ক্যারিয়ার শেষ করেছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে ৫১৯ উইকেট নেয়ার রেকর্ড সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম বোলার হিসেবে তিনিই প্রথম ৫০০ উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও ২০০০ সালের ২৭ মার্চ তারিখটি কোর্টনি অ্যান্ড্রু ওয়ালশের জীবনে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। সেদিনই তিনি ভারতের কপিল দেবকে অতিক্রম করে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক টেস্ট উইকেট লাভের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন। এখন শেন ওয়ার্ন আর মুত্তিয়া মুরালিধারান, গ্লেন ম্যাকগ্রারা তাকে ছাড়িয়ে গেছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও অনেকে তাকে ছাড়াবে। কিন্তু তবুও ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বহাল থাকবেন ওয়ালশ। ওয়ালশের এই রেকর্ড শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত কোনো কৃতিত্ব ছিল না, বরং তার ১৬ বছরের সৎ আর পরিশ্রমী জীবনের ন্যায্য পাওনা ছিল। এক কঠোর পরিশ্রমী জ্যামাইকানের জন্য এটা ছিলো কষ্টসাধ্য আরোহণ। ১৯৮৪ সালে অভিষেকের পর থেকে ওয়ালশ অবিরত কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন, অনেক সময় তিনি একাই তার চওড়া কাঁধে দলের ফাস্ট বোলিংয়ের পুরো দায়িত্ব বয়ে বেড়িয়েছেন। এক সময়ে ক্যারিবীয় পেসারদের দাপট ছিল অপ্রতিরোধ্য। কালের পরিক্রমায় তা ক্রমশ ম্লান হতে থাকে। সেই ঐতিহ্য রক্ষায় তিনি শেষ সময় পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছেন। তার মেধা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, তবে তার পরিশ্রম, একাগ্রতা, সততা, কমিটমেন্ট, টিমম্যানশিপ ছিল সব সংশয়ের ঊর্ধ্বে। আর তাই তিনি এক অবিশ্বাস্য উচ্চতায় উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখন খুবই পরিচিত। বাংলাদেশ দলের পেসারদের গড়ে তোলার দায়িত্ব যে তারই হাতে।
কিছুটা অল্প বয়সেই, ২২ বছর বয়সে একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ হিসেবে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অভিষিক্ত হন তিনি। যে দলে মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, ম্যালকম মার্শালের মতো অসাধারণ পারফরমার থাকে, সেখানে ওয়ালশের মতো ‘সাধারণ’ তরুণের অন্তর্ভুক্তি কারো কারো চোখ পিট পিট করতেই পারে। সময়ের পরিক্রমায় তিনি সেই ভ্রুকুটিতে উপেক্ষা করেছেন এবং যোগ্যতা দিয়ে ন্যায্য পাওনা আদায় করেছেন। তিনি হয়তো খরগোশের মতো দ্রুতগামী ছিলেন না, কিন্তু কচ্ছপের মতো স্থির গতিতে চলেছেন এবং লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। তার হয়তো ওয়েজ হলের মতো পেস ছিল না, রবার্টসের মতো ভেরিয়েশন ছিল না, ক্রফটের মতো আগ্রাসী ভাব ছিল না, হোল্ডিংয়ের মতো বাতাসে গতি ছিল না, গার্নারের মতো বাউন্স ছিল না, মার্শালের মতো স্ট্রাইকশক্তি ছিল না। কিন্তু সেই সব গুণের সবগুলোই কিছু হলেও তার মধ্যে ছিল। আর সব মিলিয়েই তিনি হয়ে পড়েছিলেন অসাধারণ বোলার। উল্লিখিতদের অনেকের উপস্থিতির কারণে ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে ওয়ালশ ছিলেন “স্টক” বোলার। তবে মার্শাল ও গার্নার অবসর নিলে তিনিই হন ওপেনিং বোলার। অধিকন্তু ওয়ালশের কৃতিত্ব অর্জিত হয়েছে ৩৭ বছর বয়সে, যখন অধিকাংশ ফাস্ট বোলার খেলা ছেড়ে দেন। শক্তি কমে যাওয়ায় দলে তাদের প্রয়োজন প্রায় ফুরিয়ে যায়। অথচ অমিত স্ট্যামিনার অধিকারী ওয়ালশ তখনও সমীহ জানানোর মতোই খেলে গেছেন। ক্যারিয়ারের প্রায় শেষদিন পর্যন্ত এমনকি দীর্ঘ স্পেলেও তিনি অব্যাহতভাবে নিখুঁত বল করে গেছেন।
একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে ওয়ালশের ভা-ারে অনেক ট্রিকসই মজুদ ছিল। তবে উইকেটে যদি ফাটল থাকতো, তবে তিনি বাউন্সের সুবিধা নিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতেন। তার লেগ-কাটারগুলো ছিল ভয়াবহ। অফ-কাটারেও তিনি পারদর্শী ছিলেন। তা ছাড়া শর্ট-পিচড বলেও সুবিধা আদায় করতে পারতেন।
কোর্টনি ওয়ালশ ১৯৬২ সালের ৩০ অক্টোবর জ্যামাইকার কিংস্টোনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্ত এবং বাধ্য। তাকে কোথায়ও বসে থাকতে বললে পরবর্তী আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত বসেই থাকতেন। মায়ের সাথে নিয়মিত গির্জায় যেতেন। তাই তার মা মনে করতেন সে যাজক হবে। কৈশোরে তার নিজের স্বপ্ন ছিল অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়া।
কিন্তু হলেন ক্রিকেটার। তবে তিনি ফাস্ট বোলার হিসেবে বিখ্যাত হলেও তার স্কুল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল লেগ স্পিনার হিসেবে। বল হাতে (এবং ব্যাট হাতেও!) তার দক্ষতা প্রকাশ পেতে থাকে। ক্রিকেটে তার পারিবারিক ঐতিহ্যও ছিল। তার এক কাজিন জেরাল্ড ওলাস্টন জ্যামাইকার হয়ে খেলেছেন। আর আরেক কাজিন ক্লাব পর্যায়ে খেলতেন। সুগঠিত দেহের অধিকারী হিসেবে সম্ভবত এটাই তাকে ক্রিকেটে টেনে নিয়ে আসে।
১৯৭৯ সালে স্কুল ক্রিকেটে এক ইনিংসে ১০টি উইকেট নিয়ে তিনি প্রথম নজর কাড়েন। সেই পর্যায়ে এটি ছিল একটি রেকর্ড। তিন বছর পর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে। ১৯৮৪ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে তিনি ৪৩ রান দিয়ে ২টি উইকেট পেয়েছিলেন। সেবারই ব্রিসবেনে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে তার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে।
১৯৮৭ সালে ওয়ালশকে উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মতো কোন টেস্ট ম্যাচে ১০টি উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ‘অত্যন্ত অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ায়’ রিচি রিচার্ডসনকে বিশ্রাম নেয়ার নির্দেশ দেয়ার প্রেক্ষাপটে ১৯৯৪ সালে তিনি শ্রীলংকা ও নিউজিল্যান্ড সফরে অধিনায়ক নিযুক্ত হন। তবে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের পর রিচার্ডসন অবসরগ্রহণ করলে তাকে নিয়মিত অধিনায়কত্ব প্রদান করা হয়। তিনি ২২টি টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কত্ব করেন।
ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ালশের অনেক কিছুই দেখতে হয়েছে। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকের প্রথম পর্যন্ত তিনি দলের সোনালি সাফল্য প্রত্যক্ষ করে উল্লসিত হয়েছেন, আবার শেষ দিনগুলোতে দলের শোচনীয় পরাজয়গুলো দেখেও লজ্জায় মাথা হেঁট করেছেন। কিন্তু সব সময়ই তিনি নিজে সর্বাত্মক চেষ্টা করে গেছেন। একসময়ে কার্টলি অ্যাম্ব্রোসকে নিয়ে, তারপর একাকী। কোর্টনি ওয়ালশের কাছে ভারত বা পাকিস্তানের ধূলিতে পরিপূর্ণ খসখসে মাঠ কিংবা ইংল্যান্ড বা নিউজিল্যান্ডের সবুজ স্পোর্টিং পিচ সবই ছিলো সমান। তিনি সবসময়েই একটি মিশন নিয়ে চলেছেন: যে পর্যায়ের ক্রিকেটই হোক না কেন, প্রিয় দেশের জয়ের জন্য বল করে যাওয়া, ক্লান্তিহীন প্রয়াস অব্যাহত রাখা। এমনকি অন্যায়ভাবে তাকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হলেও তিনি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও নিজেকে উজাড় করে খেলেছেন। নতুন অধিনায়ককে (ব্রায়ান লারা) সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছেন। বিশ্ব ক্রিকেটে এ ধরনের নজির বিরল।
ওয়ালশ সেই সব বিরল ব্যক্তিদের অন্যতম একদিকে তারা যেমন সফলতার জন্য বিরামহীন উদ্গ্রীব, তেমনি একই সাথে খেলার চেতনা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতেও সজাগ। কেউ কি ভাবতে পারে, বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসরের নক-আউট পর্যায়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে রান না নিতে বলছে বা তাকে নিশ্চিত রান আউটের হাত থেকে রক্ষা করছেন! ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে ওয়ালশ তাই করেছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে। তার বলের আগেই আব্দুল কাদির অপরিহার্য রানটি নেয়ার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে থাকার সময়ে অপর প্রান্ত থেকে পিচ ছেড়ে বেরিয়ে আসা ওয়াসিম জাফরকে তিনি রান আউট করেননি এবং পরিণতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিদায় নিয়েছে আসর থেকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেদিন হেরেছে, কিন্তু ক্রিকেট এবং এক মহান ক্রিকেটারের ক্রীড়াসুলভ মনোভাবের জয় হয়েছে সেদিন। ওয়ালশ ছিলেন সেই কেলিভারের মানুষ। এ কারণেই তিনি পেয়েছেন ক্রিকেটের চূড়ান্ত সাফল্য। ব্রায়ান লারাও তাকে নানাভাবে অপদস্থ করেছিলেন, কিন্তু তিনি ক্রিকেট যে ভদ্রলোকের খেলা, তা সবসময়ে অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ওয়ালশ তার সারা জীবনে আরেকটি জিনিস প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, তা হলো সাফল্য পাওয়ার জন্য ফাস্ট বোলারদের আগ্রাসী বা কঠোর হওয়া অপরিহার্য নয়। তিনি এমন কোন আচরণ করেননি, যাতে ক্রিকেটের সম্মান কলুষিত হতে পারে।
প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টেস্টে ৩০০ উইকেট নেয়া ফ্রেডি ট্রুম্যান একবার বলেছিলেন, যদি কেউ তার এই রেকর্ড ভাঙতে চায়, তবে তাকে রক্তাক্তভাবে চেষ্টা করতে হবে। ল্যান্স গিবস অত্যন্ত কষ্ট করে তা ভেঙেছিলেন। একই কথা প্রযোজ্য ডেনিস লিলি, ইয়ান বোথাম, রিচার্ড হ্যাডলি, কপিল দেবের প্রসঙ্গে। বাস্তবিকই কপিল আর হ্যাডলির প্রসঙ্গে ট্রুম্যানের বক্তব্য ছিলো অনেক সত্য। ওয়ালশ যখন ৪৩৫ কিংবা ৫০০ বা ৫১৯-এ পৌঁছেন, তখন তিনি হয়তোই সত্যিই পরিশ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন।
শেন ওয়ার্ন বাদে হ্যাডলি, কপিল, ওয়ালশ আর মুরালিধারানের মাঝে একটি সাধারণ মিল আছে। তা হলো তারা তাদের ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময়ে তারা একাই দলের আক্রমণ ভাগের সামাল দিয়েছেন। ফলে তারা উইকেট নেয়ার সুযোগটা পেয়েছেন তুলনামূলকভাবে বেশি। যে দলে যতবেশি মানসম্পন্ন বোলার থাকবে, সে দলের উইকেটগুলো বিভক্ত হয়ে যাবে। দল উপকৃত হবে, কিন্তু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তির চার ফাস্ট বোলার রবার্টস, হোল্ডিং, ক্রোফট ও মার্শাল একত্রে ১২১১ উইকেট নিয়েছেন। এদের মধ্যে শুধুমাত্র মার্শাল ২৬০-এর বেশি উইকেট পেয়েছেন। তিনি যদি একা থাকতেন তবে হয়তো তিনিই হতেন ৫০০ উইকেট লাভের প্রথম ব্যক্তি। এ কারণে অনেকে বলে থাকেন, কপিল, হ্যাডলি, ওয়ালশ, মুরালিধারানরা অধিকাংশ সময়ে একাই বোলিং করায় হয়তো প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি উঁচুতে উঠতে পেরেছেন। ওয়ালশ তার ৫০তম টেস্টে পেরেছেন ১৭৪ উইকেট। চিত্রটি তুলনা করলে দেখা যাবে, রবার্টস ৪৭ টেস্টে ২০২, হোল্ডিং ৬০ টেস্টে ২৪৯, গার্ডার ৫৮ টেস্টে ২৫৯ উইকেট পেয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সেই দিন থাকলে ওয়ালশকে আরও অনেক আগেই অবসরেও চলে যেতে হতো। একে হয়তো ভাগ্যও বলা যেতে পারে। তবে পুরোটা নয়। তার ক্লান্তিহীন প্রয়াস তো আর অগ্রাহ্য করা যায় না। প্রথম বোলার হিসেবে তিনি যেমন ৫০০ উইকেট নিয়েছেন, তেমনি প্রথম পেসার হিসেবে তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ৫ হাজারেরও বেশি ওভার বল করেছেন। তিনি নিজেকে ফিট রাখার ব্যাপারে এবং দলের প্রয়োজন পূরণ করতে যেভাবে পরিশ্রম করেছেন, তা খুব কম ক্রিকেটারই করে থাকেন। তাই বলা যেতে পারে তিনি পরিশ্রমের মূল্য পেয়েছেন।
তিনি শুধুমাত্র বোলার হিসেবেই সর্বাধিক উইকেটের বিশ্বরেকর্ড গড়েননি, ব্যাটসম্যান হিসেবেও দু’টি রেকর্ডের অধিকারী হিসেবে অবসর নিয়েছিলেন। তার একটি ছিল সর্বাধিকবার শূন্যরানে আউট হওয়া (৪৩ বার) এবং ১১ নম্বরে খেলতে নেমে সর্বাধিক ৫৫৩ রান করা। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, টেস্ট এবং একদিনের আন্তর্জাতিক উভয় ধরনের ক্রিকেটেই তার সর্বোচ্চ রান ৩০। ব্যাটিং করার ক্ষেত্রে তার দুর্বলতা সবাই জানতো। তাই তার প্রতিটি বল মোকাবেলার সময়ে দর্শকরা তাকে বাহবা দিতেন। তিনিও বিষয়টি উপভোগ করতেন।
১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ানডে-ডে সিরিজে তাকে বাদ দেয়া হয়, সে ভালো থ্রো করতে পারবে না বলে। ৩০ বছর বয়সে অন্য কেউ হলে অবসর নিয়ে ফেলতো। কিন্তু তিনি আরও বেশি উদ্দীপ্ত হয়ে দলে ফিরলেন। বারবাডোজে ফিরতি টেস্ট ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তিনি ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্স প্রদর্শন করলেন। এরপর এ ধরনের পারফরম্যান্স তিনি আরও প্রদর্শন করেছেন। প্রতিবারই তিনি তা করেছেন দৃঢ়তা আর মর্যাদার সাথে দীর্ঘ স্পেলের সামর্থ্যরে মাধ্যমে। ওয়ালশের সাফল্যের অন্যতম উৎস ছিলো তার বডি ফিটনেস। তিনি শেষ দিন পর্যন্ত যেভাবে শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়াস চালিয়েছেন, অন্য অনেকে তা ভাবতেই পারে না।
এক নজরে ওয়ালশ
পুরো নাম: কোর্টনি অ্যান্ড্রু ওয়ালশ।
জন্ম : ৩০ অক্টোবর, ১৯৬২, কিংস্টোন, জ্যামাইকা।
প্রধান দল : জ্যামাইকা, গ্লুস্টারশয়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ব্যাটিং স্টাইল : ডান হাতে ব্যাট।
বোলিং স্টাইল : ডান হাতি ফাস্ট বোলার।
টেস্ট অভিষেক : অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, পার্থ, ১ম টেস্ট, ১৯৮৪/৮৫।
শেষ টেস্ট : দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৫ম টেস্ট ২০০০/০১
ওডিআই অভিষেক : শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, হোবার্ট, ওয়ার্ল্ড সিরিজ কাপ, ১৯৮৪/৮৫।
শেষ ওডিআই : নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে, ক্রাইস্টচার্চ, ৫ম ওডিআই, ১৯৯৯/২০০০।
টেস্ট ক্যারিয়ার:
ম্যাচ ১৩২, ইনিংস ১৮৫, অপ: ৬১, রান ৯৩৬, সর্বোচ্চ ৩০ অপ:, গড় ৭.৫৪, ক্যাচ ২৯; উইকেট ৫১৯, সেরা ইনিংসে ৭/৩৭, সেরা ম্যাচে ১৩/৫৫, বোলিং গড় ২৪.৪৪, ইনিংসে ৫ উইকেট ২২ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট ৩বার।
ওডিআই ক্যারিয়ার:
ম্যাচ ২০৫, ইনিংস ৭৯, অপ: ৩৩, রান ৩২১, সর্বোচ্চ ৩০, গড় ৬.৯৭, ক্যাচ ২৭; উইকেট ২২৭, সেরা ৫/১, বোলিং গড় ৩০.৪৭, ৫ উইকেট ১ বার।
অধিনায়কত্ব:
টেস্ট: ম্যাচ ২২, জয় ৬, পরাজয় ৭, ড্র ৯।
ওডিআই: ম্যাচ ৪৩, জয় ২২, পরাজয় ২০, টাই ০, পরিত্যক্ত ১।

ওয়ালশের খেলোয়াড়ি জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা
১৯৬২ : জন্ম ৩০ অক্টোবর, কিংস্টন, জ্যামাইকা।
১৯৭৯ : জ্যামাইকার স্কুল ক্রিকেট ৪৩ রানে ১০ উইকেট লাভ।
১৯৮২ : জ্যামাইকার পক্ষে অভিষেক।
১৯৮৪ : ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট দল গ্লস্টারশায়ারে অভিষেক।
১৯৮৪ : টেস্টে অভিষেক, পার্থে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট।
১৯৮৭ : উইজডেন মনোনীত ১৯৮৬ সালের পাঁচজনের মধ্যে একজন।
১৯৮৮ : ব্রিজবেনে ১৯৮৮-৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে হ্যাটট্রিক। প্রথম ইনিংসের শেষ বলে ও দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম স্পেলের প্রথম দুই বলে তিনি হ্যাটট্রিক করেন।
১৯৯৪ : ‘অত্যন্ত অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ায়’ রিচি রিচার্ডসনকে বিশ্রাম দেয়ার পর ভারত ও নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়ক নির্বাচিত।
১৯৯৫ : ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে তার উপভোগ্য সেরা সাফল্য ৭-৩৭।
১৯৯৫ : ওভালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ও শেষ টেস্টে ৩০০ উইকেট লাভের কৃতিত্ব অর্জন।
১৯৯৬ : ভারতীয় উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ শেষে রিচি রিচার্ডসন পদত্যাগ করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়ক নির্বাচিত।
১৯৯৮ : ১৯৯৭ সালের শেষ দিকে পাকিস্তান সফরের তিন টেস্টের সবগুলোতে পরাজিত হবার পর ওযেস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়া।
১৯৯৮ : জোহান্সেবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ম্যালকম মার্শালের রেকর্ড ৩৭৬ উইকেট ছাড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের মধ্যে শীর্ষ উইকেট শিকারিতে পরিণত।
১৯৯৯ : পোর্ট অব স্পেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে তৃতীয় বোলার হিসেবে ৪০০ উইকেট লাভ।
২০০০ : জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে কপিল দেবের বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গ।
২০০১ : ৫১৯টি টেস্ট উইকেট লাভের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরগ্রহণ।

 

Share.

মন্তব্য করুন