অ্যাক্সোলটল (Axolotl) একটি অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর জলজ প্রাণী, যা মেক্সিকোর স্থানীয় জলাশয়ে পাওয়া যায়। এটি এক ধরনের স্যালামান্ডার, তবে অন্যান্য স্যালামান্ডারদের থেকে এটি বেশ আলাদা। সাধারণ স্যালামান্ডাররা তাদের জীবনচক্রের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে স্থলে চলে আসে, কিন্তু অ্যাক্সোলটল সারা জীবন জলে থাকে এবং লার্ভার পর্যায়ে থাকা অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক হয়। এদের বিশেষ জীবনচক্র এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্যই এই প্রাণীকে আকর্ষণীয় ও অনন্য করে তুলেছে।
বাসস্থান এবং আবাসভূমি:
অ্যাক্সোলটল মূলত মেক্সিকোর জোচিমিলকো হ্রদে এবং সংলগ্ন খালগুলিতে বসবাস করে। একসময় এই অঞ্চলে এদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমানে জলাশয়ের দূষণ, শহরের সম্প্রসারণ এবং শিকারির আক্রমণের কারণে তাদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। অ্যাক্সোলটল এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
অ্যাক্সোলটলের শারীরিক গঠন খুবই আকর্ষণীয়। তাদের দেহের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। অ্যাক্সোলটলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো তাদের বাইরের গিলস বা শ্বাসযন্ত্র, যা তাদের মাথার দু’পাশে ফ্রিঞ্জের মতো দেখা যায়। এই গিলস তাদের জল থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে সাহায্য করে। অ্যাক্সোলটল সাধারণত গোলাপি, সাদা বা বাদামি রঙের হয়, তবে এদের মধ্যে আলবিনো প্রজাতিও রয়েছে।
পুনর্জন্মের ক্ষমতা:
অ্যাক্সোলটলের আরেকটি অবিশ্বাস্য বৈশিষ্ট্য হলো এর অঙ্গ পুনর্জন্ম করার ক্ষমতা। তারা কাটা বা ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ, এমনকি হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্কের অংশ এবং মেরুদণ্ডের কিছু অংশ পর্যন্ত পুনর্জন্ম করতে পারে। এই ক্ষমতা তাদেরকে বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণার বিষয়বস্তু করে তুলেছে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, অ্যাক্সোলটলের পুনর্জন্মের প্রক্রিয়া বোঝা গেলে ভবিষ্যতে মানুষের অঙ্গ পুনর্জন্ম বা কোষ মেরামত সম্পর্কিত চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।
অ্যাক্সোলটলের খাদ্যাভ্যাস:
অ্যাক্সোলটল শিকারি প্রাণী, এবং এদের খাদ্য তালিকায় ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, কেঁচো, এবং অন্যান্য ছোট জলজ প্রাণী অন্তর্ভুক্ত থাকে। জলে সাঁতার কাটার সময় এরা তাদের খাবারকে মুখ দিয়ে টেনে নেয়। অ্যাক্সোলটল নিজের খাবারকে পুরোপুরি গিলে খায়, কারণ তাদের দাঁত মূলত শিকারকে ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়, চিবানোর জন্য নয়।
বিপন্ন অবস্থা:
অ্যাক্সোলটল এখন প্রায় বিলুপ্তির মুখে। মেক্সিকোতে তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, এবং দূষণ ও আগ্রাসী প্রজাতির আগমনের কারণে এদের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অ্যাক্সোলটলকে এখন আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (IUCN) ‘বিপন্ন’ প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। যদিও বিভিন্ন দেশে অ্যাক্সোলটলকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য গবেষণা কেন্দ্র ও চিড়িয়াখানায় তাদের পালা হয়, তবে তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান রক্ষা করা জরুরি।
অ্যাক্সোলটল শুধুমাত্র একটি অদ্ভুত এবং রহস্যময় প্রাণী নয় বরং তাদের অসাধারণ পুনর্জন্মের ক্ষমতা বিজ্ঞানীদের জন্যও একটি বিস্ময়কর গবেষণার বিষয়। তাদের সংরক্ষণ ও বেঁচে থাকা আমাদের প্রকৃতির জ্ঞান এবং গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।