বেশি না। কিছুদিন আগেই আমাদের প্রথম পরিচয়। তখন থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব। এমন বন্ধুত্ব যা কোনদিন ছিন্ন হওয়ার নয়। যদিও বা আমাদের বন্ধুত্বের দ্বিতীয় বর্ষের এখন চার মাস চলছে। কিন্তু তারপরও যখনই ওর সাথে আমার দেখা হয়, তখনই মনে হয় যেন এটিই ওর সাথে আমার প্রথম দেখা।
আমার সেই প্রিয় বন্ধুটির নাম হলো মুহাম্মদ মারুফ আজিজ মাহিন। আমি মাঝে মাঝে তাকে ‘ম্যাম’ বলেই ডাকি। কেননা ইংরেজিতে তার নামের প্রথম অক্ষরগুলো একত্রিত করলে ‘ম্যাম’ই হয়। যাই হোক সেই প্রথম পরিচয় থেকেই আমরা একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যাই, হয়ে যাই একে অপরের অন্তরঙ্গ বন্ধু। আমাদের পরিচয়ের চারদিন পরেই আমাদের দু’জনেরই বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরদিনই আমরা একটি শিক্ষা সফরে যাই। ওখানে আমি যাচ্ছি বলে আমার প্রিয় বন্ধুটিও ওখানে যায়। ওখানে যাওয়ার পথে ও আমাকে একটা লেখা দেখায়। লেখাটা পড়েই আমি বুঝতে পারলাম ও আমাকে কতটা ভালোবাসে। ভ্রমণ থেকে বাড়ি আসার পর হঠাৎ করেই আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একদিন আমি তাকে একটা অনুরোধ করি। কিন্তু ও মুখের ওপরই না বলে দিলো। তখন আমি তাকে খুব কঠোর একটা কথা বলে ফেলি। তখন সে খুব রাগ করল। ওর রাগ ভাঙানো আমার পক্ষে খুব কঠিন একটা কাজ ছিল না। কয়েকটা মোড়ামুড়ি দিলেই সে ফিক করে হেসে দিত। আর তাতেই তার রাগ ভেঙে যেত। কিন্তু মাঝে মাঝে ও মনে হয় আমার আচরণে খুব বেশি কষ্ট পেত। তখন ওর চোখের দিকে তাকালে মনে হতো ওর দু’চোখ যেন ভিজে উঠেছে। তখন স্যার ট্যার কিছু বলে ওর রাগ ভাঙাতে হয়। সে ছিল খুব চালাক প্রকৃতির। যখনই আমার উপর থেকে ওর রাগ চলে যেত, তখনই সে আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিত, আগামীতে এমন কাজ করব না বলে। এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো আমাদের বন্ধুত্বের দিনগুলো। আমি ওকে রিকোয়েস্ট করার প্রায় ৫ মাস পর সে ঐ রিকোয়েস্টটি বাস্তবায়ন করে। এতে আমরা সমপর্যায়ের সঙ্গী হয়ে যাই।
প্রায় প্রত্যেকদিন দুপুরবেলা আমরা একসঙ্গে গল্প করতাম। একসময় আমরা দু’জনেই হঠাৎ চিন্তা করলাম যে, একদিন দু’জন মিলে একসাথে ঘুরতে গেলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। বেড়াতে যাওয়ার জন্য সময় খুঁজতে লাগলাম, অবশেষে একদিন সময়ও পেয়ে গেলাম। ১৫ আগস্ট। দু’জনেরই প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেদিন একসাথে অনেকক্ষণ ঘুরাফেরা করলাম এবং একসাথে বইও পড়লাম একটা। এরপরেই ঘটল সেই দুঃখজনক ঘটনা। হঠাৎ করেই একদিন ও একটা ছোট ভুল করে ফেলেছিল। সেদিন রাতেই আমি ওকে বলে দিলাম যতদিন না এই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে ততদিন আমাদের কথা বন্ধ। একথা বলার পরদিন ও আমাদের এলাকায় এলো, আমার সাথে কথাও বলল, আমার সামনেও বসল, এমনকি আসরের নামাজ পড়ে আমার জন্য দাঁড়িয়েও থাকল, কিন্তু আমি একটুও কথা বললাম না। সেদিন আমি কথা না বলায় ও হয়তো অনেক বেশিই কষ্ট পেয়েছিল, তার সেই কষ্টমাখা চোখের দিকে তাকিয়ে আমার সব রাগ মুহূর্তেই পানি হয়ে গেল। তাই আগে ওর সাথে কথা বলা শুরু করি। এর পরদিন ও আমাকে আমি কেন ওর সাথে এক রাত এক দিন কথা বলিনি এ বিষয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন শুরু করে দিলো। আমি ওসব এড়িয়ে যেতে চাইলেও সে প্রশ্ন করা অব্যাহত রাখল। তখনকার মতো স্যরি বলে পার পেয়ে গিয়েছিলাম। সেদিনও সে আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিয়ে ফেলে, এই বিষয়ে যে আমি আর কোনোদিন ওর সাথে কথা বলব না। এই কথা যেন আমি ওকে আর কোনোদিন না বলি। তখন থেকেই আমরা দু’জনে সবসময় বিশেষ করে রাতে অফলাইনে চ্যাটিং করতাম। কথা তো একটানা ৩-৪ ঘণ্টা। তারপরও যেন শেষ হতো না কথা। এরপর এলো আমার জেডিসি পরীক্ষা আর ওর এলো বার্ষিক পরীক্ষা। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমতে দু’জনেই কৃতিত্বের সাথে পাস করলাম। ও হলো ওর নতুন ক্লাসের ফার্স্ট বয় আর আমি পেলাম জিপিএ ৫। এরপরেই এলো বেদনাবিধুর সেই দিন যেদিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি ওকে ছেড়ে স্থায়ীভাবে শহরে চলে আসি। আজ শহরে এত লোকের ভিড়ে নিজেকে খুবই বন্ধুহীন মনে হয়। আজ তারচেয়ে এত দূরে থেকেও তাকে খুব বেশি মিস করি। আজও মনে পড়ে সেই স্মৃতিগুলো যেগুলো আমরা দু’জনে একত্রে কাটিয়েছি। আজ খুব মনে পড়ে সেই রাতটি যেদিন রাতে দু’জনে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। আজ ঐ সব স্মৃতি মনে পড়লেও করার কিছুই নেই শুধু আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি, হে আল্লাহ, তুমিই তো জানতে এবং তুমিই জান আমাদের বন্ধুত্ব শুধুমাত্র তোমারই জন্য ছিল, তোমারই জন্য আছে এবং তোমারই জন্য থাকবে, ইনশাআল্লাহ। হে আল্লাহ আমরা যাতে আবার স্থায়ীভাবে একত্রিত হতে পারি সে তাওফিক আমাদের দাও, আমিন।

 

Share.

মন্তব্য করুন