সকাল বেলা। নাস্তা সেরে রোজকার মত কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বাবা। সাথে সাথেই ছোট ভাইকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে সেলিম আবু বকর। নাইজেরিয়ার অসংখ্য হতদরিদ্র পরিবারের অংশ তারা। মাইডুগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে এক বস্তিতে তাদের বাস। সেলিমের বয়স নয় বছর। এখনো স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। বাবা ভর্তি করেনি। তাদের বস্তির অনেকেই স্কুলে যায়, কিন্তু তার যাওয়া হয় না। তা নিয়ে ভাবেও না সে। দিন এনে দিন খাওয়া অবস্থা তাদের। বাবা চাকরি করে না। কোনো বাড়িতে বা দোকানে যখন যে কাজ পায় তা-ই করে। কাজ শেষে মজুরি যা পায় তা খাবার কিনতেই চলে যায়। ছেলেকে স্কুলে পাঠালে বই-খাতা-কলম কিনতে হবে, পোশাক দিতে হবে। এ ব্যয় বহনের সামর্থ্য তার নেই। তাই সেলিমকে স্কুলে ভর্তি করেনি বাবা।
নাইজেরিয়ায় তাদের মত পরিবারের সংখ্যা অনেক, বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে। এ দেশের মুসলমানদের বেশির ভাগের বাস উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। তারা খুবই গরিব। মাইডুগুড়ি প্রাদেশিক রাজধানী এবং এ অঞ্চলের প্রধান শহর। আশপাশের সব দরিদ্র মানুষ কাজের সন্ধানে ছুটে আসে শহরে। আর সে কারণেই এখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বস্তি। সেসব বস্তিতে জন্ম নিয়ে বেড়ে ওঠে সেলিম ও তার ভাইয়ের মত অসংখ্য শিশু।
প্রাদেশিক রাজধানী হলেও মাইডুগুড়ি মোটেই কোনো উন্নত শহর নয়Ñ বরং মফস্বল শহরই বলা যায় একে। গাড়ি-ঘোড়া চলে, বিদ্যুৎ আছে, পানি সরবরাহ আছে, কিন্তু পরিবেশটা সেকেলেই রয়ে গেছে। আধুনিকতার ছাপ তেমন পড়েনি। এখানকার মানুষ যেন তা চায়ও না। শহর নামক জায়গাটায় তাদের জন্ম হলেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধার তেমন কিছু তাদের জোটে না। যে বস্তিতে তারা থাকে তা যেমন ঘিঞ্জি তেমনি অস্বাস্থ্যকর। পুষ্টিকর খাবারের দেখা তারা কতদিন পায় না তা বলা মুশকিল। সকাল বেলায় তাদের জন্য নাস্তা নামে যে বস্তুটি তৈরি হয় তাকে খাদ্য বলা সমীচীন হয় না। কিন্তু সেটাই পেটে চালান করে দিতে হয়। স্কুল নেই, লেখাপড়ার পাট নেই, সংসারে করার মত কোন কাজও নেই। কুঁড়েঘরের মত একটা ঘরে বাস করে তারা- বাবা, মা ও দু’ভাই। ঘরের সামান্য যে কাজ তা মা-ই সেরে ফেলে। তাই তারা দু’ভাই বলতে গেলে একেবারে উড়াল ডানার পাখি। মাকে নিয়ে তাদের কোন ভয় নেই- ভয় শুধু বাবাকে নিয়ে। ছেলে দু’টিকে স্কুলে পড়ানোর সাধ্য নেই বলে খুব দুঃখ বাবার মনে। লেখাপড়ার বদলে ওরা সারাদিন টো টো করে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়-এটা সহ্য করতে পারে না সে। তাই তার কড়া হুকুম- সারাদিন ঘরে বসে থাক, মাকে কাজে-কর্মে সাহায্য কর। রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়ে কোনো লাভ নেই। কিন্তু তাই কি হয়? ওদের বয়সটা কি ঘরে বসে থাকার বয়স! আর লেখাপড়া না জানলে কি হবে, খুদে সেলিমের মাথায় বেশ বুদ্ধি আছে। প্রতি সকালে বাবা বেরিয়ে যেতেই মুক্তির অবাধ আনন্দে নেচে ওঠে সেলিম। সাত বছর বয়সী ছোট ভাই রমজান আবু বকরকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে সে। তাদের বস্তির পাশ দিয়ে চলে যাওয়া এ রাস্তাটায় লোকজনের ভিড় খুব একটা নেই। যানবাহনের মধ্যে প্রাইভেট কার, মাইক্রো ও কিছু বাস চলাচল করে। বস্তি এলাকা ছাড়ালেই বিত্তশালী লোকদের বসত এলাকা। সেখানকার মানুষগুলো যে কত ধনী! ইচ্ছে করলে সবাই মিলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে বস্তির মানুষদের দুঃখ-দারিদ্র্য অনেকটাই দূর করতে পারে। কিন্তু নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ যেখানে এ ধরনের ভালো কাজ করার কথা কেউ ভাবে না। সারাদেশটাই অনিয়ম, দুর্নীতি, জাল-জুয়াচুরিতে ছেয়ে গেছে। দরিদ্র, অসহায় মানুষের উপকারের চেষ্টা কেউ করে না এখানে।
ছোট ভাইয়ের সাথে রাস্তায় বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সেলিম। আজ রোদের তেজ বেশি। একটু যেন ক্লান্তি লাগে। বিত্তবানদের এলাকায় চলে আসে তারা। সাজানো গোছানো সারি সারি বাড়ি। একটি সুন্দর বাড়ির সামনে একটি বিশাল নাম না জানা গাছ। অনেকখানি জায়গা নিয়ে তার ডালপালা ছড়ানো। গাছের ঘন ছায়ায় বসে পড়ে দু’ভাই। এখন কী করা যায়! ভাবতে থাকে সে। একটু পর উঠে একেবারে ছোট ক’টি পাথর কুড়িয়ে আনে। অনেকটা মার্বেলের আকার। তাদের তো মার্বেল কেনার পয়সা নেই! বাবা কখনো তাদের কোনো পয়সা দেয় না। দিতে পারে না। তাই তারা এ ছোট পাথর দিয়েই মার্বেল খেলার সাধ মেটায়। তবে কিছুক্ষণ খেলার পর খেলাটা আর ভালো লাগে না তার। খানিকটা দূরেই ডাস্টবিন- একটা বাড়ির গেটের কাছাকাছি। সেদিকে এগোয় সেলিম। ভাগ্য ভালো থাকলে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে কখনো সখনো দু’একটা জিনিস মিলে যায় যা তাদের কাজে লাগে। যেমন ছেঁড়া ফাটা টেনিস বল, রবারের ফেলে দেয়া টুকরো, অল্প ভাঙা প্লাস্টিকের খেলনা ইত্যাদি। তার খুব ইচ্ছে একটা ফুটবল কেনার। কিন্তু সেটা যে সম্ভব নয় তা জানে সে। বাবার কাছ থেকে এটা আশাই করা যায় না। পেটে কিছু দেয়ার ব্যবস্থা করতেই তার আয়ের পুরোটা চলে যায়। তাই জামা-কাপড় পর্যন্ত জোটে না তাদের।
তাদের একটা বড় ভাই আছে। মুখতার আবু বকর। এখনো কৈশোর পেরোতে পারেনি। তাদের বস্তি থেকে মাইল খানেক দূরে বাজার। মুখতারকে সেই বাজারের পাশে একটি দোকানে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে বাবা। তার খাবার- জামা-কাপড় মালিকই দেয়, কিন্তু কোন বেতন দেয় না। রাতে দোকানেই থাকে সে। মাঝে-মাঝে বিকালের দিকে এসে মা-ভাইদের দেখে যায়। ছোট দু’ভাইকে সে দিতে পারে না কিছু। কারণ তার হাতে কোন পয়সা দেয়া হয় না। সংসার থেকে একজনের ভার নেমেছে এতেই বাবা খুশি। ওরা দু’জন কখনো কখনো গিয়ে ভাইয়ের দোকানের আশপাশে ঘোরাঘুরি করে। চোখাচোখি হলে দুয়েক মিনিটের জন্য বেরিয়ে আসে ভাই। দু-একটা কথা বলে আবার ঢুকে যায় দোকানের ভেতর। দোকানের মালিক এসব পছন্দ করে না।
ভাইয়ের কথা ভাবতে ভাবতেই ডাস্টবিনের একগাদা জঞ্জাল ঘাঁটতে থাকে সেলিম। আজ বোধ হয় বাড়ির ঘরগুলো সাফ করা হয়েছে। তাই আবর্জনার পরিমাণ বেশি। ছেঁড়া কাগজ, জরাজীর্ণ কাপড়, অপ্রয়োজনীয় জিনিসের স্তূপ সরিয়ে এক সময় পুরনো কাপড়ে বাঁধা একটা বড়সড় পুঁটলি দেখতে পায় সে। পুঁটলিটা হাতে নিয়ে বেশ খুশি হয়ে ওঠে। বেশ ভারী। অনেকটা গোলাকার। হয়ত পুরনো অকাজের কাগজপত্র, তাই ফেলে দিয়েছে। তা যাই থাক, এটা দিয়ে আপাতত ফুটবলের অভাব পূরণ হবে। ছোট ভাইকে ডাকে সে। একটু দূরে থাকতেই পুঁটলির বলটা কিক মেরে তার দিকে গড়িয়ে দেয়। সেও পাল্টা কিক দেয়। দু’ চারটে কিকের পরই দু’জনেই বুঝতে পারে- খেলায় মোটেই সুবিধা হচ্ছে না। পায়ে বেশ ব্যথা লাগছে। কাগজের পুঁটলিতে তো এমন হওয়ার কথা নয়। খেলার আনন্দ মাটি হয়ে যায় তাদের। অনেকটা বিরক্ত হয়েই খেলা বন্ধ করে পুঁটলিটা নিয়ে বসে দু’ভাই। গিঁট খুলে ফেলে। একটি মোটা কাগজ দিয়ে জড়ানো আছে কি যেন। কাগজটা খুলেই ভীষণ ভাবে চমকে ওঠে তারা-হায় আল্লাহ্, এ যে টাকা! অনেক টাকা।
বেশ কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে থাকে দু’ভাই। তাদের সামনে পুঁটলিতে বান্ডিল বান্ডিল নাইরা (নাইজেরিয়ার টাকা)। এত টাকা কখনো দেখেনি তারা। গুনতেও জানে না। তাই পুঁটলিতে কত টাকা আছে তার হিসাব করাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এখন কী করা যায়? এ টাকা কার তা তারা জানে না। কিন্তু যারই হোক-তাকে এটা ফেরত দিতে হবে। অন্য কেউ দেখে ফেললে আবার কোন ঝামেলা হয়, কে জানে। অবশ্য রাস্তায় এ সময় লোকজন নেই বললেই চলে। চট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সেলিম। তাদের বড় ভাইকে বিষয়টা জানাতে হবে। তার হাতেই তুলে দেবে টাকার বান্ডিল। সে যা করার করবে।
পুঁটলিটা ভালো করে বেঁধে নিয়ে দু’ভাই মুখতারের দোকানের দিকে এগোয়। দোকানের বাইরে কিছুক্ষণ ঘুরঘুর করতেই তাদের দিকে নজর পড়ে মুখতারের। একটু পরই বেরিয়ে আসে সে। সেলিম টাকা ভরা পুঁটলিটা তুলে দেয় তার হাতে। তারপর এক নিঃশ্বাসে বলে যায় সেটা পাওয়ার ঘটনা।
বিস্ময়ের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে তাদের নিয়ে একটি ঘরের আড়ালে চলে যায় মুখতার। টাকা গুনতে শুরু করে সে। অনেক সময় লাগে। পাঁচ শ’ ও এক হাজার নাইরার নোটে মোট আট লাখ তিপ্পান্ন হাজার নাইরা (সমকালীন বাংলাদেশী টাকা চার লাখ ছয় হাজার)। এত টাকা কিভাবে ডাস্টবিনে এলো বুঝতে পারে না সে। কেউ কি ভুলে ফেলে দিয়েছে? কিন্তু এখন কী করা যায় এ টাকা নিয়ে ভাবতে থাকে সে। কার না কার টাকা? এতগুলো টাকা যে হারিয়েছে সে এতক্ষণে পাগলপারা হয়ে উঠেছে নিশ্চয়ই। এখন টাকাগুলো নিয়ে কি সে তাদের বাবার হাতে তুলে দেবে? এতগুলো টাকা পেলে তিনি ধনী হয়ে যাবেন। তাদের সংসারে সুখ আসবে। দীন-হীন অবস্থা আর থাকবে না। ছোট ভাই দু’টি স্কুলে যেতে পারবে। তাকেও আর অন্যের দোকানে এভাবে কাজ করতে হবে না। খুব দ্রুত এসব কথা তার মনে ভেসে ওঠে। তবে পরক্ষণেই এ ভাবনার দরজায় তালা মেরে দেয়। পরের টাকা তার কাছে। তা নিয়ে এসব কি ভাবছে সে? আল্লাহ্তায়ালা এতে নারাজ হবেন।
হঠাৎ রাস্তার দিকে চেয়ে দেখে যে মোহাম্মদ আবা এদিকেই আসছেন। তিনি এখানকার একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা। অত্যন্ত সৎ ও ভালো মানুষ বলে সবাই তাকে খুব সম্মান করে। রাজনীতি করলেও সবার সাথেই তার সুসম্পর্ক। তিনি সদালাপী। গরিব মানুষদেরও ভালোবাসেন। তাই সাধারণ মানুষও তাকে খুবই পছন্দ করে। মুখতারের মনে হয়- টাকার ব্যাপারটা তাকে জানিয়ে তার হাতে তুলে দিলেই ভালো হবে। দু’ ভাইকে নিয়ে সে এগিয়ে যায় তার দিকে। কাছে পৌঁছে সালাম দেয়। তার সাথে সাথে সালাম জানায় ছোট দু’ভাইও। হঠাৎ করে অপরিচিত তিন কিশোর ও বালকের সালাম পেয়ে বিস্মিত হন। বলেন-
: কী ব্যাপার! কি চাও তোমরা?
মুখতার বলে-
: স্যার! আপনাকে বিরক্ত করার জন্য আমাদের মাফ করবেন। দয়া করে আমার কথা একটু শুনুন।
সে তার কাছে বিষয়টি খুলে বলে।
মোহাম্মদ আবা তার কাছে ঘটনাটি জেনে অবাক হন। তবু অনেকটা যেন পরখ করার জন্যই তিনি মুখতারকে বলেন-
: আচ্ছা, টাকাটা তোমরাই রেখে দাও না কেন? বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বাবার হাতে তুলে দিও। তোমরা গরিব মানুষ। তোমাদের অনেক উপকার হবে এ টাকায়। তোমার বাবা খুশি হবেন।
: না না, তাই কি হয়! প্রবল বেগে মাথা নাড়ে মুখতার। এ টাকার মালিক হয়ত ভীষণ চিন্তায় আছেন। আপনি দয়া করে তাকে খুঁজে বের করে তার কাছে টাকাগুলো পৌঁছে দিন।
টাকার প্রতি মুখতারের কোনো লোভ নেই দেখে ভীষণ খুশি হন মোহাম্মদ আবা। তিনি বলেন,
: ঠিক আছে, সে চেষ্টাই করব আমি।
এ কথা বলে মোহাম্মদ আবা তার কিশোর মুখতারের পিঠ চাপড়ে দেন। তারপর তার ছোট দু’ ভাইয়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিয়ে টাকার পুঁটলিটা নিয়ে চলে যান তিনি।
পরদিন ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজের সময় মসজিদের মুসল্লিদের কাছে বেশ কিছু টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। টাকার প্রকৃত মালিককে প্রমাণাদিসহ যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়। সেদিন বিকালেই খোঁজ মেলে প্রকৃত মালিকের।
এ টাকার মালিক ছিলেন স্থানীয় ধনী ব্যবসায়ী জাকারিয়া দাউদা নামে এক ধনী খ্রিস্টান। তিনি কোন এক কাজে একজনকে দেয়ার জন্য টাকাটা এভাবে পুরনো কাপড়ে পুঁটলি করে বেঁধে তা বিছানার উপর রেখেছিলেন। হঠাৎ করেই জরুরি এক খবর পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ফিরে এসে খোঁজ করে সে টাকা আর পাননি। ভেবেছিলেন হারিয়ে গেছে। কিন্তু এ পুঁটলি কি করে ডাস্টবিনে গেল তা জানেন না তিনি। হতে পারে, তার ঘরের পরিচারিকা হয়ত পুরনো কাপড়ের পুঁটলিকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবার কাছে সব ঘটনা শোনেন। ছোট ছেলেগুলো দরিদ্র হয়েও এমন নির্লোভ হতে পারে তা ভাবাই যায় না। পরদিন সকালে তাকে সাথে নিয়ে সেলিমদের বস্তির ঘরে গিয়ে হাজির হন তিনি। তাদের মত লোককে সেই বস্তিতে দেখে লোকজনের ভিড় জমে যায়। সেলিমদের তিন ভাইয়ের অসাধারণ সততার কথা সবাইকে শোনান মোহাম্মদ আবা। সেলিমকে পাঁচ হাজার নাইরা পুরস্কার দেন ব্যবসায়ী জাকারিয়া।
তাঁরা যখন ফিরে আসছিলেন তখন স্থানীয় লোকদের কিছু টুকরো মন্তব্য তাদের কানে আসে। একজন বলে-
: দু’টি মাসুম শিশু এত বড় সততার পরিচয় দিল, আর তার পুরস্কার কিনা মাত্র পাঁচ হাজার নাইরা! কেমন হলো এটা?
ঠিক তখনি সেলিমের মায়ের উঁচু গলা শুনতে পান তারা-
: এটা আপনি কি বললেন ভাই ! আমার ছেলেরা যে সততা দেখিয়েছে পুরস্কারের টাকায় কি তার মূল্য হয়? আমি তাদের জন্য গর্ব বোধ করি। আল্লাহ্ই তাদের পুরস্কার দেবেন। সে পুরস্কারের চেয়ে বড় আর কোন পুরস্কার আছে কি?
থেমে গেলেন মোহাম্মদ আবা। চাইলেন জাকারিয়া দাউদার দিকে। বললেন-
: তাদের মায়ের কথা শুনলেন তো! দরিদ্র কিন্তু সম্পূর্ণ নির্লোভ। এমন মায়ের সন্তানরা তো এ রকমই হবে- তাই না?
: ঠিকই বলেছেন। সায় দিলেন জাকারিয়া- তবে আমি এইমাত্র সিদ্ধান্ত নিলাম, ওদের তিন ভাই-ই স্কুলে ভর্তি হবে। কাল সকালে আমার লোক এসে ওদের নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দেবে স্কুলে। আর ওদের বাবা আমার প্রতিষ্ঠানে কাল থেকেই কাজ করবে। তার সংসার চলার মত বেতন দেয়ার ব্যবস্থা আমি করব। আপনি বিষয়টি ওদের মাকে জানিয়ে দিন।
তাই করলেন মোহাম্মদ আবা।

* ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল সংবাদপত্রে প্রকাশিত নাইজেরিয়ার একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত।

Share.

মন্তব্য করুন