যখন ছোট ছিলাম এক অন্যরকম জীবন ছিলো আমার। ছোটকাল তো শৈশবকাল। তারপর কৈশোরকাল। সেই শৈশব আর কৈশোরের কথা মনে পড়ে খুব। বলতে পারি আমার শৈশব কৈশোর বেশ ভালো কেটেছে। বনে বাদাড়ে সবুজ গাছগাছালির ছায়ায় ঘুরতাম। অনেক রকম পাখির ডাক শুনতাম। পাখির সেই কিচিরমিচির সুর এখনও মনে পড়ে। সবুজ ঘাস আমার খুব পছন্দের ছিলো। খোলা আকাশের নিচে মাঠের ঘন ঘাসের ওপর চিত হয়ে শুয়ে থাকতাম। শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতাম। মেঘের এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে উড়ে যাওয়া দেখতাম। পাখিরা দল বেঁধে শূন্যে উড়ে যেতো। শুয়ে শুয়ে দেখতাম এসব।
ছোটবেলায় খেলতাম অনেক রকমের খেলা। বন্ধুরা মিলে মাঠে খেলতাম। ফুটবল খেলতাম। হাডুডু দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট খেলতাম। নদীর কূলে ঘুরে বেড়াতাম। বলতে পারি আমার শৈশব নদীর সাথেই কেটেছে। সেদিনগুলো খুব মজার ছিলো। গ্রাম মানেই তো সবুজ গাছগাছালিতে ভরপুর! চারিদিকে কতরকমের গাছ। আবার সবুজের হাতছানি। পাখির ডাক। কত পোকামাকড়ের শব্দ। আমাদের শৈশব কৈশোর কেটেছে গ্রামের উদার প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্যে।
এখন যারা বড় হচ্ছে এই ইট-পাথরের ভিন্ন পরিবেশে। তাদের শৈশব আর আমাদের শৈশব তো এক হবে না। তবে আমরা অনেক ভাগ্যবান। খোলা আকাশের নিচে আমরা বড় হয়েছি। খেলাধুলা করার মাঠ ছিলো কত বড়। যেদিকে ইচ্ছা ছুটে গেছি। কিন্তু এই ঢাকা শহরে এসব তো কল্পনাও করা যায় না। তবে এখন গ্রামও আগের মতো নেই। এই শহরে যাদের শৈশব আছে তাতেও তাদের জন্য ভালো দিক আছে। খোলা মাঠঘাট না থাকলেও অন্য অনেক সুবিধা তো আছে। স্কুল সুবিধা। বিদ্যুৎ আর সামাজিক যোগাযোগ সুবিধা। আর যাতায়াতের সুবিধা। আমরা তো এখনকার শহুরেদের মতো এতো সুযোগ সুবিধা পাইনি। অবশ্য এখন গ্রামেও অনেক সুবিধা বেড়েছে। গ্রামও আগের মতো নেই। বদলে গেছে অনেক।
আবারও বলি আমি ভাগ্যবানই। আমি একজন কৃষরকের ছেলে। আমার বাবা কৃষক এটি আমি গর্ব করেই বলি। কৃষকরাই সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। গ্রামে কৃষিকাজ দেখতাম। খেলার মাঠে খেলতাম। আবার নানা রকম খেলা ও যাত্রাপালাও দেখতাম। এসব স্মৃতি আমি খুব মনে করি। মনে পড়েও। সেই জীবনকে মিস করি খুব। এখন তো এগুলো স্বপ্নের মতো।
আমরা মিলেমিশে থাকতাম। গ্রামের আর দশজন মিলে খেলতাম। এসব ভাবলে এখন কষ্ট হয়। মানুষ এখন খুব ব্যস্ত। নিজকে নিয়ে ব্যস্ত। নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। একই ভাবে ইন্টারনেট দুনিয়ায় মানুষ নিজেকে ব্যস্ত রাখে। এখনকার শিশু-কিশোরেরা তো ইন্টারনেট জগতেরই বাসিন্দা। নেট ছাড়া তাদের চলেই না। কার্টুন, ইউটিউব আর হরেকরকম ভিডিও দেখে দেখে কাটে এদের দিনরাত।
একটি গল্প খুব মনে পড়ে। ঠিক গল্প না। আমার জীবনের একটি ঘটনা। সেটি হলো মানুষ নিজের চেষ্টায় অনেক কিছু করতে পারে। একদিন আমি বাবার সাথে বাজারে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ রাস্তার পাশে একজনকে দেখলাম সিগারেট খেয়ে শেষ অংশটুকু ফেলে দিয়েছে। আমি দৌড়ে গিয়ে সে অংশটুকু তুলে মুখে নিয়ে টানতে শুরু করেছি। বাবা দেখে ফেললেন। কিন্তু আমাকে কিছুই বলেননি তখন। বাজার থেকে ফিরে এলাম বাড়িতে। বাড়িতে এসে বাবা আমাকে একটি লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করলেন। আমি তো ভয়ে শেষ। বাবা বললেন- তোর এতো বড় সাহস! সিগারেট মুখে তুললি! সেই যে মার খেলাম তারপর আমি কখনও আর সিগারেট ধরিনি।
কিন্তু ইন্টারে পড়ার সময় কী কারণে আবার সিগারেট ধরি। পরে যখন বুঝতে পারি যে সিগারেট ভালো জিনিস নয়, তখন তা নিজেই ছেড়ে দেই। ইচ্ছে করলে মানুষ নিজের চেষ্টায় অনেক খারাপ স্বভাব দূর করতে পারে।
আমার জীবন আসলে উপন্যাসের মতো! নানারকম উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে আমার জীবনটি।
অনেক দুঃখ বেদনা সহ্য করে এগিয়েছি। তবে সবকিছুর মধ্যেও মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, তিনি আমাকে অনেক দিয়েছেন।
এখানে একটি মজার কথা বলি। আসলে আমি জীবনকে নানারকম ভাবে দেখার জন্য অভিনয় জগতে এসেছি। ধরুন একজন ডাক্তার হলে তিনি শুধু ডাক্তারি জীবন দেখবেন। একজন ইঞ্জিনিয়ার হলে তিনি ইঞ্জিনিয়ারের জীবন দেখবেন। কেউ ব্যবসায়ী বা শিক্ষক হলে সেই জীবনই দেখবেন শুধু। কিন্তু অভিনয় জগতে একজন অভিনেতা এসকল চরিত্রে অভিনয় করে। ফলে সবকটি জীবন দেখার সুযোগ হয় এই অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।
আমি সারা জীবন সৎ থাকার চেষ্টা করেছি।
আসলে মানুষ যখন সঠিক কাজ করবে। সৎ পথে থাকবে তখন তার জীবনে সফলতা আসবেই। আমি আসলে নাম যশ কিংবা বিখ্যাত হতে কাজ করিনি। আমি আমার কাজটি সৎ পথে থেকে সুন্দর ভাবে করার চেষ্টা করেছি। এখনো করছি। এভাবে কাজ করতে পেরে আমি আনন্দিত। আসলে মানুষকে সৎ এবং সুন্দর থাকতে হয়। সততার সাথে কাজ করলে সফলতা আসেই। তার সাথে সাধনা করে যেতে হবে।
আজকের শিশু কিশোর যারা তোমরা তোমাদের সময়কে ভালো কাজে লাগাও। শুধু ইন্টারনেটে পড়ে থাকলে চলবে না। নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলো। সুন্দর মানুষ হও।
সময়কে কাজে লাগাও। সময়ের কাজ সময়ে করো। কোনোভাবেই সময় অপচয় করো না। সময়ের প্রতি অবহেলা করো না। তুমি যদি সময়কে কাজে লাগাও দেখবে একদিন তুমি ঠিকই বড় হবে।