই নম্বর পেয়ে থাকে। এর কারণে ওর ক্লাসের বিজ্ঞান শিক্ষক ওকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। হাসিবদের বাসায় একটি কম্পিউটার রয়েছে। কিন্তু হাসিব ঐ কম্পিউটার ওর বড় ভাইয়ের ভয়ে ছোঁয়ারও সাহস পায় না।
ইদানীং হাসিবের মাথায় একটি গভীর চিন্তা বেশ ঘুরপাক খাচ্ছে। আর এর কারণ হলো কিছুদিন পর ওদের স্কুলে বিজ্ঞান প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় যে ১ম স্থান অধিকার করতে পারবে তাকে স্কুলের পক্ষ থেকে ১ম পুরস্কার হিসেবে একটি কম্পিউটার দেয়া হবে। এখন হাসিবের মাথায় একটাই চিন্তা স্কুলের বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় ১ম হয়ে ঘোষণা দেয়া পুরস্কার কম্পিউটারটা ওর নিজের করে নিবেই। হাসিব প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বাসার কাউকে কিছুই বলেনি। প্রতিযোগিতার বাকি আর মাত্র ১০ দিন। হাসিব ওর যতোগুলো মোটর আছে সবগুলো খুঁজে খুঁজে একত্রে করলো। ওর টার্গেট হলো অনেকগুলো মোটর দিয়ে একটি শক্তিশালী যান্ত্রিক পাখা তৈরি করবে এবং এটি চলবে সম্পূর্ণ সূর্যের সোলার শক্তির মাধ্যমে। এই যান্ত্রিক পাখাকে ঘূর্ণায়নের মাধ্যমে বিভব সৃষ্টি করে এর দ্বারা অতি সহজেই সম্পূর্ণ বিনা বিদ্যুৎ খরচে বিভিন্ন রকমের ব্যাটারি চার্জ দেয়া যাবে। যেমন- মোবাইলের ব্যাটারি, ল্যাপটপের ব্যাটারি, লাইটের ব্যাটারি ইত্যাদি।
অবশেষে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর বিজ্ঞান প্রতিযোগিতার আগের দিন রাতে যান্ত্রিক পাখাটি তৈরি করতে সফল হয়। চলে এলো কাক্সিক্ষত দিন অর্থাৎ স্কুলের বিজ্ঞান প্রতিযোগিতার দিন। হাসিব সকালে গোসল করে নাশতা সেরে চলে এলো স্কুলে। নিয়ম অনুযায়ী ওর তৈরি যন্ত্রটি স্কুলের অডিটোরিয়ামের মঞ্চের টেবিলে রেখে এলো। পুরো অডিটোরিয়াম জুড়ে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের অবস্থান। একেক করে সকলের তৈরি যন্ত্রের বিস্তারিত তথ্য স্টেজে গিয়ে বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য ডাকা হচ্ছে। একটু পর হাসিবকেও ডাকা হলো। হাসিব ওর যন্ত্রের সকল তথ্য স্টেজে গিয়ে বিচারকদের সামনে সফলভাবে উপস্থাপন করে আসে। এমন করে আস্তে আস্তে সকলের অর্থাৎ প্রায় ১০০ প্রতিযোগীর নিজ নিজ তৈরি যন্ত্র সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন কার্যক্রম শেষ হয়। আর মাত্র কিছুক্ষণ পরেই বিজ্ঞান প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ফলাফল ঘোষণা করা শুরু হয়েছে। প্রথমেই বিজ্ঞান প্রতিযোগিতার ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীদের নাম ঘোষণা করা হয়। দু’জনই হাসিবের ক্লাসেরই ছাত্র। হাসিবের বুক ক্রমশই ক্ষণে ক্ষণে ধুপ ধুপ করছে। একটু পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজ্ঞান প্রতিযোগিতার ১ম স্থান অধিকারী বিজয়ীর নাম অর্থাৎ শেষমেশ হাসিবের নামই ঘোষণা করলেন। হাসিব যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলো না। হাসিব যেন মহাখুশি। আনন্দে শুধু লাফাচ্ছে। পুরো অডিটোরিয়ামের সকলের দৃষ্টি হাসিবের দিকে। অবশেষে হাসিবের হাতে তুলে দেয়া হলো বিজ্ঞান প্রতিযোগিতার ১ম পুরস্কার কম্পিউটার। স্কুলের ২ জন কর্তৃপক্ষ হাসিবের সাথে ওদের বাসায় গিয়ে কম্পিউটার দিয়ে এলো। অতঃপর হাসিবের বাবা-মা বড় ভাই স্কুলের কর্তৃপক্ষদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে পুরো অবাক হয়ে যায়। খানিক বাদে নিজের ছেলের এমন দুর্দান্ত প্রতিভা দেখে হাসিবের বাবা-মা চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারেননি। পরক্ষণেই হাসিবের বাবা-মা হাসিবকে বুকে টেনে নেন। আর হাসিবের বড় ভাইও হাসিবকে নিয়ে বেশ গর্ব করে। সব মিলিয়ে হাসিবের যেন খুশির শেষ নেই।

 

Share.

মন্তব্য করুন