বিশ্বের দ্রুতগতিসম্পন্ন শিনকানছেন বা বুলেট ট্রেন শুধু জাপানের নয়, পৃথিবীর আশ্চর্যজনক এক বাহন! একুশ শতকের বিস্ময় শিনকানছেন জাপানের অন্যতম প্রতীকও বটে। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী রেলওয়ে জগতে ঈর্ষার বিষয়ও।
শিনকানছেন শব্দের অর্থ নতুন ট্রাঙ্ক লাইন। চলতি ২০১৭ সালের ১ অক্টোবর হবে জেআর তথা জাপান রেলওয়ের শিনকানছেন ট্রেনের যাত্রীসেবার ৫৩তম বার্ষিকী। ১৯৬৪ সালের এই দিনে টোকিও অলিম্পিক গেমস উদ্বোধনের মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে তোওকাইদোওছেন বা তোওকাইদোও লাইন জেরো সিরিজ নামে প্রথম ট্রেন চালু হয়েছিল টোকিও স্টেশনে। তখন জাপান এবং বহির্বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল এ ঘটনা।
আজ পর্যন্ত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য বিলম্ব, দুর্ঘটনা, দুর্ভোগ, যাত্রী হতাহতের ঘটনা নেই। সেন্ট্রাল জাপান রেলওয়ের তথ্য মতে, গড়ে বুলেট ট্রেনের বিলম্বের ঘটনা আশ্চর্যজনকভাবে মাত্র ০.৬ মিনিট! বিমানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলেছে মাটির ওপর দিয়ে বুলেট ট্রেন। কাজেই বুলেট ট্রেনকে বলা যায় স্থলপথের বিমান। জাপানের সবচেয়ে বড় শিল্পনগর ওসাকা। টোকিও থেকে ওসাকা যেতে বিমানে প্রস্তুতি থেকে অবতরণ পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। সেখানে বুলেট ট্রেনের ৫১৫.৪ কি.মি. বা ৩১২ মাইল পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা ২৫ মিনিট। সময় দেড় ঘণ্টা বেশি লাগলেও বিমানের চেয়ে যাত্রীরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন শিনকানছেনে যেতে। কারণ এতে চড়ার জন্য কোনো বিশেষ প্রস্তুতির দরকার নেই। নামতেও সময় নষ্ট হয় না। তা ছাড়া এটা নিয়মানুগ, ঝকঝকে-তকতকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক, নিরাপদ ও বিশ্বস্ত। বুলেট ট্রেনের যাত্রীসেবা একেবারে বিমানসেবার মতোই। অতিরিক্ত সেবা হিসেবে আছে পারিবারিক পরিবেশ সংবলিত শিশুদের খেলার কামরা, ভেন্ডিং মেশিন, সর্বপ্রকার পানীয় সেবনের বিশেষ জায়গা ইত্যাদি।
টোকিও-ওসাকা যাতায়াতকারী তোওকাইদোও শিনকানছেন লাইন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত ও দ্রুততম ট্রেনসেবা। প্রতি ১০ মিনিট অন্তর টোকিও স্টেশন থেকে একটি ট্রেন ছেড়ে যায় দূরপাল্লার গন্তব্যস্থলের দিকে। প্রতিদিন দীর্ঘ সুতনুকা ৩২৩টি শিনকানছেন ট্রেন গড়ে তিন লাখ ৯১ হাজার যাত্রী পরিবহনে ব্যস্ত। প্রতি ঘণ্টায় ১৩টি ট্রেন এই দুই শহরের মধ্যে চলাচল করছে। তোওকাইদোও শিনকানছেনের গতি সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৩২০ কি.মি. বা ২০০ মাইল। যদিও বা ১৯৯৬ সালের এক পরীক্ষায় ৪৪৩ কি.মি. বা ২৭৫ মাইল পর্যন্ত চলেছিল সফলভাবে। প্রতিটি ট্রেন ১৬টি কামরাযুক্ত। এতে মোট আসন এক হাজার ৩২৩। বর্তমানে জাপানের অধিকাংশ প্রদেশ বা জেলার সঙ্গে রাজধানী টোকিওর শিনকানছেন রেলওয়ে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে, যা যোগাযোগব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর ব্যাপার! নদ-নদীর ওপর দিয়ে, পাহাড়ের তলদেশ দিয়ে এই ট্রেন ছুটে চলেছে। এর জন্য কমপক্ষে তিন হাজার সেতু নির্মাণ এবং ৭০টির কাছাকাছি সুড়ঙ্গ তৈরি করতে হয়েছে। শিনকানছেনের পথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৫৯ সালে এবং বিশ্বব্যাংকের প্রাথমিক অর্থঋণ নিয়ে।
আদতে শিনকানছেন ছিল একটি ব্যয়বহুল উচ্চাকাক্ষী প্রকল্প। বিংশ শতাব্দীর ত্রিশ-চল্লিশের দশকে বুলেট ট্রেনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যেটা জাপান থেকে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে কোরিয়া ও চীন পর্যন্ত স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই বিলাসী প্রকল্প থেমে যায়। যদিও বা জাপানিরা থেমে থাকেননি। তাই এই অসমাপ্ত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দরিদ্র জাপান সরকার পুনরায় উদ্যোগী হয় পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝি। বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দেয় সরকার।
ইতোমধ্যে অনেকগুলো পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপিত হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ছাড়া দ্রুতগতিসম্পন্ন রেলপথ স্থাপন সম্ভব নয়। এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা ছিলেন যথাক্রমে তখনকার সরকারি জাপান রেলওয়ে কোম্পানির চতুর্থ প্রেসিডেন্ট সোগোও শিনজি (১৮৮৪-১৯৮১), একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী আমলা এবং শিনকানছেন বুলেট ট্রেন নির্মাণ প্রকল্পের মূল প্রকৌশলী হিদেও শিমা (১৯০১-৯৮)। শিমার বাবাও ছিলেন জাপানে প্রথম রেলওয়ে প্রকল্পের অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা। কাজেই তাঁর রক্তে ছিল সুপার ট্রেন নির্মাণের স্বপ্ন। ১৯২৫ সালে তিনি সরকারের রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। মন্ত্রণালয়ের অধীন রেলওয়ে কারখানায় তিনি স্টিম লোকোমোটিভ ইঞ্জিন তৈরি করতে গিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। তিনি জাপানের তৈরি প্রথম তিন সিলিন্ডারবিশিষ্ট স্টিম লোকোমোটিভ ইঞ্জিন ক্ল্যাস সি-৫৩ নির্মাণে প্রভূত ভূমিকা রাখেন। এই প্রকল্পে মূল ক্ল্যাস সি-৫২ সিরিজের ইঞ্জিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়েছিল। এভাবে তিনি বাষ্পচালিত ট্রেনের জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। যেমন, চলন্ত চাকার মধ্যে যথার্থ ভারসাম্য রক্ষা (ড্রাইভিং হুইল ব্যালান্স), বায়ু বা গ্যাসচালিত গিয়ার (ভালভ গিয়ার), নতুন ব্রেকিং সিস্টেম ইত্যাদি। শুধু ট্রেনের ইঞ্জিনই নয়, হিদেও শিমা ইসুজু কোম্পানির মোটর গাড়ি, অগ্নিনির্বাপক গাড়ি, ডিজেলচালিত ট্রেন, বাস ইত্যাদির ডিজাইন ও নির্মাণেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্বল্পায়ু পণ্যপরিবহনকারী গাড়ি নির্মাণে যুক্ত থাকেন। উন্নত বিশ্বের ট্রেনগাড়ি সম্পর্কে বিস্তর পড়াশোনা ও গবেষণা করেন। স্বপ্ন দেখেন এমন এক ট্রেন গাড়ির, যা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবে! সেই সুযোগের প্রতীক্ষায় তিনি মনে মনে প্রহর গুনতে থাকেন।
দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে তাঁর জীবনে দারুণ এক সুযোগ আসে। উল্লেখ্য, যুদ্ধে পরাজিত জাপান তখন মিত্রবাহিনীর প্রধান শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। টোকিওর সুপ্রিম কমান্ডার ফর দ্য অ্যালায়েড পাওয়ার্স (এসসিএপি) বা জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স (জিএসকিউ) প্রধান জেনারেল ম্যাক আর্থারের আদেশে একটি কাজ পান। সেটা হলো ১৯৪৭ সালে হাচিকো রেলওয়ে লাইনে একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে। জিএসকিউ তাঁকে নিযুক্ত করেন কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় তিন হাজার কাঠনির্মিত যাত্রীবাহী রেলওয়ে গাড়িকে ইস্পাতে পরিবর্তন করে দেয়ার জন্য। তিনি সেই প্রকল্পের পরিকল্পনার সঠিক রূপরেখা তৈরি করে দিতে সক্ষম হন। অত্যন্ত মেধাবী ও উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী প্রকৌশলী শিমা যাত্রীবহনকারী স্টিম লোকোমোটিভ ইঞ্জিন ক্ল্যাস সি-৬২ এবং ডি-৬২ নির্মাণেও বিশেষ অবদান রাখেন। ১৯৪৯ সালে জাপান ন্যাশনাল রেলওয়ে কোম্পানি পুনর্গঠিত হলে তার পেশার অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে সরকার তাকে রেলওয়ে বাহন নির্মাণ পরিদপ্তরের পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়।
যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানের সার্বিক বিপর্যস্ততার মধ্যে একটি অবিস্মরণীয় বেদনাদায়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ১৯৫১ সালে সাকুরাগিচোও রেলস্টেশনে একটি অগ্নিকা-ের ঘটনায় শতাধিক যাত্রী প্রাণ হারান এবং প্রায় এক শ’র মতো আহত হন। অগ্নিদগ্ধ রেলবগির দরজা না খোলার কারণে যাত্রীরা বের হতে পারেননি। এ ঘটনার কারণে জাপানের নীতি অনুসারে হিদেও শিমা দায়িত্ব নিয়ে চাকরিতে ইস্তফা দেন। এরপর রেলের বগি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সুমিতোমো মেটাল ইন্ডাস্ট্রিতে উপদেষ্টা পদে যোগদান করেন। ১৯৫৩ সালে রেলের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তিদের সংগঠন ‘তেৎসুদোও ইউ নো কাই’ বা ‘রেলওয়ে বন্ধু সংস্থা’র প্রথম চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। রেল বিষয়ে বিভিন্ন কর্মকা- চালিয়ে যেতে থাকেন, পাশাপাশি অবিরাম রেল নিয়ে চিন্তাভাবনা ও গবেষণাও চলতে থাকে তার।
১৯৫৫ সাল। ব্যয়বহুল শিনকানছেন লাইনের প্রকল্প গৃহীত হয় আমলা সোগোও শিনজি রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর। তিনি আহ্বান জানান পুরনো বন্ধু এবং সেই সময়কার রেলওয়ে-প্রতিভা প্রকৌশলী হিদেও শিমাকে শিনকানছেন ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে শুরু করে সমগ্র প্রকল্পের প্রধান হিসেবে কাজ করার জন্য। এবার সত্যি সত্যি ছাত্রজীবন থেকে স্বপ্নদেখা চমকে দেয়ার মতো ব্যতিক্রমী ট্রেন তৈরির সুবর্ণ সুযোগ আসে তার হাতে। লেগে পড়েন হিদেও শিমা দারুণ উৎসাহ নিয়ে। অ্যারোনোটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিমান নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রেনের ডিজাইন থেকে ইঞ্জিন এবং একাধিক নতুন প্রযুক্তি, বিশেষ করে এমন এক ব্রেকিং সিস্টেম উদ্ভাবন করেন, যাতে করে দ্রুত ট্রেন চলাকালে ব্রেক কষলেও ট্রেন ঝাঁকুনি খেয়ে উল্টে যাবে না বা লাইনচ্যুত হবে না, পেলবভাবে ট্রেন থেমে যাবে। ভূমিকম্পেও কোনো ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটারনিয়ন্ত্রিত হবে প্রতিটি ট্রেন। সেই মোতাবেক শিনকানছেন ট্রেন তৈরি করা হয় তার কারিগরি নেতৃত্বে। রেলপথ যাতে নির্বিঘœ থাকে এর জন্য প্রতিদিন রাতের বেলা শিনকানছেন লাইন পরীক্ষা করার জন্য ডক্টর ইয়েলো নামে বিশেষ শিনকানছেন ট্রেনও তৈরি করেন।
উল্লেখ্য, এই প্রকল্পে তার ছেলে প্রকৌশলী তাকাশি শিমাও সংযুক্ত ছিলেন। স্বাপ্নিক অধিকর্তা বুলেট ট্রেনের জনক সোগোও শিনজির পরিচালনায় একদল প্রযুক্তিবিদের অধিনায়ক বুলেট ট্রেনের জনক হিদেও শিমার সুউদ্ভাবনীয় উজ্জ্বল ফসলই হচ্ছে আজকের বিশ্বখ্যাত দ্রুতগতিসম্পন্ন এই অত্যাধুনিক ট্রেন। ১৯৬৪ সাল থেকে নিরাপদে মসৃণগতিতে ধেয়ে চলেছে সম্মুখপানে। এই আশ্চর্যজনক উদ্ভাবনের পেছনে রয়েছে ওই দু’জন স্বপ্নদ্রষ্টার অপরিসীম কষ্টক্লান্তি শ্রম আর নোনাঘামের ইতিহাস বিশ্বের মানুষ তো দূরের কথা অধিকাংশ জাপানিও জানে না।
১৯৬৪ সালের ১ অক্টোবর সকালবেলা টোকিও স্টেশনে তোওকাইদোও শিনকানছেনের প্রথম ট্রেন ‘জেরো ছেন’ বা ‘শূন্য লাইন’-এর শুভ উদ্বোধন হয়। ১৯৬৪ সালের ৩ নভেম্বর সরকার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান কোক্কা কুনশোও পদকে ভূষিত করে সোগোও শিনজিকে। ১৯৮১ সালে তিনি পরলোকগমন করেন।
এদিকে শিনকানছেন প্রকল্প ছেড়ে দিয়ে ১৯৬৯ সালে হিদেও শিমা ন্যাশনাল স্পেস ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (এনএসডিএ) প্রধান নিযুক্ত হন। সেখানে হাইড্রোজেন ইঞ্জিনচালিত রকেট উদ্ভাবনে মেধা নিয়োগ করেন। ১৯৭৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন এই কর্মবীর। একজন অগ্রসর প্রকৌশলী হিসেবে হিদেও শিমা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন থেকে মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৪ সালে জাপানের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান কোক্কা কুনশোও পদকে অভিষিক্ত হন। ১৯৯৮ সালে ৯৬ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি।
সোগোও শিনজি ও হিদেও শিমার মস্তিষ্কপ্রসূত একুশ শতকের শিনকানছেন বা বুলেট ট্রেন এখন এক সুবিশাল পরিষেবা। জে আর হিগাশি বা পূর্ব শিনকানছেন এবং জে আর নিশি বা পশ্চিম শিনকানছেন দু’টি কোম্পানিতে বিভক্ত। আজকে বুলেট ট্রেন ছাড়া জাপানের জনজীবন চিন্তাই করা যায় না! ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশে আজকে এই শিনকানছেনের প্রযুক্তি নিয়েই দ্রুতগামী ট্রেন চালু করেছে বা করছে।
এখন শিনকানছেন ট্রেনের কত নাম-কোদামা, নোজোমি, হায়াবুসা, হায়াতে, ইয়ামাবিকো, নাসুনো, মিজুহো, সাকুরা, সুবামে প্রভৃতি। তোওকাইদোওর পর সানয়োও শিনকানছেন, তোওহোকু শিনকানছেন, ইয়ামাগাতা শিনকানছেন, জোয়েৎসু শিনকানছেন, নাগানো শিনকানছেন, আকিতা শিনকাছেন, কিউশুউ শিনকানছেন প্রভৃতি অসাধারণ চৌকস সব ট্রেন চালু হয়েছে। যেগুলো নান্দনিক ডিজাইন ও নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী! এছাড়াও হোক্কাইদোও শিনকানছেন লাইনের কাজ ২০০৫ সালে শুরু হয়ে উদ্বোধন হয়েছে ২০১৬ সালে। আওমোরি প্রদেশ থেকে হোক্কাইদোওর শিন-হাকোদাতে- হোকুতো শহর পর্যন্ত চালু হয়ে ২০৩৫ সালে হোক্কাইদোওর রাজধানী সাপ্পোরো শহর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে হোক্কাইদোও শিনকানছেন লাইন। সেক্ষেত্রে একমাত্র ওকিনাওয়া দ্বীপ বাদে গোটা জাপানই শিনকানছেন বুলেট ট্রেন সেবার আওতায় চলে আসবে।
তার চেয়েও বড় বিস্ময় দেখার প্রতীক্ষায় আছে বিশ্ববাসী আর তা হলো, শিনকানছেনের আরও একধাপ অগ্রসর প্রকল্প এলও সিরিজ তথা লিনিয়া মোটর কার বা ম্যাগলেভ ট্রেনের; যা চলবে বৈদ্যুতিক চৌম্বুক শক্তির সাহায্যে রেলপাতের ১০ মিলি ওপর দিয়ে ভেসে ভেসে। ছুটে চলবে ঘণ্টায় ৫০০ কি.মি. বেগে; চালু করার পরিকল্পনা ২০২৫ সালে। এখন ইয়ামানাশি প্রদেশে চলছে এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা। চালু হলে এটা হবে পৃথিবীর বুকে আরেক বিস্ময়কর ঘটনা! বলা হয়ে থাকে, ব্রিটেন প্রথম ট্রেন চালু করেছে আর জাপান দিয়েছে তাতে পরিপূর্ণতা, লিনিয়ার মোটর কার চালু হলে একথার যথার্থতা আবার প্রমাণিত হবে।
Share.