শিশু-কিশোররা হোক প্রাণবন্ত। আর এ প্রাণবন্ত জীবনে বাধাসমূহের উল্লেখযোগ্য ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেটের ছড়াছড়ি। আজকালকার শিশু- কিশোর দল ডুবে আছে এসবে। তিন বছরের বাচ্চাও জানে মুঠোফোন আর কম্পিউটারের নানান বিষয়।
খাবারের অজুহাতে বা পড়ার বায়না নিয়ে কথায় কথায় আবদার গড়ে উঠে। প্রাইমারি গণ্ডি পাড়ি দিতে না দিতেই অনেকে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, মেসেঞ্জার গ্রুপ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ইত্যাদিতে আড্ডা জমায় গ্রুপ স্টাডি নামক অজুহাতে। আধো কতটা উপকার হচ্ছে এতে? নাকি প্রকৃত অর্থ নিহিত তাতে? এটাই কি যুগের স্মার্টনেস? যে স্মার্টনেস শিশুটিকে ভার্চুয়ালমুখী করাচ্ছে। টিকটক ও লাইকি নামের বিনোদনের নেশায় বিলিন হচ্ছে শিশুর সুষ্ঠু বিকাশের। আটকে যাচ্ছে নিজের চিন্তা চেতনার। আর কিশোর-কিশোরীরা হারাচ্ছে প্রকৃত বোধশক্তি। জনপ্রিয়তা আর নিজেকে তুলে ধরার প্রয়াসে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে পা বাড়াচ্ছে অন্ধকার জগতে। নিজের অজান্তেই একের পর এক অপরাধের জন্ম দিচ্ছে, আর জন্ম হচ্ছে কিশোর গ্যাং-এর। এ ক্ষণস্থায়ী পরিচিতির প্রতি আসক্ত হয়ে অপসংস্কৃতিকে আপন করে নিচ্ছে অবাধে। যার দরুন আপন সংস্কৃতি ভুলে বেপরোয়া হয়ে বেড়ে উঠছে কিশোর-কিশোরীরা। পরিবার থেকে বাইরের জগতের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত হতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তারা, কাছে টানে পরজনকে! যা তাদের সত্যিকারের ভবিষ্যৎ গড়ার অন্তরায়ও বটে।
এর শেষ কোথায় তা অজানা এসব কিশোর দলের?
অনেক বাবা-মা সাধ্যের সর্বোচ্চ প্রয়াসে আদুরে সন্তানের জন্য এনে দেন পৃথিবীর সব সুখ। যার বিনিয়োগ কখনোই হয় না, আর পান না তার সম্মান। কঠোর নিয়ম বন্দী পড়ালেখার ফাঁকে যেটুকু সময় শিশুরা পায় তা মুঠোফোনের সাথেই কাটায়। বাবা মা উচ্চস্বরে কিছু বললেও অনেক শিশু তার তোয়াক্কা করে না বা গোপনীয়তার আশ্রয় নেয়। যেখানে তাদের সঠিক বেঠিকের জ্ঞান রয় না, সেখানে অবুঝ শিশুটিও ব্যক্তিগত পরিচয়ের নেশায় মাতে।
খোলা মাঠে খেলাধুলা, প্রতিবেশীর সাথে গল্প- কথ্য, এসব এখন দাঁড়িয়েছে লঘু সংখ্যায়। প্রকৃতির ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠার স্বপ্নময় শিশুটি ডুবে যাচ্ছে ইন্টারনেটের যান্ত্রিকতায়।
শিশুদের মনন, মেধা বিকাশের জন্য হয়ত ইন্টারনেট ব্যবহার জানা বা ব্যবহারের অল্পতম প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু, প্রকৃতভাবে বেড়ে উঠার জন্য প্রয়োজন শারীরিক ও মানসিক বিশুদ্ধতার। আর তার জন্য প্রয়োজন পরিবারের সুনজর এবং পাড়ায় পাড়ায় বা মহল্লায় খেলার মাঠ গড়ে ওঠার। যাতে শিশুরা একে অন্যের সাথে বন্ধুত্ব তৈরিতে দৃঢ় হয়। একমাত্র প্রকৃতি থেকে বিশুদ্ধ শ্বাসে বিশুদ্ধ হবে মন, মননশীলতার। প্রতিটি শিশুরই উচিত বাবা মায়ের আদর্শ তাদের মনে লালন করার।
অহেতুক ইন্টারনেট দুনিয়া ত্যাগ করার। আপনজনের সাথে সময় কাটানো, বই পড়ে, শারীরিক ব্যায়াম করার মাধ্যমেই সহজে শিশু-কিশোররা বেড়ে উঠতে পারবে আপন মহিমায় ও হয়ে উঠবে আদর্শ মানুষ। তবেই জন্ম নিবে ডিজিটাল বাংলাদেশ আদর্শ ডিজিটাল নাগরিকদের।

Share.

মন্তব্য করুন