বৃষ্টি। কী সুন্দর একটি নাম! কী সুন্দর একটা শব্দ! শব্দটা শুনতেই হৃদয়টা ভরে যায়। বৃষ্টি ভালো লাগে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে শিশুদের তো বৃষ্টি ভীষণ প্রিয়। বৃষ্টি হলেই শিশুদের মনপ্রাণ বেহেশতি সৌরভে নেচে ওঠে। আর বৃষ্টি হলে শুরু হয় বায়না। ‘আম্মু আমাকে ভিজতে দাও, আমি বৃষ্টিতে ভিজবো’। ‘গায়ে জ্বর হবে’ এই আশঙ্কায় মায়েরা তাদের শিশুদের বৃষ্টিতে ভিজতে দিতে চান না। অবুঝ শিশু জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁতে চায়। কী এক অমোঘ আকর্ষণ বৃষ্টির প্রতি। বৃষ্টি ভালো লাগে বড়দেরও। তাদের অন্তরের গভীরে জেগে ওঠে গভীর ভাব। আসে প্রেম, আসে শূন্যতা। মনে পড়ে যায় দূরে থাকা প্রিয়জনদের। হাতে উঠে আসে মুঠোফোন। ‘কিরে বৃষ্টি হচ্ছে নাকি তোদের ওখানে? আমাদের এখানে তো ঝুম বৃষ্টি’। হ্যালো…হ্যালো… কথা আর শুনতে পাওয়া যায় না। শুধুই ঝুম বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ।
এই বৃষ্টি, এই ভালো লাগা, এই আনন্দ কি মানুষ চাইলেই পেতে পারে? মানুষতো চাতকের মতো তাকিয়ে থাকে বৃষ্টির জন্য, কই বৃষ্টি কী হয়? এ বছরের মে-মাসের কথাই বলি; রোজার আগে কী প্রচ- গরম, খরতাপে অতিষ্ঠ সারা-প্রকৃতি, অথচ বৃষ্টি নেই। কেউ কেউ ভাবলো রোজা এলেই বৃষ্টি হবে। এই গরম আর থাকবে না। কেন? কারণ রোজার মাস রহমতের মাস। বৃষ্টি হচ্ছে আল্লাহর রহমত। এই ধারণা কি নিছক ধারণা?

না, তা কিন্তু নয়। মহান আল্লাহ বলছেন “আর আমি আকাশ হতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি যা দ্বারা আমি মৃত ভূখ-কে উজ্জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে বহু জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করাই। (সূরা ফুরকান : ৪৮-৫০)

এই বৃষ্টি না হলে প্রকৃতি শুষ্ক হয়ে যায়, উর্বরতা হারায়, শস্য-ফসল জন্মায় না, মানুষের খাদ্যচাহিদা পূরণ হতে পারে না। পায় না পশু-পাখির আহারও। তাই বৃষ্টি যে মহান আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত এতে কোনও সন্দেহ নেই। অনেক সময় মুরুব্বিরা আগেভাগেই ত্রস্ত পায়ে ছুটোছুটি শুরু করেন। ‘এই বৃষ্টি নামবে কাপড়চোপড় ঘরে আন’। কী করে বোঝেন তারা একটু পর বৃষ্টি নামবে কি না?
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সংবাদটা আল্লাহই মানুষকে পাঠান। যে একটু পর বৃষ্টি নামবে। কুরআন বলছে, “তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ণ মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে একটি মৃত শহরের দিকে বয়ে দেই। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করি। … .. ..
(সূরা আল আরাফ : ৫৭)
অর্থাৎ বৃষ্টির আগে হালকা ঠা-া বাতাস বা কালো মেঘ কিন্তু আমাদের জন্য বৃষ্টির বার্তাস্বরূপ।
অথচ বৃষ্টি হলে আমরা সবকিছু ভুলে গিয়ে নিজেদের নিয়ে মেতে উঠি। ভাবতেই পারি না যে আল্লাহ এতো বড় নিয়ামত দিলেন আমাদের, সে নিয়ামতের শুকরিয়া আমরা কিভাবে আদায় করি?
বরং এই বৃষ্টিকে আমাদের সমাজে একশ্রেণির মানুষ অশ্লীলতার জন্য ব্যবহার করে। বিশেষ করে চলচ্চিত্রে বৃষ্টিকে দেখানো হয় অশ্লীলতার বাহন হিসেবে। কী ভীষণ স্ববিরোধী কা-কীর্তি! মহান আল্লাহর একান্ত রহমত বৃষ্টিকে ওরা বানাচ্ছে অশ্লীল দৃশ্যায়নের নিমিত্তমাত্র!
বাংলাদেশে বর্ষাকাল
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ৬টি ঋতুর একটি হলো বর্ষা। আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাসকে বলা হয় বর্ষাকাল অর্থাৎ ইংরেজি মাসের জুন-জুলাই হলো বর্ষাকাল। এর আগে-পরে বৃষ্টি হয় কিন্তু তাকে বর্ষাকাল বলা হয় না। বর্ষাকাল বলা হয় যখন প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে প্রকৃতি ভিজে টইট¤ু^র হয়ে ওঠে। যে সময়টাকে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে
ওগো, আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরোঝর
আউশের ক্ষেত জলে ভরভর
কালিমাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিছে দেখ চাহিরে
ওগো, আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।

এরই নাম হলো বর্ষাকাল। নীল আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে যায়, এতটুকু নীল আকাশ আর দেখা যায় না। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। পা ফেলার তিল পরিমাণ জায়গাও থাকে না। অবিরত ঝরছেই বৃষ্টির ধারা। ক্ষেত-খামার সব ডুবে একাকার হয়ে যায়।
এমন বর্ষা কিন্তু গ্রামে গেলেই দেখা যায়। রাজধানীবাসীর জন্য বর্ষাকাল কিন্তু অন্যরকম। এক ভয়াবহ দুর্দশার দিন। ঠিক এসময়টাতেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। নেই বর্ষার পানি অপসারণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে যেন এক মহাসমুদ্রে পরিণত হয় রাজধানীর সব রাস্তা। এ এক অবর্ণনীয় অবস্থা। কেউ রিক্শাসহ কাদাপানিতে আছড়ে পড়ে, কেউ গাড়িসমেত আটকে পড়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয় রাজধানীবাসীকে। অথচ এই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজটা অন্যসময়ে করলে বা বর্ষার আগে করে ফেললে এবং দুর্নীতি না করে টেকসই রাস্তা করলে এবং পানি প্রবাহের পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলে এই ভোগান্তি কিন্তু হয় না। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেন রাজধানীবাসীকেও বলছেন ‘ওগো, আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।’ আর সত্যিই বর্ষায় ঘর থেকে বের হওয়া মানে চরম ভোগান্তি।
তবু বর্ষাকাল আমাদের প্রিয় ঋতু। বর্ষা ঋতুর আগে গ্রীষ্মকাল, সে সময় যে প্রচ- খরতাপে নাভিশ্বাস শুরু হয়। তার থেকে বাঁচার জন্য বর্ষাকাল আমাদের চরম প্রার্থিত একটি ঋতু। আর যদি এই ঋতুতে বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে প্রকৃতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। যেহেতু বৃষ্টি প্রকৃতিকে, ফসলের মাঠকে সজীব করে তোলে, বৃষ্টি না হলে প্রকৃতি শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হয়। ধানক্ষেত শুকিয়ে যায়, মাটি ফেটে হয় চৌচির, সবুজ ফসলের ঘ্রাণ থাকে না। খাদ্যাভাবে মারা যায় পশু-পাখি। নদী নালা শুকিয়ে যায়। মাছ চাষ ব্যাহত হয়। অর্থাৎ বৃষ্টি না হলে প্রাণের সঞ্চার থেমে যায়। কিন্তু সেই বৃষ্টি কি চাইলেই আমরা আকাশ হতে নামিয়ে আনতে পারি? পৃথিবীর কারও সাধ্য আছে বৃষ্টি সৃষ্টি করা? বৃষ্টি না হলে ভূ-পৃষ্ঠের তলদেশও শুকিয়ে যায়। মানুষের মধ্যে হাহাকার ওঠে। তারা নানাভাবে মহান আল্লাহর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিতে দেখা যায়; সে সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘আল্লাহ মেঘ দে, বৃষ্টি দে ছায়া দে রে আল্লাহ’ গান গায় শিশু-কিশোরের দল। বৃষ্টি দেয়ার মালিক আল্লাহ। এই বিশ^াস আমাদের চিরায়ত। কবি জসীমউদ্দীনের কাব্য নকশীকাঁথার মাঠে সাজু রূপাই’র পরিচয়ও কিন্তু এই বৃষ্টির গানের জন্য। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া বা প্রার্থনা করার রেওয়াজ অনেক পুরনো। কেননা আল্লাহই বৃষ্টি দেন। মৃতপ্রায় প্রকৃতিকে তিনিই আবার বাঁচিয়ে তোলেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেই কথাটিই বলেছেন এভাবেÑ “তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি, অতঃপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?” (সূরা ওয়াক্বিয়া : ৬৮-৭০)
তাই বৃষ্টি হলে মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা আমাদের কর্তব্য; এ কথা ভুলে গেলে চলবে না।

মেঘ থেকে কিভাবে বৃষ্টি নামে?
বর্ষাঋতু আমাদের অনেক প্রিয় ঋতু এর আরও একটি কারণ হচ্ছে বর্ষার শ্রাবণধারার সাথে মানুষের রক্তধারার মিল আছে। তাই বর্ষার দৃশ্য মানুষের মাঝে শিহরণ জাগিয়ে তোলে। মানুষের রক্তের মধ্যে প্রবাহ তৈরি করে, যা বিশেষ আনন্দের হরমোন তৈরি করে। কিন্তু আমরা কি জানি এই বৃষ্টির প্রক্রিয়া কী? কিভাবে কোত্থেকে বৃষ্টি নেমে আসে পৃথিবীতে? এটি মহান আল্লাহ নাজিল করেন এতে কোনও সন্দেহ নেই। পবিত্র কুরআনে বহুবার এ কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় বা এর লজিকটা কী বা এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি আমরা জানি?
মহান আল্লাহ সূরা আরাফের ৫৭ নম্বর আয়াতে বলছেন, “তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্র্ণ মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে একটি মৃত শহরের দিকে বইয়ে দেই। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করি। অতঃপর পানি দ্বারা সব রকমের ফল উৎপন্ন করি। এমনি ভাবে মৃতদেরকে বের করব যাতে তোমরা চিন্তা কর।” (সূরা আল আরাফ : ৫৭)
কেন আল্লাহ চিন্তা করতে বললেন? এবার আসি সেই ব্যাখ্যায়। আল্লাহ বলছেন বৃষ্টির আগে সুসংবাদবাহী বাতাস পাঠাই, সেই বাতাস বা বায়ুরাশি পানিভর্তি মেঘমালা বয়ে আনে, তারপর সেই মেঘকে একটি মৃত শহরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। অর্থাৎ আমরা যে মেঘকে চলতে দেখি এটিই বলা হচ্ছে। তারপর মেঘ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়। বিজ্ঞান কী বলছে? মেঘ হচ্ছে পৃথিবীর বা অন্য কোন গ্রহের আবহাওয়া ম-লে ভাসমান জলকণার সমষ্টি। সাধারণত পানি পৃথিবীতে কোথাও স্থির অবস্থায় থাকে না, বিভিন্ন মাধ্যমে আবর্তিত হচ্ছে এবং অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা সাধারণভাবে পানির কঠিন, তরল, বায়বীয় তিন অবস্থায় দেখে থাকি। বায়বীয় অবস্থারই একটি রূপ হলো মেঘ। পানির সবচেয়ে বড় ও স্থায়ী উৎস হলো সমুদ্র, এ ছাড়াও রয়েছে নদী-নালা, খাল-বিল। সূর্যের তাপে বাষ্পীয়ভবনের মাধ্যমে এসব উৎস থেকে পানি হালকা হয়ে বাষ্পাকারে উপরে ওঠে এবং এই বাষ্প ঠা-া ও ঘনীভূত হয়ে তৈরি হয় ভাসমান মেঘ।
তারপর মেঘ থেকে বৃষ্টি। প্রথমে ভূপৃষ্ঠ থেকে জলীয়বাষ্প যতই উপরে উঠতে থাকে ততই ঠা-া ও ঘনীভূত হতে থাকে। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০০০ ফুট উঁচু থেকে ঘনীভূত হতে শুরু হয়। এই ঘনীভূত মেঘ অনেকটা ঘন কুয়াশার মত। এই কুয়াশাম-লী প্রচ- বাতাসের কারণে হিমায়িত অঞ্চলে পৌঁছালে আরো ঠা-া হয়ে পানির কণায় পরিণত হয়। নিচ থেকে উষ্ণ বাতাসের সাথে ধূলিকণা উপরে আসলে এই ধূলিকণাকে কেন্দ্র করে পানি জমতে থাকে। এক পর্যায়ে পানির কণা পাঁচ সেন্টিমিটার এর বড় হলে তা মাধ্যাকর্ষণের টানে বৃষ্টি হয়ে ভূমিতে পড়ে। আর এই বৃষ্টিকে আমরা অবিরত ধারায় দেখতে পাই। বৃষ্টিতে আমরা খুশিতে নেচে উঠি। ইচ্ছে করে সব কাজ ফেলে খুনসুটি করি বৃষ্টির সাথে।

বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত
ক্রান্তীয় মৌসুমি অঞ্চলে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। শীতকাল পরবর্তী সময়ে প্রাক-মৌসুমি গ্রীষ্মঋতুর আগমন ঘটতে থাকলে ভূ-পৃষ্ঠের প্রচ- উত্তাপ এবং বঙ্গোপসাগর থেকে আসা প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতার কারণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। অনেক সময় বজ্রবিদ্যুৎসহ ধ্বংসাত্মক কালবৈশাখী ঝড়ও হয়।
তাই বৃষ্টি শুধু কল্যাণ নয় অনেক সময় অকল্যাণও বয়ে আনতে পারে। যেমন আদ জাতির উপর মেঘ-বৃষ্টি এসেছিল আজাব হিসেবে। হজরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যখন আকাশে মেঘ দেখতেন, তখন একবার সামনে অগ্রসর হতেন, আবার পেছনে সরে যেতেন। আবার কখনো ঘরে প্রবেশ করতেন, আবার বের হয়ে যেতেন আর তাঁর মুখম-ল বিবর্ণ হয়ে যেত। পরে যখন আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করত তখন তাঁর এ অবস্থা কেটে যেত (স্বাভাবিক হতেন)। আয়িশা (রা) এর কারণ জানতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “আমি জানি না, এই মেঘ ওই মেঘও হতে পারে যা দেখে আদ জাতি যেমন বলেছিল, এটা আমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করবে।”
(সহীহ বুখারি : অধ্যায় ৪৯, হাদিস ২৯৭৯; সহীহ মুসলিম : অধ্যায় ৪, হাদিস ১৯৬২)

অনাবৃষ্টি হলে করণীয়:
বর্ষাকাল ঋতুর নাম। সাধারণত এ কালে প্রচুর বৃষ্টিúাত হয়। কিন্তু অনেক সময় প্রচুর বৃষ্টিপাতের বদলে অনাবৃষ্টিও হয়। এই অনাবৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ দোয়া করার বিধান আছে। সালাতুল ইসতিসকা নামে যে নামাজ আছে তা এই অনাবৃষ্টির জন্য পড়া হয়ে থাকে।
ইসলামে বৃষ্টির জন্য দোয়া করার জন্য যে নামাজ আদায় করার নিয়ম রয়েছে সেই নামাজকে ‘ইসতিসকা’ বলা হয়। ইসতিসকা শব্দের অর্থ বৃষ্টির জন্য দোয়া করা। শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা) মসজিদে নববীর মিম্বারে দাঁড়ানো অবস্থায় বৃষ্টির জন্য দোয়া করেছেন। আবার ঈদগাহে কিংবা খোলা ময়দানে বিশাল সমাবেশে ইসতিসকার নামাজে ইমামতি করেছেন। বৃষ্টির জন্য দুই হাত তুলে মোনাজাতও করেছেন।
অনাবৃষ্টি আক্রান্ত এলাকার সর্বস্তরের মানুষ দীন-হীন পোশাক পরিধান করে খুবই বিনীতভাবে পায়ে হেঁটে খোলা ময়দানে সমবেত হয়ে বিনম্রভাবে কাতরস্বরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হয়। তারপর ইমামের পেছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজে আজান-ইকামত নেই। ইমাম কেরাত পাঠ করবেন উচ্চঃস্বরে। ইমাম তার গায়ের চাদর উল্টিয়ে নেবেন অর্থাৎ চাদরে ডান পার্শ্ব বামে এবং বাম পার্শ্ব ডানে পরিবর্তন করে কিবলামুখী অবস্থায় হাত উঠিয়ে দোয়া করবেন। এর আগে খুতবা দেবেন। বহু নজির আছে এই নামাজ শেষ হতে না হতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে থাকে। যদি না হয় মোট তিনদিন এই নামাজ আদায় করতে হয়।
নবী করিম (সা) মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে, মসজিদ থেকে ৩০৫ মিটার দূরে অবস্থিত ময়দানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছিলেন। বর্তমানে সেখানে ছাতার আকৃতির কয়েকটি গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ আছে। যার নাম ‘মসজিদে গামামা’ অর্থাৎ ‘মেঘের মসজিদ’।
বৃষ্টি আমাদের গ্রাম-বাংলায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বৃষ্টির ধারায় পরিবর্তন ঘটে জন-জীবন।

Share.

মন্তব্য করুন