বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় ক্রীড়া ইভেন্ট বা খেলোধুলার আয়োজন হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। একে বলা হয় গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান। চার বছর পর পর এই আয়োজন বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। মানুষকে দেয় নির্মল আনন্দ আর তৈরি করে বহু তারকা খেলোয়াড়। এর আগে ২১টি বিশ্বকাপ হয়েছে এবার হতে যাচ্ছে ২২তম আসর। আনন্দ সংবাদ এই যে এবার তা হতে যাচ্ছে একটি মুসলিম দেশে যা আমাদের নিকটবর্তী এবং বলতে গেলে আমাদের অত্যন্ত কাছের একটি দেশ।
বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হচ্ছে ফিফা এর আয়োজক। ফিফার পুরো নাম ফেডারেশন ইন্তারন্যাশনালে ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন Fédération internationale de Football Association (FIFA)। নাম দেখেই বুঝতে পারছ এটা ফরাসি নাম। হ্যাঁ তাই। ফ্রান্সের প্যারিসে ১৯০৪ সালের ২১ মে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দফতর এখন সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে। এর ইংরেজি নাম হচ্ছে International Federation of Association Football. ২২তম আসরের চ‚ড়ান্ত পর্বে ফিফার অন্তর্ভুক্ত ৩২টি জাতীয় ফুটবল দল প্রতিযোগিতা করবে। আর এটাকেই বলে বিশ্বকাপ। এই আসরের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপ আরব বিশ্বের কোন দেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সে কথা আগেই বলেছি। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানে ২০০২ ফিফা বিশ্বকাপের পর এটি এশিয়ায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ফিফা বিশ্বকাপ। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে বিশ্বকাপের আয়োজন হয়ে থাকে। তবে কাতারের তীব্র গ্রীষ্মকালীন উত্তাপের কারণে এই আসরটি ২০ নভেম্বর হতে ১৮ ডিসেম্বর পর্যস্ত হবে। ২০ নভেম্বরে হবে জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ২১ নভেম্বর খেলা শুরু হবে। কাতারের ৫টি শহরের ৮টি মাঠে অনুষ্ঠিত হবে খেলা। ফলে এটি জুন-জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত না হওয়া প্রথম আসর হবে। ২৯ দিনের সময়সীমায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিনে আল খুরের আল বাইত স্টেডিয়ামে স্বাগতিক দেশ কাতার এবং ইকুয়েডর মুখোমুখি হবে। প্রথমে হবে গ্রæপ পর্বের খেলা। ৪৮টি খেলা শেষে শুরু হবে নকআউট পর্ব। মানে ১৬টি দলের এ পর্বে যে দল হারবে বিশ্বকাপ থেকে তার বিদায়। পরের পর্বগুলোতেই একই বিধান। এর পর কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল হয়ে ফাইনাল খেলা। একটি খেলা হবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণের জন্য। ১৮ ডিসেম্বর কাতারের জাতীয় দিবসে হবে ফাইনাল।

বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাস
বিশ্বব্যাপী ফুটবলের নিয়ন্ত্রক বা অভিভাবক সংস্থা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা- ফিফা, এর পরিচয় আগেই দিয়েছি। ফ্রান্সের প্যারিসে ১৯০৪ সালের ২১ মে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে। ১৯৩০ সাল থেকে প্রতি চার বছর পরপর ফিফার তত্ত¡াবধানে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ফুটবল বিশ্বকাপ। ফিফা পুরুষদের আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ১৯৩০ সালে প্রথম ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। সে সময়কার ফিফা সভাপতি জুলে রিমে এই ধারণাটি পেশ করেন। ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ফিফা বিশ্বকাপে আমন্ত্রিত হয়ে মাত্র তেরোটি দল চ‚ড়ান্ত টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। এরপর থেকে বিশ্বকাপটি ধারাবাহিকভাবে বিস্তৃতকরণ এবং বিন্যাস পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং বর্তমানে ৩২ দলের চ‚ড়ান্ত টুর্নামেন্টের আগে দুই বছরব্যাপী বাছাই প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় যেখানে বিশ্বের ২০০ টিরও বেশি দল অংশ নেয়। বিশ্বকাপের শুরুটা মূলত ১৯৩২ সালের অলিম্পিকে ফুটবলকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে। ১৯৩২ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হয় আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলসে। পরিকল্পনার অন্তত চার বছর বা তারও বেশি সময় পরে হয় গেমস। ১৯৩০ সালেই ফিফা নিশ্চিত হয় যে অলিম্পিকে ফুটবল থাকছে না। আমেরিকাতে ফুটবল তেমন একটা জনপ্রিয় না হওয়ার কারণেই মূলত ফুটবলকে অলিম্পিক থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে বিশ্বকাপ আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় বিশ্বকাপে খেলতে আগ্রহী দল খুঁজতে গিয়ে। যাতায়াতের সমস্যা ও অন্যান্য খরচ অনেক বেশি হওয়ায় ফুটবল খেলুড়ে অনেক দেশই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণে আপত্তি জানায়। ফলে মাত্র ১৩টি দল নিয়েই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় সে বছর প্রথম বিশ্বকাপ। এর পরের দুই আসর বসে ইউরোপে। দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দল আগ্রহ থাকা সত্তে¡ও যাতায়াত ও যুদ্ধ-বিগ্রহের সমস্যার জন্য অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এই দুই বিশ্বকাপে একমাত্র ব্রাজিলই দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করে। এর পরে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য দুইটি আসর অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৫০ সালে আবার আসর দক্ষিণ আমেরিকায়। এবারে স্বাগতিক দেশ ব্রাজিল। এবারেও যোগাযোগের সমস্যার জন্য কিছু দল নাম প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৩৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপে ১৬টি দল অংশগ্রহণ করতো। এর মধ্যে শুধু ১৯৩৮ সালে ১৫টি দল ও ১৯৫০ সালে ১৩টি দল অংশগ্রহণ করে। ১৯৮২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ২৪টি দলের অংশগ্রহণে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। এরপরে ১৯৯৮ সাল থেকে ৩২টি দল নিয়ে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০২২ বিশ্বকাপই হবে শেষ বিশ্বকাপ যাতে ৩২টি দল অংশগ্রহণ করবে। এর পর থেকে ৪৮ দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ। মূলত ফুটবলকে সার্বজনীন খেলায় রূপান্তরিত ও জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৯৩০ থেকে এই পর্যন্ত মোট ২১ বার বসেছে এই আসর। বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হলো ফ্রান্স। এবারের আসর থেকে নতুন চ্যাম্পিয়ন বের হয়ে আসবে।

আয়োজক দেশসমূহ
প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে। উরুগুয়েতে আয়োজিত হয় এই বিশ্বকাপ। এর পরে ১৯৩৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ইতালিতে ১৬টি দলের অংশগ্রহণে। ১৯৩৮ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ফ্রান্সে। এর পরের ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ব্রাজিলে। ১৯৫৪ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় সুইজারল্যান্ডে। ১৯৫৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় সুইডেনে। ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন করে চিলি। ১৯৬৬ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করে ফুটবলের জন্মদাতা দেশ ইংল্যান্ড। ১৯৭০ সালে আয়োজন করে মেক্সিকো। ১৯৭৪ সালের আয়োজক ছিল জার্মানি। ১৯৭৮ সালের আসর বসে আর্জেন্টিনায়। ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত হয় স্পেনে। ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করে মেক্সিকো। ১৯৯০ সালে আবার ইতালি। ১৯৯৪ সালের আয়োজক ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ফ্রান্সে। ২০০২ বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ২০০৬ সালে আয়োজন করে জার্মানি। ২০১০ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। ২০১৪ সালে ব্রাজিল এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে আয়োজন করে রাশিয়া। এক নজরে দেখে নিই আয়োজক দেশগুলোর নাম ও অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা:
সাল আয়োজক অংশগ্রহণকারী দল

১৯৩০ উরুগুয়ে ১৩
১৯৩৪ ইতালি ১৬
১৯৩৮ ফ্রান্স ১৫
১৯৫০ ব্রাজিল ১৩
১৯৫৪ সুইজারল্যান্ড ১৬
১৯৫৮ সুইডেন ১৬
১৯৬২ চিলি ১৬
১৯৬৬ ইংল্যান্ড ১৬
১৯৭০ মেক্সিকো ১৬
১৯৭৪ জার্মানি ১৬
১৯৭৮ আর্জেন্টিনা ১৬
১৯৮২ স্পেন ২৪
১৯৮৬ মেক্সিকো ২৪
১৯৯০ ইতালি ২৪
১৯৯৪ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৪
১৯৯৮ ফ্রান্স ৩২
২০০২ জাপান ও দ. কোরিয়া ৩২
২০০৬ জার্মানি ৩২
২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা ৩২
২০১৪ ব্রাজিল ৩২
২০১৮ রাশিয়া ৩২
২০২২ কাতার ৩২

স্বাগতিক দেশ নির্ধারণ কিভাবে হয়
২০১৮ ও ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য নিলামের প্রক্রিয়া ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে, ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য ১১টি আবেদনপত্র জমা হয়েছিল, কিন্তু মেক্সিকো পরবর্তীতে এই কার্যক্রম থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে। ইন্দোনেশিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাদের আবেদনপত্রের পক্ষে ইন্দোনেশিয়া সরকারের অনাপত্তিপত্র চিঠি জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১০ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে ফিফা ইন্দোনেশিয়ার আবেদনপত্রটি প্রত্যাখ্যান করে।
আয়োজক নির্ধারণ প্রক্রিয়া চলাকালীন সকল উয়েফা বহির্ভ‚ত দেশ ধীরে ধীরে ২০১৮ সালের আসরের জন্য করা তাদের আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল, যার ফলে এটি নিশ্চিত হয়েছিল যে একটি উয়েফা জাতি ২০১৮ সালের আসরটি আয়োজন করবে এবং এর ফলে উয়েফা দেশগুলো ২০২২ সালের আয়োজক নির্ধারণ প্রক্রিয়ার জন্য অযোগ্য হয়ে উঠবে।
শেষ পর্যন্ত ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য পাঁচটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। দেশগুলো হলো: অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফিফার ২২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর তারিখে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে উভয় আসরের আয়োজক নির্বাচন করার জন্য ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। শেষে রাশিয়া ২০১৮ এবং কাতার ২০২২ এর আয়োজক দেশ মনোনীত হয়। এভাবে শেষ হয় আয়োজক দেশ মনোনয়ন পর্ব।

এবাবের বিশ্বকাপে কয়েকটি বিশেষ দিক
২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপে উত্তীর্ণ ৩২টি দেশের মধ্যে ২৪টি দেশ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী আসরে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিল। কাতারই একমাত্র দল, যারা ফিফা বিশ্বকাপে অভিষেক করবে, ১৯৩৪ সালে ইতালির পর দ্বিতীয় আয়োজক দেশ হিসেবে কাতার এই আসরে অভিষেক করবে। এর ফলস্বরূপ, ২০২২ সালের আসরটি প্রথম বিশ্বকাপ, যেখানে বাছাইপর্বের মাধ্যমে উত্তীর্ণ কোনো দলই অভিষেক করবে না। নেদারল্যান্ডস, ইকুয়েডর, ঘানা, ক্যামেরুন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালের আসরে অনুপস্থিত থাকার পর এই আসরের মাধ্যমে পুনরায় ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে। ৩৬ বছর পর কানাডা পুনরায় এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে, তারা সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে অংশগ্রহণ করেছিল। অন্য দিকে ৬৪ বছর পর ওয়েলস পুনরায় এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে, যা কোন ইউরোপীয় দলের জন্য একটি রেকর্ড ব্যবধান; তারা সর্বশেষ ১৯৫৮ সালে অংশগ্রহণ করেছিল।
চারবারের চ্যাম্পিয়ন এবং উয়েফা ইউরো ২০২০-এর বিজয়ী ইতালি তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপের মতো চ‚ড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে ব্যর্থ হয়েছে, ২০২২ সালের ২৪শে মার্চ তারিখে উত্তর মেসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে প্লে-অফ সেমি-ফাইনালে ১০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। ইতালি একমাত্র সাবেক চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এই আসরে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে গত বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ রাশিয়াকে এই আসর থেকে অপনয়ন করা হয়েছে। পূর্বের টানা তিন আসরে অংশগ্রহণকারী এবং সর্বশেষ সাত আসরের ছয় আসরে অংশগ্রহণকারী নাইজেরিয়া ক্যাফের চ‚ড়ান্ত প্লে-অফ পর্বে ঘানার কাছে অ্যাওয়ে গোলে পরাজিত হয়ে এই আসরে অংশগ্রহণ করে ব্যর্থ হয়েছে।

বিশ্বকাপের মাস্কট
২০২২ সালের ১ এপ্রিল তারিখে গ্রæপ পর্বের ড্রয়ের সময় এই আসরের আনুষ্ঠানিক মাস্কট উন্মোচন করা হয়। মাস্কটটির নাম হচ্ছে লাইব (যা একটি আরবি শব্দ), আরবিতে যার অর্থ ‘সুদক্ষ খেলোয়াড়’। ফিফার প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে: ‘লাইব তার তারুণ্যের মনোভাবের জন্য পরিচিত হবে; সে যেখানেই যাক না কেন আনন্দ এবং আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দেবে।’ মাস্কট প্রথা চালু হয় ১৯৬৬ বিশ্বকাপ থেকে। মাস্কট হলো একটি ডিজাইন বা নকশা, যাতে আয়োজনকারী দেশের একটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়।

এবারের বিশ্বকাপের বল
২০২২ সালের ৩০ মার্চ এই আসরের আনুষ্ঠানিক ম্যাচ বল, ‘আল রিহলা’ উন্মোচন করা হয়। এটি মূলত কাতারের সংস্কৃতি, স্থাপত্য, ঐতিহাসিক নৌকা এবং পতাকা দ্বারা অনুপ্রাণিত। আরবি ‘আল রিহলা’ শব্দের অর্থ ‘যাত্রা’ বা সফর। বলটি অগ্রাধিকার হিসেবে স্থায়িত্বের সাথে নকশা করা হয়, এটি আঠালো কালি দিয়ে তৈরি করা প্রথম আনুষ্ঠানিক ম্যাচ বল। যেহেতু ‘খেলাটি দ্রæততর হচ্ছে’ এবং এর ‘গতি বাড়ছে’, তাই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আডিডাস এতে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করেছে, যা গতি সরবরাহ করার পাশাপাশি বলের নির্ভুলতা উন্নত করবে। ইবন বতুতার ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই বলের নাম রাখা হয়েছে আল রিহলা। বলের ডিজাইন থেকে রং, সব কিছুতেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাতারের সংস্কৃতি। পাশাপাশি বলটিকে ফুটবলারদের জন্য করা হয়েছে নিখুঁত। বলের বাউন্স থেকে সুইং কোনও কিছু নিয়েই ফুটবলারদের সমস্যা পড়তে হবে না বলে দাবি বল প্রস্তুতকারক সংস্থার। তৃণমূল স্তর থেকে ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায় এবং ল্যাবরটরিতে একাধিক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর বল প্রকাশ করেন আয়োজকরা।

বিশ্বকাপ সঙ্গীত
প্রতিটি বিশ্বকাপে একটি থিম সং বা সঙ্গীত থাকে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এটা গাওয়া হয় এবং বিশ^কাপের বিভিন্ন পর্বে ও টিভি অনুষ্ঠানে এটা ব্যবহার করা হয়। এই গান গেয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান শিল্পীরা। এই আসরের আনুষ্ঠানিক অ্যালবামের প্রথম গান হলো মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী ত্রিনিদাদ কারদোনা, নাইজেরীয় সঙ্গীতশিল্পী দাভিদো এবং কাতারি সঙ্গীতশিল্পী আইশার ‘হাইয়া হাইয়া (বেটার টুগেদার)’, যা ২০২২ সালের ১ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়েছে। অ্যালবামের দ্বিতীয় গান হলো ‘আরহবো’, যেখানে কণ্ঠ দিয়েছেন জিমস এবং ওসুনা; গানটি ২০২২ সালের ১৯ আগস্ট মাসে প্রকাশ করা হয়েছে।

এবারের বিশ্বকাপের খেলার সময়সূচি
কাতারের সাথে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য ৩ ঘণ্টা। কাতারে যে খেলাটি শুরু হবে বিকাল চারটায় সেই খেলাটি বাংলাদেশের শুরু হবে সন্ধ্যা সাতটায়। তবে সব খেলা চারটায় হবে না। কিছু খেলা আরো দেরিতে শুরু হবে। ৭টায় যে খেলা শুরু হবে তা বাংলাদেশে দেখা যাবে রাত ১০টায়। তবে আগেকার বিশ্বকাপ খেলাগুলোর মতো রাত জেগে খেলা দেখতে হবে না।

অংশগ্রহণকারী ৩২ দলের পরিচয়
বাছাই পর্বে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে কোস্টারিকা। এর মধ্য দিয়ে চ‚ড়ান্ত হয় বিশ্বকাপের মূল পর্বের ৩২ দল। ১৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় এই বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব। ৪টি করে দল নিয়ে একটি গ্রুপ। মোট ৮টি গ্রুপ রয়েছে। কোন দল কোনো গ্রুপে সেটা নির্ধারিত হয় একটি আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে। এটাকে বলে ড্র। এটা খেলায় ড্র নয়, বাছাই। নিচে গ্রুভিত্তিক তালিকা দেয়া হলো। এখানেই পাওয়া যাবে ৩২টি দলের পরিচয়।

কোন দল কোন গ্রুপে

গ্রুপে পর্বের খেলা সময়সূচি
কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের খেলায় মোট ৪৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি দল একে অপরের, সাথে একবার করে মোকাবেলা করবে।
তারিখ: ম্যাচ: বাংলাদেশ সময়
২১ নভেম্বর : কাতার-ইকুয়েডর : রাত ১০টা
২১ নভেম্বর : ইংল্যান্ড-ইরান : সন্ধ্যা ৭টা
২১ নভেম্বর : সেনেগাল-নেদারল্যান্ডস : বিকেল ৪টা
২১ নভেম্বর : যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েলস : রাত ১টা
২২ নভেম্বর : ডেনমার্ক-তিউনিসিয়া : সন্ধ্যা ৭টা
২২ নভেম্বর : ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়া : রাত ১টা
২২ নভেম্বর : মেক্সিকো-পোল্যান্ড : রাত ১০টা
২২ নভেম্বর : আর্জেন্টিনা-সৌদি আরব : বিকেল ৪টা
২৩ নভেম্বর : স্পেন-কোস্টারিকা : রাত ১০টা
২৩ নভেম্বর : বেলজিয়াম-কানাডা : সন্ধ্যা ৭টা
২৩ নভেম্বর : জার্মানি-জাপান : সন্ধ্যা ৭টা
২৩ নভেম্বর : মরক্কো-ক্রোয়েশিয়া : বিকেল ৪টা
২৪ নভেম্বর : উরুগুয়ে-দক্ষিণ কোরিয়া : সন্ধ্যা ৭টা
২৪ নভেম্বর : পর্তুগাল-ঘানা : রাত ১০টা
২৪ নভেম্বর : সুইজারল্যান্ড-ক্যামেরুন : বিকেল ৪টা
২৪ নভেম্বর : ব্রাজিল-সার্বিয়া : রাত ১টা
২৫ নভেম্বর : ইংল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র : রাত ১টা
২৫ নভেম্বর : কাতার-সেনেগাল : সন্ধ্যা ৭টা
২৫ নভেম্বর : ওয়েলস-ইরান : বিকেল ৪টা
২৫ নভেম্বর : নেদারল্যান্ডস-ইকুয়েডর : রাত ১০টা
২৬ নভেম্বর : পোল্যান্ড-সৌদি আরব : সন্ধ্যা ৭টা
২৬ নভেম্বর : আর্জেন্টিনা-মেক্সিকো : রাত ১টা
২৬ নভেম্বর : তিউনিসিয়া-অস্ট্রেলিয়া : বিকেল ৪টা
২৬ নভেম্বর : ফ্রান্স-ডেনমার্ক : রাত ১০টা
২৭ নভেম্বর : বেলজিয়াম-মরক্কো : সন্ধ্যা ৭টা
২৭ নভেম্বর : স্পেন-জার্মানি : রাত ১টা
২৭ নভেম্বর : ক্রোয়েশিয়া-কানাডা : রাত ১০টা
২৭ নভেম্বর : জাপান-কোস্টারিকা : বিকেল ৪টা
২৮ নভেম্বর : ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ড : রাত ১০টা
২৮ নভেম্বর : দক্ষিণ কোরিয়া-ঘানা : সন্ধ্যা ৭টা
২৮ নভেম্বর : ক্যামেরুন-সার্বিয়া : বিকেল ৪টা
২৮ নভেম্বর : পর্তুগাল-উরুগুয়ে : রাত ১টা
২৯ নভেম্বর : নেদারল্যান্ডস-কাতার : রাত ৯টা
২৯ নভেম্বর : ওয়েলস-ইংল্যান্ড : রাত ১টা
২৯ নভেম্বর : ইকুয়েডর-সেনেগাল : রাত ৯টা
২৯ নভেম্বর : ইরান-যুক্তরাষ্ট্র : রাত ১টা
৩০ নভেম্বর : অস্ট্রেলিয়া-ডেনমার্ক : রাত ৯টা
৩০ নভেম্বর : তিউনিসিয়া-ফ্রান্স : রাত ৯টা
৩০ নভেম্বর : সৌদি আরব-মেক্সিকো : রাত ১টা
৩০ নভেম্বর : পোল্যান্ড-আর্জেন্টিনা : রাত ১টা
১ ডিসেম্বর : জাপান-স্পেন : রাত ১টা
১ ডিসেম্বর : ক্রোয়েশিয়া-বেলজিয়াম : রাত ৯টা
১ ডিসেম্বর : কোস্টারিকা-জার্মানি : রাত ১টা
১ ডিসেম্বর : কানাডা-মরক্কো : রাত ৯টা
২ ডিসেম্বর : ঘানা-উরুগুয়ে : রাত ৯টা
২ ডিসেম্বর : দক্ষিণ কোরিয়া-পর্তুগাল : রাত ৯টা
২ ডিসেম্বর : সার্বিয়া-সুইজারল্যান্ড : রাত ১টা
২ ডিসেম্বর : ক্যামেরুন-ব্রাজিল : রাত ১টা

দ্বিতীয় রাউন্ড (নকআউট পর্ব)
যারা দ্বিতীয় রাউন্ডে বা শেষ ১৬তে উঠবে তাদের মধ্যে ১৬ টিম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রতিটি গ্রæপের চ্যাম্পিয়ন দল অন্য গ্রæপের রানার্সআপ দলের সাথে খেলবে। যে দল হারবে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেবে। এটাই হলো নক আউট।
তারিখ: ম্যাচ: বাংলাদেশ সময়
৩ ডিসেম্বর : এ১-বি২ : রাত ৯টা
৩ ডিসেম্বর : সি১-ডি২ : রাত ১টা
৪ ডিসেম্বর : ডি১-সি২ : রাত ৯টা
৪ ডিসেম্বর : বি১-এ২ : রাত ১টা
৫ ডিসেম্বর ; ই১-এফ ২ : রাত ৯টা
৫ ডিসেম্বর : জি ১-এইচ ২ : রাত ১টা
৬ ডিসেম্বর : এফ১-ই ২ : রাত ৯টা
৬ ডিসেম্বর : এইচ১-জি ২ : রাত ১টা

কোয়ার্টার ফাইনাল সময়সূচি
দ্বিতীয় রাউন্ড পেরিয়ে ১৬টি দল হতে ৮টি দল কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছাবে। চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
তারিখ: ম্যাচ: বাংলাদেশ সময়
৯ ডিসেম্বর : ই১-এফ২ জয়ী বনাম জি১-এইচ২ জয়ী : রাত ৯টা
৯ ডিসেম্বর : এ১-বি২ জয়ী বনাম সি১-ডি২ জয়ী : রাত ১টা
১০ ডিসেম্বর : এফ১-ই২ জয়ী বনাম এইচ১-জি২ জয়ী : রাত ৯টা
১০ ডিসেম্বর : বি১-এ২ জয়ী বনাম ডি১-সি২ জয়ী : রাত ১টা

সেমিফাইনাল সময়সূচি
তিনটি ধাপের খেলা শেষে চারটি দল সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে।
১৩ ডিসেম্বর ৯ ডিসেম্বরের খেলার বিজয়ী দুই দল রাত ১টা
১৪ ডিসেম্বর ১০ ডিসেম্বরের খেলার বিজয়ী দুই দল রাত ১টা

তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ
১৭ ডিসেম্বর। খেলবে সেমিফাইনালে পরাজিত দুই দল। রাত ৯টা।

ফাইনাল
১৮ ডিসেম্বর। খেলবে সেমিফাইনালে বিজয়ী দুই দল। রাত ৯ টা।

Share.

মন্তব্য করুন