শুরু হয়ে গেছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর টি-২০ বিশ^কাপ ২০২২। আর ওদিকে শুরুর অপেক্ষায় আছে কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২। প্রতিটি আসরেই সবার চোখ থাকে তারকা খেলোয়াড়দের দিকে। আর প্রতিটি আসরই হয়ে ওঠে কোনো না কোনো খেলোয়াড়ের শেষ আসর। এবারের বিশ্বকাপও এর ব্যতিক্রম নয়। কেউ বাদ পড়েছেন ইতোমধ্যেই, আর কেউ বা আছেন বাদ পড়ার অপেক্ষায়। এই লেখায় আমরা দেখবো ক্রিকেট ও ফুটবল বিশ^কাপ থেকে ইতোমধ্যেই কারা কারা বাদ পড়ে গেছেন, আর কারাই বা আছেন বাদ পড়ার অপেক্ষায়।

টি-২০ বিশ্বকাপ

ইতোমধ্যেই চোট পেয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়া ক্রিকেটারদের তালিকা দীর্ঘ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিটনেস নিয়ে সমস্যা রয়েছে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকা একাধিক দলের একাধিক তারকার। সুতরাং টুর্নামেন্ট চলাকালীন আরও কিছু তারকা ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপের বাইরে ছিটকে যেতে দেখা যেতে পারে। ইতোমধ্যেই টুর্নামেন্টের বাইরে চলে গিয়েছেন যে সব তারকা ক্রিকেটার, তাঁদের নিয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি দল গড়ে নেওয়া যায় অনায়াসে।

জসপ্রীত বুমরাহ
পিঠের চোটে টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান টিম ইন্ডিয়ার তারকা পেসার জসপ্রীত বুমরাহ। তাঁর পরিবর্তে জাতীয় নির্বাচকরা মহম্মদ শামিকে ভারতীয় স্কোয়াডে ঢুকিয়ে দেন।

রবীন্দ্র জাদেজা
ফিট থাকলে ভারতের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অটোমেটিক চয়েজ হতেন রবীন্দ্র জাদেজা। তবে হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করাতে হওয়ায় তাঁর নাম বিশ্বকাপের জন্য বিবেচিত হয়নি।

দীপক চাহার
মূল স্কোয়াডে ছিলেন না। তবে টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য ভারতের রিজার্ভ ক্রিকেটারদের তালিকায় নাম ছিল দীপক চাহারের। তারকা পেসার শেষমেশ পিঠের চোটেই বিশ্বকাপের দৌড় থেকে ছিটকে যান।
উসমান কাদির
পাকিস্তানের লেগ-স্পিনারের আঙুলে চিড় ধরেছে। তাঁর বদলে রিজার্ভের তালিকা থেকে পাকিস্তানের মূল স্কোয়াডে ঢুকে পড়েছেন ফখর জামান। উসমান বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে না গেলেও চলে গিয়েছেন রিজার্ভ ক্রিকেটারদের তালিকায়।

রাসি ভ্যান ডার দাসেন
বাঁ-হাতের কড়ে আঙুল ভাঙায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে বিবেচিত হয়নি রাসি ভ্যান ডার দাসেনের নাম। ফিট থাকলে তাঁকে নিশ্চিতভাবেই দেখা যেত টি-২০ বিশ্বকাপে।

ডোয়েন প্রিটোরিয়াস
ভারত সফরে এসে বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুল ভাঙায় টি-২০ বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে ছিটকে যান দক্ষিণ আফ্রিকার নির্ভরযোগ্য অল-রাউন্ডার ডোয়েন প্রিটোরিয়াস। তাঁর বদলে রিজার্ভ ক্রিকেটারদের তালিকা থেকে মূল স্কোয়াডে ঢুকে পড়েন মারকো জানসেন।

জনি বেয়ারস্টো
গলফ খেলতে গিয়ে বড়সড় চোট পান জনি বেয়ারস্টো। ফলে শুধু বিশ্বকাপ থেকেই নয়, বরং চলতি বছরে আর মাঠে নামতে পারবেন না ব্রিটিশ তারকা।

ক্রেগ ইয়ং
আয়ারল্যান্ডের অভিজ্ঞ বোলার ক্রিগ ইয়ং পুরনো চোটের জন্য বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান। তাঁর বদলে দলে ঢোকেন গ্রাহাম হিউম।

শিমরন হেতমায়ের
চোটের জন্য নয়, বিমান মিস করার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েন শিমরন হেতমায়ের। তাঁর বদলে দলে ঢোকেন শামারাহ ব্রæকস।

কাতার বিশ্বকাপ ২০২২
সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ যেসকল তারকাদের

কাতার বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দরজায়। চলতি বছরের ২১ নভেম্বর বিকেল চারটায় দোহা স্টেডিয়ামে সেনেগাল-নেদারল্যান্ডসের ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপের। আর ১৮ ডিসেম্বর রাত নয়টায় লুসাই স্টেডিয়ামে ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে আরব বিশ্বের প্রথম বিশ্বকাপের। এবারের আসরটি বিশ্বকাপের ২২তম আসর। আর এবারই শেষবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেবে ৩২ দল। পরের আসর অর্থাৎ ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ থেকে দল সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৮টিতে। যেটি অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার যৌথ আয়োজনে।
ফুটবলপ্রেমীদের মনে বিশ্বকাপ আসলেই যেমন ঢেউ খেলে যায় আনন্দের, তেমনি বিষাদেরও রাগিনী বেজে ওঠে। প্রতি আসরেই ঝলমল করে নিজেদের আগমনী বার্তা জানায় একঝাঁক উদীয়মান তারকা। আরেকদিকে বয়সের সঙ্গে লড়ে বিদায় নেয় একঝাঁক ধ্রুবতারা। যাকে বলা হয় নতুনের আগমনে পুরনোর বিদায় নেয়া। কাতারে এই বিদায়ীদের তালিকা বেশ বড় হতে যাচ্ছে। যেখানে রয়েছেন বর্তমান বিশ্বের ফুটবলের দুই নক্ষত্র আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর লিওনেল মেসি এবং পর্তুগিজ যুবরাজ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো তারকা। দু’জনেরই এটি পঞ্চম ও শেষ বিশ্বকাপ। তালিকায় থাকা বাকি নাম গুলোও চিরচেনা। একনজরে তাদেরকে দেখে নেয়া যাক।

লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
৩৫ বছর বয়সে কাতার বিশ্বকাপে খেলবেন আর্জেন্টিনা ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি। কিন্তু তার পায়ে জাদু আরো কয়েক বছর দেখতে চায় ফুটবলপ্রেমীরা। তাছাড়া ফিটনেস লেভেলও খুব ভালো এ আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের। তাই ২০২২ সালেই যে শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন মেসি তা বলা যায় না। তবে এবার যদি আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে পারেন তাহলে মেসি হয়তো এই সুখ স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাবেন। আর যদি সেটি না হয় তাহলে কে জানে ২০২৬ সালে হয়তো আরো একবার জাতীয় দলকে বিশ্বকাপ জেতানোর লক্ষ্যে নামবেন এ ক্ষুদে জাদুকর।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)
অনেকেই বলছেন পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ ২০২২। ফেব্রæয়ারিতে ৩৭-এ পা রেখেছেন এ পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। ২০০৩ সালে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর পর থেকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বাধিক গোলের রেকর্ড ও ক্লাব এবং জাতীয় দল মিলে সবচেয়ে বেশি গোলোর রেকর্ড সিআরসেভেনের। ২০২৬ সালের আসরে রোনালদোর বয়স দাঁড়াবে ৪১ বছরে। সে বিবেচনায় এই বিশ্বকাপ হয়তো শেষ বিশ্বকাপ নাও হতে পারে রোনালদোর। কারণ তার যে ফিটনেস তা অনেক ২৫ বছর বয়সী ফুটবলারকেও হার মানাবে। তিনি যদি এই ফিটনেস ধরে রাখেন আর নিজের ফর্মের ৭০ ভাগও দিতে পারেন তাহলে মাঠে দেখা যেতেই পারে পর্তুগিজ তারকাকে।

দানি আলভেজ (ব্রাজিল)
তবে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ যাদের জন্য নিশ্চিতভাবেই শেষ আসর তাদের একজন হলেন ব্রাজিলের দানি আলভেজ। কাতার বিশ্বকাপের সময় তার বয়স হবে ৩৯ বছর ৬ মাস। ২০০৬ সালে জাতীয় দলে ডাক পান দানি। পরের বছর জেতেন কোপা আমেরিকা। এরপর ২০১৯ সালেও দেশকে একই শিরোপা এনে দেন তিনি। ২০২১ সালে অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী ব্রাজিল দলের সদস্য ছিলেন দানি। এটা অনেকটাই নিশ্চিত যে পরের বিশ্বকাপে আর দেখা যাবে না আলভেজকে।

ম্যানুয়াল নুয়্যার (জার্মানি)
বয়স ৩৬ চলছে জার্মানির গোলরক্ষক ম্যানুয়াল নুয়্যারের। এখনও তার দক্ষ হাতে আটকে যায় প্রতিপক্ষের আক্রমণ। ২০১৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে ছিল তার বড় ভ‚মিকা। বিশ্বকাপের পর জার্মানির গোলবার সামলানোর দায়িত্বে আর দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি নুয়্যারের।

লুকা মদ্রিচ (ক্রোয়েশিয়া)
ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচের বয়স ৩৬। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়াটদের ফাইনালে তুলে আনার নায়ক তিনি। দলকে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জেতাতে না পারলেও সবার মন জয় করে তার দল। সে বছরই ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার ব্যালন ডি’অর জেতেন মদ্রিচ। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে মদ্রিচের দলে না থাকাটাই হবে স্বাভাবিক।

লুইস সুয়ারেজ ও এডিনসন কাভানি (উরুগুয়ে)
বিশ্বকাপের সময় উরুগুয়ের ফরোয়ার্ড লুইস সুয়ারেজের বয়স হবে ৩৬ ছুঁঁই ছুঁই। তাই কাতার বিশ্বকাপই হতে পারে সুয়ারেজের শেষ বড় আসর। ২০০৭ সালে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান তিনি। এরপর দেশের হয়ে খেলছেন নিয়মিত। ২০১১ সালে দেশকে এনে দিয়েছিলেন কোপা আমেরিকার শিরোপাও। সুয়ারেজের সতীর্থ এডিনসন কাভানির বয়সও বিশ্বকাপের সময় হবে ৩৬। ২০১১ সালে দেশের হয়ে কোপা আমেরিকা জয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। এটা বলে দেয়া যায় যে ২০২২ বিশ্বকাপই হচ্ছে সুয়ারেজ কাভানি জুটির শেষ বিশ্বকাপ।

করিম বেনজামা (ফ্রান্স)
ফ্রান্সের ফরোয়ার্ড করিম বেনজামার বয়স ৩৪। দেশের হয়ে শুধুমাত্র ২০১৪ বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। ২০১৮ বিশ্বকাপে ফর্মে থেকেও দলে ডাক পাননি এক দুর্ঘটনার রেশ থেকে যাওয়ায়। কিন্তু বর্তমানে তিনি ফ্রান্স দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। তবে ফিটনেস আর ফর্ম বিবেচনায় নিলে চার বছর পর বেনজামাকে জাতীয় দলে দেখতে পাওয়ার আসা নেই বললেই চলে। তাই কাতারেই শেষবারের মতো নামবেন করিম বেনজামা।
রবার্ট লেভানদোভস্কি (পোল্যান্ড)
কাতার বিশ্বকাপে পোল্যান্ডের স্ট্রাইকার লেভানদোভস্কির বয়স হবে ৩৪ বছর। একজন স্ট্রাইকারের জন্য আরো চার বছর খেলা চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন। সে হিসেবে ২০২২ হতে পারে লেভানদভস্কির শেষ বিশ্বকাপ।

সার্জিও বুস্কেটস (স্পেন)
স্পেনের ৩৪ বছর বয়সী সার্জিও বুস্কেটসকেও ধরে নেয়া হচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ শেষে বিদায় হবে তার ক্যারিয়ার। তবে ফিটনেসে টিকে গেলে খেলতে পারেন ২০২৬ সালের আসরও। কাতারেই তাই বুস্কেটসের শেষ ধরে নেয়া যায়। ২০১০ সালে স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্যও ছিলেন তিনি।

অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (আর্জেন্টিনা)
ডি মারিয়া ইতোমধ্যে বিশ্বকাপ শেষেই জার্সি তুলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। খেলেছেন চারটি বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন কোপা আমেরিকার শিরোপা।

নেইমার (ব্রাজিল)
তবে এতোসব তারকাদের বয়সের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার নেইমার। বয়স চলছে ৩০। সে হিসেবে পরের বিশ্বকাপে তার বয়স হবে ৩৪। ফর্ম বিবেচনায় এখনও নিয়মিত গোল করেন নেইমার। ফর্মে থাকলে হয়তো পরের বিশ্বকাপে দেখা যাবে নেইমারকে।

এছাড়াও ঝরে যাওয়া তারকার তালিকায় আছেন-
থমাস মুলার (জার্মানি), দানি আলভেস (ব্রাজিল), ইডেন হ্যাজার্ড (বেলজিয়াম), জর্ডি আলবা (স্পেন), অলিভিয়ার জিরুড (ফ্রান্স), হুগো লরিস (ফ্রান্স), পেপে (পর্তুগাল), ম্যাটস হুমেলস (জার্মানি), দিয়েগো গডিন (উরুগুয়ে), মায়া ইয়োশিদা (জাপান)।

Share.

মন্তব্য করুন