ভোর যে দেখেনি
সে দেখেনি কালের ছায়া।
সে দেখেনি রূপের খেলা।
যে রূপের মোহে পাগল সারা বিশ্ব।
সে যে লুক্কায়িত অন্ধকারের গভীরে! এখানেও আছে জীবন। জীবন নিয়েই ভাবতে হয়। একটি জীবন নিয়ে ভাবনা কি নতুন কিছু! না বোধ হয়। যারা সফল হতে চায় তারাই ভাবে জীবন নিয়ে। সবাই সাফল্যের পথ চায়। জানতে চায় কেমন করে আসে সাফল্য। কেমন করে জানান দেয় সাফল্যের উপস্থিতি। সবাই চায় সমস্যাবিহীন পথের ঠিকানা। আমিও চাই। ঘাসের বুকে শুয়ে যখন আকাশ দেখি। ভাবি কী বিশাল আকাশ! কী করে বুঝবো আকাশের সীমানা কোথায়। আকাশের রঙ কেমন। কেমন তার বলয়। কেমন করে ধারণ করা যায় আকাশকে। আকাশের বিশালত্বকে। ভীষণ ইচ্ছে জানার। উপলব্ধির। একটি জীবন বড় বেশিই সংক্ষিপ্ত। তাই মন খুঁজে বেড়ায় এর রহস্য। আনন্দ খুঁজে বেড়ায়। আকাশের বিস্তৃত বলয়ও যেনো কেবলই আনন্দ জাগায়। জীবনকে স্বপ্নময় করে তোলে। স্বপ্ন পূরণের দৌড়ে আকাশ চিরকালই সঙ্গী। খোলা আকাশের নিচে নিজেকে আবিষ্কারের সুখ অন্যরকম। হৃদয়ের গভীরে জেগে ওঠে এক গভীরতম সুখ। আকাশ বিভিন্ন রঙে নিজেকে মেলে ধরে তার বুকের কাছে। আকাশে কখনও কখনও টুকরো টুকরো মেঘের আনাগোনা চলে। যতদূর চোখ যায় কেবলই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। তুলার মতো মেঘগুলো যেনো মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। বেঁচে থাকার আশে নতুনত্ব চায় মানুষ। চায় নতুন পৃথিবীর খোঁজ। যেখানে থাকবে না কোলাহল। রইবে না কোনো শঙ্কা। কেবলই স্বপ্নরা বিভিন্ন রঙে সাজাবে জীবন। নতুন বৈশিষ্ট্য এবং নতুন সুন্দর আবর্তিত হবে। জীবনের এ প্রবাহ চিরকালের। যার সাথে মিশে আছি আমি আমরা।
তবে আনন্দই শুধু জীবন নয়। দুঃখও জীবনের অংশ। ফুল এতো সুন্দর তবুও তাতে কাঁটা থাকে। কখনও কখনও অন্ধকারের মধ্য দিয়েও পথ চলতে হয়। জীবনের চতুর্দিকে সবসময়ই আলোর দেখা মেলে না। অন্ধকারের ভয়াবহতা কখনো কখনো আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে। জীবন এমনই। হাসি-কান্নার মিশেল। রাতের অন্ধকারের পরেই আসে সূর্যের আলোরশিখা। যখনই জীবনের এ পাঠ সামনে এসে দাঁড়ায়- ভাবি কেমন করে আকাশ ডাকে। ডাকে কেবলই নিজের দিকে। সম্মোহিত মন রহস্যের ঘ্রাণ পায় যেনো। আকাশের উপর আছে আরও আকাশ। একটির ওপর আরেকটি এমন করে মোট সাতটি আকাশ। সৃষ্টিকর্তার কী অপার মহিমা। যতদূর চোখ যায় যেন শেষ খুঁজে পাওয়া যায় না। মন প্রশ্ন করে সহসা। আকাশের উপরের সে আকাশে কী আছে? কেমন তার অবয়ব। কেমন তার বিস্তৃতরূপ। আকাশ হলো ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাশূন্য পর্যন্ত বিস্তৃত। মহাবিশ্বের গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি যা কিছুই দেখি সবই আকাশের নিচে। এই রহস্যঘেরা আকাশের নিচেই আমাদের বেঁচে থাকা। দিন যায় রাত আসে। এভাবেই শেষ হয়ে আসে বছর। পরিবর্তন হয় ঋতুর। প্রকৃতির পরিবর্তনে মানুষের জীবন জীবিকার পথও বিভিন্নতায় ভাগ হয়ে যায়। শুধু আকাশ তার বিশালত্বে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাকে বুকে তুলে নিশ্চল হয়ে রয়।
হাজারো স্বপ্নে সাজানো একটি জীবন। কত কীই না হতে চায় মানুষ। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট। এমনকি স্বপ্ন পূরণে মানুষ চাঁদের দেশেও পৌঁছে গেছে। জেনেছে অন্তরীক্ষের অনেক কিছু। অনুসন্ধিৎসু মন কেবলই পরিণতির প্রত্যাশায় জাগ্রত। ঘুম থেকে জেগে ওঠা মানুষ যেমনটি সহসা দিক খুঁজে পায় না। তেমনি শুধু কল্পনায় ভেসে বেড়ানো মন তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পায় না। তার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনার। প্রয়োজন সব কিছুর জন্য নিজেকে তৈরি করা। যেমনটি ঋতুর পরিবর্তনে দেখি কতটা পরিবর্তিত আকাশ। শরতের আকাশজুড়ে থাকে শিমুল তুলার রেশ। যেন শরৎ ছড়িয়ে দেয় নিজেকে। বর্ষার কালো মেঘের কুণ্ডলী বরফের মতো সাদা হয়ে ওঠে। কোথাও উড়ন্ত পাখিদের মতো দল বেঁেধ। আবার কখনও বা ছেঁড়া কম্বলের মতো ছড়িয়ে পড়ে গোটা আকাশের বুকে। এমন করে স্বপ্নদেরও জোট বাঁধতে হয়। একত্রিত রূপে প্রকাশের আয়োজন করতে হয়। সমস্যা আসবেই। প্রতিকূলতা বিহীন জীবন কোনো জীবন হয় না। প্রতিকূলতার সাথে টিকে থাকাই জীবন।
সকলেই সুখ চায়। সাফল্যময় জীবন চায়। একটি মায়ের সাফল্য তার সন্তানের সাফল্যে। একটি বাবার সাফল্য তার পরিবারের ভরণপোষণে। একটি মেয়ের সাফল্য তার নিজের জীবনকে গঠনমূলকভাবে এগিয়ে নেয়াতে। একটি ছেলের সাফল্য বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে। এর বাইরেও আলাদা অলাদাভাবে একজন মা চায় নিজেকে পরিপূর্ণ করে তুলতে। তেমনি বাবা বা ছেলে মেয়েরাও। প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াতে চায়। পৃথিবীর রঙ রূপ কেমন তা দেখতে চায়। কিন্তু সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং জাতীয় জীবনের পরিসমাপ্তিতে একটি কথা গুরুতপূর্ণ- আমি যা চেয়েছি তাই কি পেয়েছি! আমরা সকলেই দেখি কেমন করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের শেষে আকাশের বুক থেকে আলো হারিয়ে যায়। কেমন করে আলোর রেখা শেষ হয়ে নেমে আসে অন্ধকার! আবার তারকার উজ্জ্বলতা পৃথিবীকে আলোর দিকে টানে। যখন রাতের আকশজুড়ে তারার ক্রমাগত ছুটে বেড়ানো দেখি। দেখি তারাদের সাথে সখ্যতায় মেঘেদের দলবেঁধে বেড়ানো। আবার মুহূর্তের ব্যবধানে পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। চলমান জীবনচিত্র কি এমনই নয়!
নিকষ কালো অন্ধকারে আকাশের হালকা নিয়ন আলোয় প্রকৃতি নিশ্চুপ। সমস্ত পৃথিবী ঘুমিয়ে থাকে। অথচ কী অপরূপ তারকার আলো। এ যেনো নিজেকে প্রকাশের আরেক রূপ। সৃষ্টির প্রতিটি কণা অন্ধকারের মধ্যেও আলোর ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই পাখিদের কলরবে প্রাণিকুলের ঘুম ভাঙে। চারিদিকে কিচিরমিচির শব্দ। মোরগের ডাক। এসবই মনে করিয়ে দেয়- নতুন দিনের আলোর খবর। নতুন স্বপ্ন দেখার দিন। কারণ জীবন মানেই এক সম্ভাবনার নাম। কৈশোর থেকে বৃদ্ধকালীন সফরের চড়াই উতরাই এ সম্ভাবনাময় নতুন পৃথিবীর হাতছানি। নতুন সৃষ্টির উচ্ছ্বাস। যেখানে নতুন সৃষ্টির আনন্দ নেই সেখানে জীবনের সৌন্দর্যও থাকে না। এগিয়ে চলা কেবলই অগ্রগতির আনন্দকে উন্মোচিত করে। সম্ভাবনার নতুন আকাশজুড়ে আশার আলোরা ঝিলিক দেখাবে। শুধু মানুষকে গাছের ন্যায় দাঁড়াতে জানতে হবে। স্থির হওয়া শিখতে হবে।
প্রতিযোগিতার দৌড়ে সকলেই এগিয়ে থাকতে চায়। সেরা কাজটি করতে চায়। সে লক্ষ্যে আশ্চর্যরকম প্রবাহে মানুষের মন ছুটে চলে। ক্রমাগত চলে অবাক রহস্যের দ্বারে। মানুষ চায় তার কাজটি ব্যতিক্রম হোক। হোক সবার থেকে সেরা। এর জন্য যে জীবন সাম্রাজ্যে বিচরণ করবে তার কাজটিই সেরা হবে। কিন্তু কোন কাজটি সেরা? সেরা কাজটি উপলব্ধির ক্ষমতা থাকতে হবে। সেই জ্ঞানের দ্বারে পৌঁছাতে হবে। জীবন এক সীমাহীন সমুদ্রের মতো। যেখানে উপচে পড়া ঢেউ আছে। আছে প্রশান্ত নীলয়। সেই সমুদ্রের ঢেউ দেখে বিচলিত ব্যক্তি কখনও সঠিক সময়ে তীরে পৌঁছাতে পারবে না। তেমনি সঠিক জ্ঞানের উপলব্ধি ব্যতীত কেউ তার সেরা কাজটি করতে পারবে না। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মতো আরো একটি কবিতা রচনা করতে পারেননি। কিন্তু একটি জীবনে একটি ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনা করেছেন এটাই আনন্দের। এটাই একজন কবিকে সার্থক করে তোলে। তেমনি একটি জীবনে অনেক কাজ হবে। সবটাই সেরা হবে না। শুধু জ্ঞানের ভিতর নিজেকে ধরে রেখে চলতে হবে। নিজের জন্য কাজ করতে হবে। জানতে হবে। প্রকাশ করতে হবে। তাহলেই সেরা কাজটি একদিন নিশ্চয়ই হবে।
আমি একজন মানুষ। কিন্তু মানুষ হিসেবে মানুষের মর্যাদার বিষয়ে কতটা সচেতন আমি! চারিদিকে আজ অন্যায়, নিপীড়নের মহোৎসব। মানবতা ভূলুণ্ঠিত। খেটে খাওয়া মানুষের আর্তচিৎকারে বাতাস ভারী। পরাধীনতার শিকলে সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত। এমনই যখন অবস্থা তখন করণীয় কী? কী সে কাজ যা আমাদেরকে মানুষ করে তুলবে। আকাশ ভেঙে যখন ঝড়ো হাওয়া আরম্ভ হয়। টানা বর্ষণে জনজীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ। ক্রমাগত বর্ষণে গৃহপালিত পশুদেরও বেঁচে থাকা হয়ে ওঠে কষ্টকর। কখনও কখনও গোটা দেশ ডুবে যায় বর্ষায়। বন্যার সৃষ্টিতে কতশত মানুষের ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ফসলাদি ডুবে কৃষকের চোখের পানি নদীতে রূপ নেয়। মানুষের স্বপ্ন ভেঙে দেয় বর্ষা। ভাঙে মানুষের সাজানো বাগান। তবুও মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়। আবার স্বপ্ন দেখে নতুন ভোরের। তেমনি অন্যায় অত্যাচার যতই বাড়–ক তার শেষ আছে। প্রয়োজন সঠিক কথা বলার। পাশের মানুষটির কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করা। সমব্যথী হওয়া। আত্মবিশ্বাসের মতো আনন্দ আর কিছুতেই নেই। একজন মানুষ যখন আত্মবিশ্বাসী হয়ে কিছু বলেন বা লিখেন তার গুরুত্ব অন্যরকম। আত্মবিশ্বাসী না হলে চিন্তার পরিপক্বতা আসে না। গভীরতা না নিয়ে কোনো কাজ করলে তাতে ব্যর্থতাই বড় হয়ে ওঠে। সাফল্যময় জীবন পেতেও আত্মবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন।
সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ মানুষকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরে নিয়ে যায়। দেখে মুগ্ধ হয়ে ওঠে মন। কখনও কখনও বিস্মিতও হয়। সুন্দরের ক্ষমতা অনেক। মানুষ সুন্দরকে পেতে ধন- দৌলতকে তুচ্ছ মনে করে। প্রকৃতির যে রূপ আমরা দেখি তার পুরোটাই সুন্দরে আবৃত। মানুষ সুন্দর। মানুষের সৃষ্টিও সুন্দর। তেমনি সুন্দর মানুষের মনও। শুধু দেখতে হবে আমরা কে কতটা সুন্দরকে ধারণ করি। কতটা পারি এর পরিচর্যা করতে। সুন্দরের সাধনা করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানুষই সুন্দরের চর্চা করে। প্রচার-প্রসার ঘটায়। জগতের যত অনাচার তা কেবল সুন্দরের কাছেই পরাজিত। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সব রহস্যের মধ্যে সুন্দর মিশে আছে। মানুষই এর প্রকৃত হকদার। সুন্দরকে আরো সুন্দরতায় প্রকাশ করার প্রতিনিধি। মানুষকে ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসা দিয়ে শত্রুর মনও জয় করা সম্ভব। অন্যায়-অবিচারের দাবানল ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। যা একে অপরের উন্নতির পথে বাধা। কেউ কারো কল্যাণে আনন্দিত নই। এ জায়গা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে হবে। মানুষের মনের কষ্ট-হাহাকার শুনতে হবে। তাদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে হবে। যা একমাত্র ভালোবাসাতেই সম্ভব। সৃষ্টির আরম্ভ থেকেই যেমনটি আকাশ তার সৌন্দর্যের ডালি ছড়িয়ে দিয়েছে সর্বত্র। নেই কোনো অভিযোগ। নেই অভিমান। আকাশের বিশাল বুকের মতো হৃদয়কে প্রশস্ত করলেই মুছে যাবে গ্লানি। এটিই বিশ্বাস। বিশ্বাসের গভীরতায় তৈরি হয় ভালোবাসা। মানুষের প্রতি হৃদয় নিঃসৃত ভালোবাসায় রচিত হবে আগামীর সুন্দর পথ। এটিই হোক নতুন স্বপ্নের গান।