৪.
‘নানা, নানা তুমি সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছ?’
‘যাবে নাকি আমার সাথে সুহামনি?’
‘না, এখন যাবো না। নানা শোনো না, তোমাদের পুরান বাড়ির আমার নতুন বন্ধুদের সাথে মিলে জোলাভাতি খেলবো। না না এবার মিছেমিছি বালুর পোলাউ, আর শুকনো পাতার কোর্মা না, বলে, ‘হি হি করে হাসতে থাকে সুহা। ’
‘শাহান একটা লাঠি নিয়ে তরবারির মতো করে সাঁই সাঁই ঘুরাচ্ছে। ঠিক কার্টুন ছবি লাড্ডুর মতো করে। নানার দিকে এবার তাকিয়ে বলে, ‘ওরা আমাদের দাওয়াত দিয়েছে।’
সুহা বলে, সকালে রামিসা ফারহা আর সাফা এসেছিল আম্মুর কাছ থেকে একশত টাকা নিয়ে গেছে। ওরা চিকেন বিরিয়ানী করবে, আমি পেঁয়াজ, শশা, ধনিয়াপাতা কাটবো। এক্ষুনি যেতে বলেছে।
‘বুঝেছি, কিন্তু আমার দাওয়াতটা বাদ পড়লো কেন? আমাকে বাদ দিয়ে ওরা জোলাভাতি করবে না-না তা হবে না। ওদের বল আমাকে দাওয়াত দিতে, নইলে সব ভণ্ডুল করে দেব। হ্যাঁ, ভণ্ডুল… শাহান দুপুরের পর থেকেই পাঞ্জাবির ওপর কটি পরে তৈরি। নানার কথা শুনে প্রশ্ন করে, ‘নানা ভণ্ডুল যে বল্লে- এর অর্থ কী!’
সুহা নানার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘নানা, সকালে তোমার ঘরের পিছনের বাগান থেকে লাকড়ি কুড়িয়েছি। জোলাভাতির লাকড়ি নাকি কুড়িয়ে নিতে হয়, তাহলে আসল জোলাভাতির মজা পাওয়া যায়। সাফা আমার সাথে ছিল। ও না গাছে চড়তে পারে। একদম উপরে উঠে যায়…
দূর থেকে মাইকে ঘোষণা করছে, ‘ভাইসব, ভাইসব, খিলপাড়া ব্লাডডোনেট ক্লাবের পঞ্চবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এক রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। স্থান-খিলপাড়া প্রাইমারি স্কুল মাঠ, সময় বিকেল চার ঘটিকা…
শাহান নানার পাঞ্জাবির কোনা টেনে ঝাঁকি মারে, ‘নানা, নানা, ভণ্ডুল কাকে বলে- বল্লে না তো!’
‘আমি ফিরে আসি, দেখবে ভণ্ডুল কাকে বলে। আমার পুরানো বাড়িতে জোলাভাতি আর আমি দাওয়াত পাবো না তাই কী হয়? একদম ভণ্ডুল করে দেব সব।’
মাইকের ঘোষণা শুনে সুহা লাফিয়ে উঠে। ‘নানা, নানা তোমার নাম বল্লো যে, তুমি কি বিশেষ অতিথি? বাহ্ কি মজা, কি মজা! সুহা তার আম্মুকে ডাকে ‘আম্মু, আম্মু শুনেছ, নানা অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি। এবার নানু নানু হাঁক মারতেই, ‘নানু বল্লেন, তাতে আমার কি? আমাকে কোন দিন নিয়েছে না দেখিয়েছে উনি নাকি কোথায় কি করেন…।’
‘কি করি মানে! চিনলে না হে চিনলে না, মর্যাদা আর কাকে বলে। ঘরের বের হলে দু’দশজনে মান্য করে।’
‘বুঝি, বুঝি, দাড়ি পাকা হলে মানুষ এমনিতেই মান্য করে।’
‘ ঠিক বলনি, মানুষ যখন নিজেকে নিজে চিনতে পারে, তখনই অন্যেরা… যাক তোমাদের হলো?’
‘ দিচ্ছি,’ ‘নানুর গলার আওয়াজ শোনা যায় দোতলার ঘরে।’
সুহা, শাহান শোন, এই যে শুনলে খিলপাড়া ব্লাড ডোনেট ক্লাব। কি শাহান তুমি মনে হয় মাইকের ঘোষণা খেয়াল করনি- তাই না!।’
‘হ্যাঁ নানা, কি যেন কি বল্লো-’
তাহলে শোন মনোযোগ দিয়ে, ‘খিলপাড়া আমাদের গ্রামের নাম। আমাদের বাজারের নাম খিলপাড়া বাজার। সেই বাজারে, খিলপাড়া ব্লাড ডোনেট ক্লাব। ডোনেট মানে দান করা, ব্লাড ডোনেট মানে?’
সুহা চেঁচিয়ে উঠে বলে নানা আমি হাত তুলেছি, ‘রক্ত দান করা।’
‘ঠিক বলেছ সুহামনি। ওদের সদস্য সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। এ এলাকার ছেলে-মেয়ে, মানে ধর ছাত্রছাত্রী, কৃষক, রিক্সাওয়ালা মানে খেটে খাওয়া দিনমজুরও। কেউ অসুস্থ হলে রক্তের প্রয়োজন হলে ওরা বিনি টাকায় মানুষের জন্য রক্ত দান করে। কি মহৎ কাজ তাই না শাহান ভাইয়া?’
নানা ও বুঝবে না। আমি বুঝি অনেক বড় মহৎ কাজ। সুহার কথার প্রতিবাদ করে শাহান, ‘আমিও বুঝি মহৎ কাজ।’
ক্লাবের সদস্যরা রাস্তার পাশে তালগাছ, আমগাছ, কাঠগাছও লাগিয়েছে পুরো এলাকায়। ওরা মাদক মানে নেশা থেকে এলাকামুক্ত রেখেছে এবং নিজেরা শপথ করেছে কোন দিন মাদক নিবে না এমনকি সিগারেটও না।
হঠাৎ শাহান হাতের লাঠি হাঁকিয়ে দৌড়ে যায় বাগানে, সুহাও শাহানের পিছু পিছু ছুটে। দেখে শাহান একটা ব্যাঙকে লাঠিপেটা করার জন্য দৌড়াচ্ছে। নানা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দুজনের সামনে দাঁড়ান।
‘কি করছ নানাভাই ওটাকে মেরো না। ব্যাঙ আমাদের উপকারী বন্ধু। না না মেরোনা মেরোনা ভাইয়া।‘
শাহান একটু রেগে আছে, বলে ওটা আমার সামনে দিয়ে লাফিয়ে গেল কেন! ওটাকে বাড়ি মেরে একদম মেরে ফেলবো, বেয়াদব-’
সুহা হি হি করে হেসে ওঠে। ‘কি বল্লে? ওটা কি শাহানকে চিনে, না নানাকে?’
‘শোন, ওটা আমাদের অনেক অনেক উপকার করে। নানা ওর মাথায় আদর করে কথাটি বলেন। সুহা হাসি থামিয়ে বলে, ওটা দেখতে খুব বিশ্রী। ব্যাঙ ঘেঙর ঘেঙ। ওটা কি করে উপকারি হয়?’
নানা বল্লেন, শোন সুহামনি তোমাদেরকে মশা দিনে-রাতে কামড়ায়?’
‘হ্যাঁ কামড়ায় তো। আজ সকালে নাশ্তার টেবিলের নীচে আমার পায়ে দুই তিনটা মশা কামড়ে দিয়েছে-’
‘আসলে মশাটাই বেয়াদব। তাইতো তোমরা দু’হাত দিয়ে থাপ্পড় লাগাও পিষে ফেল। ছোট প্রাণী হলেও খুব ভয়ানক। অনেক অনেক বিপজ্জনক অসুখ বয়ে আনে। এবার আসল কথা শোন, এই একটা ব্যাঙ প্রতিদিন তিন হাজার মশা বা মশার ডিম খায়। ক্ষতিকর নানান পোকা মাকড় খায়। আমাদের পরিবেশ সুরক্ষা করে। এই যে পাখিগুলো দেখছ ওরাও পোকা মাকড় খায় বলেই আমরা ফল-ফলাদি, শস্য ঘরে তুলতে পারি।’
সুহার নানা হাঁক মেরে বলেন, ‘কই তোমাদের হলো?’
‘জ্বী বাবা আসছি-’
‘সুহার আম্মু ইয়া বড় একটা কাপড়ের ব্যাগ টেনে নিয়ে আসে বাইরে। সুহা, শাহান তো অবাক, আম্মু আবার এসব কি করছে। সুহা গাট্টিটা টেনে নাড়াতে পারে না নানার দিকে তাকায়
‘বুঝেছি, জানতে চাইবে এখানে কী আছে কোথায় নিচ্ছি?’
এরি মধ্যে একটা অটো ঘরের সামনে চলে এসেছে নানাকে নিতে। অটোর ড্রাইভার গাট্টিটা টেনে তুলে নেয় গাড়িতে। নানা বলেন, শোন এখানে পুরাতন কাপড়, অবশ্য কিছু হাফ নতুনও আছে, বুঝেছ?
‘অর্ধেক বুঝেছি। কোথায় নিচ্ছ, কি করবে খোলাসা কর নানা? যেন সুহার হুকুম-
সুহা আবার বলে, ‘তুমি বাজারে বিক্রি করবে?’
‘নানা হেসে বলেন, হ্যাঁ বিক্রি করে তোমাদের জন্য জিলাপি আর রসমালাই নিয়ে আসবো।’
‘কি বল্লে? সত্যি? তুমি হকারি কর? নানু, নানা এসব কি বলছে?’
‘তোমার নানা খিলপাড়া হাটে এসব কাপড় বিক্রি করে তোমাদের জন্য গরম গরম বাতাসা নিয়ে আসবে, আর আমার জন্য এক বিড়াপান আর মুড়ির মোয়া, মচমচিয়ে খাব।’
‘আম্মু, এসব কি হচ্ছে? তুমি শেষমেষ নানাকে পুরাতন…’
‘সুহার আম্মু এবার ফিক্ করে হেসে উঠে। সুহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, ‘তোমার নানা এসব কাপড় ব্লাডডোনেট ক্লাবের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দিয়ে আসবে। গ্রামে অনেক গরিব মানুষ আছে ওরা যার যার সাইজ মতো, পছন্দ মতো কাপড় বাছাই করে নিয়ে যাবে- কোনো টাকা দিতে হবে না।’
‘তাই বলো, আমি তো ভেবেছি এ গ্রামে কোনো গরিব মানুষ নেই।’
‘সুহার কথার জবাব দেয় তার নানু, ‘আছে আছে বাংলাদেশের সব গ্রামেই গরিব মানুষ আছে, কেউ হাত পাতে, কেউ অসহায়ত্ব গোপন করে। তাদের প্রতি আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে-’
‘তাহলে আমার কত্তো কাপড়, দু’তিনটা রেখে বাকিগুলো দিয়ে দাও আম্মু-’
আম্মু বলেন, ‘কয়েকটা দিয়েছি, শাহানের, তোমার আমার তোমার বাবার, আমার মা-বাবারও। তোমাদের নানা আরো কিছু নতুন কাপড় কিনে দিবেন, তোমার বাবাও টাকা দিয়ে গেছেন-’
‘তাই! এতো কিছু আমাকে জানাওনি কেন।
তোমার জমানো যে টাকা আমার কাছে ছিল তাও দিয়ে দিয়েছি, ভাবছি পরে তোমাকে দিয়ে দেব।’
‘না, না দিতে হবে না, ভালো করেছ মামনি।’ সুহা, ‘নানু, নানা, আম্মু দি গ্রেট’ বলতেই শাহান লাফাতে থাকে। নানার অটো শো শো করে এগিয়ে যায়।’

পরদিন-
সুহা সকাল থেকেই নানাকে খুঁজে পাচ্ছে না। শাহানও খুঁজছে নানা কোথায়? সকালে নাস্তা খাওয়া হয়েছে এক ঘণ্টারও বেশি হবে। প্রতিদিন নাস্তা খেয়ে ওরা নানার সাথে রোদে যায়, কখনো ঘরের পেছনে গিয়ে লালশাক, ধনিয়াপাতা তুলে আবার ফুলকপিও কেটে নেয়। ইজানও দোতালা থেকে নিচে নেমে এসেছে শীতের পোশাক পরে। গত রাতে বেশ শীত পড়েছিল। নানু রাতে সুহা, শাহানের গায়ে আরেকটি কঁাঁথা জড়িয়ে দেন। নতুন কাঁথায় রাতে শীততো লাগেনি বরং বেশ করে ওম ওম ভাব এসেছিল। সুহাতো হি হি হি করে খুব আরামের হাসি হাসছিল। সুহা, শাহান ওরা এসেছে নানা বাড়ি, ইজান এসেছে দাদা বাড়ি। ওদের বাবা মায়েরাও এসেছে শীতের ছুটি কাটাতে।
সুহা বানিয়ে ছড়া কাটে-
‘শাহান-সুহা নানা বাড়ি
ইজান এলো দাদা বাড়ি
সকাল বিকাল কাড়া কাড়ি
না-দা’র দাড়ি-নাড়া-নাড়ি’
হি হি করে হাসে শাহান। সুহা এবার প্রাইমারি শেষ করে, ক্লাস সিক্সে উঠবে। শাহান ভর্তি হবে নতুন স্কুলে। ওর স্কুল ব্যাগ নিজেই পছন্দ করে কিনেছে মায়ের সাথে। স্কুল ব্যাগে অ-আ-ক-খ কার্টুন করে লেখা। ইজানের বয়স সবেমাত্র তিন বছর। ওতো মার কাছে মুখে মুখে পড়ে অ-আ, দাদির কাছে আলিফ বা-তা, দাদার কাছে ইল্লাল্লাহ।
ওরা গ্রামে এসেছে এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেছে। সবাই মিলে বেশ মজা হছে প্রতিদিন। সকালে সুহার নানু, ডালে চালে মিশিয়ে খিচুড়ি, আর ডিম ভাজি দিয়ে নাশ্তা দিয়েছেন সাথে জলপাইয়ের আচার। নানু বল্লেন, এই যে জলপাই খাচ্ছ তোমরা গাছটি আমিই লাগিয়েছিলাম ক’বছর আগে। এবারই প্রথম জলপাই ধরেছে।
সুহার আম্মু আর ইজানের আম্মু আচার চেটেপুটে খয়ে বলে, ‘মা আমাদের জন্য বানিয়েছেন? ঢাকায় নিয়ে যাব। খুব মজা হয়েছে।’
নানু মজা করে বলেন, ‘প্রথমবার জলপাই ধরলেও তোমাদের কিসমত ভালো। অনেক ধরেছে জলপাই। আমি চার বৈয়াম আচার করে রেখেছি তোমাদের জন্য।’
আম্মুরাতো মহাখুশি। তাঁদের খুশি দেখে সুহা, শাহানও মিটি মিটি হাসে। গতকাল সকালে ওরা নানার সাথে ঘরের পেছনের খেত থেকে লাল শাক তুলেছে, ইজানও গিয়েছিলে খেতে। ও ধনেপাতা ছিড়ে সুহার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, ‘সুহাপু, সুহাপু, এই নাও।’ দু’কদম এগিয়ে উঁচু আলে পা ফেলতেই পড়ে যায় নিচে। একটু ভ্যা করে কান্না করে এদিক-সেদিক তাকিয়ে দেখলো কারো চোখে পড়েছে কিনা! সুহা, শাহান বুঝতে পেরে মুখ ঘুরিয়ে রাখে, যেন ও যে খাদে পড়েছে কেউ দেখতে পায়নি। ইজান নিজে নিজেই দাঁড়িয়ে যায়। এবার সুহা মিটমিটি হেসে ওর পেছনে লেগে থাকা মাটি ঝেড়ে দেয়।
নানু ওদের ডেকে বলেন, ‘চল আমরা ঘরের পেছনে যাব।’ নানুর হাতে একটা লম্বা বাঁশের কঞ্চি। নানু সুহার হাতে বড় একটা গামলা আর শাহানের হাতে একটা ছোট গামলা ধরিয়ে দেন।
ইজান ওদের যেতে দেখে ভ্যা ভ্যা কান্না জুড়ে দেয়। নানু বলেন, ‘দাদু, তুমি ওখানে যেতে পারবে না। ওখানে বেশ জঙ্গল, কাঁটা আছে ব্যথা পাবে?’ ইজানের আম্মু ওকে নিয়ে ঘরের ভেতর যেতে চায়, ও কিছুতেই যাবে না।
ইজান হঠাৎ মায়ের কোলে মোচড় মেরে বলে, ‘সুহাপু হেলফ্ হেলফ্ প্লিজ।’
দাদি হেসে ফেলেন, বলেন, ‘সুহাপু ওকে হেলফ্ কর।’ সুহা হাসতে হাসতে ইজানকে কোলে নেয়। ওর আম্মু ওর বাড়ানো হাতে একটা পলি ব্যাগ বাড়িয়ে দেয়। ইজান ওটা ছুড়ে ফেলে বলে, ‘বাটি দাও বাটি।’
ইজানের দাদি বাঁশের কঞ্চির মাথায় ঢোটা বেঁধে বীচিওলা সীম পাড়তে থাকেন। সুহা, শাহান সে সব কুড়িয়ে গামলায় ভরে নেয়। ইজান মায়ের কোল থেকে গড়িয়ে নিচে নেমে যায়। ‘সুহাপু আমাকে দাও, আমাকে দাও’ বলে ওর বাটিটা এগিয়ে দেয়। ইজানের গামলা ভরে যায়, ও কি মজা কি মজা বলে লাফিয়ে উঠতেই বাটির সব সীম নিচে পড়ে যায়। ওর কান্না শুরুর আগেই সুহা ওর বাটিতে আবার এসব তুলে দেয়।
ইজানের দাদি সীম পাড়তে পাড়তে বলেন, ‘তোমাদের বাবাদের খুব পছন্দ বীচিওলা সীম।’ ইজানের আম্মু বলেন, ‘শুধু কি ওদের-আমারও খুব পছন্দের।’ সুহা-শাহান একই সাথে বলে, ‘আমরাও খাব।’ ইজান মার দিকে তাকিয়ে বলে ‘আমিও খাবু আম্মু।’
ইজানের দাদি বলেন, ‘আজ হবে কইমাছ ভাজি, কপি আর আলু ভাজি আর শিং মাছ দিয়ে সীমের তরকারি। সবাই খাবেতো মজা করে।’
সুহা হাত তুলে বলে ‘ইয়েস নানু।’ তারপর শাহান বলে, ‘আমিও খাব।’ ইজান হাত তুলে ধরেছে কি বলবে বুঝতে পারে না। সুহা শিখিয়ে দেয় বলে, ‘আমরা সবাই মজা করে খাব।’
সুহা দেখে সীম গাছের পাশে একটা লেবু গাছ। অনেকগুলো লেবু ঝুলছে গাছে। ও চিৎকার করে বলে, ‘নানু আমি লেবু পাড়বো।’
দাঁড়াও, বলে নানু এগিয়ে যায়। কঞ্চিটা গাছে ঝুলিয়ে রেখে। নানু বলেন, ‘লেবু গাছে কাঁটা আছে, সাবধানে ছিঁড়তে হয়। দাঁড়াও আমি ছিড়ে দিছি।’
নানু সুহার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘বছর দুই আগে লেবুর চারাটা লাগিয়েছি।’
সুহা চোখ কপালে তুলে বলে, ‘এতো লেবু নানু?’ নানু বলেন, ‘বলো মাশাআল্লাহ্?’
নানু লেবু চারটা ছিড়ে সুহা, শাহানের গামলায় দুটো করে রাখেন, ইজান ছুটে এসে বলে, দাদু দাদু আমাকে দাও। আমাকে দাও। দাদু আরো দু’টো ছিড়ে ইজানের বাটিতে রাখেন। ইজান খুশি হয়ে মায়ের দিকে তাকায়।
সীমের লতায় পেঁচিয়ে সুহার হাতের গামলা কাত হয়ে সীমগুলো পড়ে যায়। ইজান লাফাতে লাফাতে বলে ‘সুহাপু, সুহাপু ফেল, বলতে বলতে তার নিজের বাটিটাও পড়ে যায় নিচে।
নানু বলেন, চল এবার সাজনা পাতা পাড়তে হবে। সুহার আব্বু সাজনা পাতার ভর্তা খেতে চেয়েছে। নানু কঞ্চিটা নিয়ে পাশেই সাজনা গাছের ছোট ছোট ডাল ভেঙে পাতা খাসিয়ে নেন। বুঝলে তোমরা, ‘সাজনা ফল, পাতা, বহু রোগের ওষুধ। ঘরের পেছনে পেঁপে গাছের সারি দেখছ, তোমার নানা আর আমি লাগিয়েছি। প্রতিদিন এক দুইটা করে পাকা পেঁপে পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে কাঁচা পেঁপে ডাল দিয়ে রান্না করি, তোমাদের নানা-দাদার প্রিয় তরকারি।’ (চলবে)

Share.

মন্তব্য করুন