হেমন্তের ছড়া
-আহমদ মতিউর রহমান
১.
ঘাসের ডগায় শিশির ফোঁটায়
আবার এলো হেমন্ত
আর কখনো প্রকৃতি
সাজে নাকো এমন তো !
গরমের আজ হয়ে গেছে ছুটি
শীতের আমেজ গায়ে লুটোপুটি।
২.
মরা কার্তিক হয়ে উঠুক
ভরা কার্তিক আজ
মৌ মৌ ধানে অঘ্রাণ এসে
সাজুক নতুন সাজ।
কার্তিক মাসের কাত্যানি
তোর মর্ম সব জানি
হালকা ফোঁটার বৃষ্টি
ঘটায় অনাসৃষ্টি !
জীবন ঘুড়ি
-আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন
উড়ছে ঘুড়ি উড়ছে ঘুড়ি
গোত্তা মারে যতো,
বড়শি ধরা পুকুর জুড়ি
বোয়াল মাছের মতো।
বেশি পানির মাছতো তাই
আকাশছোঁয়া দাম,
শখের বশে ওড়ায় ঘুড়ি
চায় যে শুধু নাম।
ঘুড়ির মতোই উড়ছে মানুষ
পুরা জগৎ জুড়ে,
কাজ কারবার যে যা করে
ঘুড়ির মতোই উড়ে।
রশিটা ভাই লাগানো আছে
সুতোর নাটাইয়ে,
সময় হলে পড়বে টান
যাবে অসময়ে।
সবার জন্য একই পথ
নিত্য দিনের খেলা,
চলছে জীবন উড়ছে ঘুড়ি
ঘুড়ির বসে মেলা।
আসছে ঘুড়ি যায়রে ঘুড়ি
হঠাৎ পড়ে টান,
কেউ জানে না পড়বে কাটা
শখে ঘুড়ির জান।
জীবন ঘুড়ির এই চলাচল
হবে জনম ধরে,
নাটাই ওয়ালা সুতো ছেঁড়ে
দেখেন কে কি করে।
আকুতি
-ওমার আল ফারুক
লতায় বাঁধা নিবাস আমার নাফের তীরে ছিল
হঠাৎ সেদিন জালিম এসে আগুন জ্বেলে দিল।
খোকার বাপের ধরে নিয়ে মারল বুকে গুলি
দুধের শিশু কেড়ে নিয়ে আছড়ে দিল ফেলি।
কুঠার হেনে পাঁজর চিরে কলজে নিল তুলে
পাষাণ হৃদয় একটিবারো উঠল না যে দুলে।
লজ্জা ছিল শোভন আমার খাবলে খেল তাও
সব হারিয়ে জীবন আজ মাঝ দরিয়ার নাও।
অকূল পাথার ভেসে ভেসে ওপার দেশে চাই
ক্ষুধায় কাতর হতভাগীর বাঁচার আশা নাই।
ভুলে গেছি কাঁদার ভাষা শুকিয়ে গেছে আঁখি
এত দুঃখের বেদন ব্যথা কোথায় ধরে রাখি!
স্বামী ছেলে কন্যা আমার পিতা মাতাও নাই
বিন কাসিমের মত কোথায় ধর্ম জ্ঞাতি ভাই?
আর কত বুক খালি হলে জাগবে সালাহদিন
বোনের চোখের অশ্রু মুছে রুখবে অসুর হীন।
আর পারি না সইতে! পাঠাও আনসারি
মজলুমানের সহায় হবে সুজন কা-ারি।
স্বপ্ন আঁকি
-হাসনাইন ইকবাল
স্বপ্ন আঁকি স্বপ্ন আঁকি স্বপ্ন আঁকার ধুম
স্বপ্ন আঁকার ক্যানভাসে আজ রঙ তুলিতে চুম।
আকাশ যখন ঝিম ধরে যায় বাতাস থাকে চুপ
আপন মনে বৃষ্টিরা গায় টুপ টুপা টুপ টুপ
পাখির চোখে কোথায় তখন স্বপ্ন সুখের ঘুম?
মাঠের পরে কিষাণ যখন উপুড় থাকে
বীজ কি তখন কল্পনাতে স্বপ্ন আঁকে?
সেই খুশিতে মাটির বুকে বাড়তে থাকে উম?
স্বপ্ন আঁকি স্বপ্ন আঁকি স্বপ্ন আঁকি ধুম
স্বপ্ন আঁকার ক্লান্ত আবেশ এক নিমিষে গুম!
সময় এখন
-ওয়াহিদ আল হাসান
ইতিহাসের পাতায় পাতায়
পড়েছি, লিখেছি খাতায়
আজকে সবই হার মেনেছে
বিশ্ববাসী সব জেনেছে।
তবু কারো হুঁশ হলো না
প্রতিবাদের যাত রইলো না
কেমনে পাবে মজলুম মুক্তি
আছে কারো যুক্তি?
সময় এখন পাশে দাঁড়ার
রোহিঙ্গাদের রক্ষা করার।
আমার এ দেশ
-সাকী মাহবুব
লাল টুকটুক কৃষ্ণচূড়ায়
আমার এ দেশ ভরা
পদ্মা মেঘনা যমুনাতে
আমার এ দেশ গড়া।
রবি, নজরুল, জসীম মিলে
আমার এ দেশ ধন্য,
সোনার বাংলা নামে এদেশ
বিশ্ব মাঝে গণ্য।
ভাবনা
-তোরাব আল হাবীব
বাগিচায় হাসে
নানাজাত ফুল
মধুকর মধু নিয়ে থাকে মশগুল
শ্রমিকের ভূমিকায় নেই তার তুল।
ভোরবেলা ডাকে
পাখি সুমধুর
আজানের আহবানে জান্নাতি সুর
আঁধারের মাঝে পাই ঠিকানার নূর।
সাগরের পানে
নদী কেন ধায়?
স্বজাতির দেখা পেতে স্বভাবত চায়
নিয়তিই এইভাবে টেনে নিয়ে যায়!
ভাবনার বানে
উঠেছে কী ঢেউ?
গরিবের সংবাদ রাখে নাতো কেউ।
সময়ের ডাকে
কেন সাড়াহীন
পাঁজরের বামপাশে ব্যথা চিনচিন
নিষ্ঠুর দানবতা রবে অমলিন?
(ফারসি শিশুতোষ কবিতার ভাষান্তর)
পিতার উপদেশ
-মূল: ইরাজ মির্জা
ভাষান্তর: মীম মিজান
প্রাণের প্রিয় ছেলে আমার
নাও উপদেশ কিছু বাবার।
সকালে ওঠার অভ্যাস করো
ভোরের ঘুমকে তুমি ছাড়ো।
মায়ের প্রতি দয়ালু হও
তার সেবায় অবিরত রও।
নিজ পিতাকে করো সম্মান
তার কথার তুমি রেখো মান।
দু’জনে যদি খুশি রয়
জেনো, খোদাও খুশি হয়।
মুক্তো দানার ভাঁজ
-আতিফ আবু বকর
শেষ বিকেলের মেঘলা দিনে
গাং শালিকের বোল
ঝিরিঝিরি হাওয়ার তালে
সফেদ কাশের দোল।
মেঘের মিছিল পড়লো নুয়ে
সবুজ বনের ছায়
সূর্যিমামা দূর নীলিমায়
হঠাৎ ডুবে যায়।
আঁধার নামা সন্ধ্যে এলো
নীড়ে ফেরার ক্ষণ
আলতো ছোঁয়ায় মন ভিজালো
দক্ষিণ সমীরণ।
পাখপাখালির কাকলিতে
মুখরিত আজ
শিশির ভেজা ঘাসের ডগায়
মুক্তো দানার ভাঁজ।