ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি পড়ছে। হানিফ বাস থেকে নামার পর যখন বটতলায় দাঁড়াল, তখন ভোর ৪টা বাজে। আজ গাড়িটা তাড়াতাড়ি এসে পৌঁছেছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অদূরে কাকে যেন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে চমকে উঠল।
– আরে বাবা তুমি!
– হ্যাঁ খোকা এগিয়ে নিতে এলাম। দৌড়ে বাবাকে ছুঁতে যাবে সে সময় উধাও। এর মধ্যে হঠাৎ বিদ্যুতের চমকে তার মনে ভয়ের সঞ্চার হলো। দুর, বাবাতো অনেক আগেই হারিয়ে গেছে শুধু শুধু ছায়াবাজি। বাবা থাকলে কি আর তাকে বটগাছের নিচে এবাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো!
আজ বহু বছর পর ঈদের ছুটিতে বাসায় এসেছে হানিফ। সেই বাবা-মা মারা যাওয়ার পর শহরে গেছে আর ফেরেনি। কারণ গ্রামে পা রাখলেই মা-বাবার স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। ভেঙেপড়া অর্ধনির্মিত দোচালা ঘর, খড়ের ছোট্ট একটা রান্নাঘর যেখানে মা রান্না করতেন- ‘খোকা তরকারির ঝোলটা একটু দ্যাখতো’ মায়ের এ ডাকটির কথা মনে পড়লে মনে হয় কে যেন ধারালো বঁটি দিয়ে হৃদয়টা কুটি কুটি করে কেটে দিচ্ছে। মা, মা, মাগো তুমি কেমন করে এসব ভুলে আছো। শিমের মাচার পাশ, কলপাড়, সারা উঠানজুড়ে মায়ের চলার দারুণ ও করুণ সে স্মৃতিগুলো যেন পিছু ছাড়ে না! আজ অনেক বছর পর গ্রামটা যেন খুবই পর হয়ে গেছে মনে হলো। যোগাযোগ, বন্ধন না থাকলে মানুষে মানুষে তাই সম্পর্ক থাকে না আর গ্রাম! এভাবে জীবনের বাঁকে বাঁকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো চাইলেও সহজে ভোলা যায় না। সেগুলো বারবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে সময়ে অসময়ে।

Share.

মন্তব্য করুন