নিজের সাথে
আবু সালেহ

গত রাতেও ঘুম আসেনি জেগে ছিলাম রাতে
যা ভেবেছি তাই বলেছি নিজেই নিজের সাথে।

কত কথা কত ব্যাথা দু:খ শত শত
মনের উপর ভর করেছে অক্টোপাশের মত।

এ ভাবেই তো কেটে যাবে দিন গণনা করে
সব স্বপ্ন গিয়েছে যে চোখের থেকে সরে।

 

রোজ ফুটি লালকুঠি
আবদুল হাই শিকদার

ঘুমে লুটি
ভোরে উঠি
দিনমান ছোটাছুটি।

নেই ছুটি
হাত দুটি
দিন শেষে খালি মুঠি।

খালি মুঠি
নেই জুটি
তারপরো রোজ ফুটি।

ঘুটাঘুটি
ফোটাফুটি
চলতেছে ভোটাভুটি।

চালে গুটি
ফল পুটি
পড়ে থাকে লালকুঠি।

লালকুঠি
লালকুঠি
তবু তুমি ঢেউ- ঝুটি

 

রোদ বৃষ্টির লেখা
রেজাউদ্দিন স্টালিন

বৃষ্টিরা আজ দল বেঁধেছে
লিখবে তারা পদ্য,
রোদ এসে কয় লিখবো আমি
কাঠ ফাটানো গদ্য।

বাতাস বলে লিখবো ছড়া
ঝড়ের আমি পুত্র,
বজ্র এসে ধমক মারে
লেখার জানি সূত্র-

লিখবো আমি উপন্যাস
গল্প অনিবার্য,
কোকিল শুনে মুচকি হাসে
কর করবে ধার্য।

বৃক্ষ নীরব কবি তিনি
নদীর জলে দৃষ্টি,
মহাজীবন লিখে যাবেন
অমর কোনো সৃষ্টি।

বদলে গেছে
মোশাররফ হোসেন খান

ঐ যে আকাশ ঐ যে বাতাস, ঠিকই আছে
সাগর নদী পাহাড়গুলো, ঠিকই আছে
সূর্য তারা চাঁদের আলো, ঠিকই আছে
বন বনানী বাগান বেড়া, ঠিকই আছে

পশুপক্ষী হাঁস মুরগি, ঠিকই আছে
রোদ বৃষ্টি চোখের দৃষ্টি, ঠিকই আছে
ঝড় ঝাপটা ঝাল মিষ্টি, ঠিকই আছে
ঝর্ণাধারা স্বর্ণাকুঁচি, ঠিকই আছে

পুবের মাঠ দখিন মাঠ, ঠিকই আছে
হাওর বাওড় কলমি লতা, ঠিকই আছে
হাতির শুঁড় আখের গুড়,ঠিকই আছে
দুর্বা ঘাস ঘাসের ঘটা, ঠিকই আছে

চুলের ঝুঁটি খাস্তা রুটি, ঠিকই আছে
হাঁড়িপাতিল থালা বাসন, ঠিকই আছে
আলো আঁধার রশি গাধার, ঠিকই আছে
পুবাল বাও ঘাটের নাও, ঠিকই আছে

শীত গ্রীষ্ম বান দৃশ্য, ঠিকই আছে
দালান কোঠা জীর্ণ ঘর, ঠিকই আছে
রাত্রি দিন সকাল সাঁঝ, ঠিকই আছে
সন্ধ্যা তারা বসুন্ধরা, ঠিকই আছে

কালের মাঝে কালটা শুধু হারিয়ে গেছে
তারই সাথে মানুষগুলো বদলে গেছে
বদলে গেছে…!

ঐতিহ্য
মুস্তফা হাবীব

জিয়াল মাছে পুকুর ভরা গোলায় ভরা ধান,
এখন এসব শুধুই স্মৃতি নেইতো পালকির গান।
কোথাও এখন যায় না শোনা পল্লীগানের সুর
জলপরীরা নেইতো জলে থাকে পাহাড়পুর।

গাছের ডালে ঘুঘু পাখি যায় না দেখা আর,
নদীর জলে পাবদা পুঠি কাটে না সাঁতার।
নেইতো এখন মসলিন শাড়ি নেইতো বালাম চাল,
ছুইয়া নৌকায় পাল উড়িয়ে কেউ ধরে না হাল।

চিঠিপত্র কেউ লেখে না হলুদ খামে আর,
মোবাইল দিয়ে চলছে এখন বাহারি কারবার।
ঐতিহ্য সব নির্বাসনে মাকে ডাকে ম্যাম,
যেথায় যাবো দেখি সেথায় বহুমাত্রিক জ্যাম।

আসল রেখে নকল ধ্যানে সুর সুরভি ছড়াই,
ভুল ঠিকানায় চিঠি লিখে করছি সবাই বড়াই।

 

বৃক্ষজীবন
নজরুল ইসলাম শান্তু

বৃক্ষরা হেসে খেলে কাটায় প্রহর
ভেঙেচুরে সয়ে যায় প্রকাণ্ড ঝড়
রৌদ্রের কড়া তাপে সাজায় দুপুর
এক সুরে জেগে ওঠে পাতার নূপুর;
বাতাসে হৃদয় দোলে শুনি মুড়মুড়!

বৃক্ষেরা জেগে ওঠে সবুজ মায়ায়
বৃক্ষেরা ছবি আঁকে শ্যামল ছাঁয়ায়
বৃক্ষেরা কথা বলে অপরূপ সুরে
বৃক্ষেরা মালা গাঁথে নিঝুম দুপুরে
শুভময় সৌরভে থাকে প্রাণজুড়ে!

বৃক্ষেরা গড়ে যায় পাখিদের নীড়
বৃক্ষেরা গড়ে যায় ভোরের শিশির
বৃক্ষেরা গড়ে যায় জীবন-আহার
বৃক্ষেরা হেলেদুলে নূয়ে পড়ে আর
বৃক্ষেরা দিয়ে যায় ফুলের বাহার।

তাই রোজ ছুটে যাই বৃক্ষের কাছে
প্রাণের পরশে তারা খুব ভালো আছে।
বলে যায় কত কথা শুধু ইশারাতে
বৃক্ষেরা রঙ তোলে প্রতি দিবারাতে
বৃক্ষেরা নেচে ওঠে কোমল প্রভাতে!

 

একটি আকাশ আছে বলে
বাছিত ইবনে হাবীব

একটি আকাশ আলোকিত আছে বলে
এ সবুজ জমিন বড়ো প্রিয়
জোছনার দুধ নিতে চাও তুমি?
আমাকে ঘাসের শিশির দিয়ো।

নীলিমার বুকে মেঘকণা জমে বলে
ভাংতে ভাংতে জমিনে বৃষ্টি নামে
সুকঠিন মৃত্তিকা দেহে
বিদগ্ধ আগুন থামে।

বহু অবারিত মাঠ আছে বলে
তোমরা বাগান করেছ
ফল ফসলের গন্ধ শুঁকে শুঁকে
মনের বাগান ভরেছ।

তাইতো বলি সবাই নীলিমা মৃত্তিকা পড়ো
আদায় করো শুকরিয়া তাঁর
পরম সত্য বোধে জীবনটাকে গড়ো
বলো আল্লাহ আকবার!

 

মানিক রতন
শাহী সবুর

মানিক রতন দুটি ভাইয়ে হাতে গুলতি নিয়ে,
সকাল বেলায় চলতেছিল গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে।
রতন বলে দেখ ভাইয়া ওই যে ডালে পাখি,
আমি দেখছি পাতার ফাঁকে তুমি দেখছো নাকি?

মানিক বলে দেখাও দেখি বসা সে কোন ডালে,
গুলতি টেনে মারি তাকে আজ প্রভাতের কালে।
রতন বলে ওই দেখা যায় ঘাপটি মেরে আছে,
টের পেলে সে উড়ে যাবে আর যেও না কাছে।

মানিক তখন গুলতি ছিনায় মাটির গুলি নিয়ে,
নিরিক ধরে ছুঁড়লো গুলি লাগলো মাথায় গিয়ে।
গানের পাখি সকাল বেলায় মাটির গুলি খেয়ে,
ডাল ছেড়ে সে ছটফটিয়ে পড়লো নিচে গিয়ে।

মানিক রতন মহা খুশি পাখিটাকে মেরে,
মন আনন্দে দুটি ভাইয়ে নিজের ঘরে ফেরে।
পাখিটাকে দেখে তখন বাবা বলেন ডেকে,
কি কারণে বল তোমরা মেরে আনছো একে?
বিনা দোষে এখন যদি তোমাদের কেউ মারে,
বল দেখি তোমরা কি আজ ছেড়ে দিবে তারে?

তোমরা দু’ভাই যা করেছো তা কি অন্যায় নয়?
বাবার কঠিন ধমক খেয়ে দু’ভাই পেল ভয়।
মানিক রতন কেঁদে বলে গুলতি দিলাম রাখি,
আর কোন দিন মারবো না ওই বনের গানের পাখি।

 

ঈদ যদি আসে
রেদওয়ানুল হক

ঈদ যদি আসে
কতো ফুল হাসে
কতো পাখি গায় গান
সুরভীর শ্বাসে।

ঈদ যদি আসে
সকালের ঘাসে
হেঁটে যাই ঈদগাহে
কতো উচ্ছ্বাসে।

ঈদ যদি আসে
তাকবীর ভাসে
ছোট-বড় একসাথে
চলি পাশে পাশে।

ঈদ যদি আসে
দুখ-ব্যথা নাশে
নত হই তাঁর কাছে
আরো বিশ্বাসে।

ঈদ যদি আসে
নাচি উল্লাসে।।

 

এমন ছবি
মামুন সারওয়ার

পায়ের উপর পা রেখে ঠিক
বিড়ালও
চেয়ারটাতে বসেই খানিক
জিড়ালো।

একী এমন কাণ্ড বাপু ঘটলো
বাসাবাড়ি চারিদিকে রটলো।

শিল্পী দাদু কাণ্ডখানা দেখে
দেয়াল জুড়ে টানিয়ে রাখে
একটা ছবি এঁকে।

এমন ছবি দেখে বিড়াল
উঠলো হঠাৎ বাঁকিয়ে
কে এঁকেছে এমন ছবি
দেখবে তাকে তাকিয়ে।

কে এঁকেছে কে এঁকেছে
পায় না বিড়াল খুঁজে,
চেয়ারটাতে ঘুমিয়ে পড়ে
তাইতো দু’চোখ বুজে।

 

বুনোফুল
শাহীন ভূঁঞা

বুনোফুল ! বুনোফুল !
সবুজ বিথির রঙিন কোনো ফুল–
বুনোফুল !
হাওয়ার টানে
পাতার কানে–
দোলে ঝুমকা দুল–
বুনোফুল !

সকাল বেলা আলো যখন ফোটে,
তোমার হাসি দেখি আমি ঠোঁটে ।
চৈত্রের শেষে
রঙিন বেশে–
উড়াও মাথার চুল–
বুনোফুল !

রূপের দেশের শ্যামল ছায়ার নীড়ে,
আয় রে খুকু ফুল-পাখিদের ভিড়ে।
পাখি ডাকে–
গাছের শাখে ।
করে যায় হুলস্থুল–
বুনোফুল !

 

মিষ্টি ফুলের হাওয়াই মিঠাই
আরিফ বখতিয়ার

পাহাড় ডাকে অরণ্যকে
তোর কাছে চাই গোলাপ-বেলী
প্রজাপতি ঘুম ভেঙ্গে দেয়
মুচকি হাসে জুঁই-চামেলী।

ঘুমিয়ে গেলে রক্তজবা
তোর দু’চোখে ঘুম কেন ভাই,
ভোরের সাথে দ্যাখ চেয়ে দ্যাখ
মিষ্টি ফুলের হাওয়াই মিঠাই।

সাগর ডাকে নদীও ডাকে
বিরানভূমি, খোলা আকাশ
উদাস হাওয়ায় বটের পাতা
মুচকি হাসে যেমনি তাকাশ।

আয় ছুটে আয় দু’হাত মেলে
নানা রংয়ের স্বপ্ন বুনি
ভালোবাসার চাদর দিয়ে
গান শোনাতে গুণগুণানী।

 

কোথায় আছিস মা
রাসেল খান

সবার ঘরে খুশি যখন
আনন্দ হইচই,
একটি ছেলে মাকে খোঁজে
কই হারাল কই?

নতুন জুতো, নতুন জামা
কেনে দেবে মায়,
গত ঈদে বলেছিল
আদর করে গায়।

এ ঘর ও ঘর মাকে খোঁজে
কোথায় আছিস মা?
ঈদের নামাজ পড়তে যাব
জামা দিয়ে যা।

নেইকো ঠোঁটে হাসির রেখা
আজকে ঈদের দিন,
মায়ের খোঁজে দু’চোখ ভেজা
মুখটা যে মলিন।

মা হারা এই কান্না দেখে
মন থাকে না স্থির!
কে বোঝাবে? আসবে না মা
ছোট্ট ছেলেটির।

Share.

মন্তব্য করুন