একটা বেজায় রকম ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে আজকে সকালে ঘুম ভাঙলো মিনহাজের। অন্য দিনেতো আম্মুু সকাল ছ’টার আগে ঘুম ভাঙিয়ে দেন, কিন্তু আজকে বেশ আগেই ঘুম ভেঙেছে। তখন ভোর পাঁচটা চল্লিশ। সারারাত্রি কি সব হাবিজাবি স্বপ্ন দেখেছে মিনহাজ- স্কুল, রঙিন কাগজ, রাংতা মোড়ানো একটা বাল্ব, হেড স্যার- সবগুলোই শরৎ কালের মেঘের মতো টুকরো, টুকরো, এলানো ছড়ানো, এলেমেলো ভেসে বেড়ানো। ঘুম ভাঙার পরও শুয়ে থাকলো কতক্ষণ। একসময় হাতের কাছে রাখা এক গ্লাস পানি পান করে, তারপরই আড়মোড়, ঘুম ভাঙার কসরত। ঘুম ভাঙার পরে আজকে অবশ্য শরীরটা ফুরফুরে লাগছে, অকারণ আলসেমিতে ডেপো হয়ে ওঠেনি।
শীত একটু একটু পড়তে শুরু করেছে বটে, কিন্তু পড়লে কি হবে, এখন পর্যন্ত গাছের পাতায় ঘাসের ডগায় আলো ঝলোমলো শিশির বিন্দুর চোখ ধাঁধানো বাহারি বিন্যাস। স্যার ক্লাসে বলেছিলেন, শিশির ও কুয়াশা বায়ুমন্ডলে তাপের তারতম্যের কারণে হয়। আবহাওয়াবিষয়ক এ সকল প্রসঙ্গ অবশ্য মিনহাজ এখনো ঠিক বুঝেনি। শুয়ে শুয়ে এসকল এলেমেলো চিন্তা। হঠাৎ করে আম্মুর চিৎকার- ‘এই মিনহাজ, এখনো উঠিস্ নি? ক’টা বাজে, খেয়াল আছে’?
তাইতো। দেয়াল ঘড়িতে চেয়ে দেখে সকাল সাতটা ছুঁইছুঁই। আম্মু এ সময়টা কোরআন তেলাওয়াত করেন এবং আব্বু কোরআন তেলাওয়াতের সাথে তার বাংলা অনুবাদ পাঠে মগ্ন থাকেন।
আজকে মিনহাজের স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষায় যারা প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে, তাদের জন্য পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। মিনহাজ এ বছর আকর্ষণীয় স্কোরিং করেছে। শতকরা নব্বই নম্বর পেয়ে অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে উঠছে। আজকে তাকে সবার সামনে পুরস্কার গ্রহণ করতে হবে। শুধু তাই নয়, একটা বক্তৃতাও দিতে হবে। এসব কথা ভাবতেই শরীরটা শিরশির করে ওঠে। আনন্দ, লজ্জা ও ভয় এই তিনে মিলে এক ধরনের অজানা অনুভূতিতে তির তির করে শরীরও কাঁপে।
সবক্ষেত্রেই আব্বু-আম্মুর এক ধরনের মায়াবী উদারতা থাকলেও, একটা ব্যাপারে মিনহাজদের কড়া শাসনে থাকতে হয়। প্রত্যেকদিন সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠতে হয়। তারপর ফজরের নামায শেষ করে, বাসার সামনে খোলা রাস্তায় মুক্ত বাতাসে আধ ঘণ্টার মতো হাঁটাহাঁটি। আব্বুতো প্রায়ই বলেন- ‘দেখো মিনহাজ ও মিতু, ভোরের হাওয়া হলো বিনে পয়সায় পাওয়া মূল্যবান ওষুধ। যত চাও, তত পাবে। শরীর ও মনের জন্য ভীষণ উপকারী। আর শীতের সূর্য ওঠার রঙিন দৃশ্যতো ইউনিক’। কিন্তু সবসময় কি আর খুব ভোরে ওঠা হয়? বিশেষ করে শীতকালে? হয় না। লেপের ওম্ পেয়ে বহে। মাঝে মাঝে আব্বু একেকটা অবাক কা- করেন, মিনহাজদেরকে নিয়ে। হঠাৎ পড়াশুনা থেকে ডেকে নিয়ে সন্তর্পণে চলে আসেন ঘরের ছাদে। বলেন- ‘সবাই তাকাও ওপরের দিকে’। মিনহাজরা ওপরের দিকে রাতের আকাশে তাকায়। নির্মেষ্য অন্ধকার আকাশ, এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত অবধি লক্ষ-কোটি তারার মেলা। আকাশের মাঝামাঝি একটি উজ্জ্বল আলোর মিছিল নেমে গিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমে দিগন্ত অবধি। আব্বু আঙুল দিয়ে বড় বড় তারাগুলোকে পরিচয় করিয়ে দেন- ‘এই যে বড় তারাটা দেখছ, এটা হচ্ছে শুক্রগ্রহ- সন্ধ্যেবেলায় ওটা সন্ধ্যাতারা, আর ভোরের বেলা ওটাই শুকতারা। আর ঐ যে দেখা যাচ্ছে, একটা বড় নীল রঙের উজ্জ্বল সাদা আলোর পথ দেখা যাচ্ছে না, ওটা কে বলে ছায়াপথ। আমাদের মতো কোটি কোটি সৌরজগৎ নিয়ে এটি গঠিত। মিনহাজ ওগুলো ভেবে কোন কূলকিনারা পায় না; কতকটা নির্লিপ্তভাবেই আব্বুর কথায় সায় দেয়; জি, আব্বু’।
বারান্দার টবগুলোতে হরেক রকম গাছের সমাহার, ওপাশে ছোট্ট একটা ক্ষেত্রে বেশ কিছু সবুজ পাটগাছ। দিনের বেলা উজ্জ্বল আলোতে পাটগাছের পাতাগুলো খাড়া আকাশমুখো থাকে এবং রাত হবার সাথে সাথেই একদম সোজা লম্বালম্বিভাবে নিচের দিকে নেতিয়ে পড়ে। সেটাও মিনহাজদেরকে মাঝে মাঝে দেখান আব্বু; বুঝিয়ে দেন, কেন এমনটি হয়। দিনের বেলা সূর্যের আলো থেকে খাদ্য তৈরির জন্য আকাশমুখো হওয়ার এবং রাতে আলোর অভাবে নেতিয়ে পড়া যেন বৃক্ষের বিশ্রাম নেয়া- মিনহাজ বিস্ময় বোধ করে। প্রকৃতির এই রহস্য থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। সত্যিই, শেখার কোন শেষ নেই। মাঝে মাঝে মিনহাজের কী যে হয়। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে আকাশ থেকে বৃষ্টি পতনের দিকে; কখনোবা ছুটির দিন, একলা দুপুর, মেঘলা আকাশ, চারদিকে সুনসান নীরবতা, পাশের জামরুল গাছে টুনটুনি পাখি কখন থেকে ডেকে চলছে, ভিজে মেঘের আকাশে দু’চারটা চিল ওড়ে, তখন খু-উ-ব করে উর্মি আপুর কথা পড়ে; একা একা কান্নাও পায়। বছর তিনেক আগে আপু কী একটা অসুখে মারা গেছে। ওহ্ আজকে যদি আপুটা থাকতো।
ততক্ষণে সাবাই নাস্তার টেবিলে জমায়েত। আব্বু জিজ্ঞেস করলেন- ‘কি মিনহাজ, আজকে তো তোমাদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান; তোমাকে একটা বক্তৃতা দিতে হবে, পারবে তো?
– জি না, আব্বু, একটু শিখিয়ে দিতে হবে, কি বলবো’। মিনহাজ আবদার করল।
– ‘না, মিনহাজ; তোমার বক্তৃতা তোমাকেই দিতে হবে, একটু সুন্দর করে গুছিয়ে বলবে, বাস্ হয়ে গেল’। সাথে সাথে আম্মুও যোগ করলেন- ‘বক্তৃতা দিতে দিতেই বক্তৃতা শেখা হয়, ভয় পেলে চলবে না।’
তবু মিনহাজের ভয় কাটে না। দুরু দুরু বুকেই সে স্কুলে গেল। গিয়ে দেখে, সে এক এলাহি কা-। স্কুলের সামনেই সুন্দর করে তোরণ সাজানো হয়েছে। তোরণে লেখা আছে- ‘মেধা তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারীদের জন্য পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। স্কুলের অডিটোরিয়াম রঙিন কাগজের বহু বর্ণিল বিন্যাসে সাজানো গোছানো। প্রধান অতিথি হয়ে আসছেন জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং বিশেষ অতিথি স্থানীয় সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়। মিনহাজ তার জনাকয়েক বন্ধুর সাথে কতক্ষণ আড্ডা দিল। কেউ কেউ একটু আধটু তামাশা করতেও ছাড়ে না। ওদেরকেও মিনহাজের কাছে, একটু হিংসুটেই মনে হলো। কিংবা তাও নয়। অবশ্য ইমনটা ওরকম নয়, সে বরাবরই একটু আলাদা ধরনের। মিনহাজের ভালো রেজাল্টে সে খুশিই। মিনহাজের বক্তৃতাকে রেকর্ড করার জন্য সে সাথে করে একটা ছোট ক্যাসেট প্লেয়ার এনেছে। আরেক ক্লাসমেট তন্ময় একটা ক্যামেরাও সাথে নিয়ে এসেছে। এসব দেখে মিনহাজের অবাক হবার পালা। সে ভয়, বিস্ময় ও আনন্দকে ছাপিয়ে রাখতে পারছে না। মনে মনে আল্লার কাছে মোনাজাতও করছে। ‘হে আল্লাহ ভালোয় ভালোয় বক্তৃতা দেবার পালাটা যেন শেষ হয়’।
দুপুর দেড়টায় জোহরের নামাজের পর পরই অনুষ্ঠান আরম্ভ। অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছেন জহির স্যার। আজকে খুব সুন্দর একটা শার্ট পরে এসেছেন। মঞ্চে অভ্যাগত প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি আসন গ্রহণ করার সাথে সাথেই তুমুল করতালি। মাঝখানে বসে আছেন হেড স্যার। এলাচদানা দিয়ে সুপারি চিবুনো তার অভ্যাস। আজও সে রকম।
মিনহাজ তাদের জন্য নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসলো। ততক্ষণে অনুষ্ঠানে শুরু হয়ে গেছে। প্রথমে কোরআন তেলাওয়াত। তেলাওয়াত করলো অষ্টম শ্রেণির একজন ছাত্র। ভারি সুন্দর কণ্ঠ। তারপর স্বাগত ভাষণ, ভাষণ দিলেন ইংরেজির দিলীপ স্যার। স্যার খুব সুন্দর করে কথা বলেন। টনসিলের সমস্যা, তাই শীত গ্রীষ্ম বারোমাসই গলায় মাফলার বাঁধা থাকে। তারপর পুরস্কার গ্রহণ ও সবশেষে বক্তব্য প্রদানের পালা। পুরস্কার গ্রহণের জন্য একে একে নাম ধরে ডাকা হচ্ছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির প্রথম হয়েছে সিরাজুস্ সালেকিন, দ্বিতীয় তাসুনভা আহমদ বিথী, ওরা দু’জনে পুরস্কার নিয়ে আসলো। প্রত্যেকের জন্য রঙিন কাগজে মোড়ানো তিনটে প্যাকেট এবং একটি সার্টিফিকেট। মিনহাজ হাত দিয়ে দেখল, এগুলো বই। ততক্ষণে ডাক পড়েছে সপ্তম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছে সেই অদিতি রায় চৌধুরীর। ও আবার চমৎকার গান গাইতে পারে। খানিক পরেই ডাক পড়লো মিনহাজুল আবেদিন। অষ্টম শ্রেণিতে প্রথম। মিনহাজ দুরু দুরু বুকে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকের হাত থেকে তিনটে প্যাকেট ও একটি সার্টিফিকেট গ্রহণ করল। সবার সাথে হ্যান্ডশেকও করলো। এক পলকে তাকিয়ে দেখল আব্বু ও আম্মু দর্শকদের প্রথম সারিতে পাশাপাশি বসে আছেন এবং হাসছেন। পেছনে লম্বা হলভর্তি ছাত্রছাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। সিটে যেতে যেতে মিনহাজ নিজেকে খুবই স্মার্ট দেখাতে চেষ্টা করল। লোভ সামলাতে না পেরে একটা প্যাকেট খুলেই ফেললো। এটি রঙিন একটা সচিত্র বই ‘সাগর তলের মজার জগৎ’। বইটার ছবি দেখেই হঠাৎ করে আপুর কথা মনে পড়ে গেলো। উর্মি আপু প্রকৃতির ছবি দেখতে খুব ভালোবাসতো এবং ছবি আঁকতোও। নদীর পারে কাশবন, একটি ছায়া দানকারী বিশাল বটগাছ, হেমন্তের পানি কমে আসা ছোট্ট নদীতে মানুষ মাছ ধরছে, আকাশে থোকা থোকা মেঘ- এ রকম দৃশ্যের আঁকা একটি ছবিকে বাঁধাই করে বাসার দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। আপু থাকলে বই এর ছবিগুলো মজা করে দেখা যেতো।
এই মুহূর্তে বক্তৃতা চলছে। বক্তৃতা দিচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির সিরাজ। ভাঙা ভাঙা বাক্যে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে, সে বলছে যে সে ডাক্তার হবে। তাসনুভা তার বক্তৃতায় কেন যে হাসতে হাসতেই শেষ। হাসতে হাসতেই সে বললো যে স্যারেরা তাকে খুব ভালোবাসেন। ক’জন স্যারের কাছে সে প্রাইভেট পড়ে এবং সে শিক্ষক হবে। মিনহাজের ডাক পড়তে আর বেশি বাকি নেই, ততক্ষণে শরীরটা ঘামতে শুরু করেছে। বক্তৃতা দিচ্ছে সপ্তম শ্রেণির অদিতি। সে জানালো যে, সে একজন জেলা প্রশাসক হবে। শুনে জেলা প্রশাসক হাসছেন আর মৃদু হাততালি দিচ্ছেন। এর পরের বক্তা সপ্তম শ্রেণির দ্বিতীয় স্থান অধিকারী রায়হান উদ্দিন অনীক। বক্তৃতায় সে তার প্রথম পছন্দের কথা জানাল যে সে একজন ইঞ্জিনিয়ার হবে, তা যদি হতে না পারে তবে একজন পলিটিশিয়ান কিংবা একজন ক্রিকেটার। কিছুই হতে না পারলে, সে লন্ডন চলে যাবে। তার আব্বু অবশ্য লন্ডনে থাকেন। হলভর্তি হাসির রোল পড়ল। অনীকের বলার বিষয়টা হাসির নয়, বলার ঢংটা হাসির।
এরপর বক্তৃতায় মিনহাজের পালা। কিন্তু সে কি বলবে? আগের বক্তারা সবাই সবার পছন্দের কথা জানিয়ে দিয়েছে। কেউ হবে ডাক্তার, কেউ হবে ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বা ডিসি-আরো কত কী। সে কি বলবে, চটজলদি মাথায় কিছুই আসছেও না। ডাক পড়তেই প্রায় ঘামতে ঘামতে মিনহাজ মঞ্চে ডায়াসের সামনে দাঁড়ালো। দুটো হাত ও হাঁটু একটু একটু কাঁপছে। কিন্তু সাহসও পাচ্ছে কারণ পাশে হেড স্যার ও সামনে আব্বু ও আম্মু আছেন। সে বেশ কতক্ষণ কিছু না বলে দাঁড়িয়েই থাকল। এক ফাঁকে আব্বু ইশারা করলেন, বক্তৃতা আরম্ভ করতে। দর্শকদের পেছন থেকে কে একজন চিৎকার করে উঠলো- ‘এই মিনহাজ, আরম্ভ কর, আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবি।’ সে মাথা চুলকাতে চুলকাতে শুরু করল- ‘আজকের এই অনুষ্ঠানের শ্রদ্ধেয় সভাপতি, শ্রদ্ধেয় প্রধান অতিথি, শ্রদ্ধেয় বিশেষ অতিথি, আসসালামু আলাইকুম। অবশ্য বলতে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল বলে, সামনের দর্শকদেরকে সম্বোধন করেনি।
‘আমার আগের বক্তারা তাদের নিজ নিজ পছন্দের কথা অকপটে জানিয়েছেন। আমিও আমার কথা বলবো। আমি কিন্তু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ডিসি কিংবা শিক্ষক কিছুই হতে চাই না’- মঞ্চের অতিথিরা তার মুখের দিকে তাকাচ্ছেন এবং হলভর্তি সবার চোখ তার দিকে। মিনহাজকে একটু আবেগপ্রবণ দেখাচ্ছে। মাথাটা নিচু করে, কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে সে আবার বলতে শুরু করল- ‘আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে, আমার খেলার সাথী, আমার পড়ার সাথী আমার বড় বোন উর্মি আপু মারা গিয়েছে। সে গুণগুণ করে প্রায়ই একটা গান গাইতো- ‘এই মানুষে আছেরে মন, তারেই বলে মানুষ রতন’। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন সেই মানুষ রতন হতে পারি। আমি যেন মানুষ ডাক্তার হই, আমি যেন মানুষ ইঞ্জিনিয়ার হই, আমি যেন মানুষ ডিসি, মানুষ শিক্ষক হতে পারি। আর কিছু হতে চাই না। সবাইকে ধন্যবাদ আস্সালামু আলাইকুম। চোখ মুছে মিনহাজ মঞ্চ থেকে নেমে এলো। গোটা হলভর্তি একটা গুঞ্জন উঠল। আম্মু ঢুকরে কেঁদে উঠলেন। আব্বু রুমাল দিয়ে চোখ মুছলেন এবং হেড স্যার ডান হাত দিয়ে কপাল রগড়ালেন। অনুষ্ঠান যখন শেষ, তখন প্রায় সন্ধ্যে হয় হয়। বাসায় সবাই যখন ফিরলো, তখন সবাই খুব গম্ভীর।
মিনহাজের আম্মু খাটে শুয়ে শুয়ে বহুক্ষণ ধরে মুখ লুকিয়ে কাঁদলেন। আম্মুকে জড়িয়ে ধরে মিনহাজ মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে বললো- ‘স্যরি আম্মু, আমি আর আপুর প্রসঙ্গটা অমন করে তুলবো না’। আম্মুর কান্না আরো বেড়ে গেল। মিনহাজ, জিদান ও সুমিকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করলেন- ‘আল্লাহ তোদের হায়াত দরাজ করুক বাবা। আজকে উর্মি বেঁচে থাকলে কী যে খুশি হতো’।
বাইরে তখন মসজিদে এশার আজান হয়ে গেছে এবং পাশের বাসা থেকে হাফিজ সাহেবের কণ্ঠে প্রতিদিনের মতো সূরা ইয়াসিনের সুরেলা তেলাওয়াত শুনা যাচ্ছে- ফা সুবহানাল্লাজি বিআদিহি মালাকুতু কুল্লি শায়্যিন ওয়া ইলাইহি তুরজাউন। বাসার পাশে হাসনাহেনার ঝোপ থেকে তখনও ঝিল্লির একটানা প্রলম্বিত সুর থেকে থেকে ছড়িয়ে পড়ছে কামিনীতলা থেকে বাঁশবনের দিকে।

Share.

মন্তব্য করুন