ফাঁকা মাঠ। মাঠে কেউ নেই। অনেক দূরেও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কেউ আছে বলেও মনে হচ্ছে না। মাঠের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী। নদীটিতে আগের মতো প্রাণ নেই। অনেকে মরা নদী বলে। অল্প পরিমাণ পানি আছে। নদী ভর্তি কচুরিপানা। এই নদীর কূল ঘেঁষে একটা বাবলা গাছ আছে। বেশ মোটা তাজা। গাছের ডালে অনেকগুলো বক বসে আছে। বাবলার পাতা খুব ছোট ছোট। দূর থেকে বোঝা যায় না গাছে পাতা আছে। গাছে বক থাকায় মনে হয় বাবলা গাছে সাদা সাদা ফুল ধরেছে। অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। ধ্রুব এসেছে দোয়ারি উজাল দিতে। মাছ পড়েছে নাকি দেখার জন্য। বাবলা গাছের সৌন্দর্য দেখে খানিকক্ষণ দাঁড়ালো। তারপর দোয়ারি উঠিয়ে দেখলো বেশ মাছ পড়েছে। দারুণ খুশি হলো সে। কিছুক্ষণ পর তার কানে এলো বিড়ালের বাচ্চার কান্না। করুণ কান্না। বিড়ালের বাচ্চাকে কেউ আঘাত করলে যেমন করে কাঁদে ঐ রকম কান্না। ধ্রুব কান পেতে শুনতে লাগলো কোথায় থেকে শব্দ আসছে। ঠাহর করতে পারছে না। নদীর চারপাশে কচিধানের ক্ষেত। ধানের মুখে কচিথোড়। কয়দিন বাদেই বাইল বের হবে। ধ্রুব যেদিক তাকায় সেদিক থেকেই মনে হয় শব্দটা আসছে। এই ফাঁকা মাঠের মধ্যে বিড়ালের বাচ্চা তো থাকার কথা নয়। তবে কী? ভরদুপুর। মনের মধ্যে একটু খচখচ করে। অন্য কিছু নাতো? মানে ভূত প্রেত নাতো! দুপুরে নাকি ফাঁকা মাঠে ভূত পেত্নী থাকে। বাচ্চা ছেলে একা থাকলে ভয় দেখায়। একটু একটু ভয় পাচ্ছে ধ্রুব। বাবলা গাছ থেকে একটু দূরে হিজল গাছ। হিজল গাছে লাল লাল ফুল ঝুলে পড়েছে। হেমন্তের এই দিনে হিজল গাছে ফুল আসে। হিজলের ফুল দেখতে দারুণ লাগে। অনেকটা লাল খয়েরি রঙ। ধ্রুব মনে হচ্ছে হিজল গাছের গোড়ায় বিড়ালের বাচ্চাটি কাঁদছে। হিজল গাছ এমমিতেও অনেকটা ভূতুড়ে। মনের মধ্যে হালকাপাতলা ভয় নিয়ে ধীরে ধীরে হিজল গাছের নিচে গেল। না বিড়ালের বাচ্চা নেই তো। হিজল গাছের চতুর্পাশে ঘুরে ঘুরে দেখলো। কিন্তু কিছু নাই। এখন মনে হচ্ছে বাবলা গাছের তলায় বিড়ালের বাচ্চাটি কান্নাকাটি করছে। খুব দরদি কান্না। বুক ছুঁয়ে যাবার মতো কান্না। মনে হয় বিড়ালটি খুব কষ্টে আছে। বাবলা গাছের নিচে গেল ধ্রুব। বকগুলো গাছ থেকে উড়ে গেলো। আশপাশ খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো। কোন বিড়ালের বাচ্চা দেখা গেলো না। আবার মনে হয় ধানের ক্ষেতে কান্না করছে। এ ক্ষেত ও ক্ষেত করে বেশ কিছু ক্ষেতও খুঁজে দেখলো ধ্রুব। না বিড়ালের বাচ্চা পেল না। বিড়াল ধ্রুবর খুব প্রিয়। ধ্রুবর বাড়িতে দুটো বিড়াল আছে। বিড়ালের সাথে ওর দারুণ সখ্যতা। খাওয়া দাওয়া চলা ফেরা এক সাথেই হয়।
এখানে বাচ্চাটি পাওয়া গেলে নিয়ে নিত ধ্রুব। বাড়ি নিয়ে চিকিৎসা করতো। সুস্থ হয়ে গেলে পুষতো। কিন্তু বিড়ালের বাচ্চাটি পাওয়া গেল না। ধ্রুব প্রথম দোয়ারিতে যে মাছ পেয়েছিল তা একটা সিলভারের পাতিলে রেখেছিলো। পাতিল রেখে বিড়ালের বাচ্চা খুঁজতে গিয়েছিল। অনেকগুলো মাছ পেয়েছিল। পাতিলে কোনো মাছ নেই। কে নিলো মাছ? মাছের কি হলো ধ্রুব বুঝতে পারছে না। এখানে তো কেউ নাই। তাহলে? ধ্রুব ভাবলো হয়তো পানিতে পড়ে গেছে। দ্বিতীয় দোয়ারিটি উঠালো। অনেক মাছ পেল। খুব খুশি ধ্রুব। পূর্বের মাছের কথা ভুলে গেলো। যে মাছগুলো পাতিলে নাই। ধ্রুব আরো একটু দূরে এগিয়ে যায়। সেখানে আরো একটি দোয়ারি পাতা আছে। নতুন দোয়ারি থেকে মাছ ঢালতে যাবে এমন সময় দেখতে পেল, পাতিলে আবারো মাছ নাই। ধ্রুব এবার সত্যি সত্যি ভয় পেল। ধ্রুবর মা বলেছে পানিতে ভূত থাকে। কাঁচা মাছ খায়। খেতে বাধা দিলে পানিতে গেড়ে রাখে। ধ্রুব ভয়ে কাঁপতে থাকে। বিড়ালের কান্না। শিশু বিড়ালের কান্না, আবারো শোনা যাচ্ছে।
ধ্রুব ধরে নিয়েছে বিড়াল ভূত। দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু অনুভব করা যাচ্ছে। মাছগুলো খেয়ে ফেলল। বিড়ালের কান্না শোনা যাচ্ছে। এই প্রমাণ থেকেই বোঝা যায় এসব কিছু ভূতের কাজ। ধ্রুব এক পা দুই পা করে পিছাতে থাকে। তারপর সব কিছু ফেলে রেখে বিড়ালভূত, বিড়ালভূত বলে দৌড়াতে থাকে।
Share.