পৃথিবীর ছোট পাখি হামিংবার্ড। ছোট্ট সুন্দর এই পাখিটার মোটে দুই গ্রাম। এদেও দৈর্ঘ্য প্রায় দুই ইঞ্চি হয়। পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ এর অধিক প্রজাতির হামিংবার্ড রয়েছে। যার মধ্যে অত্যন্ত এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি হলো বি হামিংবার্ড (Bee hummingbird) বা মৌমাছি হামিংবার্ড। দ্রুত, চঞ্চল এবং ছোট পাখিটা সংরক্ষণের ২রা সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব হামিংবার্ড দিবস। হামিংবার্ড দিবসে চলুন জেনে নিই পাখিটি সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য-

পিছনের দিকে উড়তে পারে হামিংবার্ড :
উড়ন্ত প্রাণীদের মধ্যে হামিংবার্ড পিছনের উড়তে পারে। তাদের ডানার গঠন এমন যে তারা সহজেই পেছনের দিকে উড়তে পারে। ছোট্ট এই পাখিটা সেকেন্ডে ১৫ থেকে ২২ মাইল গতিতে উড়তে পারে। হামিংবার্ডের রোটেটর কাফ তাকে পিছনের দিকে উড়তে সাহায্য করে। তাদের ডানাগুলো সেকেন্ডে ২০০ বার নাড়াতে পারে। তাদের ডানা শুধু পিছনে নয় ডানে, বামে সবদিকে উড়াতে পারে। ডিম ফোটার দুই সপ্তাহ পর তারা উড়তে সক্ষম হয়।

হামিংবার্ড হাঁটতে পারে না :
হামিংবার্ডের হাঁটু থাকে না। তাছাড়া তাদের পা খুবই ছোট। তাদের দুর্বল এবং ছোট পা দিয়ে চলাফেরা করতে পারে না। তবে হামিংবার্ড দাঁড়াতে পারে। এরা উড়ে উড়েই চলাফেরা করে। যেখানেই যায় উড়ে যায় এবং খুব দ্রুত পাখা ঝাপটায়। হামিংবার্ডের চারটি আঙ্গুল থাকে। তিনটি সামনের দিকে একটি পিছনের দিকে। যা দিয়ে কোনো কিছুকে আঁকড়ে ধরতে পারে তারা। তারা তাদের পা ব্যবহার করে পালক ঝাড়ার জন্য এবং পোকামাকড় ধরে খাওয়ার জন্য। তবে হামিংবার্ড হাঁটতে পারে না।

হামিংবার্ড কেন হামিংবার্ড? :
ছোট্ট এই পাখিটার নামকরণের পিছনে আছে তাদের চঞ্চল ডানা। হামিংবার্ড খুব দ্রুত ডানা ঝাপটাতে পারে। এরা সেকেন্ডে প্রায় ৮০ বারের মতো ডানা ঝাপটাতে পারে, যেহেতু এরা হাঁটতে পারে না, তাই চলাফেরায় ডানাই তাদের অবলম্বন। এই অধিক ডানা ঝাপটানোর ফলে এক ধরনের শব্দ তৈরি হয়। তাদের ডানার গুনগুন শব্দকে হামিং বলা হয়। ডানার এই শব্দের কারণে পাখিটির নাম হামিংবার্ড।
সবচেয়ে ছোট পরিযায়ী পাখি :
পৃথিবীর দীর্ঘ দূরত্বের পরিযায়ী পাখি হামিংবার্ড। দিনে ২৩ মাইল পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে হামিংবার্ড। এবং তাদের উড়ার গতি ২০-৩০ সঢ়য। তারা মেক্সিকো উপসাগর পাড়ি দেয়ার সময় একসাথে ৫০০ মাইল পাড়ি দেয়। বছরে দু’বার আলাস্কা ও মেক্সিকো ভ্রমণ করে তারা। যা প্রায় ৩৯০০ মাইল। বসন্ত এলেই তারা অভিবাসন শুরু করে। তাদের টেক্সাস, লুইসিয়ানা এবং উপসাগরীয় উপকূল বরাবর অন্যান্য জায়গায় জানুয়ারির শেষ থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে দেখা যায়।

পিং পং বলের সাইজের বাসা :
হামিংবার্ডের বাসা বোতলের ক্যাপ অথবা পিং পং বলের আকারের হয়ে থাকে। বেশির ভাগ বাসার ব্যাস দেড় থেকে দুই ইঞ্চি হয়। বাসাগুলো ছোট হলে এগুলো তৈরিতে মা পাখিকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। কেননা তার বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য বাসা বুনন জরুরি। তারা এমন স্থানে বাসা তৈরি করে যাতে সূর্য, বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া এবং শিকারি থেকে নিরাপদে থাকতে পারে। মাটি থেকে ৫-১০ ফুট উচ্চতায় অথবা লম্বা গাছ থাকলে ৬০-৯০ ফুট উচ্চতায় বাসা তৈরি করে। তাদের বাসা তৈরিতে কাঁটাযুক্ত স্থান খুব প্রিয়। তারা তুলার আঁশ, বাকলের টুকর, পালক ইত্যাদি ব্যবহার করে। তাছাড়া মাকড়সার জালকে সুতা হিসেবে কাজে লাগায় বাসা বুনতে। যেহেতু পৃথিবীর ছোট পাখির বাসাটি খুবই ছোট তাই সহজে চোখে পড়ে না তাদের বাসা।

Share.

মন্তব্য করুন