বাদুড় উড়তে পারে কিন্তু সে পাখি না। সে পাখির মত ডিম পাড়ে না। কারণ সে স্তন্যপায়ী। এবং পৃথিবীর একমাত্র উড্ডয়ন সক্ষতা বিশিষ্ট স্তন্যপায়ী প্রাণী। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১,১০০ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে। প্রাণীজগতে এমন প্রাণী আছে যারা মুখ দিয়ে খাবার খায় আবার মুখ দিয়ে মল ত্যাগ করে। এদের মধ্যে একটা হল বাদুড়।
বাদুড়ের গন্ধ ও শব্দের বোধ অত্যন্ত তীব্র। বাদুড় একটি নিশাচর বা গোধূলিচর প্রাণী। তবে কিছু কিছু কলাবাদুড় দিনের বেলাও ওড়ে। দিনের বেলা উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। খাদ্য গ্রহণের দিক থেকে বাদুড়কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক হল পতঙ্গভুক যা বাদুড় প্রজাতির শতকরা ৭০ ভাগ। দুই হল ফলভোজী যা বাদুড় প্রজাতির ৩০ ভাগ। ফলভোজী বাদুড় ফল ও ফলের রস খায়। পতঙ্গভুক বাদুড়-মাকড়সা, মাছ, ব্যাঙ, ছোট সরীসৃপ, পাখি, ক্ষুদে বাদুড় ও ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী খায়। আমেরিকার রক্তচোষা বাদুড় উষ্ণরক্তবিশিষ্ট প্রাণীর রক্ত পান করে।
বাদুড় ফাটল, গাছের খোঁড়ল, দেয়াল, পাথরের ফোঁকর, গুহা-গহবর, পোড়া-দালান, পুলের তল, সড়কের কালভার্ট, বড় বড় গাছ, পুরনো কুয়া ইত্যাদি স্থানে বসবাস করে। বিঘ্ন না ঘটলে এরা বহু বছর একই জায়গায় থাকে। বাদুড় আস্তানা ছাড়ার আগে প্রতি সেকেন্ডে ১০টি করে সংকেত-নাদ পাঠায়। উড়ন্ত অবস্থায় ৩০টি এবং বিপদ বা শিকার দেখলে ৫০টি সংকেত-নাদ পাঠায়।
বাদুড়ের গর্ভধারণকাল ৩-৫ মাস। শীতের শেষ বা গ্রীষ্মের শুরুতে বছরে একবারই মা বাদুড় বাচ্চা প্রসব হয়। নবজাতক অন্ধ ও সাধারণত লোমহীন হয়ে জন্মায়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে শরীর খাটো ও সূক্ষ্ম রেশমি লোমে ঢাকা থাকে। সাবালক না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চারা দুই থেকে তিন মাস মায়ের শরীরের সাথে সেঁধে থাকে। বাদুড় মানুষের ফলফলাদি খেয়ে ক্ষতি করলেও কিছু উপকারও করে। বুনো গাছের পরাগায়ন, বীজ-বিস্তরণ ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সহায়তা করে। নরম ও মাংসল ফলের অনেকগুলি সুদক্ষ বংশবর্ধক বাদুড় জলাতঙ্কের ভাইরাসবাহী। কিন্তু নিজে এ রোগে আক্রান্ত হয় না। কোন মানুষকে বাদুড় কামড়ালে তাকে অবশ্যই জলাতঙ্ক টিকা দিতে হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে আদিবাসী সমাজে কলাবাদুড় খাওয়ার রেওয়াজ আছে।
Share.