অপদার্থ বেকার ছেলেকে নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে বাবা। দিনরাত বকাঝকা খেয়েও কোনো চেতনা নেই তার।
– তুই এখনও মরছ না কেন ?
– কেমনে মরমু? আজরাইলরে তো সারাক্ষণ ডাকতেই আছি। না শুনলে আমি কি করমু?
– গলায় দড়ি দে, বিষ খা। তারপর দেখ, আজরাইল আইয়ে কি না?
– আত্মহত্যা কইরা জাহান্নামে যাইতে আমি রাজি না। আত্মহত্যা ছাড়া কেমনে মরা যায়, জানা থাকলে কন।
– আমার এইরহম কোন সিস্টেম জানা নাই। তোর মরা দরকার, সিস্টেম তুই খুঁইজা বাইর কর।
– জি, আমি খোঁজতাছি। আপনে কিছুর খোঁজ পাইলে আমারে জানাইয়েন।
– এক কাজ কর। সল্টু মিয়ার কাছে যা। তার দারুণ বুদ্ধি। মাইনসেরে বিনা পয়সায় বুদ্ধি দেয়।
কনসালট্যান্ট চেম্বারে আজ বেশি ভিড় নেই। কাস্টমার কম থাকলে তার মনমেজাজ ভাল থাকে না।
– সল্টু ভাই, ভালা আছেন?
– না, ভালা নাই, চেম্বারে লোকজন নাই। বিনা পয়সায় বুদ্ধি দেই, তাও কাস্টমার নাই। তোর কিছু লাগবো?
– হ্যাঁ, লাগবো। আমি মরবার চাই। কিন্তু আত্মহত্যা না কইরা। এর কোন সিস্টেম থাকলে কন?
– অনেক সিস্টেম আছে। তয় সিস্টেম যখন তখন করা যায় না। চান্সে থাকতে হয়। তুই বেঞ্চে বইসা থাক।
– চান্স পাইলে কামে লাগায় দিমু।
– চান্স একটা পাওয়া যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। বাজারে এক চাঁদাবাজ এসেছে। মানুষকে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে। হাতে একটা গোখরো সাপ। এখন আর সাপ খেলা দেখায়ে গান গেয়ে ইনকাম হয় না। “কি সাপে দংশিল লখাইরে, সোনার অঙ্গ হইলো কালা। খা খা খা, বক্ষিলারে খা, কিরফিনরে খা, খেলা দেইখা যে পয়সা না দেয় তারে ধইরা খা।” এসব কথায় এখন মানুষের মন গলে না। তাই নতুন পদ্ধতি। মালদার লোক মনে হলেই সাপের ফণা মুখের সামনে ধরে বলে :
– আল্লাহর ওয়াস্তে বোবা জাতরে খাওনের টেহা দেন। নইলে ছোবল মারবো।
বেচারারা পকেট থেকে দশ-পাঁচ টাকার নোট বের করে দেয়। সল্টু হাঁক দেয় :
– এইতো চান্স। ঐ ব্যাটার সাপের ছোবল খাইয়া মর।
কিন্তু মরা কি এতই সহজ? প্রথমে সে সাপের ফণার সামনে হাত বাড়িয়ে দেয়।
– দে, দে, ছোবল দে, দেহি কেমন ছোবল দিবার পারস?
ছোবল না দিয়ে সাপটা মাথা নিচু করতে থাকে। এবার ক্ষিপ্ত হয় সে, সাপুরের হাত থেকে সাপটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে নিজের গলায় পেঁচিয়ে ধরে ধমক দেয় :
– এই গোখরার বাচ্চা গোখরা, ছোবল মারছ না কেন?
বাজারের সকল লোক জড়ো হয়ে যায় সেখানে। সাপের খেলা জমছে ভালো। কিন্তু বেকায়দায় পড়ে যায় সাপুরে। এই বেটায় ব্যবসার বারডা বাজাইছে। তাকে টানতে টানতে বাজারের বাইরে নিয়ে যায়।
– ভাই, তোমার পাও ধরছি। আমার ভাত মাইর না। আমি এই কইরা খাই। দাঁত ভাঙা সাপের কেরামতি তুমি ধইরা ফালাইছ। আর কাউরে কইও না। আজকের ইনকাম তুমি সব লইয়া যাও।
পকেট থেকে টাকাগুলো বের করে তার হাতে গুঁজে দেয়। টাকা হতে নিয়ে সে দৌড়ে আবার সল্টুর চেম্বারে হাজির হয়।
– কী বুদ্ধি দিলেন? সাপেতো ছোবল মারলই না। উল্ডা সাপওয়ালার আজকার কামাই সব আমারে দিয়া দিছে। মরবারতো পারলাম না। বিনা পয়সার বুদ্ধির এই ফল।
-টাকা পাইছস, বাড়িত যা, কয়দিন মৌজ মাইরা খা। খাইয়া মর। খাওয়া শেষ অইলে আবার আইয়িছ। তখন অন্য বুদ্ধি দিমু। মরণের চান্স তুই পাবিই। আমার বুদ্ধি ফেল অয় না।
আবার চান্স পাওয়া গেল। এলাকার চিহ্নিত তিন সন্ত্রাসী বাজারের পাশের সুপার মার্কেটের এক ব্যবসায়ীকে ধরে অপদস্থ করতেছে।
সল্টু বুদ্ধি দেয় :
– মরার এমন সুন্দর চান্স আর পাবি না। মইরা জাহান্নামে যাওন লাগবো না। শহিদী মরণের চান্স। ডাইরেক্ট বেহেস্তে চইলা যাবি।
– বক্তৃতা না দিয়া কেমনে মরমু হেইডা কন।
– হেইডাই কইতাছি। ঐ দেখ। তিন মাস্তান মাস্তানি করতাছে। বড় বড় বেহা মোছওয়ালাডা তাগো লিডার।
তুই কইষা তারে একটা ঘুষি মার। তোর কিছু করণ লাগবো না। ডাইরেক্ট বেহেস্তে চইলা যাবি।
চান্স নেয়ার জন্য সল্টুর বুদ্ধিমত কাজ করে সে। চলে যায় সন্ত্রাসীদের স্পটে। মার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না। সে চলে আসে একেবারে মোছওয়ালার সামনে। মাস্তানটা ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দিয়ে তার আপাদমস্তক চোখ বুলায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রচ- এক ঘুষি এসে পড়ে চোয়ালে। ঘুষি খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে লিডার। বাকি দুইজন পড়িমড়ি করে দৌড়ে পলায়। চোয়াল চেপে ধরে লিডার সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সে তাকে লক্ষ্য করে বলে :
– কি, আমারে মারবি? মার, দেহি কেমন জোর আছে তোর।
এবার লিডারও পেছন ফিরে দেয় দৌড়। মার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা এবার বীরদর্পে ভিড় জমায় তাকে ঘিরে। মাস্তানদের দৌড় দেখে দর্শকদের জোস বাড়ে। সমবেত কণ্ঠে চিৎকার দেয় :
– ধর শালাদের ধর, ধর শালাদের ধর।
একজন এগিয়ে এসে বলে :
– ঈদের আগে একটা কামের কাম করছেন ভাই। উচিত শিক্ষা দিছেন ভাই। আপনারে মাথায় লইয়া নাচতে ইচ্ছা করতাছে। আপনি আইজ থেকে এই মার্কেটের কেয়ারটেকার। আল্লায় আপনের হায়াত দারাজ করুক।
– আইছি মরবার। আপনেরা হায়াত দারাজ করতাছেন?
– রাহে আল্লাহ মারে কে? আপনে হাজার বছর বাইছা থাকেন।
– ভালা মানুষই বাঁচে না। আমি অপদার্থ হাজার বছর বাঁচুম?
– কোন পাগলে আপনারে অপদার্থ কয়? পদার্থের মাত্র দুইটা গুণ। ওজন আর জাগা দখল। আপনার ওজন যাই অউক, ঘুষির ওজন মাপতে বক্সিং-এর রেফারি লাগবে। আপনেতো আমাগো মনও দখল কইরা ফালাইছেন। যার এক ঘুষি খাইয়া তিন মাস্তান দৌড়ায়া পলায়, সে অপদার্থ অইলে পদার্থ কেডা?