আজ কোনো কিছুই ভালো লাগছে না তার। রাজ্যের হতাশা এসে মনটাকে কেমন ভারী করে তুলছে। জানালার সামনে আনমনে দাঁড়িয়ে আছে তাওসীফ। নাহ্! বাগানের ফুল, সবুজ পাতার সতেজ চাহনি কিংবা পাখির ডাকাডাকি- কিছুই তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছে না।
মন ভালো না থাকলে কী-ই বা ভালো লাগে। তাওসীফ ভাবল, একটা গান শোনা যেতে পারে। অনেক সময় একটা ভালো গান মনের ওপর বেশ প্রভাব ফেলে। একটা নতুন গান ডাউনলোড করে রেখেছিল সে। সে গানটিই শুনছে এখন-
‘মনের ভুবন ধূসর হলে কুরআন পড়ো
তখন তোমার হৃদয় হবে সবুজ পাতা;
পাতার ফাঁকে ফুটবে নতুন গোলাপকুঁড়ি
রঙিন হবে আমলনামার মলিন খাতা’…
সম্পূর্ণ গানটি বেশ কয়েকবার শুনল তাওসীফ। সত্যিই! কুরআন পড়লে মন ভালো হয়ে যাবে? বাংলা অনুবাদসহ একটি কুরআন তার হাতের কাছেই ছিল। দ্রুত অজু করে এসে কুরআন খুলে বসে পড়ল সে। এক পর্যায়ে সে পড়া শুরু করল-
“সৎকর্মশীলরা তো থাকবে পরম সুখে। তারা সুসজ্জিত আসনে সবকিছু অবলোকন করবে। আপনি তাদের চেহারায় দেখতে পাবেন খুশির ঝলক। তাদের পান করানো হবে মোহর করা বোতল থেকে। যার মোহর হবে কস্তুরির সুগন্ধি। আর এর জন্যই প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত।” (সূরা মুতাফ্ফিফীন : ২২-২৬)
এত সুন্দর কথা! মনে হচ্ছে, আর কখনোই সে এমন কথা শোনেনি। পড়ে থাকলেও হয়তো এমন মনোযোগ দিয়ে কখনো পড়েনি। এক অন্যরকম অনুভূতি এসে তার হৃদয়টাকে ছুঁয়ে গেল। কুরআনের পাতায় পাতায় সে বিচরণ করতে থাকল মৌমাছির মতো। কখন যে একটি বিকেল পার হয়ে গেল, বুঝতেই পারেনি সে। হঠাৎ মাগরিবের আজান শুনে চমকে উঠল সে।
সালাত আদায় করে ফেরার পথে তাওসীফের কানে কুরআনের অমিয় কথাগুলো বারবার বেজে উঠছে। তার যে মন খারাপ ছিল, এ কথাও বেমালুম ভুলে গেছে সে। নাহ! এখন থেকে কুরআন হবে তার প্রতিদিনের পরম সাথী।