নতুন বইয়ের গন্ধে তাওহীদের মন যেন আজ প্রজাপতি। তবে তা পাঠ্যবই নয়। বাবার লেখা বই। আজই বেরিয়েছে। অপরূপ প্রচ্ছদ। দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছে করে। আর ভেতরের লেখাগুলো কি কম সুন্দর? কখনোই না। বাবার লেখা পড়ে পড়েই তো সে বেড়ে উঠেছে। দু’চোখে মেখেছে একপৃথিবী সবুজ স্বপ্ন!
বইটা খুলেই কিছুটা অবাক হলো তাওহীদ। না, বাবা তো ভুল করতে পারেন না। এ বই বেরোনোর আগে বাবা কত পরিশ্রম করেছেন! কত কাটা-ছেঁড়া! কত সংযোজন-বিয়োজন! নির্ঘুম পার হয়ে গেছে কত রাত। তারপরও তিনি কেন লিখেছেন, এ বইয়ে ভুল থাকতে পারে!
তাওহীদ ছুটে গেল বাবার কাছে। সরাসরি। ছেলের কথা শুনে তিনি ভাবলেন, এ তার কিশোর মনের সরল কৌতূহল। মুখে হাসির রেখা টেনে বললেন, বাবা! কোনো মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। মানুষ ভুল করবে, এ হচ্ছে সবচেয়ে নির্ভুল কথা। মানুষের লেখা বইয়ে ভুল থাকা খুবই স্বাভাবিক! খুবই সাধারণ একটি বিষয়! আল-কুরআনই একমাত্র নির্ভুল কিতাব। মানুষকে সরল পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ তা নাজিল করেছেন। এর শুরুতেই আল্লাহ বলেছেন, “এ কিতাবে কোনো সন্দেহ নেই।” (সূরা আল-বাকারা : ২)
তা ছাড়া, পৃথিবীবাসীর কাছে কুরআন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে এভাবে, “এ কুরআনের সমকক্ষ কোনো কিতাব রচনার জন্য সকল মানুষ ও জিন যদি সমবেত হয় এবং তারা একে অপরের সাহায্যকারীও হয়; তবু তারা এর মতো কিছু রচনা করতে পারবে না।” (সূরা বনি ইসরাইল : ৮৮)
তাওহীদ অবাক! তার কৌতূহলী চোখ দুটো আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আচ্ছা, কুরআনের এই চ্যালেঞ্জ কি কেউ গ্রহণ করেছে বাবা? জানতে চাইল সে। বাবা বললেন, সে যুগ ছিল কবিতার যুগ। আরবি ভাষার বড় বড় কবিও বলতে বাধ্য হয়েছেন, কুরআন কোনো মানুষের কথা নয়!
এক পশলা বৃষ্টি নামল তাওহীদের মনে। শীতল বৃষ্টি! আল কুরআনের ভালোবাসায় ভিজে উঠল তার প্রতিটি শিরা-উপশিরা!