টুকটুকির দাদু ঘরের সব জিনিস ঝেড়েমুছে গোছাচ্ছেন আর হেসে হেসে কাজের লোককে বলছেন, তাড়াতাড়ি কাজ কর, পরী এসে গেলো! পরী আসার আগে সব ধুয়েমুছে ঝকঝকে তকতকে করে রাখতে হবে। একটু ধুলো-ময়লাও কোথাও না থাকে।
টুকটুকির তো খুব আনন্দ হচ্ছে, তার ছড়ার বইতে পরীর ছবি আছে। লাল জামার উপরে কী যে সুন্দর ডানা, চোখ ফেরানো যায় না। আজ তেমনি এক পরী বাড়িতে আসবে! কোথায় সে বসবে, কতক্ষণ থাকবে, আকাশ থেকে নেমে কোন বারান্দা দিয়ে ঘরে ঢুকবে সে কথা একবারও বলছে না। টুকটুকি বারবার তাদের পাঁচতলার ফ্ল্যাটের চারদিকের বারান্দায় উঁকি দিয়ে খেয়াল রাখছে।
বাড়িতে সবার আজ আনন্দ। মা-বাবা দুপুর বেলায় বেরিয়ে বিকেলেই ফিরে এলো একগাদা ছোট্ট ফ্রক আর ছোট তুলতুলে রঙিন বালিশ, তোশক, কম্বল, মশারি নিয়ে। টুকটুকির জন্যও নতুন জামা আর চকোলেট এনেছে। ফিনফিনে খাঁচার মতো গোলাপি মশারিটা একটু নাড়া দিতেই খুলে গেলো। তারপর টুকটুকি নিজেই তার ভেতর ঢুকে ঘুমানোর ভান করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়লো নিজেও টের পেলো না। ওকে ওভাবে একা একা শান্ত হয়ে ঘুমোতে দেখে মা-বাবা দাদু-দাদাভাইয়ের সে কি হাসি!
সন্ধ্যায় একসাথে অনেকের কোলাহলে টুকটুকির ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ভাঙার পর তার মনে হলো বাসায় সবাই আজ অনেক বেশি আনন্দ করছে। তার উপর আরো আত্মীয়স্বজনের কণ্ঠও শোনা যাচ্ছে। সুবহা, মোহাইমেন, নাফিসাও এসেছে ওদের মা-বাবার সাথে। পায়ে পায়ে এগিয়ে সবার সাথে টুকটুকিও ফুপুর ঘরে গিয়ে দেখলো, ওর ফুপুর কোলে পুতুলের মতো ছোট্ট এক বাচ্চা! দাদু তাকে পরী বলে ডাকছে। আর বাচ্চাটা পিটপিট করে আপন মনে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। এটুকুতেই টুকটুকির খুব মায়া হলো। সে ভাবলো, ও তো পরী, ও কি আমাদের সাথে থাকবে! মনে মনে সে খুব ভয় পেতে লাগলো, আহারে ও চলে গেলে ওকে খুব মিস করবো। হঠাৎ টুকটুকির মনে হলো, আচ্ছা সারাক্ষণ দরজা জানালাগুলো বন্ধ রাখলে কেমন হয়। রাতে শুয়ে টুকটুকি ভাবলো, এখন সে আর ঘুমোবে না, জেগে জেগে পরীকে পাহারা দেবে।
পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই টুকটুকি চলে গেলো ফুপুর ঘরে। গিয়ে দেখে, দাদু পরীর সারা গায়ে পাউডার ছিটিয়ে নতুন জামা পরাচ্ছেন। আর তখনি সে দেখে ফেললো, ছোট্ট ও পরীটির ডানা নেই! টুকটুকি তখন রেখে বলে উঠলো, ওর তো ডানা নেই, তাহলে ওকে পরী বলছো কেন?
দাদু বললেন, এটা হচ্ছে নকল পরী! একে ডানা কিনে দিতে হবে।
দাদুর কথা শুনে টুকটুকির মনটা ভারী খারাপ হয়ে গেলো। সে দাদুকে বললো, তোমরা নকল পরী এনেছো কেন?
দাদু বললেন, আসল পরী আনলে কি তাকে এভাবে ঘরে রাখা যেতো? সে এতক্ষণ উড়ে চলে যেতো না!
টুকটুকি এবার মন হালকা করে বললো, তাহলে ও আমাদের বাসায় সব সময় থাকবে?
ফুপু হেসে বললেন, হ্যাঁ, ও তোমার সাথে থাকবে বলেই তো ওকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছি!
ফুপুর কথা শুনে টুকটুকি কী একটু ভাবলো। তারপর বললো, ঠিক আছে, আমি তাহলে দরজা জানালাগুলো খুলে দিয়ে আসি।
ছোট্ট টুকটুকিকে কষ্ট করে জানালা দরজা খুলতে দেখে দাদাভাই অবাক হয়ে বললেন, দরজা জানালাগুলো বন্ধ করে রেখেছিলো কে?
টুকটুকি বললো, দাদাভাই, আমি বন্ধ করেছিলাম, তাই আমি খুলে দিচ্ছি!
দাদাভাই তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে টুকটুকিকে কোলে নিয়ে বললেন, সে কি, আমার বড় পরীটা হাতে ব্যথা পাবে যে! দাদাভাই টুকটুকির কপালে চুমু খেয়ে বললেন, তুমি কেন দরজা জানালা বন্ধ করেছিলে?
টুকটুকি বললো, আমি ভেবেছিলাম ও আসল পরী। তাই ও যদি উড়ে চলে যায়!
টুকটুকির কথায় সবার খুব হাসি পেলো। সবার হাসি থামলে টুকটুকি বললো, ঠিক আছে, ওর যখন জন্মদিন আসবে, আমি ওকে ডানা কিনে দেবো। আমার মাটির ব্যাংক ভেঙে যে টাকা হবে সব টাকা দিয়ে ডানা কিনে দেবো। টুকটুকির কথায় সবাই খুশি হলো, তার আদরে ভাগ বসানো পরীকে সে হিংসে করছে না দেখে।

Share.

মন্তব্য করুন