মামাবাড়ির কথা ভাবলেই সবার আগে মনে পড়ে তিনটা বড় বড় খড়ের গম্বুজ, একটা আটচালা ঘর আর দুটো পুকুর। নানার ছিল দু’ভাই। তার মানে তারা তিন ভাই। বোন ছিল একজন। একটা লম্বা বিশাল উঠোনের একদিকে পুকুর। তিন দিকে তিন শরিকের বড় বড় টিনের ঘর। পরে তাদের দু’ভাই ইটের তৈরি ভবনও করেছিলেন। সেটা স্বাধীনতার দশ-পনেরো বছর পরের কথা। বাড়ির পেছনের দিকেও একটা ছোট পুকুর ছিল, হয়তো এখনও আছে। ছোট কিন্তু বেশ গভীর। একদিকে বড়াইবাড়ি যাওয়ার রাস্তা। তিন দিকে ঘন ঝোপ-জঙ্গল। নানা রকম প্রাণী থাকতো ওই জঙ্গলে। শেয়াল ও বাগডাসা তো ছিলই। দু’/তিনটা উদবেড়ালও ছিল। উদ মাছ খায়। মাছই তার সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য। আবাসস্থলের অতটা কাছে মাছ থাকায় ওদের খুব সুবিধা হয়েছিল। নানা প্রতি বছরই পোনা ছাড়তেন ওই পুকুরে। কিছু এমনিতেই মরে যেত। বাদবাকি যেগুলো বেঁচে যেত এবং বড় হতো তার প্রায় অর্ধেকই খেয়ে ফেলতো ওই উদ বেড়ালরা। এ নিয়ে নানার মনে কষ্ট ছিল। একমাত্র ছেলেকে ডেকে বলতেন, আবুল; কী করা যায় ক’তো!
আবুল হোসেন বলতেন, কী আর কইরবেন? হয় জঙ্গল কাটি সাফ করেন, না-হয় পোনা ছাড়া বন্ধ করেন।
ঝোপ-জঙ্গল কাটা সহজ ছিল। আবার একটা অসুবিধাও ছিল। ঝোপের ওপাশে জঙ্গল ঘেঁষেই বাঁশঝাড়। ঝোপগুলো কেটে ফেলা হলে বাঁশঝাড় একেবারে উদোম হয়ে যাবে। রাস্তা থেকে নেমে দীঘির পাড় হয়ে সোজা ঢুকে যাওয়া যাবে ওই বাঁশের ঝাড়ে। তার মানে চোরের উপদ্রব বাড়বে। নানা, অতএব, ভাবতেন, নাহ থাউক, দরকার নাই! ফলে কী হতো? পুকুরপাড়ের জঙ্গল কাটা হতো না। নানা পুকুরে পোনা ছাড়াও বন্ধ করতেন না। উদের জন্য খুব সুবিধাই হয়েছিল বটে। একদিন সন্ধ্যার মুখে আমি পরিষ্কার দেখেছি, মাঝারি সাইজের একটা মাছ নিয়ে উদ মহাশয় দ্রুত পায়ে ঢুকে গেল তার আস্তানায়।
শুরুতেই যে পুকুরটার কথা বললাম সেটা বাড়ির সামনের দিকে। তার পাড় ঘেঁষে দুটো তালগাছ ভীষণ বাঁকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে গিয়েছিল। বর্ষাকালে পুকুর যখন কানায় কানায় ভরা, পানি অনেক কাছে চলে আসতো গাছ দুটোর। দুপুরবেলা ছেলে-ছোকড়ার দল ওই গাছ দু’টিতে উঠে পুকুরে ঝাঁপ দিতো। বারবার তারা এ কাজ করতো। আর বিকেল হলে ঠিক একই জায়গায় বসে যেতো মাছ ধরার ছিপ নিয়ে। আমি শহরে বড় হয়েছি। সাঁতার শিখেছি অনেক পরে, যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। সেজন্য মামাবাড়ির ওই পুকুরে আমি ঝাঁপ দিতে পারতাম না। তবে ছিপ ফেলে পুঁটি-ট্যাংরা ধরেছি অসংখ্যবার। লেজের কাছে কালো টিপঅলা বড় বড় চ্যাপ্টা পুঁটি ছিল ওই পুকুরে। আর ট্যাংরা মাছ যখন বড়শিতে আটকা পড়ে ওপরে উঠতো, অদ্ভুত শব্দ করতো; মিহি যন্ত্রসঙ্গীতের মতো!
মেজো নানার ছোট ছেলের নাম হবিবর রহমান। মা তাকে হবি বলে ডাকতো। আমরা বলতাম হবি মামা এই হবি মামা বড়শি দিয়ে মাছ ধরার কাজে পটু ছিলেন। উনি কেঁচো ব্যবহার করতেন না। আটা ও শুঁটকির গুঁড়োর মিশ্রণে তৈরি এক ধরনের মণ্ড ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র টুকরো করে বড়শিতে গেঁথে দিতেন। পুঁটি-ট্যাংরা-টাকি-কই ধরা পড়তো পটাপট! এক থেকে দেড় ঘণ্টার ভেতর তার খলুইয়ের অর্ধেকটা ভরে যেত। আমরা তো মাছ তেমন পেতাম না। ফলে ব্যথিত ও অবাক চোখে জুলজুল করে তাকিয়ে দেখতাম মামার কাণ্ড। আপন মামা আবুল হোসেন আমার পনেরো/ষোলো বছরের বড়। হবিবর রহমানের সঙ্গে আমার বয়সের ব্যবধান সাত বছর। সেজন্য তার সঙ্গেই ওঠা-বসা বেশি ছিল। স্বাভাকিভাবেই গড়ে উঠেছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। আমরা একসঙ্গে মেলায় যেতাম। হাটে যেতাম। ঘোড়দৌড় দেখতাম। মামাবাড়ির খুব কাছে একটা মেলা হতো; এখনো হয়। সিদ্ধেশ্বরীর মেলা। লোকে বলে ঠাকুরবাড়ির মেলা। এ মেলার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সারা বৈশাখ মাস জুড়ে এটা চলে; প্রতি মঙ্গল ও শনিবার। হাজার মানুষ এতে যোগ দিতো। ছোটবেলা থেকে লক্ষ করি, আমার নানাবাড়ির সকলেই ধর্মীয় রীতি-নীতির কড়া অনুসারী। তারা ইসলামী নিয়ম-কানুন ও আদব-কায়দা মেনে চলে। আমি ওই মেলায় যেতে চাই এবং সেজন্য হবিমামার সঙ্গ নিয়েছি এটা জোন নানী বলেছিলেন, ‘কিসের মেলা যায়! ওটা দহন হেন্দুর ঘ্যারে মেলা!’ সে সময় আমাদের বয়স খুব কম। আমার ১৩-১৪। হবিবর রহমানের ২০-২১। কিশোর মনের আবেগ বলে কথা। কার কাছে জানি শুনেছিলাম, ওই মেলায় দারুণ স্বাদু গুড়ের সন্দেশ পাওয়া যায়। তার লোভও কাজ করেছিল। হবি মামা পড়তেন মাদ্রাসায়। বেশ দেরিতে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে উনি উলিপুর কলেজেরও ছাত্র ছিলেন। মাদ্রাসাপড়–য়া কিন্তু মেলার প্রতি হৃদয়ের টান- এমনটা আমি আর কারও মধ্যে দেখিনি।

সিদ্ধেশ্বরীর মেলার আরেকটা আকর্ষণ ছিল ‘পয়সা খেলা।’ পানিতে ভাসমান এনামেলের প্লেটের ওপর কয়েন ফেলতে হতো। কাজটা সহজ ছিল না। যারা কায়দা জানতো তারা ফেলতে পারতো। বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারীর পয়সা পাত্রে না পড়ে ছিটকে পড়তো পানির মধ্যে। পানিতে পড়লে সেই পয়সা ওদের। আর পাত্রের ওপর থাকলে কয়েনের দ্বিগুণ পয়সা নিক্ষেপকারীর। বেশ মজা পেতাম আমি। হবি মামা তো, শুনেছি, এক দু’দিন পরপরই মেলায় যেতেন পয়সা খেলতে। কিছু টাকা লাভ হলে ওখান থেকে সটকে পড়তেন। তারপর পাতলা সিরার স্পঞ্জের রসগোল্লা খেয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিতেন। আমি ওই ভাসমান থালার ওপর কয়েন ফেলতেই পারতাম না। মামা দেখিয়ে দিতেন কিভাবে ফেরতে হবে। তারপরেও পারতাম না। সাত-আটবার চেষ্টা করার পর একবার বোধ হয় পেরেছিলাম! হবি মামার পড়ার টেবিলে বেশ বড় একটা ড্রয়ার ছিল। রাজ্যের জিনিসপত্র থাকতো তাতে। মামা সেখানে টাকা-পয়সাও রাখতেন। আমি খেয়াল করতাম, প্রতিবার ড্রয়ার বন্ধ করে তালা লাগানোর পর মামা ওটা ২-৩ বার টেনে দেখতেন, ঠিকমতো লেগেছে কিনা। মামা হয়তো টাকা-পয়সা গুনছেন, আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি। পয়সা গোনা শেষ হলে একটা আধুলি দিয়ে বলতেন, নে; বিস্কুট খাইস!
হবি মামা কিন্তু মজার লোক ছিলেন। তার রসবোধ উল্লেখ করার মতো। তার একটা কথা আজও আমার কানে লেগে আছে। আমাদের স্কুলে পড়ার দিনগুলোয় কুড়িগ্রাম অঞ্চলে খুব অভাব-অনটন ছিল। শতকরা আশি জনই ছিল দরিদ্র। কোনও কোনও এলাকায় তার চেয়েও বেশি। আশি^ন-কার্তিক মাসে ভাতের অভাব ছিল নিদারুণ। খেতে না পাওয়ার বা একবেলা কোনও রকমে খেতে পাওয়ার ওই পরিস্থিতিকে বলা হতো মঙ্গা। মঙ্গার সময়ে প্রচুর লোক যবের ছাতু খেতো। অনেকেই গমের আটার রুটি খেতো। তা-ও একটা বা দেড়টার বেশি বরাদ্দ থাকতো না জনপ্রতি। খুমনি নামে এক দস্যি গরিব মেয়ে থাকতো পাশেই, পেছনের ওই পুকুর পাড়ের কুঁড়েঘরে। বারো/তেরো বছর বয়স। খুব বুদ্ধিমতী। ওর বাবা ছিল না। মা বাইর-বাড়ি গিয়ে কাজ করতো। এক বিকেলে হবি মামা একটা আধভাঙা চেয়ারে পেরেক মারছিলো। আমি কাছে বসে দেখছি। একটু পরে কোথা থেকে খুমনি এসে হাজির। হবি মামা বলেন, কি রে, কডে গেছলু?
খুমনি বলে, ক্যা?
খাইল-যে তোকে পুষ্করিণীর পাড়ত দেখনু না!
খুমনিও ছেলেদের সাথে একই লাইনে বসে বড়শি দিয়ে মাছ ধরে। মামা সে কথাই জিজ্ঞেস করেছিল। খুমনি সে কথার উত্তর দিলো না। হবি মামা এবার জিজ্ঞেস করেন, দুপুরে কি খাছিসরে, ভাত না রেকর্ড? মেয়েটা এবারও নিরুত্তর। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। কয়েক সেকেন্ড পরেই মনে হয়েছে, মামা রেকর্ড বলতে রুটি বুঝিয়েছেন। রুটি গোল। রেকর্ডের আকৃতিও গোল। হবি মামার কথা শুনে ময়েজউদ্দিন ভাই হাসছে। হাসছি আমিও। আমাদের হাসি দেখে হবি মামারও মুখে হাসি। খুমনি ততক্ষণে দৃষ্টির বাইরে।
মামা বাড়িতে দেখতাম সকাল সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে ভাত হয়ে যেতো। আটটা সোয়া আটটার ভেতর সবার খাওয়া শেষ। সাত সকালে উঠে জমির দাদার বউ বিরাট একটা হাঁড়ি বসিয়ে দিতো চুলায়। আমরা রংপুর শহরে থাকতাম। সকালে রুটি খাওয়ার অভ্যাস।
অতো সকালে ভাত খেতে একদম ইচ্ছে করতো না। আমি খেতাম কলা-ছাতু বা চিঁড়া-কলা। এক সকালের কথা। খাওয়া-দাওয়া শেষ। আবুল মামা অনেক সকালে উঠে কোথাও গিয়েছিলেন। ফিরতে ফিরতে দেরি হয়ে গেছে। নটার মতো বাজে। মামা মাদুরে বসে অনেকখানি ঝুঁকে ভাত খাচ্ছেন। আমি উঠোনে হাতলঅলা চেয়ারে বসে আছি। আবুল! আবুল! বলে ডাকতে ডাকতে লম্বা-চওড়া এক ব্যক্তি এসে হাজির। মুখে শের শাহ-এর মতো ঘন চাপ দাড়ি। মাথায় টুপি, গায়ে লম্বা পাঞ্জাবি। আমার পাশে একটা খালি চেয়ার ছিল। ওটাতে বসে পড়লেন উনি। বড়াইবাড়ি গ্রামে তার নিবাস। আবুল মামার কী রকম চাচা হন। তার মুখ সারাক্ষণ হাসি-হাসি। আর হাসি ছাড়া উনি কথাই বলতে পারেন না। উনার নাম, পরে শুনেছি, ছবেদ গোলজার। তো ওই লোক এটা-সেটা বলার পর এক সময় আমাকে জিজ্ঞেস করে, কী খাইছো?
আমি বলি, গমের ছাতু আর বিচিকলা।
ছবেদ গোলজার এখন বলে, বিচিকলা খাইছো? সর্বনাশ! আমি চমকে উঠি। তারপর বলি, সর্বনাশ কেন?
ছবেদ হাসি-মুখে বলে যায়, কারণ ওই বিচি থেকে প্যাটের ভিতরে গাছ হইবে!
আমি চিন্তায় পড়ে যাই। গাছ হবে? পেটের ভিতর চারা গজাবে! কিন্তু তা যে সম্ভব না সেটা আমার মাথায় খেলেনি। ফোর বা ফাইভে পড়ি। পরে যখন মাকে বিষয়টা জানাই মা হাসে আর বলে, ভয় খাছিস? দূর বোকা! উমরা তোর নানা হয়। মজাক কইরছে! আমার আপন মামা একজনই-আবুল হোসেন। খালা সাতজন। তখনও ছোট তিন খালার বিয়ে হয়নি। তার মানে নানার জামাই তখন পাঁচজন। এদের মধ্যে আব্বা শ্বশুরবাড়ি যেতেন খুব কম। সরকারি চাকরি করতেন। বেশি ছুটির সুযোগ ছিলো না। বাকি চারজন মাঝে মাঝেই শ্বশুরালয়ে বেড়াতে যেতেন। আমার খালুরা ছিলেন ফুর্তিবাজ মানুষ। যে কোনো উৎসবে, মেলায় তাদের উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। তারা ধামশ্রেণীতে এসে প্রতিবারই এক/দু’দিন থাকতেন। বৈশাখ মাসে সিদ্ধেশ্বরীর মেলার সময়টায় থাকতেন চার/পাঁচদিন। দলবেঁধে মাছ ধরতেন নানার পুকুরে। জোসের ঠেলায় তাদের মুখ থেকে বেরুতো আনন্দবোধক নানান বিচিত্র শব্দ ও শিস! আবার হা-ডু-ডু খেলাও ছিল। মামাবাড়ির পেছনের দিকের ওই পুকুর পাড়ে অনেকখানি জায়গা খোলা। বাচ্চারা খেলাধুলা করতো। ওই জায়গায় কাঠি দিয়ে সীমানা-দাগ তৈরি করে হা-ডু-ডু খেলতেন খালুমশাইরা। দু’জনের প্রতিপক্ষ দু’জন। কখনো কখনো তারা দু’চার জনকে সঙ্গে নিতেন খেলার সুবিধার জন্য। আমি তো ছোট মানুষ। আমি ছিলাম দর্শক। বালু প্রধান ওই মাটিতে খেলা সহজ ছিল না। প্রতিপক্ষের ঘরে গিয়ে ডু দেয়ার সময় পা পিছলে যেতো। আবার কাউকে আটকে ফেললেও ওই বালুর কারণেই যে বা যারা ধরেছে তাদেরকে টেনে নিজেদের সীমানায় এনে ফেলা সম্ভব হতো কখনো কখনো। মজার দৃশ্যই বটে!
এক/দেড় ঘণ্টা খেলার পরে খালুরা সবাই একত্রে পুকুরে নেমে পড়তেন। সবাই সাঁতার জানতেন। দু’একজন সাঁতারে ওস্তাদ ছিলেন। তারা সাঁতরে পুকুরের ওপাশটায় যেতেন; ফিরতেনও একইভাবে। আমার নানী তখন জীবিত এবং কর্মক্ষম। কাজেই জামাইরা যথেষ্ট আদর-আপ্যায়ন পেতেন। দুপুরে দেখতাম বড় বিছানার এক পাশে দস্তরখানা পাতা হতো। দস্তরখানা হচ্ছে মোটা কাপড়ের তৈরি অপ্রশস্ত ও লম্বা চাদর বিশেষ যার ওপর প্লেট-গ্লাস ইত্যাদি রেখে খাওয়া-দাওয়া হতো। বেশির ভাগ সময় আমিও বসতাম খালুদের সঙ্গে। সবার আদরের পাত্র হওয়ায় তারাই আমাকে ডেকে নিতেন। খাবার পরিবেশন করতো ছোট দুই খালা। আমি লক্ষ করতাম, মাছ বা মাংস ভরা চামচ ঘুরে-ফিরে যাচ্ছে বড়দের প্লেটের দিকে। শ্যালিকারা তাদের দুলাভাইদেরকে ভালো করে খাইয়ে আনন্দ পেতেন। নানার অঢেল সহায়-সম্পদ। নগদ পয়সারও অভাব ছিল না। সুতরাং আপ্যায়নে ত্রুটি হওয়ার কথা নয়। তারপরেও নানী পাশে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখতেন। হয়তো তার চোখে পড়লো, আমার প্লেট প্রায় খালি; প্লেটে তরকারিও খুব কম। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘কুলিসুম! উয়াক ভাত দে। আরো অ্যাকখান মাছের চাকা দে!’
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের গল্প এসব। এ দীর্ঘ সময়ে কত কী ঘটে গেছে আমাদের জীবনে! কত পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে চারপাশে! যে মামাবাড়িতে মাঝে মাঝেই যেতাম, আজ দু’চার বছরেও সেখানে একবার যাওয়ার সময় হয় না। তবে আমার মাথার ভেতর সেই ছবিগুলো এখনো ঝকঝকে। উলিপুরের ধূলিধূসর পথে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন হবি মামা। নজির মামা শীতের রোদে বসে গুড়-মুড়ি খাচ্ছেন। গামছা পরা দস্যি বালিকা খুমনি কুলগাছে উঠে ডাল ধরে ইচ্ছেমতো ঝাঁকাচ্ছে আর নিচে তাকিয়ে বলছে, বড়াই পড়ে নাই? পইড়ছে তো! ভালো করি উটকাও (খোঁজো)! শমসের মামার ছেলে ময়েজউদ্দিন, আমাদের ময়েজ ভাই, একটা তালপাখা হাতে টঙের ওপর বসে আছে। তার গা খালি। একটু আগে মাদ্রাসা থেকে ফিরেছে ক্লাস নিয়ে। কোথাও একটু বাতাস নেই। গাছের পাতা ছবির মতো স্থির। ঠাকুরবাড়ির মেলার পাশে, খোলা ময়দানে রঙবেরঙের বেলুন উড়ছে। সাপঘুড়ির লেজ উড়ছে! শিশুরা উল্লাস করছে। প্রজাপতি ঘুরছে বিস্কুট ফুলের ঝাড়ে।

Share.

মন্তব্য করুন